বাউকুল (ফল)
বাউকুল উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবিত একপ্রকার উচ্চফলনশীল কুল। এটি ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের গবেষণার ফসল। এটি সুস্বাদু, সুমিষ্ট,দৃষ্টিনন্দন। রং, রস, গুণ, সুগন্ধ সর্বদিকে এটি সমৃদ্ধ। এটি বিশেষভাবে অর্থকরী। বাউকুল দেশের অনেক অঞ্চলে আপেল কুল হিসেবেও পরিচিত। বাউকুল-১ প্রজাতির গাছ লাগানোর ৪/৫ মাসের মধ্যে ফল পাওয়া যাবে।এই অল্প সময়ের মধ্যেই একটি গাছ থেকে কমপক্ষে ১০ কেজি কুল পাওয়া যায়। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশে প্রায় ১৫ হাজার টন বাউকুল চাষ হয়েছে।[১] এক-একটি বাউকুলের ওজন ৯০ থেকে ১৪০ গ্রাম যেকানে সাধারণ কুলের ওজন ১০ থেকে ৩০ গ্রাম। বাউকুল ফলাতে সময় লাগে মাত্র ছয় মাস যেখানে সাধারণ কুল উৎপাদনে সময় লাগে দুই থেকে তিন বছর। [২]
উদ্ভাবন
[সম্পাদনা]কুল নামক ফলটির বৈজ্ঞানিক নাম Zizyphus mauritiana। কুলেরই একটি বিশেষ প্রজাতি বাউকুল যা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত উদ্ভিদবিজ্ঞানী প্রফেসর ডঃ এম এ রহিমের নেতৃত্বে গবেষণার ফসল। বাউ = BAU = Bangladesh Agricultural University)। প্রথম দফায় উদ্ভাবিত এই কুলের পূর্ণ নাম রাখা হয়েছে এফটিআইপি-বাউকুল- ১। ফলের গুণাগুণ রক্ষার জন্য বাউকুল-১ কুঁড়ি সংযোজন ও জোড় কলমের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করা হয়। বাউকুল উদ্ভাবনে ১৭ বৎসর সময় লেগেছে।[১] বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারের গবেষণায় এটি আবিষ্কৃত হয়।[২] বাউকুল - ২ ইতোমধ্যে উদ্ভাবিত হয়েছে। এটি অধিকতর রসালো এবং অনেক বেশি মিষ্টি হবে।[৩]
পুষ্টিমূল্য ও ব্যবহার
[সম্পাদনা]এটি সাধারণত পাকা ও টাটকা অবস্থায় খাওয়া হয়। কুলের জাত ও পরিপক্কতার বিচারে এর খাদ্যমানের কিছুটা তারতম্য হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কুল খাদ্য হিসাবে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বিভিন্ন খনিজ লবণ এবং ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি-এর একটি ভালো উৎস হচ্ছে কুল। কুলে সাধারণত ৮৫.৯ ভাগ পানি, ০.৮ ভাগ আমিষ, ০.১ ভাগ স্নেহ, ১২.৮ ভাগ লৌহ থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম শাঁসে ৫৫ ক্যালরি শক্তি, ৭০ আই. ইউ. ক্যারোটিন ও ৫০-১৫০ মিঃ গ্রাঃ ভিটামিন সি বিদ্যমান। কুল শুকিয়েও পরবর্তীকালে ব্যবহারের জন্য ঘরে রেখে দেওয়া যায়। শুকনো কুল ডালের সাথেও বহুল ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া কুল দিয়ে আচার, চাটনী, মোরব্বা, শরবত ও জেলী তৈরি করা যায়। তাছাড়া আয়ুর্বেদ চিকিৎসা শাস্ত্রে কুলের বহুবিদ ব্যবহার উল্লেখ রয়েছে। কুল গাছে Techardia laccad নামক এক প্রকার অতি ক্ষুত্র পোকা লালন করে গালা তৈরী করা যায়।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন"। ২০১০-০১-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১১-২২।
- ↑ ক খ কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধ[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধ