বালুচরী শাড়ি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
BengaliHindu (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
BengaliHindu (আলোচনা | অবদান)
বর্ণনা+
২৪ নং লাইন: ২৪ নং লাইন:


== বর্ণনা ==
== বর্ণনা ==
বালুচরী দৈর্ঘ্যে ১৫ ফুট লম্বা ও ৪২ ইঞ্চি চওড়া। আঁচলের দৈর্ঘ্য ২৪ থেকে ৩২ ইঞ্চি।<ref name=blk/> রেশম বালুচরীতে নিত্য নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলে তৈরি হয়েছে অনেক ধরণের শাড়ি৷ এক বা দুই রঙের সাধারণ বালুচরী, রঙে ঝলমল মীনাকরী বালুচরী, গুরুদাস লক্ষ্মণ আবিষ্কৃত স্বর্ণচরী, অমিতাভ পালের সৃষ্টি রূপশালি ও মধুমালতী, অমিত লক্ষ্মণের সৃষ্টি দ্রৌপদী বালুচরী (মহাভারত টিভি সিরিয়ালের দ্রৌপদীর সাজসজ্জার অনুকরণে) ইত্যাদি এর নানা প্রকার৷<ref>[http://www.anandabazar.com/district/purolia-birvhum-bankura/প-জ-র-ব-জ-র-নত-ন-ব-ল-চর-স-বর-ণচর-1.222830 পুজোর বাজারে নতুন বালুচরী, স্বর্ণচরী], আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৪ অক্টোবর, ২০১৫</ref>
বালুচরী দৈর্ঘ্যে ১৫ ফুট লম্বা ও ৪২ ইঞ্চি চওড়া। আঁচলের দৈর্ঘ্য ২৪ থেকে ৩২ ইঞ্চি।<ref name=blk/> গবেষিকা চিত্রা দেব বালুচরীর অলংকরণকে চার ভাগে ভাগ করেছেন, যথা চিত্র, কল্কা, পাড় ও বুটি। তার মতে চিত্র অংশের নকশা অন্যান্য শাড়ীতে দেখা যায় না।<ref name=abp29102015/>
রেশম বালুচরীতে নিত্য নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলে তৈরি হয়েছে অনেক ধরণের শাড়ি৷ এক বা দুই রঙের সাধারণ বালুচরী, রঙে ঝলমল মীনাকরী বালুচরী, গুরুদাস লক্ষ্মণ আবিষ্কৃত স্বর্ণচরী, অমিতাভ পালের সৃষ্টি রূপশালি ও মধুমালতী, অমিত লক্ষ্মণের সৃষ্টি দ্রৌপদী বালুচরী (মহাভারত টিভি সিরিয়ালের দ্রৌপদীর সাজসজ্জার অনুকরণে) ইত্যাদি এর নানা প্রকার৷<ref>[http://www.anandabazar.com/district/purolia-birvhum-bankura/প-জ-র-ব-জ-র-নত-ন-ব-ল-চর-স-বর-ণচর-1.222830 পুজোর বাজারে নতুন বালুচরী, স্বর্ণচরী], আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৪ অক্টোবর, ২০১৫</ref>


== পদ্ধতি ==
== পদ্ধতি ==
এই শাড়ি মূলতঃ রেশম শাড়ি, যদিও পরে তুলো থেকে তাঁতের বালুচরী ও আজকাল বাঁশ, কলা ইত্যাদি গাছ থেকে পাওয়া সুতো থেকে জৈব বালুচরীও বানানো হয়েছে৷ একটা শাড়ি বানাতে দুজন কারিগরের এক সপ্তাহ বা বেশি সময় লাগে৷ প্রথমে গুটিপোকা থেকে রেশম সংগৃহীত হয়, পরে তা সোডা ও গরম জলে সেদ্ধ করা হয় ও অ্যাসিড রঙে চোবানো হয়৷ তারপর দুদিক দিয়ে টেনে টানটান করা হয়, যাতে সুতো দিয়ে কাপড় বোনা যায়৷ শাড়ির নকশাগুলি কাগজে এঁকে পাঞ্চিং কার্ডের সাহায্যে শাড়িতে বসিয়ে দেওয়া হয়৷ আজকাল পরিবেশ বাঁচাতে নানা জৈব রঙও ব্যবহৃত হচ্ছে৷
এই শাড়ি মূলতঃ রেশম শাড়ি, যদিও পরে তুলো থেকে তাঁতের বালুচরী ও আজকাল বাঁশ, কলা ইত্যাদি গাছ থেকে পাওয়া সুতো থেকে জৈব বালুচরীও বানানো হয়েছে৷ একটা শাড়ি বানাতে দুজন কারিগরের এক সপ্তাহ বা বেশি সময় লাগে৷ প্রথমে গুটিপোকা থেকে রেশম সংগৃহীত হয়, পরে তা সোডা ও গরম জলে সেদ্ধ করা হয় ও অ্যাসিড রঙে চোবানো হয়৷ তারপর দুদিক দিয়ে টেনে টানটান করা হয়, যাতে সুতো দিয়ে কাপড় বোনা যায়৷ শাড়ির নকশাগুলি কাগজে এঁকে পাঞ্চিং কার্ডের সাহায্যে শাড়িতে বসিয়ে দেওয়া হয়৷ আজকাল পরিবেশ বাঁচাতে নানা জৈব রঙও ব্যবহৃত হচ্ছে৷




== ভবিষ্যৎ ==
== ভবিষ্যৎ ==

১৫:২৪, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

বালুচরী শাড়ি
ভৌগোলিক নির্দেশক
বর্ণনাবালুচরী শাড়ি এক প্রকারের রেশমজাত হাতে বোনা শাড়ি যার আঁচলের উপর বিবিধ পৌরাণিক ও অন্যান্য নকশা কাজ করা থাকে।
ধরনহস্তশিল্প
অঞ্চলবিষ্ণুপুর ,পশ্চিমবঙ্গ
দেশভারত
উপাদানরেশম
প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইটhttp://ipindia.nic.in/girindia/


বালুচরী পশ্চিমবঙ্গের প্রসিদ্ধ শাড়ি, ভারতের ভৌগোলিক স্বীকৃতি এবং বয়নশৈলীতে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পকর্ম৷ আঁচলে বিবিধ পৌরাণিক ও অন্যান্য নকশা-বোনা এই শাড়ি আভিজাত্যের প্রতীক হিসাবে গণ্য৷ বালুচরী শাড়ি তৈরিতে মোটামুটি ১ সপ্তাহ ও তার বেশি সময় লাগে ।[১] [২] এই শাড়ি ভারতের ভৌগলিক অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয়। [৩]

ইতিহাস

বালুচরীর জন্ম মুর্শিদাবাদ জেলার জিয়াগঞ্জের নিকটবর্তী অধুনালুপ্ত বালুচর নামক স্থানে।[৪] বালুচরের সঠিক অবস্থান নিয়ে নানান মত আছে। ভারত পথিক যদুনাথ সর্বাধিকারী তার ১৮৫৭ সালে রচিত ভ্রমণ বৃত্তান্তে জিয়াগঞ্জ শহরে বালুচর বলে একটি অঞ্চলের কথা উল্লেখ করেছেন যা চেলি ও গরদের আড়ত।[৫] মুর্শিদাবাদ জেলার প্রাক্তন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এন জি মুখার্জির মতে বহরমপুরের কয়েক মাইল উত্তরে ভাগীরথীর তীরে অবস্থিত ছিল বালুচর।[৬] ঐতিহাসিক বিনয় ঘোষের মতে জিয়াগঞ্জের বালুচর ছিল রেশমশিল্পজাত নানা প্রকার বস্ত্রাদির বড় আড়ত ও ব্যবসা কেন্দ্র। তাঁতশিল্পীদের বসতি ছিল জিয়াগঞ্জের নিকটবর্তী বাহাদুরপুর, বেলিয়াপুকুর, রামডহর, রমনাপাড়া, রণসাগর, আমডহর, বাগডহর, আমাইপাড়া প্রভৃতি গ্রামসমূহ।[৭] তারা তাদের রেশমের শাড়ী জিয়াগঞ্জের বালুচরে বিক্রি করতেন। বিক্রয় কেন্দ্রের নামেই শাড়ীর নাম হয় বালুচরী।[৭] লোকসংস্কৃতি গবেষক ডঃ সোমনাথ ভট্টাচার্যের মতে বালুচরীর উদ্ভব বালুচর অঞ্চলের নিকটবর্তী মীরপুর-বাহাদুরপুর গ্রামে।[৮]

নবাব মুর্শিদকুলি খানের উদ্যোগে সেখানে এই শিল্পের রমরমা দেখা দেয়৷[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] সেখানে এই শিল্পের শেষ বিখ্যাত কারিগর দুবরাজ দাস মারা যান ১৯০৩ সালে, তিনি চিত্রশিল্পীদের মত শাড়িতে নিজের নাম সই করতেন৷[৯] গঙ্গার বন্যায় এই গ্রাম বিধ্বস্ত হলে শিল্পীরা আশ্রয় নেন বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরে৷ সেখানে মল্ল রাজাদের পৃষ্ঠপোষণে এই শিল্পের সমৃদ্ধি ঘটে৷ মল্ল রাজাদের সময়ে নির্মিত টেরাকোটার মন্দির ও অন্যান্য শিল্পের প্রভাব পড়ে এই শাড়ির নকশায়৷ পরে ব্রিটিশ জমানায় অন্যান্য দেশীয় বয়নশিল্পের মত বালুচরীও দুর্দশাগ্রস্ত হয়৷ ১৯৫৬ সালে বিখ্যাত চিত্রশিল্পী সুভগেন্দ্রনাথ (সুভো) ঠাকুরের উদ্যোগে এই শাড়ির বাণিজ্যিক বিস্তার ঘটে৷ তিনি তখনকার বিখ্যাত কারিগর অক্ষয়কুমার দাসকে রিজিওনাল ডিজাইন সেন্টারে (সুভো ঠাকুর এর ডিরেক্টর ছিলেন) সাবেক জালা তাঁতের পরিবর্তে জ্যাকার্ড তাঁতের ব্যবহার শেখান৷ পরের বছর অক্ষয় দাস অজন্তা-ইলোরার মোটিফ লাগিয়ে নতুন বালুচরী বাজারে আনলে এই শিল্পের উত্থান ঘটে৷

বর্ণনা

বালুচরী দৈর্ঘ্যে ১৫ ফুট লম্বা ও ৪২ ইঞ্চি চওড়া। আঁচলের দৈর্ঘ্য ২৪ থেকে ৩২ ইঞ্চি।[৮] গবেষিকা চিত্রা দেব বালুচরীর অলংকরণকে চার ভাগে ভাগ করেছেন, যথা চিত্র, কল্কা, পাড় ও বুটি। তার মতে চিত্র অংশের নকশা অন্যান্য শাড়ীতে দেখা যায় না।[৫]

রেশম বালুচরীতে নিত্য নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলে তৈরি হয়েছে অনেক ধরণের শাড়ি৷ এক বা দুই রঙের সাধারণ বালুচরী, রঙে ঝলমল মীনাকরী বালুচরী, গুরুদাস লক্ষ্মণ আবিষ্কৃত স্বর্ণচরী, অমিতাভ পালের সৃষ্টি রূপশালি ও মধুমালতী, অমিত লক্ষ্মণের সৃষ্টি দ্রৌপদী বালুচরী (মহাভারত টিভি সিরিয়ালের দ্রৌপদীর সাজসজ্জার অনুকরণে) ইত্যাদি এর নানা প্রকার৷[১০]

পদ্ধতি

এই শাড়ি মূলতঃ রেশম শাড়ি, যদিও পরে তুলো থেকে তাঁতের বালুচরী ও আজকাল বাঁশ, কলা ইত্যাদি গাছ থেকে পাওয়া সুতো থেকে জৈব বালুচরীও বানানো হয়েছে৷ একটা শাড়ি বানাতে দুজন কারিগরের এক সপ্তাহ বা বেশি সময় লাগে৷ প্রথমে গুটিপোকা থেকে রেশম সংগৃহীত হয়, পরে তা সোডা ও গরম জলে সেদ্ধ করা হয় ও অ্যাসিড রঙে চোবানো হয়৷ তারপর দুদিক দিয়ে টেনে টানটান করা হয়, যাতে সুতো দিয়ে কাপড় বোনা যায়৷ শাড়ির নকশাগুলি কাগজে এঁকে পাঞ্চিং কার্ডের সাহায্যে শাড়িতে বসিয়ে দেওয়া হয়৷ আজকাল পরিবেশ বাঁচাতে নানা জৈব রঙও ব্যবহৃত হচ্ছে৷

ভবিষ্যৎ

বাঁকুড়া জেলা ও রেশম, এর ওপর সরকারি ভৌগোলিক তকমা পড়ায় অন্যত্র ও অন্য জিনিসে তৈরি হলে বালুচরী নাম দেওয়া যাবে না৷ জাতীয় পুরস্কার, শিল্পমেলা ইত্যাদির কারণে বাংলা ও ভারতের বাইরেও এখন এ শাড়ির খ্যাতি ব্যাপ্ত৷ ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর লন্ডন সফরের সময় রফতানি সংস্থা ওবিটি ও লরা অ্যাশলি কোম্পানির চুক্তি হয় ব্রিটেন ও জাপানের বাজারে লরা অ্যাশলির দোকানে বালুচরী, শীতলপাটি ও অন্যান্য বঙ্গজ সামগ্রী বিক্রির, বিশ্ব বাংলা সংস্থার জোগানদারিতে৷[১১] এসবের ফলে বালুচরীর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল৷

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. BALASUBRAMANIAM, CHITRA (১৪ জানুয়ারি ২০১২)। "Recreating the age-old Baluchari magic"The Hindu। Chennai, India। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০১২ 
  2. Mookerji, Madhumita। "Baluchari silk loses its sheen to Benarasi"DNA। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০১২ 
  3. "Journal 41 GI Application 173" (পিডিএফ)। Controller General of Patents, Designs, and Trade Marks, Government of India। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০১৩ 
  4. "বিষ্ণুপুরের বালুচরী"calcuttaweb.com। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ 
  5. আবেদিন, অনল (২৯ অক্টোবর ২০১৫)। "বালুচরি কার, জমাট বিতর্ক পত্রিকার শারদ সংখ্যায়"আনন্দবজার পত্রিকা। এবিপি গ্রুপ। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ 
  6. কার্লেকর, মালবিকা (২৪ মে ২০১৫)। "History of a weave - Of tapestries, hookahs and howdas"দ্য টেলিগ্রাফ। এবিপি গ্রুপ। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ 
  7. ঘোষ, বিনয় (ডিসেম্বর ২০০৯)। পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি, তৃতীয় খন্ড (পঞ্চম মুদ্রণ, প্রথম সংস্করণ)। প্রকাশ ভবন। পৃষ্ঠা ৫৫। 
  8. ভট্টাচার্য, ডঃ সোমনাথ; বসু, অর্পিতা (ডিসেম্বর, 2007)। চক্রবর্তী, বরুণকুমার, সম্পাদক। বঙ্গীয় লোকসংস্কৃতি কোষ (দ্বিতীয় পরিবর্ধিত, পরিমার্জিত সংস্করণ)। কলকাতা: অপর্ণা বুক ডিস্ট্রিবিউটার্স। পৃষ্ঠা ৩৪০–৩৪১। আইএসবিএন 81-86036-13-X  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য);
  9. Photoloomic ~ Baluchari, Gaatha
  10. পুজোর বাজারে নতুন বালুচরী, স্বর্ণচরী, আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৪ অক্টোবর, ২০১৫
  11. Laura Ashley to sell Bengal craft in UK, Japan, The Times of India, August 4, 2015