বাসবদত্তা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাসবদত্তা - রাজশেখরন পরমেশ্বরনের তৈলচিত্র।

বাসবদত্তা (সংস্কৃত: वासवदत्ता, Vāsavadattā) হল একটি ধ্রুপদী সংস্কৃত রোমান্টিক গল্প (আখ্যায়িকা) যেটি সুবন্ধু লিখেছিলেন একটি অলঙ্কৃত শৈলীতে, এর সময়কাল সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। লেখক সপ্তম শতাব্দীর দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে রচনাটি লিখেছিলেন বলে সাধারণত ধরে নেওয়া হয়।[১] যাইহোক, পণ্ডিত মান সিং বলেছেন যে তিনি গুপ্ত সম্রাট কুমারগুপ্ত প্রথম (৪১৪-৪৫৫) এবং স্কন্দগুপ্তের (৪৫৫-৪৬৭) একজন দরবারী ছিলেন, ৩৮৫ থেকে ৪৬৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কোন এক সময় তিনি বর্তমান ছিলেন।[২]

এই কাজের শৈলীকে "উন্নত, বিস্তৃত, অলঙ্কৃত এবং শিক্ষামূলক" হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং এটি পরবর্তী গদ্য লেখকদের প্রভাবিত করেছে।[২] শিবরাম ত্রিপথিনের কাঞ্চনদর্পণ (১৮শ শতক) এবং জগদ্ধারার তত্ত্বদীপিনী হল বাসবদত্তার সমালোচনা ও ভাষ্যের দুটি উল্লেখযোগ্য রচনা।

বাসবদত্তাকে প্রথম ইংরেজিতে অনুবাদ করেন লুই হার্বার্ট গ্রে, ১৯১৩ সালে যেটি প্রকাশ করেছিল কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস। এটি ১৯০১-৩২ সালের মধ্যে প্রকাশিত ১৩ খণ্ডের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ইন্দো-ইরানিয়ান সিরিজের অষ্টম খণ্ড হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল এবং এর সম্পাদনা করেছিলেন এভি উইলিয়ামস জ্যাকসন।[৩] হরিনাথ দে ১৯০৮ সালে এর একটি ইংরেজি অনুবাদ সম্পন্ন করেছিলেন, কিন্তু ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত এটি প্রকাশিত হয়নি (সংস্কৃত কলেজ, কলকাতা)।[৪]

পটভূমির রূপরেখা[সম্পাদনা]

এই কাজের পটভূমির রূপরেখা নিম্নরূপ:[৫][৬][৭]

রাজা চিন্তামণির পুত্র কন্দর্পকেতু একজন সুদর্শন ও মনোমুগ্ধকর রাজপুত্র। স্বপ্নে, তিনি একবার এক সুন্দরী কন্যার দর্শন পান যার নিখাদ সৌন্দর্য তাকে বিমোহিত করে। তিনি এই সৌন্দর্য্যের সন্ধানে যাত্রা করার সংকল্প করেন। তার বন্ধু মকরন্দ তীব্র আপত্তি করেন এবং বলেন যে, নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে ধারণা না নিয়ে বিজনপ্রদেশে যাত্রা করা বোকামি। কন্দর্পকেতু তাকে দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেন যে এই মেয়েটি তার বহুকালের সঙ্গী ছিল এবং তারা অবশ্যই এই জীবনকালে এবং ভবিষ্যতের প্রতিটি জীবনকালেও একত্রিত হবেন। যাত্রা শুরু করা যাক, ভাগ্য অবশ্যই তাদের পদক্ষেপগুলোকে সঠিক দিকে নির্দেশ করবে।

বন্ধুকে একা যেতে দেওয়ার পরিবর্তে, মকরন্দ তাকে সঙ্গ দেন এবং তারা এই অজানা সৌন্দর্যের সন্ধানে রাজধানী ছেড়ে চলে যান। শীঘ্রই, তারা সাফল্যের দেখা পান। দুই বন্ধু নর্মদা নদীর তীরে একটি গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে শুয়ে পড়েন। এখানে, রাজকুমার তাদের উপরে গাছে বসে থাকা এক জোড়া প্রেম-পাখির মধ্যে কথোপকথন শোনেন। পুরুষ পাখিটি কুসুমপুরের রাজা শৃঙ্গারশেখরের কন্যা বাসবদত্তার চারুতা ও গুণাবলীর প্রশংসা করছিল। পাখিটি আরও প্রকাশ করে যে এই রাজকন্যা নিজের স্বপ্নে এক চমৎকার রাজকুমারের দর্শন পেয়েছিলেন যিনি তার হৃদয়কে আঘাত করেছিলেন। রাজকুমারী তার সঙ্গী বিশ্বস্ত তমালিকাকে এই যুবকটি সম্বন্ধে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছিলেন এবং বাস্তব জীবনে তাকে কখনও দেখতে পাবার ব্যাপারে আশাহীন ছিলেন, কারণ তার ভাগ্য তাকে অন্য পথে নিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়েছিল। পাখিটি রাজকুমারের সম্বন্ধে বর্ণনা শুনেছিল এবং প্রেম-পাখি হওয়ার কারণে সংকল্প করেছিল, দেশের বাইরে উড়ে গিয়ে যুবকটিকে খুঁজে বের করবে এবং তাকে রাজকুমারীর কাছে নিয়ে আসবে।

সংক্ষিপ্তাকারে বললে, পাখিটি কন্দর্পকেতুকে তমালিকার কাছে নিয়ে যায় এবং তমালিকা কুসুমপুরে গিয়ে কন্দর্পকেতুর সাথে বাসবদত্তার দেখা করার ব্যবস্থা করে। তারা দেখা করে এবং তাদের নিজ নিজ স্বপ্নের মাধ্যমে যথাযথভাবে একে অপরকে চিনতে পারে। যাইহোক, কন্দর্পকেতু আতঙ্কের সাথে জানতে পারেন যে বাসবদত্তার পিতা, রাজা শৃঙ্গারশেখর, পরের দিন সকালে বিদ্যাধরদের প্রধান বিজয়কেতুর পুত্র পুষ্পকেতুর সাথে তার বিবাহের ব্যবস্থা করেছেন। কন্দর্পকেতু এবং বাসবদত্তা অবিলম্বে একটি জাদুঘোড়ায় চড়ে বিন্ধ্য পর্বতে পালিয়ে যান, মকরন্দকে কুসুমপুরে রেখে যান।

বিন্ধ্য পর্বতে নিরাপদে পৌঁছে ক্লান্ত প্রেমিকযুগল ঘুমিয়ে পড়েন। কন্দর্পকেতু জেগে উঠে দেখেন বাসবদত্তা নিখোঁজ। তিনি তাকে নিরর্থক অনুসন্ধান করেন এবং তারপরে, দুঃখে পাগল হয়ে নিজের জীবন শেষ করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি যখন জলে ডুবে আত্মহত্যার পথে, তখন আকাশ থেকে একটি কণ্ঠস্বর বেজে ওঠে এবং তাকে প্রতিশ্রুতি দেয় যে তিনি আবার বাসবদত্তার সাথে মিলিত হবেন। কন্দর্পকেতু বেশ কয়েক মাস বিচলিত অবস্থায় বনে ঘুরে বেড়ান। অবশেষে তিনি বাসবদত্তার একটি পাথরের মূর্তি দেখতে পান। তিনি সেটিকে স্পর্শ করেন। অলৌকিকভাবে, পাথরটি জীবন্ত হয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে পরিণত হয় বাসবদত্তায়।

জীবন ফিরে পাওয়ার পর, বাসবদত্তা কন্দর্পকেতুকে বিন্ধ্য পর্বতের অরণ্যে ঘুমিয়ে পড়ার পর যে ঘটনাগুলো ঘটেছিল তার বর্ণনা দেন। তিনি ক্ষুধার্ত হয়ে জেগে উঠেছিলেন এবং খাবার জন্য বন্য ফল খুঁজতে বেরিয়েছিলেন। তারপরে তিনি দুটি সৈন্যদলের মধ্যে পড়ে যান, তাদের প্রত্যেকের নেতৃত্বে যে সেনাপতিরা ছিল তারা প্রথম দর্শনেই তার প্রেমে পড়েছিল এবং তাকে অধিকার করতে চেয়েছিল। যখন তারা একে অপরের সাথে লড়াই করছিল, তখন তিনি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। বনের মধ্য দিয়ে যাত্রার সময়, তিনি অনিচ্ছাকৃতভাবে একজন তপস্বীর আশ্রমে প্রবেশ করেছিলেন এবং তার তপস্যায় বিঘ্ন করেছিলেন। বাসবদত্তার সৌন্দর্যই এখানে অপরাধী; তার নিছক উপস্থিতিই বছরের পর বছরের তপস্যাকে বিঘ্নিত করেছে। সন্ন্যাসী বাসবদত্তাকে অভিশাপ দেন যে তার সৌন্দর্য পাথরে পরিণত হবে এবং যে পুরুষটি তার স্বামী হওয়ার জন্য পূর্বজন্ম থেকে নির্ধারিত হয়েছে তার স্পর্শ পেয়েই তিনি পুনরায় প্রাণবন্ত হয়ে জীবনে ফিরে আসবেন; তাঁর বহু জন্মের স্বামী তাঁর কুহক-সদৃশ স্পন্দনে আত্মভূত হবে এবং তাকে নিয়ন্ত্রণ করবে। এইভাবে একজন নিসঙ্গ, সুন্দরী নারী তার সংস্পর্শে আসা সমস্ত বিপর্যয় দূর করবে। সন্ন্যাসীর অভিশাপে, বাসবদত্তা পাথরে পরিণত হন।

কন্দর্পকেতুর স্পর্শে বাসবদত্তা যে জীবিত হয়েছিলেন তা নিশ্চিত করে যে তিনি পূর্বের জীবনে তার স্বামী ছিলেন, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জীবনকালেও তার স্বামী হবেন। তার পিতা, রাজা শৃঙ্গারশেখর, এটি স্বীকার করেন এবং কন্দর্পকেতুর সাথে তার বিবাহ দেন। দম্পতি কন্দর্পকেতুর পৈতৃক রাজ্যে যান এবং সেখানে সুখে থাকেন।

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Keith, Arthur Berriedale (1993). A History of Sanskrit Literature, Delhi: Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৮১-২০৮-১১০০-৩, p.308
  2. Singh, Maan (1993). Subandhu, New Delhi: Sahitya Akademi, আইএসবিএন ৮১-৭২০১-৫০৯-৭, pp. 9-11.
  3. Keith, A. Berriedale (অক্টোবর ১৯১৪)। "Vāsavadattā by Louis H. Gray": 1100–1104। জেস্টোর 25189260 
  4. Steven Moore, The Novel, An Alternative History: Beginnings to 1600 (Continuum, 2010), 425.
  5. Singh, Maan (1993). Subandhu, New Delhi: Sahitya Akademi, আইএসবিএন ৮১-৭২০১-৫০৯-৭, pp.26-9
  6. Gray, Louis Herbert (1999). Subandhu's Vāsavadattā: a Sanskrit Romance, Delhi: Motilal Banarsidass, pp.28-9
  7. Keith, Arthur Berriedale (1993). A History of Sanskrit Literature, Delhi: Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৮১-২০৮-১১০০-৩, p.309