বিষাদময় সপ্তাহ (আর্জেন্টিনা)
![]() বিষাদময় সপ্তাহ চলাকালে নৈরাজ্যবাদ | |
তারিখ | জানুয়ারি, ১৯১৯ |
---|---|
অবস্থান | বুয়েন্স আয়ার্স, আর্জেন্টিনা |
অন্য পরিচয় | সেমানা ট্রাজিকা |
অংশগ্রহণকারী | আর্জেন্টেনীয় নৈরাজ্যবাদী, প্যাট্রিয়টিক লীগ |
মৃত | ৭০০ |
বিষাদময় সপ্তাহ বা দুঃখজনক সপ্তাহ (স্পেনীয়: Semana Trágica) আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সে ৭ জানুয়ারি, ১৯১৯ তারিখে সংঘটিত একগুচ্ছ দাঙ্গা ও গণহত্যার সমন্বয়ে গড়ে উঠেছিল। এ দাঙ্গায় আর্জেন্টেনীয় নৈরাজ্যবাদী ও কম্যুনিস্টরা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে লুইজ দেলপিয়ানের নেতৃত্বে আর্জেন্টাইন ফেডারেল পুলিশ এ দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এছাড়াও দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে আর্জেন্টেনীয় সেনাবাহিনী, আর্জেন্টাইন মেরিন কর্পস এবং আর্জেন্টেনীয় নৌবাহিনী অংশ নিয়েছিল।
প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]
১৯০২ থেকে ১৯০৯ সাল পর্যন্ত অভিবাসিত ইতালীয় পাইত্রো গোরি'র প্রতিষ্ঠিত ফোরা (ফেদারাশিও অবরেরা রিজিওনাল আর্জেন্টিনা) শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক ও শ্রমিক বিরোধী অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করে আসছিলেন। মে, ১৯০৪ সালে শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে দুইজন নিহত ও পনেরোজন আহত হয়। ১৯০৭ সালে বুয়েন্স আয়ার্সে নারীবাদী-নৈরাজ্যবাদী লীগ গঠিত হয়। এরপর থেকেই এই দশক শেষ হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে থাকে। কর্তৃপক্ষের অমানবিকতা ও শ্রমিকদের হিংসাত্মক ঘটনার প্রেক্ষিতে তারা একে-অপরের তুলনায় শীর্ষে পৌঁছানোর চেষ্টা করে। ১৯০৯ সালের মে দিবসে বুয়েন্স আয়ার্স অভিমুখে বিশাল জনস্রোত একত্রিত হয়। পুলিশ তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করতে এগিয়ে আসে। এতে ১২জনের মতো নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছিল।[১] প্রতিবেদনে জানা যায় যে, নৈরাজ্যবাদীরা সহিংসতার প্রচেষ্টা চালিয়েছিল।[২] আর্জেন্টেনীয় রাষ্ট্রপতি হোস ফিগুইরোয়া আলকোর্তা অল্পের জন্য মৃত্যুকূপ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছিলেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯০৮ তারিখে বুয়েন্স আয়ার্সে গাড়ী চালনারত অবস্থায় তাকে লক্ষ্য করে এক নৈরাজ্যবাদী বোমা নিক্ষেপ করেছিল।[৩] সরকারী কর্মকর্তারা ১৯ বছর বয়সী ইউক্রেনীয় অভিবাসী সিমন রাদোইৎজকির মুখোমুখি হলে তার হাতে তৈরী বোমায় শহরের পুলিশ প্রধান রামোন ফ্যালকন ও তার সহযোগী আলবার্তো লারতিগাও ১৫ নভেম্বর, ১৯০৯ তারিখে বুয়েন্স আয়ারের কালাও স্ট্রিটে নিহত হন। ১৬ অক্টোবর, ১৯০৯ তারিখে রোজারিও শহরে অবস্থিত স্পেনীয় কনসুলেটে এক বিচ্ছিন্নতাবাদী বোমা হামলা করলে সে গুরুতর আহত হয় ও ভবনের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি সাধিত হয়।[৪] ১৯০৯ সালের শেষদিকে ফ্যালকনের হত্যাকাণ্ডের পর স্ব-ঘোষিত দেশপ্রেমিক ছাত্র সংগঠন নামে জুভেনতাদ অটোনমিস্তা গঠন করা হয়। ২৫ মে, ১৯১০ তারিখে বুয়েন্স আয়ার্সে আর্জেন্টিনার স্বাধীনতার শতবার্ষিকী উদ্যাপন ব্যাহত করার প্রচেষ্টা নেয়া হয়। এক নৈরাজ্যবাদী অজানা বালককে বোমা বহন করে ক্যাথেড্রালে পাঠালে আকস্মিক বিস্ফোরণে নিহত হয় ও তার সাথে আরও একজনের উভয় হাত হারায়।[৫] ২০ জুন, ১৯১০ তারিখে টিত্রো কোলনে আরও একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। এতে ২০জন থিয়েটার দর্শক গুরুতর আহত হন। এরফলে নৈরাজ্যবাদীদের হাতে মৃত্যুর বিষয়ে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের বিষয়ে সিনেট ও ডেপুটিদের চেম্বার একটি ধারা পাস করে।[৬] ৯ জুলাই, ১৯১৬ তারিখে একজন আত্মস্বীকৃত বন্দুকধারী আর্জেন্টেনীয় রাষ্ট্রপতি ভিক্টোরিনো দে লা প্লাজাকে হত্যার প্রচেষ্টা চালান। ঐ প্রচেষ্টাটি আর্জেন্টিনার একশত বছর উদ্যাপনে শোভাযাত্রা পর্যালোচনাকালীন হয়েছিল।[৭] ৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৮ তারিখে আর্জেন্টিনার আশেপাশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এরফলে আক্রান্ত এলাকাগুলোয় নিয়মিত সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হয়। নৈরাজ্যবাদীরা রেলগাড়ী বিধ্বস্ত করে, ট্রাক ধ্বংস করে ও গম বোঝাই মালবাহী গাড়ী পুড়িয়ে ফেলেছিল।[৮]
চলমান সংঘর্ষ[সম্পাদনা]
বুয়েন্স আয়ার্সের শহরতলীতে অবস্থিত ব্রিটিশ মালিকানাধীন ভাসেনা ধাতব কারখানায় শুরু হওয়া শ্রমিক ধর্মঘট সংঘর্ষে রূপান্তরিত হয়। শুরুতে ঐ ধর্মঘট কোন মনোযোগ আকর্ষণ করেনি। কিন্তু, ৩ জানুয়ারি তারিখে ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকেরা ভাসেনা কাজে ধাতব পদার্থ মালবাহী গাড়ীতে উঠানোর সময় একদল পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। দুইদিন পর এক পুলিশ সার্জেন্ট আহতাবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ৭ জানুয়ারি সম্পর্কহীন ঘটনা সংঘটিত হয়। বুয়েন্স আয়ার্সের বন্দরে নৌশ্রমিকেরা শ্রমঘণ্টা ও মজুরির দাবীতে সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করে। ঐ একই দিনে ভাসেনা ধাতব কারখানায় পুলিশ চাতুর্যতার আশ্রয় নিয়ে ক্রসফায়ার করে। ধর্মঘটরত শ্রমিকেরা এ সময় পুলিশের উপস্থিতিতে মালামাল পরিবহনে বাঁধার সৃষ্টি করছিল। এতে পাঁচজন শ্রমিক নিহত ও বিশজন আহত হয়।
পরদিন বুধবার সম্মিলিতভাবে ধর্মঘট শুরু হয়। সকল ধরনের জাহাজী কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার পুলিশের গুলিতে নিহত পাঁচ শ্রমিকের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৫০জন অংশ নেন। তন্মধ্যে, কয়েকজন সশ্রস্ত্রাবস্থায় ছিলেন। তারা কফিন বহনকারী কোচ অনুসরণ করেন। এ সময় তারা ব্যক্তিগত সম্পত্তি ভাংচুর করেন ও লাক্রোজে ব্রিটিশ মালিকানাধীন ট্রাম স্টেশনে পৌঁছার পূর্বে একটি গাড়ী পুড়িয়ে দেন। তাপরপর তারা ইয়াতে স্ট্রিটের সেক্রেড হার্ট কনভেন্ট ভেঙ্গে ফেলেন এবং করিয়েন্তেস অ্যাভিনিউর গির্জায় আগুন লাগিয়ে দেন। একটি বিপনী বিতানে আক্রমণ চালানোকালে পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করে ও মিছিলে গুলিবর্ষণ করে অগণিত বিক্ষোভকারীদেরকে নিহত ও আহত করে।
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ BUENOS AIRES TRAGEDY. TWO POLICE OFFICIALS KILLED. Buenos Aires Tragedy. Evening Post, 16 November 1909, Page 7
- ↑ AN ANARCHISTS' RIOT, Bush Advocate, 3 May 1909
- ↑ NEW ANARCHIST PLOT. Two Arrests and Raid on Bomb Factory in Buenos Ayres, The Evening News, 11 July 1911.
- ↑ BOMBS EXPLODED IN SPANISH CONSULATE, Evening Post, 18 October 1909.
- ↑ BOMBS IN ARGENTINA. BOY BLOWN TO ATOMS, Evening Post, 3 June 1910
- ↑ FIND BOMB FACTORY. Argentine Capital Stirred by Uncovering Anarchists Lair. The Gazette Times, 10 July 1911
- ↑ EFFORT MADE TO KILL PRESIDENT OF ARGENTINE, The Gazette Times, 10 July, 1916.
- ↑ Anarchy Reigns in Argentina When General Rail Strike Brings Riots, The Telegraph-Herald, 10 February 1918
গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]
- Godio, Julio (1985). La Semana Trágica de enero de 1919 . Buenos Aires, Argentina: Hyspamérica. (স্পেনীয়)
- Pigna, Felipe (2006). Los mitos de la historia argentina: De la ley Sáenz Peña a los albores del peronismo. Buenos Aires: Editorial Planeta. (স্পেনীয়)
- Schiller, Herman (2005). Momentos de luchas populares. Buenos Aires: Ediciones Instituto Movilizador de Fondos Cooperativos. (স্পেনীয়)
- Galasso, Norberto (২০০৬)। Perón: Formación, ascenso y caída (1893-1955) (স্পেনীয় ভাষায়)। Buenos Aires: Colihue। আইএসবিএন 950-581-399-6।