প্রীতিকণা গোস্বামী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
প্রীতিকণা গোস্বামী
জন্ম১৯৫৯
দাম্পত্য সঙ্গীঅমলেন্দু গোস্বামী (বি.১৯৭৭)
সন্তানমহুয়া লাহিড়ী (কন্যা)
অঙ্কিতা রায় (কন্যা)
পুরস্কারজাতীয় পুরস্কার (২০০১)
পদ্মশ্রী (২০২৩)

প্রীতিকণা গোস্বামী (বিবাহের পূর্বে প্রীতিকণা ঘোষ) হলেন পশ্চিমবঙ্গের একজন বিখ্যাত সূচিশিল্পী যিনি বাংলার সুপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী নকশীকাঁথাকে বিশ্বের দরবারে নতুন করে মেলে ধরেছেন [১] এবং তারই স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার - পদ্মশ্রী তে ভূষিত হন। [২]

সংক্ষিপ্ত জীবনী[সম্পাদনা]

পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বর্তমানের সোনারপুরের নয় নম্বর ওয়ার্ডের কামরাবাদ এলাকার বাসিন্দা প্রীতিকণা মাত্র দশ বৎসর বয়সে পিতাকে হারান। অভিভাবকহীন মা ও পাঁচ ভগিনীর চরম দারিদ্র্যের সংসার তাদের। জ্যেঠা মশায়ের আশ্রয়ে গিয়ে প্রীতিকণা স্কুল ফাইনাল পাশ করেন। কিন্তু সেলাইএর কাজকে জীবিকার একমাত্র অবলম্বন করে নেন বান্ধবীর পরামর্শে। নিজের মধ্যেও সেলাইএর কাজে নতুন কিছু করার আগ্রহ ছিল। কলকাতার বালিগঞ্জের এক মাড়োয়ারি ফার্ম থেকে শাড়িতে কাঁথা স্টিচের কাজের অর্ডার বাড়িতে এনে সেলাইএর কাজ শুরু করেন। প্রায় পনের বছর ধরে সেকাজ করতে থাকেন। সতের সদস্যের উদ্বাস্তু পরিবারের অমলেন্দু গোস্বামীর সঙ্গে তার বিবাহ হয় ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে। বিবাহের পর প্রীতিকণা কিন্তু পড়াশোনা চালিয়ে যান। কলকাতার সিটি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়ায় আর পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। দরিদ্র শ্বশুর বাড়িতেও জীবিকার জন্য প্রীতিকণার লড়াই জারি ছিল সেলাইএর কাজে। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে কন্যা মহুয়া'র জন্ম হয়। অবশেষে ক্রাফট কাউন্সিল অব ওয়েস্ট বেঙ্গলের তৎকালীন চেয়ারপার্সন রুবি পাল চৌধুরীর সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে গ্রামের মহিলাদের স্বনির্ভর করে তুলতে গড়ে তোলেন ওয়ার্কশপ। 'কমলাদেবী কাঁথা সেন্টারে' তিনি বিনা পারিশ্রমিকে মহিলাদের সেলাইএর কাজ শেখান। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে ওয়েস্টবেঙ্গল ক্রাফট কাউন্সিল থেকে নকশিকাঁথার কাজের অর্ডার আসে। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে ও তার সঙ্গের মহিলাদের। [৩] প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলাদের যেমন বিনা পয়সার সূচি কলায় শিক্ষা দিয়ে চলেছেন, নিজেও নানাভাবে বাংলার এই অতি পুরাতন শিল্পকর্মকে নতুনভাবে প্রকাশ চেষ্টা করে চলেছেন। তার কর্মজীবন সেই অর্থে শুধু সেলাইয়ের মাধ্যমে শিল্পসৃষ্টি নয়, নারীর ক্ষমতায়নে জন্যও বটে। যে দারিদ্রতার বিরুদ্ধে লড়াই করে তিনি প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন, তা আর পাঁচজন নারীর কাছে প্রেরণাস্বরূপ। [৪] বাংলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা বিস্মৃতপ্রায় হাতের কাজ তথা দেশজ ঐতিহ্যের মণিমাণিক্য এবং তাদের কিছু নমুনা যা কলকাতার গুরুসদয় মিউজিয়ামে সংগৃহীত নিজের দীর্ঘ অভ্যাসের নৈপুণ্যে নতুন করে উপস্থাপন করেছেন প্রীতিকণা। মাঝারি মাপের চৌকো কাপড়ের উপরে সুতোর টানে বৈচিত্র্যময় তার শিল্পের কাজে জ্যামিতিক বিন্যাসের সূক্ষ্মতাও অত্যন্ত চমকপ্রদ। বাংলার অতি পুরাতন শিল্পকর্মের পুনরুদ্ধার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, এমনকি বিদেশেও চর্চিত হয়েছে, কাজের সমাদর মিলেছে। তার হাতের শিল্পকর্ম ইতিমধ্যে প্রদর্শিত হয়েছে ভিক্টোরিয়া অ্যালবার্ট মিউজিয়াম, ফিলাডেলফিয়া মিউজিয়াম অব আর্ট, দ্য ওয়াশিংটন ডিসি টেক্সটাইল মিউজিয়াম এবং হনুলুলু মিউজিয়াম অফ আর্ট প্রভৃতি নানা সংগ্রহশালায়। [৫]

সম্মাননা[সম্পাদনা]

  • ২০০১ খ্রিস্টাব্দে সূচি শিল্পের কাজের জন্য তিনি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম কাছ থেকে পান জাতীয় পুরস্কার[৬]
  • ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার সারাজীবন হস্তশিল্পে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী প্রদান করে। [১][২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "সুচ-সুতোর ফোঁড়ে লেখা হয় বিস্মৃত ইতিহাস"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-১৭ 
  2. "Padma Awards 2023 announced"PIB। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ 
  3. "সোনারপুর থেকে বিদেশে পাড়ি দেয় নকশিকাঁথা, বিনা পারিশ্রমিকে সেলাই শেখান পদ্মশ্রী প্রীতিকণা"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-১৭ 
  4. "অনটনের সঙ্গে লড়াইয়ে হাতিয়ার ছুঁচ-সুতো, প্রীতিকণা বুনেছেন অনেক মেয়ের জীবনও"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-১৭ 
  5. "Bengal: Living in poverty, how Pritikana Goswami revived Nakshi Kantha embroidery"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-১৭ 
  6. "সম্মানিত পদ্মশ্রীতে, বাপ-মা হারা প্রীতিকণার কাঁথার কাজের চর্চা বিদেশেও, লড়াই শুরু ছোট থেকেই"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-১৭