বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা
বাংলাদেশে পারিবার পরিকল্পনা বিষয়ক কাজ সরকারি সংস্থা দ্বারা পরিচালিত হয় এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো সরকারের বিভিন্ন কাজের সাথে জড়িত থাকে।[১][২][৩] বাংলাদেশের পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর হচ্ছে একটি সরকারি সংস্থা।[৪] মেরি স্টপস নামে একটি আন্তর্জাতিক এনজিও বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সেবা প্রদান করে। [৫]
১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ৭৬.৩ মিলিয়ন এবং ২০০১ সালের মধ্যে জনসংখ্যা ১৩০.৫ মিলিয়ন পৌঁছেছিল। [৬] জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের মতে বাংলাদেশে জন্মহার ২.৩, যা বাংলাদেশকে "নিম্ন প্রজনন দেশ" তৈরি করবে।[৭] এই দেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি, এখানে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১০০০ জন মানুষ রয়েছে। [৮] স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ তার মোট প্রজনন হার (টিএফআর) ২.১ এ কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে, যার অর্থ মহিলাদের গড় ২.১ জন বাচ্চা থাকবে। এই প্রজনন হার অপরিবর্তিত থাকলে এবং বিপুল সংখ্যক মানুষের দেশ বদল না ঘটলে বাংলাদেশের জনসংখ্যা অধিক হারে বাড়বেও না, কমবেও না।[৯] সম্প্রতি [কখন?] বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা প্রোগ্রাম দুর্বলতর হয়ে যাচ্ছে। [১০]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]বাংলাদেশে ১৯৫০ সালে মেডিকেল স্বেচ্ছাসেবক এবং সমাজ কর্মীদের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনার উদ্যোগ শুরু হয়। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশ তথা পূর্ব পাকিস্তানে পরিবার পরিকল্পনা শুরু করে। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে দেশের ১ নাম্বার সমস্যা বলে ঘোষণা করে।[১১] স্বাধীনতার পর থেকেই এখানে ব্যাপক হারে জনসংখ্যা বাড়ছে। উচ্চ জন্মহার, দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি এবং অধিক মৃত্যুহারের জন্য এখানে জনসংখ্যা বাড়ছিলো।[৬] ১৯৭৫ সালে এখানে জন্মহার ছিলো ৬.৩, কিন্তু ২০১১ সালে তা ২.৩ এ চলে যায়।[৪] জরিপে দেখা যায় অধিকাংশ মহিলা দুই বা ততোধিক সন্তান জন্ম দিয়ে থাকেন।[১২] ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন ফ্যামিলি প্ল্যানিং অনুসারে ২০১১ সাল পর্যন্ত জন্মহার ২.৩ এ স্থির ছিলো।[১৩] এমনকি মৃত্যুহারও কমে যায়। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক হেলথ সার্ভে অনুসারে ২০১৪ সালে দেখা যায় ১৫ থেকে ১৯ বয়সীদের ৩৩% মেয়ে গর্ভবতী। ৬৬% মহিলা ১৯ বছর বয়সী হওয়ার আগেই প্রথম সন্তান প্রসব করে।[১৪] বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল সহায়তা প্রদান করে।[১৫]
বাল্যবিবাহ
[সম্পাদনা]সরকারি হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের ৬৫% মেয়ের বিয়ে হয় ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই।[১৬] বাল্যবিবাহ হওয়া ৬০% দম্পতির বয়স ১৯ হতেই প্রথম সন্তান হয়। ১০ ভাগ দম্পতির ক্ষেত্রে এই বয়স মাত্র ১৫। [১৭] বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী যৌন সম্মতির বয়স ১৪, যদিও বিবাহপূর্বে সকল যৌন কার্যক্রমকে সামাজিক ভাবে সমর্থন দেয় না।[১৮]
গর্ভনিরোধক
[সম্পাদনা]বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অনুযায়ী দেশে ৪০% দম্পতি কোন ধরনের গর্ভনিরোধক ব্যবহার করে না।[১৬] গর্ভনিরোধক পদ্ধতির মধ্যে এখানে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে গর্ভনিরোধক বিক্রয়ে ভর্তুকি দেয়। [১৯] জাতীয় শিক্ষা পাঠ্যক্রমে প্রজনন স্বাস্থ্য শেখানো হয় না এবং তা পাঠ্যক্রমের অংশও নয়।[২০] পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক পরামর্শ ও গর্ভনিরোধক সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ সরকার নারীদের নিয়োগ দেয়। [২১] বাংলাদেশে অবৈধ গর্ভপাতের উচ্চ হার রয়েছে এবং গর্ভনিরোধক সামগ্রীর প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পেলে তা হ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে। [২২] এ্যাসেনিংল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশে কনডম উৎপাদন শুরু করেছে। [২৩]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Niger minister keen to follow Bangladesh's initiatives"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-০৫-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৪।
- ↑ "Family planning must to make population asset"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৫-০৫-২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৪।
- ↑ "Population growth in Bangladesh"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১০-১১-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৪।
- ↑ ক খ "Progress stagnant for last 4 years"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-০১-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৪।
- ↑ "DHL Bangladesh organises breast and cervical cancer awareness programme | Dhaka Tribune"। Dhaka Tribune (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৩-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৪।
- ↑ ক খ "Population control: Prospects still bleak"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১০-১২-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৪।
- ↑ "Bangladesh now a low fertility country"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৩-০৬-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৪।
- ↑ Nabi, A K M Nurun। "Population Challenges for Bangladesh"। archive.thedailystar.net। The Daily Star। ২০১৭-০৪-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৪।
- ↑ Najma Rizvi (১৬ জুন ২০১৮)। "Healthy Change"। D+C, development and cooperation। সংগ্রহের তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০১৮।
- ↑ "Bangladesh's family planning services have become 'weak': Analyst"। bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৫।
- ↑ "Controlling the population boom"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৩-০১-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৪।
- ↑ "Every Pregnancy is Wanted"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৫-০৮-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৪।
- ↑ "Family planning stuck"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-০১-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৪।
- ↑ "Zero Tolerance to Child Pregnancy"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-১০-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৪।
- ↑ "Maternal Mortality affects development of a country"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-১০-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৫।
- ↑ ক খ "Bali conference calls for higher investments in family planning | Dhaka Tribune"। archive.dhakatribune.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৪-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৪।
- ↑ "Rakibul Hasan wins 120 Under 40 award | Dhaka Tribune"। Dhaka Tribune (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-১১-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৪।
- ↑ "Does Bangladesh have an age of consent? | Dhaka Tribune"। Dhaka Tribune (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৩-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৪।
- ↑ "Modern contraceptive options in Bangladesh"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০২-২৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৪।
- ↑ "Contraceptive use among married adolescent girls"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৩-০৭-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৪।
- ↑ Weiss, Kenneth R. (২০১৪-০৬-০৬)। "How Bangladesh's female health workers boosted family planning"। The Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0261-3077। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৪।
- ↑ "Family planning in Bangladesh | Science and Technology | BBC World Service"। www.bbc.co.uk। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৫।
- ↑ "Made in Bangladesh: contraceptives"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১১-০৮-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৫।