বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ
![]() | |
সংক্ষেপে | এনটিআরসিএ |
---|---|
গঠিত | ২০০৫ |
ধরন | স্বায়ত্তশাসিত |
সদরদপ্তর | রমনা, ঢাকা |
যে অঞ্চলে কাজ করে | বাংলাদেশ |
প্রধান প্রতিষ্ঠান | শিক্ষা মন্ত্রণালয় |
সম্পৃক্ত সংগঠন | |
ওয়েবসাইট | এনটিআরসিএ |
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (সংক্ষেপে এনটিআরসিএ নামে পরিচিত) বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি দেশের মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের এমপিওভুক্ত বিদ্যালয় ও কলেজ সমূহের প্রথম প্রবেশ (এন্ট্রি লেভেল) পর্যায়ের পদসমূহে শিক্ষক ও প্রভাষক নিয়োগ নিশ্চিত করে থাকে। এনটিআরসিএ ২০০৫ সালের বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের (১৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ২০০৫ সালের ১নং আইন) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়।[১][২] এর সদরদপ্তর ঢাকার রমনায়।[৩]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ না করে সার্বিক শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব নয়-এ বিষয়টি অনুধাবন করে ২০০৫ সালে এনটিআরসিএ প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং ২০১৫ সালে এনটিআরসিএ-কে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রথম প্রবেশ পর্যায়ের (এন্ট্রি লেভেল) শূন্য পদে মেধারভিত্তিতে নিয়োগ সুপারিশের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০০৫ (২০০৫ সনের ১নং আইন) এর মাধ্যমে ২০০৫ সালে এনটিআরসিএ প্রতিষ্ঠিত করা হয়। উক্ত আইনের ১০নং ধারায় এনটিআরসিএ-কে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগের তালিকা প্রণয়ন, নিবন্ধন ও প্রত্যয়নের দায়িত্ব দেয়া হয়। উক্ত আইনের ধারা ২১ এর আলোকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণের জন্য বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। বিধিমালার মাধ্যমে এনটিআরসিএ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ করে যোগ্য শিক্ষকদের তালিকা প্রণয়ন করে এবং প্রত্যয়নপত্র প্রদান করে। উক্ত প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটি নিয়োগ প্রদান করে। ২০১৫ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫ তারিখের ৩৭.০০.০০০০.০৭১.০৮.০০৮.০৫ (অংশ)-১০৮১ নং পরিপত্র জারি করা হয়। উক্ত পরিপত্রের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এন্ট্রি লেভেলের (যেমন: সহকারী শিক্ষক, প্রভাষক, প্রদর্শক, ট্রেড ইন্সট্রাক্টর, সহকারী মৌলভী- ইত্যাদি) শূন্য পদে মেধার ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রেরণের জন্য অর্থাৎ নিয়োগ সুপারিশ প্রদানের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এনটিআরসিএ-এর সুপারিশের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটি নিয়োগ প্রদান করে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ যে অর্থ সরকার দিয়ে থাকে তাকে ইংরেজিতে বলা হয় মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার বা এমপিও। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল অনুযায়ী এই সহায়তা দেয় সরকার। সরকারি বেতন স্কেল অনুযায়ী সরকার থেকে বেতন পান এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীরা। এমপিওভুক্ত কলেজের একজন প্রভাষক নবম গ্রেডে, জ্যেষ্ঠ প্রভাষক/ সহকারী অধ্যাপক ৬ষ্ঠ গ্রেডে বেতন পান। স্নাতক পর্যায়ের কলেজের অধ্যক্ষগণ ৪র্থ গ্রেড এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষগণ ৫ম গ্রেডে বেতন পান। এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বিএড ছাড়া ১১তম গ্রেডে ও বিএড থাকলে ১০ম গ্রেডে বেতন পান। জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক নবম গ্রেড ও প্রধান শিক্ষক ৭ম গ্রেডে বেতন পান।
পরিচালনা পর্ষদ
[সম্পাদনা]এনটিআরসিএ একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, এর পরিচালনার দায়িত্ব ও ক্ষমতা এর নির্বাহী বোর্ডের উপর ন্যাস্ত। বোর্ডের প্রধান হিসেবে একজন চেয়ারম্যান থাকেন। আইন অনুসারে চেয়ারম্যানকে প্রতি তিন মাসে অত্যন্ত একটি বোর্ড সভার আয়োজন করতে হয়। নির্বাহী বোর্ড এর চেয়ারম্যান সচিব বা সচিব পদমর্যাদার অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পর্যায়ের প্রবীণ শিক্ষাবিদ এর মধ্যে থেকে নিয়োগ লাভ করেন। নির্বাহী বোর্ড চেয়ারম্যান ও ১০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত। চেয়ারম্যান ও তিনজন সদস্য সরকারিভাবে নিয়োগকৃত নির্দিষ্ট মেয়াদের স্থায়ী কর্মকর্তা এবং অন্য সাতজন সদস্য সরকার কর্তৃক নির্বাচিত অবৈতনিক সদস্য। বোর্ডের কাঠামো নিম্নরূপঃ[২]
- চেয়ারম্যান
- সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ);
- সদস্য (মূল্যায়ন/পরীক্ষা প্রত্যয়ন);
- সদস্য (শিক্ষা তত্ত্ব/শিক্ষা মান),
- মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর;
- মহাপরিচালক, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর;
- চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড;
- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি;
- অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি;
- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কর্তৃক মনোনিত সরকারি কলেজের একজন অধ্যক্ষ;
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কর্তৃক মনোনিত শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের একজন অধ্যাপক।
দায়িত্ব
[সম্পাদনা]যে সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য এনটিআরসিএ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা নিম্নরূপঃ
- বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক চাহিদা নিরূপণ;
- শিক্ষকতা পেশায় নিয়োগের জন্য শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও মান নির্ধারণ;
- জাতীয়ভাবে শিক্ষক মান নির্ধারণ;
- সরকারি এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের সুবিধার্থে বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে উত্তীর্ণ শিক্ষক-প্রার্থীগণের নিবন্ধন, প্রত্যয়ন ও তালিকা প্রণয়ন এবং প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশকরণ;
- শিক্ষকতা পেশার উন্নয়ন এবং গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য সরকারকে পরামর্শ প্রদান;
- এনটিআরসিএ আইন বলবৎ হওয়ার পূর্বে নিয়োগপ্রাপ্ত এমপিও-ভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকদের পর্যায়ক্রমে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মান উন্নয়নের ব্যবস্থাকরণ;
- উপর্যুক্ত কার্যাবলি এবং এনটিআরসিএ আইনের অধীন অন্যান্য উদ্দেশ্য পূরণকল্পে প্রয়োজনীয় ও আনুষঙ্গিক কার্যাবলি সম্পাদন;
- বিধি বা প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত দায়িত্ব পালন;
- সরকার প্রদত্ত অন্যান্য দায়িত্ব পালন।
নিবন্ধন পরীক্ষা
[সম্পাদনা]এনটিআরসিএ শিক্ষক ও প্রভাষক পদে নিয়োগ প্রত্যাশীদের সরকারি এমপিওর আওতাধীন বেসরকারি স্কুল, উচ্চমাধ্যমিক এবং স্নাতক পর্যায়ের কলেজ সমূহে নিয়োগদানের লক্ষ্যে নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ করে ও উত্তীর্ণ প্রার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহে নিয়োগ এবং পদায়নের সুপারিশ করে থাকে। নিবন্ধন পরীক্ষা তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথম ধাপে, এক ঘণ্টার ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেয়া হয়।[৪] দ্বিতীয় ধাপে, প্রথম ধাপে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের অনলাইনে পূরণ করা আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপি ও সাথে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ অন্যান্য কাগজপত্র এনটিআরসিএ তে জমা দেয়ার পর সনদপত্র যাচাই-বাছাই পূর্বক যোগ্য প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা হয়। তৃতীয় ধাপে, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক বা ভাইভা পরীক্ষা হয়।
এনটিআরসিএ নিয়োগ পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১২ জুলাই ২০২২ তারিখে এনটিআরসিএ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য উল্লেখ থাকে। পরীক্ষার তারিখ, প্রিলি পরীক্ষার তারিখ ও লিখিত পরীক্ষার তারিখ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০০৫"। লজ অব বাংলাদেশ। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০১৭।
- ↑ ক খ বাংলাদেশ গেজেট। ঢাকা: বাংলাদেশ ফরম ও প্রকাশনা অফিস। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৫। ২৯ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মার্চ ২০১৭।
- ↑ "চেয়ারম্যান"। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০১৭।
- ↑ "বদলে গেল শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা পদ্ধতি"। www.bdnews24.com/। বিডিনিউজ২৪। ৮ এপ্রিল ২০১৫। ২৪ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মার্চ ২০১৭।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- অফিসিয়াল ওয়েবসাইট
- অনলাইনে আবেদন, ফলাফল টেলিটক-অনলাইনে আবেদন