প্রতিধ্বনি প্রকোষ্ঠ
একটি প্রতিধ্বনি প্রকোষ্ঠ (Echo chamber) বলতে একটি প্রাকৃতিকভাবে, অপরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে নির্মিত একটি ফাঁপা বা শূন্যগর্ভ পরিবেষ্টিত স্থানকে বোঝায় যাতে শব্দের অনুরণন ঘটে। পরিকল্পিতভাবে নির্মিত প্রতিধ্বনি প্রকোষ্ঠগুলিকে সাধারণত শব্দধারণের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়। যেমন কোনও টেলিভিশন বা বেতার অনুষ্ঠানের প্রযোজকেরা হয়ত এক ধরনের শ্রুতিবিভ্রম সৃষ্টি করতে চাইতে পারেন, যাতে মনে হয় যে একটি কথোপকথন একটি বৃহৎ কক্ষ বা গুহাতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যন্ত্রে ধারণকৃত উৎস কথোপকথনটিকে একটি প্রতিধ্বনি প্রকোষ্ঠে পুনরায় চালিয়ে মাইক্রোফোন দ্বারা অনুরণনগুলি ধারণ করে এই বিশেষ আবহক্রিয়াগুলি সৃষ্টি করা যায়। বর্তমানে এইসব বিশেষ আবহধ্বনিগুলি সৃষ্টি করার জন্য বিশেষ আবহ সৃষ্টিকারী যন্ত্র (ইফেক্টস ইউনিট) ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হলেও আজও অনেক জায়গায় প্রতিধ্বনি প্রকোষ্ঠের ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন ক্যাপিটল স্টুডিওস নামক প্রতিষ্ঠানের প্রতিধ্বনি প্রকোষ্ঠগুলি বিখ্যাত।
সঙ্গীতে শব্দের প্রতিধ্বনি ও অনুরণন জাতীয় বিশেষ আবহধ্বনির ব্যবহার বহুবিধ এবং এগুলির ইতিহাস বহু শতাব্দী প্রাচীন। পাশ্চাত্যে মধ্যযুগীয় ও রেনেসাঁস পর্বের ধর্মীয় সঙ্গীত রচনাকারীরা গির্জা ও মহাগির্জাগুলির (ক্যাথেড্রাল) অভ্যন্তরে স্বাভাবিকভাবে উৎপন্ন প্রতিধ্বনি ও অনুরণনের জটিল ব্যবস্থাগুলি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখতেন ও এগুলির পূর্ণ ব্যবহার করতেন। শব্দ বা ধ্বনি-সম্পর্কিত এই প্রাথমিক জ্ঞানগুলি পরবর্তীতে ১৭শ, ১৮শ ও ১৯শ শতকে পাশ্চাত্যের গীতিনাট্যশালা (অপেরা হাউজ) ও সঙ্গীত মিলনায়তনগুলির নকশায় উপকারী ভূমিকা পালন করেছিল। বৈদ্যুতিক বিবর্ধনের যুগের আবির্ভাবের আগে স্থপতিরা তাদের নকশায় অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের সৃষ্টি করার ব্যবস্থা রাখতেন যাতে মঞ্চ থেকে আগত শব্দ বা ধ্বনিগুলিকে জোরালো ও বহুদূরে অভিক্ষিপ্ত করা যায়। কখনও কখনও স্থপতি বা প্রকৌশলীর নকশার একটি অযাচিত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রতিধ্বনি ক্রিয়ার সৃষ্টি হতো, যেমন স্কটল্যান্ডের হ্যামিল্টন সমাধিমন্দির; এটিতে যে অনুরণনের সৃষ্টি হয়, তাঁর সময়কাল যেকোনও ভবনের তুলনায় সবচেয়ে দীর্ঘগুলির একটি।