বাংলা ভাই
| বাংলা ভাই | |
|---|---|
![]() | |
| জন্ম | সিদ্দিকুল ইসলাম ১৯৭০ বাগমারা, রাজশাহী, বাংলাদেশ |
| মৃত্যু | ৩০ মার্চ ২০০৭ (বয়স ৩৭) ঝালকাঠি, বাংলাদেশ |
| বিকল্প নাম | বাংলা ভাই |
| পেশা | জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ সামরিক প্রধান |
সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই (১৯৭০ – ৩০ মার্চ ২০০৭) ছিলেন একজন বাংলাদেশি নাগরিক, যিনি ২০০০-এর দশকে জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে পরিচিত হন। তিনি উগ্রপন্থী সংগঠন জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং সংগঠনটির সামরিক শাখার নেতৃত্ব দেন বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০৬ সালের ৬ মার্চ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন এবং পুলিশ ময়মনসিংহে অভিযান চালিয়ে বাংলা ভাই ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে। [১]
পরবর্তীতে সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে তিনি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং ২০০৭ সালের ৩০ মার্চ তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।[২]
জীবনী
[সম্পাদনা]বাংলা ভাই নামে পরিচিত সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাদেশের একজন উগ্রপন্থী যিনি ২০০০-এর দশকে জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন। তিনি গাবতলী উপজেলা, বগুড়া জেলার কান্নিপাড়া গ্রামের নাজির হোসেন প্রামাণিকের পুত্র। বাংলা ভাই দাবি করেছিলেন, তিনি ১৯৯৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেছেন, কিন্তু দ্য ডেইলি স্টার একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৯৯৫ সালে বাংলা বিভাগে "আজিজুর রহমান" কোনো নামের ছাত্র ছিল না।[৩] বাংলা ভাই এই অসঙ্গতির বিষয়ে জানান যে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে বাংলা অধ্যয়ন করেছেন।[৩]
বাংলা ভাই তার শিক্ষা ও পটভূমি সম্পর্কে সাধারণত গোপনীয় ছিলেন। তার সংগঠনের সিনিয়র কর্মকর্তা আমির মৌলানা আবদুর রহমান জানান যে, বাংলা ভাই তারফসরতাজ সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছিলেন। বাংলা ভাই দাবি করেন যে, তিনি ঢাকার দুটি শীর্ষস্থানীয় কোচিং সেন্টারে বাংলা শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন এবং তার ছাত্ররা ভালো ফলাফল করার জন্য তাকে 'বাংলা ভাই' নামে ডেকেছিল। তিনি কোচিং সেন্টারগুলোর কোনো নাম উল্লেখ করেননি।[৩]
বাংলা ভাই কিছু প্রতিবেদনে উল্লিখিত মতানুযায়ী ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, যা তিনি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, "আমি স্কুলে থাকাকালীন ছাত্রলীগকে সমর্থন করতাম, কিন্তু কলেজে ভর্তি হওয়ার পর ছাত্রশিবিরে যোগ দিয়েছি। ১৯৯৫ সালে পড়াশোনা শেষ করার পর শিবির থেকে বেরিয়ে আসি কারণ জামায়াত নারীর নেতৃত্ব গ্রহণ করেছিল, যা তারা পাপ মনে করত।"[৩]
তিনি উগ্র ইসলামপন্থী সংগঠন জেএমজেবি-তে যোগ দেন এবং সেখানে সামরিক বিষয়ক প্রশাসক ও মজলিসে-সুরার (প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী বোর্ড) একজন কার্যকরী সদস্য হিসেবে কাজ করেন। বাংলা ভাই ও তার নেতৃত্বাধীন জেএমজেবি সংখ্যালঘুদের নির্যাতন ও ভয় দেখানোর জন্য কুখ্যাত ছিল।[৪] ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট, তার তত্ত্বাবধানে জেএমজেবি সারা দেশে ৫০০টিরও বেশি বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে একত্রে আক্রমণ চালায়।[৪] ওই বছরের শেষের দিকে একাধিক আত্মঘাতী বোমা হামলার মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এই হামলাগুলোর দায় স্বীকার করে জেএমজেবি বা জামাত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশ।[৪]
জঙ্গি তৎপরতা
[সম্পাদনা]- ২০০৪ সালে বাংলা ভাই উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী এলাকায় সংগঠন পরিচালনা শুরু করেন। তিনি স্থানীয় অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেন।[৪]
- ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামাযত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে প্রায় ৫০০টি ছোট আকারের বোমা বিস্ফোরণ সংঘটিত হয়। বিস্ফোরণগুলোর মাধ্যমে সংগঠনটি নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয়। এতে ২ জন নিহত হন এবং প্রায় ২০০ জন আহত হন।[৫]
- ২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর গাজীপুরে একটি আত্মঘাতী বোমা হামলায় সাতজন নিহত হন, যাদের মধ্যে সন্দেহভাজন বোমা হামলাকারীও ছিল। এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম আত্মঘাতী বোমা হামলা। একই বছরের শেষদিকে চট্টগ্রামে আরেকটি আত্মঘাতী হামলায় দুজন পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয় এবং ১৬ জন আহত হন, যাদের মধ্যে ১৩ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন।[৬]
মৃত্যু
[সম্পাদনা]ঝালকাঠিতে দুই সহকারী বিচারকের হত্যা মামলার রায় অনুসারে, ২০০৭ সালের ৩০ মার্চ বাংলা ভাই (সিদ্দিকুল ইসলাম) ও জেএমবি নেতা শায়খ আব্দুর রহমানসহ ছয় সদস্যকে ফাঁসির আদেশ কার্যকর করা হয়। বিচার বিভাগ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী হিসেবে তাদের দোষী সাব্যস্ত করেছিল।[৭]
পরিবার ও বিচার
[সম্পাদনা]২০১০ সালের ১০ আগস্ট, ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ বাংলা ভাই (সিদ্দিকুল ইসলাম)-এর স্ত্রী ফাহিমা (ছদ্মনাম ফারজানা) এবং জেএমবির দুই সদস্য—সালাহউদ্দিন ওরফে সালীহীন ও আসাদুজ্জামান চৌধুরী ওরফে পানির—প্রত্যেককে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে দোষী সাব্যস্ত করে ২০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। বিচারক মোহাম্মদ রেজাউল ইসলাম এই রায় ঘোষণা করেন।[৮]
ফাহিমা ও সালীহীন ২০০৯ সালের মার্চ মাসে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থেকে গ্রেপ্তার হন। তারা দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে ছিলেন এবং একপর্যায়ে ভুয়া নাম ব্যবহার করে স্থানীয়ভাবে বসবাস করছিলেন। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে বিস্ফোরক ও জঙ্গি কার্যক্রমে ব্যবহৃত সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। মামলাটি র্যাব দায়ের করে।[৮]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Bangladesh militant captured"। Al Jazeera (citing Reuters)। ৬ মার্চ ২০০৬।
- ↑ "শায়খ আব্দুর রহমানসহ এ পর্যন্ত ৭ জেএমবি জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর"। Bangla Tribune। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০২৪।
- 1 2 3 4 Manik, Julfikar Ali (১৩ মে ২০০৪)। "Bangla Bhai active for 6 yrs"। দ্য ডেইলি স্টার। ১৪ জুলাই ২০২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০১৫।
{{সংবাদ উদ্ধৃতি}}:|archive-date=/|archive-url=টাইমস্ট্যাম্প মেলেনি; 27 ফেব্রুয়ারি 2015 প্রস্তাবিত (সাহায্য) - 1 2 3 4 Sengupta, Somini (৩০ মার্চ ২০০৭)। "Bangladesh executes 6 Islamist militants"। The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০১৫।
- ↑ "Top Bangladeshi militant' held"। BBC News। ৬ মার্চ ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০১৫।
- 1 2 Buerk, Roland (২৯ নভেম্বর ২০০৫)। "Bangladesh's escalating extremism"। BBC News। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০১৫।
- ↑ "Bangladesh executes six Islamic militants"। The Guardian। ৩০ মার্চ ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২৫।
- 1 2 "Bangla Bhai's wife, 2 JMB men jailed"। দ্য ডেইলি স্টার। ১১ আগস্ট ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২৫।
