পঙ্কজ গুপ্ত
পঙ্কজ গুপ্ত | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ৫ মার্চ ১৯৭১ | (বয়স ৭১)
পেশা | ক্রীড়া প্রশাসক ও ক্রীড়া সাংবাদিক |
পঙ্কজ গুপ্ত বা পঙ্কজকুমার গুপ্ত এমবিই, [১] (১০ সেপ্টেম্বর ১৮৯৯ - ৫ মার্চ ১৯৭১) [২] ছিলেন পেশাদার ফুটবল , হকি এবং ক্রিকেটের সাথে জড়িত প্রথম সারির ভারতীয় ক্রীড়া প্রশাসকদের একজন। পেশাদার হকিতে রেফারি, ম্যানেজার, প্রশাসকসহ বিভিন্ন পদে যুক্ত থাকার কারণে তিনি ধ্যানচাঁদের দেওয়া মিস্টার হকি ডাকনামে সর্বাধিক পরিচিতি লাভ করেছিলেন। [৩] ক্রিকেটের গডফাদার 'ডন ব্র্যাডম্যান' তাকে "পিটার গুপ্ত" বলতেন। বাংলা তথা ভারতের সর্বকালের সেরা ক্রীড়া প্রশাসক ছিলেন তিনি। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের প্রথম অলিম্পিক গেমসে ভারতীয় দলের স্বর্ণপদক লাভ হয়েছিল এই বাঙালি কোচে নেতৃত্বে।[৪]তিনি ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতের জাতীয় ফুটবল দলের প্রথম প্রধান কোচ হন এবং ভারতীয় দলের অস্ট্রেলিয়া সফরে দলকে পরিচালিত করেন।[৫]
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]পঙ্কজ গুপ্তের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের ঝালকাঠি জেলার মগড়ে।
তিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজ থেকে আই. এ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবাসী কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন।
তিনি ব্যাঙ্ক কর্মচারী ছিলেন এবং কলকাতায় পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে কাজ করতেন। তারই ভূমিকায় ও সুপারিশে ব্যাঙ্ক ১৯২৮, ১৯৩২ এবং ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে অলিম্পিকে সোনা জয়ী ভারতীয় হকি দলকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছিল।[৬] খেলার জগতে পঙ্কজ গুপ্তর প্রথম পরিচয় একজন বিখ্যাত হকি আম্পায়ার হিসাবে। পঙ্কজ গুপ্ত স্পোর্টিং ইউনিয়ন ক্লাবের প্রতিনিধি হিসেবে ভারতীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের প্রশাসনে আসেন। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে জাভা সফরকারী আইএফএ দলের ম্যানেজার হন।[২]
১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক গেমস দিয়ে শুরু করে ইউরোপ এবং আমেরিকার বহু দেশে কোচ, ম্যানেজার বা ডেলিগেট হিসাবে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন। [৭] বিশ্ব ফুটবল কংগ্রেসে দু-বার ভারতের প্রতিনিধিত্ব করে ফুটবল দল নিয়ে রাশিয়ায় যান। ভারতীয় ক্রিকেট দলের ম্যানেজার হয়ে ১৯৪৬ এবং ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড, ১৯৪৭-৪৮ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রেলিয়া সফর করেন। ভারতীয় হকি দল নিয়ে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বহু স্থান সফর করেন। [২] [৭]
ধ্যানচাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক
[সম্পাদনা]কিংবদন্তি হকির জাদুকর ধ্যানচাঁদের প্রথম কোচ ছিলেন পঙ্কজ গুপ্ত। ধ্যানচাঁদের আসল নাম 'ধ্যান সিং'কে "ধ্যানচাঁদ" বা "চাঁদ" উপাধি দিয়েছিলেন তিনি। ভবিষ্যদ্বাণীও করেছিলেন যে একদিন তিনি চাঁদের মতোই উজ্জ্বল হবেন। দুজনের সম্পর্ক এত নিকট ছিল যে, ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে 'ঝাঁসি হিরোজ' এর হয়ে ধ্যানচাঁদ 'ক্যালকাটা কাস্টমস'-র বিরুদ্ধে 'বেইটন কাপ'-এ অংশ নিতে কলকাতায় গিয়েছিলেন তখন সমস্ত খেলোয়াড় হোটেলেই ছিলেন, কিন্তু ধ্যানচাঁদ ছিলেন পঙ্কজ গুপ্তের সঙ্গেই। [৮]ধ্যানচাঁদের পঙ্কজ গুপ্তকে নিয়ে অনেক কাহিনী আছে। হল্যান্ডের গ্রামাঞ্চলে গাড়ি চালাতে গিয়ে এমন এক কাহিনী উল্লেখ করতে গিয়ে ধ্যানচাঁদ বলেন - "পঙ্কজ গুপ্ত ও আমরা একবার হল্যান্ডের 'ড্রুর্ন' যাওয়ার পথে গ্রামাঞ্চলের সরু গ্রাম্য পথের মধ্য দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলেছি। আমরা লক্ষ্য করি, ডাচ মহিলারা ডাইক তথা রাস্তার আলে থেকে ধরা তাজা মাছ নিয়ে রাস্তায় সারিবদ্ধ ভাবে যাচ্ছেন। পঙ্কজ গুপ্ত সে দৃশ্য দেখে মন্তব্য করেন, এ যে আমাকে বাংলার গ্রামের কথা মনে করিয়ে দেয়। ডাচ মহিলারা তাদের রঙিন পোশাকে ও খড়ম পায়ে সাধারণ গ্রামীণ ডাচ দৃশ্য উপস্থাপন করেছিলেন। [৯] [১০] [১১]
ক্রীড়া প্রশাসন
[সম্পাদনা]পঙ্কজ গুপ্ত ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে একটানা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বেঙ্গল হকি অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি ছিলেন।[১২] তিনি ভারতীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে অফিসিয়াল পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ছিলেন । প্রতিষ্ঠার বছরে তিনি সংগঠনের সাম্মানিক কোষাধ্যক্ষ ছিলেন এবং পরবর্তীকালে সভাপতি হয়ে ছিলেন। [১৩]ন্যাশনাল ক্রিকেট ক্লাব প্রতিষ্ঠা এবং ইডেন গার্ডেনে স্টেডিয়াম নির্মাণে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে নববর্ষের সম্মানী তালিকায়, ক্রীড়া প্রশাসনে তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার তাকে অর্ডার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার সদস্য (এমবিই) নিযুক্ত করে। [২][১]
শেষে তিনি ক্রীড়া-সাংবাদিকতাকে বৃত্তি হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন।[২]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "নং. 36309"। দ্যা লন্ডন গেজেট (সম্পূরক) (ইংরেজি ভাষায়)। ৩১ ডিসেম্বর ১৯৪৩।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ৩৮১, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
- ↑ O'Brien, Barry। "All hail hockey on history high"। The Telegraph। Eye on Calcutta। সংগ্রহের তারিখ 13 April 2007। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "হকিতে ভারতের প্রথম অলিম্পিক সোনা জয় হয়েছিল বাঙালি হকি কোচের নেতৃত্বে"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-৩১।
- ↑ "1938 Indian Tour of Australia"। ozfootball.net। Australian Online Football Museum। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- ↑ "The Hi- Fi Five Coach who transformed India and Sporting Future"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-৩১।
- ↑ ক খ Sengupta, Subodh Chandra and Bose, Anjali (editors), 1976/1998, Sansad Bangali Charitabhidhan (Biographical dictionary) Vol I, (বাংলা ভাষায়), p. 279, আইএসবিএন ৮১-৮৫৬২৬-৬৫-০.
- ↑ "The Beighton Cup"। bharatiyahockey.org। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০০৭।
- ↑ "Autobiography of Hockey Wizard – Dhyan Chand"। Olympic Champions। Sify.com। ৩১ ডিসেম্বর ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০০৭।
- ↑ "Olympic Hockey Final"। Autobiography of Hockey Wizard Dhyan Chand। bharatiyahockey। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০০৭।
- ↑ "India Hockey"। indianhockey.com। ২২ মার্চ ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০০৭।
- ↑ "Bengal Hockey Association"। Catchcal। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০০৭।
- ↑ "All India Football Federation"। AIFF History। All India Football Federation। ২ এপ্রিল ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০০৭।
- ভারতীয় ফুটবলার
- কলকাতার ফুটবলার
- অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার পদক বিজয়ী
- ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসক
- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- সংস্কৃত কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- ১৯৭১-এ মৃত্যু
- ১৮৯৮-এ জন্ম
- ঢাকা জেলার ব্যক্তি
- কলকাতা থেকে আগত ক্রিকেটার
- ভারতীয় ক্রীড়া নির্বাহী ও প্রশাসক
- ভারতীয় ক্রিকেটার
- ভারতীয় পুরুষ ফিল্ড হকি খেলোয়াড়
- কলকাতার ফিল্ড হকি খেলোয়াড়