নেট শূন্য নির্গমন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিভিন্ন সম্ভাব্য পরিস্থিতিতে ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির সম্ভাবনা: সবুজ বিন্দু: আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার (International Energy Agency) ২০৫০ সালের মধ্যে শক্তি-সম্পর্কিত নির্গমনকে নিট-শূন্যে নামিয়ে আনার প্রস্তাবনাটি বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১.৫°C এ সীমাবদ্ধ রাখার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। হলুদ বিন্দু: নিট-শূন্য অঙ্গীকার এবং নির্গমন হ্রাসের অন্যান্য প্রতিশ্রুতি তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে প্রায় ১.৭°C এ সীমাবদ্ধ করতে পারে। নীল বিন্দু: যেহেতু অনেক জলবায়ু-সংক্রান্ত অঙ্গীকার নীতিমালা দ্বারা সমর্থিত নয়, ২০২২ সালের হিসাবে ঘোষিত নীতিমালা তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে প্রায় ২.৫°C এ সীমাবদ্ধ করতে পারে। লাল বিন্দু: ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির আগে, পৃথিবী ৩.৫°C বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির পথে ছিল।[১]

বিশ্বব্যাপী নিট-শূন্য নিঃসরণ এমন একটি অবস্থাকে বর্ণনা করে যেখানে মানুষের কাজের কারণে কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমন এবং ওই গ্যাসের অপসারণ একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় থাকে। একে প্রায়শই শুধুমাত্র নিট-শূন্য হিসাবে অভিহিত করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে, "নির্গমন" বলতে সমস্ত গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমনকে বোঝায়, আবার কিছু ক্ষেত্রে এটি শুধুমাত্র কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) এর নিঃসরণকে নির্দেশ করে।

নিট-শূন্য লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর জন্য নির্গমন হ্রাস করার পদক্ষেপ প্রয়োজন। জীবাশ্ম জ্বালানির শক্তি থেকে টেকসই শক্তির উৎসে স্থানান্তরিত হওয়ার মাধ্যমে এটির একটি উদাহরণ তৈরি করা যায়। প্রতিষ্ঠানগুলি প্রায়শই কার্বন ক্রেডিট কিনে অবশিষ্ট নিঃসরণের ভারসাম্য বজায় রাখে। মানুষ প্রায়ই নিট-শূন্য নিঃসরণ, কার্বন নিরপেক্ষতা এবং জলবায়ু নিরপেক্ষতার পরিভাষাগুলোকে একই অর্থে ব্যবহার করে। তবে কিছু ক্ষেত্রে, এই শব্দগুলির একে অপরের থেকে আলাদা আলাদা অর্থ রয়েছে। কার্বন নিরপেক্ষতার প্রমাণীকরণের কিছু মান নিবিড় কার্বন অফসেটিংয়ের সুযোগ দেয়। তবে, নিট-শূন্য মানের লক্ষ্য হচ্ছে নিঃসরণ ৯০% এর বেশি কমানো এবং তারপরে ১.৫°C তাপমাত্রার লক্ষ্যমাত্রার সাথে সঙ্গতি রেখে শুধুমাত্র অবশিষ্ট <১০% এর ভারসাম্য বজায় রাখা।

গত কয়েক বছরে, নিট-শূন্যই জলবায়ু-সম্পর্কিত লক্ষ্য বা আকাঙ্ক্ষার প্রধান কাঠামো হয়ে উঠেছে। দেশ ও প্রতিষ্ঠান উভয়ই নিট-শূন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করছে। আজ ১৪০ টিরও বেশি দেশের নিট-শূন্য নির্গমন লক্ষ্য রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কিছু দেশ যারা বিগত দশকগুলোতে জলবায়ু-বিষয়ক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ছিল। দেশ-স্তরে নিট-শূন্য লক্ষ্যমাত্রা এখন বিশ্বব্যাপী GDP-র ৯২%, নির্গমনের ৮৮% এবং বিশ্বের ৮৯% জনসংখ্যাকে অন্তর্ভুক্ত করে। বার্ষিক আয় হিসেবে বৃহত্তম ২,০০০ টি সর্বজনীনভাবে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৫%-এর নিট-শূন্য লক্ষ্য রয়েছে। বৃহত্তম ৫০০ টি মার্কিন কোম্পানিগুলোর (Fortune 500) মধ্যে শতাংশটি হচ্ছে ৬৩%। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ড এবং সরকারী নিয়ন্ত্রণ উভয়ের ফলাফল হতে পারে।

নিট-শূন্যের দাবির বিশ্বাসযোগ্যতা কতটা- তা নিয়ে ব্যাপক পার্থক্য আছে। বেশিরভাগেরই নিম্ন বিশ্বাসযোগ্যতা আছে। বাড়তি প্রতিশ্রুতি ও লক্ষ্যমাত্রার পরেও এই বিষয়টিই দেখা যায়। যদিও বিশ্বব্যাপী কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের ৬১% কোনও না কোনও ধরনের নিট-শূন্য লক্ষ্যের আওতায় পড়ে, নির্ভরযোগ্য লক্ষ্যগুলি নির্গমনের মাত্র ৭% আবদ্ধ করে। এই নিম্ন বিশ্বাসযোগ্যতা বাধ্যতামূলক নিয়ন্ত্রণের অভাবকেই প্রতিফলিত করে। ডিকার্বোনাইজেশনকে সম্ভব করতে অবিচ্ছিন্ন উদ্ভাবন এবং বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কারণেও এরূপ অবস্থা।

আজ পর্যন্ত, ২৭টি দেশে ঘরোয়া নিট-শূন্য আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। আইনসভায় পাস হওয়া আইনগুলিতে নিট-শূন্য লক্ষ্য বা এর সমতুল্য কিছু লেখা থাকে। বর্তমানে এমন কোনও জাতীয় নিয়ন্ত্রণ চালু নেই যা আইনত কোনও দেশভিত্তিক প্রতিষ্ঠানকে নিট-শূন্য অর্জন করতে বাধ্য করে। সুইজারল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশ এইধরণের আইন তৈরি করছে।

ইতিহাস এবং বৈজ্ঞানিক যুক্তি[সম্পাদনা]

Net-zero বা নিট-জিরো অর্থাৎ বায়ুমণ্ডলে শূন্য কার্বন নিঃসরণ করার ধারণাটি ২০০০-এর দশকের শেষের দিকে গবেষণার মাধ্যমে এসেছে। তখনকার গবেষণায় দেখা যায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড (CO2) এবং অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ বায়ুমণ্ডল, মহাসাগর এবং কার্বন চক্রে কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এই গবেষণায় এটি পাওয়া যায় যে, CO2 নিঃসরণ নিট-জিরোতে আনতে না পারলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন থামানো সম্ভব হবে না। প্যারিস চুক্তিতে নিট-জিরো অর্জনের লক্ষ্যকে ভিত্তি হিসেবে নেয়া হয়েছিল। এই চুক্তিতে বলা হয়েছে যে, "এই শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে মানুষের সৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন এবং প্রাকৃতিকভাবে গ্যাস শোষণের মধ্যে একটি ভারসাম্য অর্জন করতে হবে।"

২০১৮ সালে ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (IPCC) '১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বৈশ্বিক উষ্ণায়ন' বিষয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর পর থেকে 'নিট-জিরো' শব্দটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "মানবসৃষ্ট CO2 নিঃসরণ নিট-জিরোতে নিয়ে আসা এবং বাকি গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাব কমানো বহু-দশকের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধ করবে।"

নিট-জিরো নিঃসরণের ধারণাটিকে প্রায়ই "বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের ঘনত্ব স্থিতিশীল করা" -এর সাথে গুলিয়ে ফেলা হয়। দ্বিতীয় ধারণাটি ১৯৯২ সালের রিও কনভেনশন থেকে এসেছে। এই দুটি ধারণা এক নয়। কেননা কার্বন চক্র প্রতিনিয়ত একটা ক্ষুদ্র অংশ কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে নেয় যা মানুষের কার্যকলাপের ফলে পূর্বে নির্গত হয়েছিল। এটি বর্তমান CO2 নিঃসরণ শূন্যের দিকে নিয়ে এলেও চলতে থাকে। যদি বায়ুমণ্ডলে CO2 এর ঘনত্ব স্থির রাখা হয়, কিছু CO2 নিঃসরণ বজায় থাকতে পারে। তবে গভীর সমুদ্রের তাপমাত্রার ধীর সমন্বয়ের কারণে বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি কয়েক শতাব্দী ধরে চলতে থাকবে। যদি মানুষের কার্যকলাপের সরাসরি ফলে যে CO2 নির্গত হয় তা নিট-জিরোতে নামিয়ে আনা যায়, তবে বায়ুমণ্ডলে CO2-এর ঘনত্ব কমতে থাকবে। এভাবে গভীর সমুদ্রের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে এবং বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা দশক বা শতাব্দী ধরে প্রায় ধ্রুব থাকবে।

কেবল CO2 নিঃসরণের তুলনায় CO2-সহ অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি যেমন মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড এবং ফ্লোরিনেটেড গ্যাসের নিঃসরণ নিট-জিরোতে আনা আরো সময়সাপেক্ষ হবে। এসব গ্যাসের জন্য নিট-জিরো লক্ষ্যমাত্রার তারিখ পরবর্তীতে রাখার কারণ হলো, মডেলাররা ধরে নিয়েছেন যে কৃষিকাজ থেকে নির্গত মিথেনের মতো কিছু গ্যাস পরিত্যাগ করা খুবই কঠিন।

মিথেনের মতো স্বল্পস্থায়ী গ্যাসগুলি জলবায়ু ব্যবস্থায় যেভাবে CO2 জমা হয় সেভাবে জমা হয় না। তাই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন থামাতে এগুলোকে শূন্যের দিকে আনার প্রয়োজন নেই। কারণ স্বল্পস্থায়ী গ্যাসের নির্গমন হ্রাস পেলে তা পৃথিবীর শক্তির ভারসাম্যে যে তাৎক্ষণিক পরিবর্তনটি ঘটায় তাও হ্রাস পায়। যাইহোক, এই শক্তিশালী কিন্তু স্বল্পস্থায়ী গ্যাসগুলি স্বল্পমেয়াদে তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে দেবে। এটি সম্ভবত তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সীমা অতিক্রম করতে বাধ্য করবে। একটি ব্যাপক নিট-জিরো নির্গমন লক্ষ্যে সমস্ত গ্রিনহাউস গ্যাস অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এটি নিশ্চিত করবে যে আমরা জরুরি ভিত্তিতে অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোও হ্রাস করব।

পরিভাষা[সম্পাদনা]

কার্বন নিরপেক্ষতা, নেট জিরো, এবং জলবায়ু নিরপেক্ষতা - এই তিনটি শব্দ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আলোচনায় প্রায়শই একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। তবে, নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে, তাদের মধ্যে কিছু সূক্ষ্ম পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।

কার্বন নিরপেক্ষতা

কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) এবং অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস (GHG) নির্গমন কমিয়ে এবং বনায়ন, কার্বন ক্যাপচার এবং স্টোরেজ (CCS) এর মতো প্রক্রিয়া ব্যবহার করে পরিবেশে CO2 অপসারণ করে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জন করা সম্ভব। সহজ কথায়, কার্বন নিরপেক্ষতা বলতে বোঝায় বায়ুমণ্ডলে নির্গত CO2-এর পরিমাণ কমিয়ে এবং অপসারণ করে 0 (শূন্য) স্তরে নিয়ে আসা।

নেট জিরো

নেট জিরো বলতে বোঝায় বায়ুমণ্ডলে নির্গত CO2-এর পরিমাণ এবং অপসারিত CO2-এর পরিমাণ সমান হওয়া। অন্য কথায়, যত CO2 নির্গত হবে, ঠিক ততটাই CO2 অপসারণ করা হবে, যার ফলে বায়ুমণ্ডলে CO2-এর পরিমাণে কোন পরিবর্তন হবে না।

জলবায়ু নিরপেক্ষতা

জলবায়ু নিরপেক্ষতা বলতে বোঝায় CO2 সহ সকল GHG নির্গমন কমিয়ে এবং অপসারণ করে 0 (শূন্য) স্তরে নিয়ে আসা। এটি কেবল CO2-এর মাত্রায় সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং সমস্ত GHG-এর উপর প্রযোজ্য। জলবায়ু নিরপেক্ষতা অর্জনের জন্য, কার্বন নিরপেক্ষতা ছাড়াও, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড এবং অন্যান্য GHG নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করা অপরিহার্য।

বাস্তবায়ন[সম্পাদনা]

২০১৫ সাল থেকে, বহু সংস্থা এবং ব্যক্তি নেট জিরো নির্গমন অর্জনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই নেট জিরো ধারণাটি ব্যাখ্যা করতে এবং লক্ষ্য অর্জনের অগ্রগতি পরিমাপ করতে অনেক মানদণ্ড তৈরি হয়েছে। তবে এই মানগুলোর মধ্যে কিছু অন্যদের তুলনায় বেশি কঠোর। নিন্মমানের নীতিগুলিকে গ্রিনওয়াশিংকে সহজতর করার জন্য সমালোচনা করা হয়েছে। জাতিসংঘ, ইউএনএফসিসিসি, ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন (ISO), এবং সায়েন্স বেসড টার্গেটস ইনিশিয়েটিভ (SBTi) আরও নির্ভরযোগ্য মান প্রচারে জোর দিয়েছে।

গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রকার[সম্পাদনা]

কিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করে শুধুমাত্র কার্বন ডাই অক্সাইডের নিট শূন্য নির্গমন অর্জন করার জন্য। আবার অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রা সমস্ত গ্রিনহাউস গ্যাসের নিট শূন্য নির্গমন বাস্তবায়নে কাজ করে। সুনির্দিষ্ট নিট শূন্য মানদণ্ড অনুযায়ী, একজন নির্দিষ্ট অভিনেতার (actor) লক্ষ্য দ্বারা সমস্ত গ্রিনহাউস গ্যাস অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

কিছু লেখক উল্লেখ করেন যে, কার্বন নিরপেক্ষতার কৌশল শুধুমাত্র কার্বন ডাই অক্সাইডের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। কিন্তু নিট শূন্য নীতিমালায় সমস্ত গ্রিনহাউস গ্যাস অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যদিও ফ্রান্সের জাতীয় কৌশলের মতো কিছু প্রকাশনায়, সমস্ত গ্রিনহাউস গ্যাসের নিট নির্গমন হ্রাস করাকে বোঝাতে "কার্বন নিরপেক্ষ" শব্দটি ব্যবহৃত হয়।

যুক্তরাষ্ট্র ২০৫০ সালের মধ্যে "নিট শূন্য" নির্গমন অর্জন করার অঙ্গীকার করেছে। ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশটি এখনও নির্দিষ্ট করেনি যে, তাদের এই লক্ষ্যমাত্রায় কোন কোন গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

নির্গমণ ক্ষেত্র ব্যাখ্যা

গ্রিনহাউস গ্যাস প্রোটোকল হল GHG অ্যাকাউন্টিং-এ সর্বাধিক ব্যবহৃত মানগুলির একটি গ্রুপ। এই মানগুলি বেশ কিছু অ্যাকাউন্টিং নীতি প্রতিফলিত করে, যার মধ্যে রয়েছে প্রাসঙ্গিকতা, সম্পূর্ণতা, সামঞ্জস্য, স্বচ্ছতা এবং নির্ভুলতা। এই মানগুলি নির্গমনকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করে:

  • স্কোপ ১: একটি কর্পোরেট সীমার মধ্যে সমস্ত প্রত্যক্ষ GHG নির্গমনকে কভার করে (একটি কোম্পানির মালিকানাধীন বা নিয়ন্ত্রিত)। এর মধ্যে রয়েছে কোম্পানির দ্বারা পোড়ানো জ্বালানি, কোম্পানির যানবাহন ব্যবহার এবং পলাতক নির্গমন।
  • স্কোপ ২: কেনা বিদ্যুৎ, তাপ, শীতল বা বাষ্পের ব্যবহার থেকে পরোক্ষ GHG নির্গমনকে কভার করে। ২০১০ সাল পর্যন্ত, বিশ্বব্যাপী GHG নির্গমনের অন্তত এক তৃতীয়াংশ হল স্কোপ ২ এর অধীনে।
  • স্কোপ ৩: সরবরাহকারী এবং পণ্য ব্যবহারকারীদের (যাকে "মূল্য শৃঙ্খল"ও বলা হয়) থেকে নির্গমন অন্তর্ভুক্ত করে। পণ্য পরিবহন, এবং অন্যান্য পরোক্ষ নির্গমনও এই স্কোপের অংশ। কার্বন ডিসক্লোজার প্রকল্পে রিপোর্ট করা সকল নির্গমনের ৭৫% হল স্কোপ ৩ থেকে আসে বলে ধারণা করা হয়, যদিও এই শতাংশ ব্যবসায়িক খাতগুলির মধ্যে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়।

কর্পোরেট নেট জিরো লক্ষ্যগুলি কোম্পানির কার্যক্রমের সাথে সম্পর্কিত নির্গমনগুলিকে কতটা ব্যাপকভাবে কভার করে তা নিয়ে পরিবর্তিত হতে পারে। এটি গণনা করা নির্গমনের পরিমাণকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু তেল কোম্পানি দাবি করে যে তাদের কার্যক্রম (স্কোপ ১ এবং ২) নেট জিরো নির্গমন তৈরি করে। এই দাবিগুলিতে তেলটি যখন তার গ্রাহকদের দ্বারা পোড়ানো হয় তখন উৎপন্ন নির্গমনগুলিকে কভার করে না, যেগুলো তেল-সম্পর্কিত নির্গমনের ৭০ - ৯০%। এর কারণ এগুলিকে স্কোপ ৩ নির্গমন হিসাবে গণনা করা হয়।

দৃঢ় নেট জিরো মানের জন্য স্কোপ ৩ নির্গমন গণনা করা প্রয়োজন, কিন্তু "কার্বন নিরপেক্ষতা" মানের ক্ষেত্রে তা হয় না।

নেট জিরো নির্গমন অর্জনের উপায়[সম্পাদনা]

"কার্বন নিরপেক্ষ" এবং "নেট জিরো" শব্দগুলি প্রায়ই রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং বিজ্ঞানীরা একে অপরের পরিবর্তে ব্যবহার করেন। কিছু বিশেষজ্ঞ এই শব্দগুলিকে ভিন্নভাবে ব্যবহার করেন, যা এই চিত্র দ্বারা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।[২]

একজন নির্দিষ্ট কর্মী বা সংস্থা বিভিন্ন ধরনের উপায়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে নেট জিরো নির্গমন অর্জনের পরিকল্পনা করতে পারেন। এগুলোর মধ্যে থাকবে (১) নিজেদের নির্গমন কমানোর পদক্ষেপ, (২) বায়ুমণ্ডল থেকে সরাসরি কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণের পদক্ষেপ, এবং (৩) কার্বন ক্রেডিট ক্রয়ের পদক্ষেপ।

নির্গমন হ্রাস করা[সম্পাদনা]

সুদৃঢ় নেট জিরো নীতিমালায় কর্মী বা সংস্থাগুলিকে বিজ্ঞান-ভিত্তিক পথ অনুসরণ করে যথাসম্ভব নিজস্ব কার্বন নির্গমন হ্রাস করা প্রয়োজন। এরপর অবশিষ্ট নির্গমনগুলো কার্বন অপসারণ এবং অফসেট ব্যবহার করে সামঞ্জস্য আনতে হবে। এর মধ্যে সাধারণত জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে টেকসই জ্বালানি উৎসে স্থানান্তর করা জড়িত। অবশিষ্ট নির্গমন বলতে বোঝায় সেই নির্গমন যেগুলো প্রযুক্তিগত কারণে কমানো সম্ভবপর নয়।

বিশেষজ্ঞরা এবং নেট জিরো নীতিমালায় কত শতাংশ অবশিষ্ট নির্গমন অনুমোদিত হতে পারে সে বিষয়ে একমত নন। বেশিরভাগ নির্দেশনা থেকেই বোঝা যায় যে এটি মোট নির্গমনের একটি নগণ্য ভগ্নাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। ক্ষেত্র-বিশেষ এবং ভৌগলিক কারণগুলি এটির পরিমাণ নির্ধারণ করে। বিজ্ঞান-ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রার উদ্যোগ (Science Based Targets initiative) বলে যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অবশিষ্ট নির্গমন একটি প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক নির্গমনের ৫-১০% এর মধ্যে হওয়া উচিত। বিদ্যুৎ খাতের মতো যেসব খাতে প্রতিযোগিতামূলক বিকল্প রয়েছে সেগুলোর জন্য এটি আরও কম হওয়া উচিত। যেসব খাতে কার্বন নির্গমন দূর করা কঠিন, যেমন ভারী শিল্পে, সম্ভবত ২০৫০ সালের মধ্যে অবশিষ্ট নির্গমনের একটি উচ্চতর শতাংশ থাকবে।

ISO এবং ব্রিটিশ স্ট্যান্ডার্ডস ইনস্টিটিউশন (BSI) "কার্বন নিরপেক্ষতা" মান প্রকাশ করে যেগুলি "নেট জিরো" মানের চেয়ে অবশিষ্ট নির্গমনের জন্য উচ্চতর মাত্রার সহনশীলতা রাখে। উদাহরণস্বরূপ, BSI PAS 2060 হল কার্বন নিরপেক্ষতা পরিমাপ করার জন্য একটি ব্রিটিশ মান। এই মানগুলি অনুসারে, কার্বন নিরপেক্ষতা একটি স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য, এবং নেট জিরো হল একটি দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য।

কার্বন অপসারণ এবং অফসেট[সম্পাদনা]

অবশিষ্ট নির্গমনকে সামঞ্জস্য করতে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বায়ুমণ্ডল থেকে সরাসরি কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণ করার ব্যবস্থা নিতে পারে। বিকল্পভাবে বা অতিরিক্ত হিসেবে, তারা "অফসেট" কার্বন ক্রেডিট কিনতে পারে যা নির্গমন হ্রাস করে। পুনরায় বনায়নের মত কার্বন অপসারণ প্রকল্পে তহবিলের জন্য এই কার্বন ক্রেডিট ব্যবহার করা যেতে পারে।

ISO এবং BSI "নেট জিরো" মানের মতো শক্তিশালী মানগুলি শুধুমাত্র অপসারণ-ভিত্তিক অফসেটগুলিকে অনুমোদন করে। এই অফসেটে তাদের ভারসাম্য রক্ষাকারী গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির মতো একই স্থায়িত্ব থাকে। আমরা এই ধারণাকে "লাইক ফর লাইক" রিমুভাল বলি। স্থায়িত্বের অর্থ হল যে অপসারণগুলি অবশ্যই গ্রীনহাউস গ্যাসগুলিকে একই সময়ের জন্য সঞ্চয় করতে হবে যতক্ষণ এই গ্যাসগুলি তাদের ভারসাম্য বজায় রাখে। উদাহরণস্বরূপ, মিথেনের আয়ুষ্কাল বায়ুমণ্ডলে প্রায় ১২ বছর। কার্বন ডাই অক্সাইড ৩০০ থেকে ১০০০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। সেই অনুযায়ী, কার্বন ডাই অক্সাইডের ভারসাম্য রক্ষা করে এমন অপসারণগুলি মিথেনের ভারসাম্য রাখার অপেক্ষাকৃত দীর্ঘস্থায়ী হতে হবে।

কার্বন ক্রেডিটগুলি এমন উদ্যোগগুলিকেও তহবিল দিতে পারে যার লক্ষ্য নির্গমন এড়ানো। এর একটি উদাহরণ হলো শক্তি সংরক্ষণ রেট্রোফিটস বা নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্প। এভয়েডেড-এমিশন অফসেট হলো সেসব পদক্ষেপ থেকে আসে যা একটি বেসলাইন বা স্থিতাবস্থার তুলনায় নির্গমন হ্রাস করে। কিন্তু তারা বায়ুমণ্ডল থেকে নির্গমন অপসারণ করে না। ISO এবং BSI "কার্বন নিরপেক্ষতা" মানের মতো দুর্বল মানগুলি প্রতিষ্ঠানগুলিকে এভয়েডেড-এমিশন কার্বন ক্রেডিট ব্যবহার করার অনুমতি দেয়। তারা নির্দিষ্ট করে না যে একটি ক্রেডিট কতটা স্থায়ী হতে হবে।

কার্বন অফসেটিং বিভিন্ন দিক থেকে সমালোচিত হয়েছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগ হলো অফসেটগুলি সক্রিয় নির্গমন হ্রাসে বিলম্ব করতে পারে। ট্রান্সন্যাশনাল ইনস্টিটিউটের ২০০৭ সালের একটি প্রতিবেদনে, কেভিন স্মিথ কার্বন অফসেটের তুলনা মধ্যযুগীয় ভোগের সাথে করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে তারা লোকেদের "তাদের কার্বন পাপ থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অফসেট কোম্পানিগুলিকে অর্থ প্রদান করার" অনুমতি দেয়। তিনি বলেন, এটি একটি "ব্যবসা যথারীতি" মনোভাবের অনুমতি দেয় যা প্রয়োজনীয় বড় পরিবর্তনগুলিকে বাধা দেয়। অনেকেই গ্রিনওয়াশিংয়ে অংশ নেওয়ার জন্য অফসেটের সমালোচনা করেছেন। এই যুক্তিটি ২০২১ সালে শেলের বিরুদ্ধে একটি ওয়াচডগ রুলিংয়ে উপস্থিত হয়েছিল।

কার্বন অফসেটিং প্রকল্পগুলি দ্বারা দাবির আলগা নিয়ন্ত্রণের সাথে গ্রীনহাউস গ্যাসের ক্রমবিন্যাস এবং নির্গমন হ্রাস গণনা করার সমস্যাও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এই যুক্তিটি হলো যে এটি এমন স্কিমগুলির দিকে নিয়ে যেতে পারে যা বাস্তবে নির্গমনকে পর্যাপ্তভাবে অফসেট করে না। আরও ভাল নিয়ন্ত্রণ তৈরির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘ ২০০১ সাল থেকে কার্বন অফসেটের জন্য একটি সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া পরিচালনা করেছে। একে ক্লিন ডেভেলপমেন্ট মেকানিজম বলা হয়। এটির লক্ষ্য হল "টেকসই উন্নয়ন এবং নির্গমন হ্রাসকে উদ্দীপিত করা, এবং শিল্পোন্নত দেশগুলিকে তারা তাদের নির্গমন হ্রাসের সীমাবদ্ধতার লক্ষ্যগুলি কীভাবে পূরণ করে সে বিষয়ে কিছুটা নমনীয়তা দেওয়া।" যুক্তরাজ্য সরকারের জলবায়ু পরিবর্তন কমিটি বলেছে যে রিপোর্ট করা নির্গমন হ্রাস বা অপসারণ হয়তো ভবিষ্যতে আর নাও থাকতে পারে অথবা এভাবে ঘটতেও পারে । বিশ্বব্যাপী এবং যুক্তরাজ্যে মানের উন্নতি সত্ত্বেও এটিই বাস্তবতা।

অ-নেটিভ এবং মনোকালচারাল বন রোপণের কার্বন অফসেট হিসাবেও সমালোচনা হয়েছে। এটি তাদের "সীমিত - এবং কখনও কখনও নেতিবাচক - জীববৈচিত্র্যের উপর প্রভাব" এবং অন্যান্য বাস্তুতন্ত্র পরিষেবার কারণে।

আজ স্বেচ্ছাসেবী বাজারে বেশিরভাগ কার্বন ক্রেডিট স্থায়ী কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণের জন্য UN, UNFCCC, ISO বা SBTi মান পূরণ করে না। তাই শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে নেট-শূন্য লক্ষ্য অর্জনের জন্য কার্বন ক্যাপচার এবং স্থায়ী ভূতাত্ত্বিক স্টোরেজে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে।

সময়সীমা[সম্পাদনা]

নিট জিরো (Net Zero) অর্জনের জন্য, সংস্থাগুলিকে ২০৫০ বা তার আগে এই লক্ষ্যমাত্রা স্থির করতে উৎসাহিত করা হয়। দীর্ঘমেয়াদী নিট জিরো লক্ষ্যগুলি প্রতি এক থেকে পাঁচ বছরের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন লক্ষ্য দ্বারা পরিপূরক হওয়া উচিত। জাতিসংঘ, UNFCCC, ISO, এবং SBTi সবাই বলে যে সংস্থাগুলির প্রাথমিকভাবে যত দ্রুত সম্ভব নির্গমন হ্রাসের উপর জোর দেওয়া উচিত। তাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত ২০৩০ সালের মধ্যে নির্গমন অর্ধেক করা। বিভিন্ন সেক্টরের জন্য নির্দিষ্ট নির্গমন হ্রাসের লক্ষ্য এবং পথ আলাদা হতে পারে। কিছু সেক্টর অন্যদের তুলনায় আরও দ্রুত এবং সহজে কার্বন নির্গমন হ্রাস করতে সক্ষম হতে পারে।

অনেক কোম্পানি প্রায়ই ২০৫০ সালের মধ্যে নিট জিরো নির্গমন অর্জনের প্রতিশ্রুতি দেয়। এই প্রতিশ্রুতিগুলি প্রায়শই কর্পোরেট পর্যায়ে করা হয়। সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা উভয়ই একটি জাতীয়, বা আন্তর্জাতিক, নিট জিরো লক্ষ্যে অবদান রাখতে ব্যবসাগুলিকে উৎসাহিত করে। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (International Energy Agency) বলেছে যে বিশ্বকে ২০৫০ সালের মধ্যে নিট জিরোতে পৌঁছাতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানির কম কার্বন বিকল্পে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাতে হবে।

কিছু গোষ্ঠী উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী নিট জিরো অর্জন করা যাবে না।

গড়ে, ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলিতে প্রায় ২৯% কোম্পানি নিট জিরো অর্জনের জন্য একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য তৈরি করেছে বা ইতিমধ্যেই এই লক্ষ্যে পৌঁছেছে। তবে, বিভিন্ন শিল্প, দেশ এবং কোম্পানির আকার জুড়ে এই সংখ্যাগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে যুক্ত ঝুঁকির সংস্পর্শে আসা এবং সমস্যা হিসেবে এই ব্যাপারটি উপলব্ধি করা - এরকম বহিরাগত চাপগুলি নির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং কৌশল গ্রহণের জন্য একটি কোম্পানির উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে প্রভাবিত করতে পারে।

বিস্তৃত হিসাববিজ্ঞান (Comprehensive Accounting)[সম্পাদনা]

আন্তর্জাতিক মান নির্ধারণী সংস্থাগুলির নির্দেশনা অনুসারে, প্রতিষ্ঠানগুলিকে তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস পরিমাপের জন্য একটি ভিত্তি বছর (base year) বেছে নেওয়া উচিত। এই ভিত্তি বছরটিকে প্রতিষ্ঠানের সাধারণ গ্রিনহাউস গ্যাস প্রোফাইলের প্রতিনিধিত্বমূলক হওয়া উচিত। প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই কেন তারা এই নির্দিষ্ট ভিত্তি বছর বেছে নিয়েছে তা ব্যাখ্যা করতে হবে, এবং ভিত্তি বছরের পর থেকে পরিস্থিতিতে কীভাবে পরিবর্তন এসেছে সেই হিসেবও দিতে হবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির নিজেদের পোর্টফোলিওর মধ্যে নির্গমন অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। প্রতিষ্ঠানটি যেসব সংস্থায় অর্থায়ন করেছে, বিনিয়োগ করেছে বা বীমা করেছে, সবগুলিকেই এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। দেশ ও অঞ্চলগুলির ক্ষেত্রে, অঞ্চলের সীমানার মধ্যে যেসব আঞ্চলিক নির্গমন (territorial emissions) ঘটে এবং সীমানার মধ্যে আমদানিকৃত ও ব্যবহৃত পণ্য ও পরিষেবার সাথে সম্পর্কিত ব্যবহারভিত্তিক নির্গমন (consumption emissions), এই দুই ধরণের নির্গমনই অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

শহর ও দেশগুলির ক্ষেত্রে নির্গমন গণনা করা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। কারণ, তাদের সীমানার মধ্যে উৎপাদিত পণ্য ও পরিষেবা অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের সাথে যুক্ত হতে পারে অথবা রপ্তানিও হতে পারে। একই সাথে, জনসংখ্যা আমদানিকৃত পণ্য ও পরিষেবাও ব্যবহার করে। তাই, নির্গমন উৎপাদনের স্থানে গণনা করা হয়, নাকি ব্যবহারের স্থানে গণনা করা হয়, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ডাবল কাউন্টিং রোধ করতে সাহায্য করে। বিশ্বায়িত বাজারের দীর্ঘ উৎপাদন শৃঙ্খল (manufacturing chain) এই প্রক্রিয়াটিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবস্থা এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যাটারি পর্যালোচনা করার সময় কিছু অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ দেখা দেয়। এর কারণ, কাঁচামাল আহরণের প্রয়োজনীয় শক্তি ও অন্যান্য প্রভাব প্রায়শই উল্লেখযোগ্য হয় যখন জীবনচক্রের নির্গমন (life-cycle emissions) পরিমাপ করা হয়। তবে যেসব স্থানে এগুলো ব্যবহৃত হয় সেখানে স্থানীয় নির্গমন কম হতে পারে।

ন্যায্যতা এবং প্রভাব[সম্পাদনা]

নেট জিরো'র ধারণাটি ন্যায্যতা এবং বণ্টনের উপর এর সম্ভাব্য প্রভাবের জন্য সমালোচিত হয়েছে। বিশেষ করে, অফসেটিংয়ের জন্য উৎসর্জন হ্রাস বা কার্বন ক্রেডিট ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এর কারণ অফসেট প্রকল্পগুলির নিজস্ব ক্ষতিকারক প্রভাব থাকতে পারে।

আইএসও নেট জিরো নির্দেশিকায় বলা হয়েছে যে নেট জিরো কৌশলগুলি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। এর উদ্দেশ্য হল, "নেট জিরো অর্থনীতিতে ন্যায্যতা ও বৈশ্বিক রূপান্তরকে সমর্থন করা, এবং যেকোনো পরবর্তী জাতিসংঘের বৈশ্বিক লক্ষ্য যা ২০৩০ এসডিজিগুলিকে ছাড়িয়ে যায়।"

ইউএনএফসিসিসি'র রেস টু জিরো ক্যাম্পেইন বলে যে, উৎসর্জন হ্রাস এবং অপসারণ করা উচিত "সবচেয়ে দুর্বল মানুষ এবং সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষা করা"। এটি আরও বলে যে, সংগঠনগুলি প্রকাশ করবে তারা কিভাবে জলবায়ু প্রভাব এবং জলবায়ু রূপান্তর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে সমর্থন করবে।

বিশ্বব্যাপী নেট-জিরো লক্ষ্যের সাথে সঙ্গতি রেখে[সম্পাদনা]

জাতিসংঘের 'নন-স্টেট এন্টিটিজের নেট-জিরো এমিশনস কমিটমেন্টস' বিষয়ক হাই-লেভেল এক্সপার্ট গ্রুপ অ-রাষ্ট্রীয় অংশীদারদের জন্য বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। এই অ-রাষ্ট্রীয় অভিনেতাদের মধ্যে রয়েছে শহর, আঞ্চলিক সরকার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং কর্পোরেশন। এদের মধ্যে রয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানির নতুন উন্নয়নে অর্থায়ন না করা। আরেকটি হল শক্তিশালী জলবায়ু নীতি সমর্থন করা। এবং আরও একটি সুপারিশ হল নিশ্চিত করা যাতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম এবং বিনিয়োগ বন উজাড়ের কারণ না হয়।

দেশভিত্তিক উদাহরণ[সম্পাদনা]

বেশ কয়েকটি দেশে নেট-জিরো, এমনকি নেট-নেগেটিভ কার্বন নির্গমন লক্ষ্য নির্ধারণ করা আছে: ভুটান, কমোরোস, গ্যাবন, গায়ানা, মাদাগাস্কার, নিউই, পানামা, সুরিনাম। এই দেশগুলোতে সাধারণত উচ্চ মাত্রায় বনাঞ্চল রয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, কস্টারিকা তাদের জ্বালানি চাহিদার বেশিরভাগ অংশ পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎস থেকে সংগ্রহ করে এবং বনায়ন প্রকল্প পরিচালনা করছে। ২০০৭ সালে, কস্টারিকার সরকার ২০২১ সালের মধ্যে কস্টারিকাকে প্রথম কার্বন নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করে। কস্টারিকা, এর নেতাদের মতে, বিশ্বের প্রথম দেশ হবে যেটি ২০১৯ সালে একটি ব্যাপক ডিকার্বোনাইজেশন পরিকল্পনা চালু করেছে (২০৫০ সালের মধ্যে জিরো কার্বন নির্গমন)।

পণ্যের জন্য মান[সম্পাদনা]

প্রধান মানদণ্ড এবং নির্দেশিকা অনুমোদিত প্রত্যয়ন সংস্থাগুলিকে পণ্যগুলিকে কার্বন নিরপেক্ষ হিসাবে সার্টিফিকেট করার অনুমতি দেয়, তবে নেট জিরো হিসাবে নয়। এর পেছনের যুক্তি হল যে, যতক্ষণ না সংস্থাগুলি এবং তাদের সরবরাহ চেইনগুলি নেট জিরোর জন্য ট্র্যাকের উপর থাকে, ততক্ষণে এই মুহুর্তে একটি পণ্যকে নেট জিরো হিসাবে দাবি করা ভুল হবে এবং এর ফলে গ্রিনওয়াশিং হবে।

কার্বন নিরপেক্ষ পণ্য হল এমন পণ্য যা উৎপাদন, ব্যবহার এবং অপসারণের সময় কোনও গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করে না। নেট জিরো পণ্য হল এমন পণ্য যা পুরো জীবনচক্রে শূন্য নির্গমন অর্জন করে। কার্বন নিরপেক্ষ পণ্যগুলি কেবল তাদের নিজস্ব নির্গমনের জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়। নেট জিরো পণ্যগুলি তাদের নিজস্ব নির্গমনের জন্য ক্ষতিপূরণ দেয় এবং তাদের সরবরাহ চেইন থেকে নির্গমনও হ্রাস করে।

বর্তমানে, বেশিরভাগ সংস্থা এবং তাদের সরবরাহ চেইন নেট জিরোর জন্য ট্র্যাকের উপর নেই। এর অর্থ হল যে, যদি একটি পণ্যকে নেট জিরো হিসাবে দাবি করা হয়, তবে এটি সম্ভবত ভুল হবে এবং এর ফলে গ্রিনওয়াশিং হবে। যে কারণে, প্রধান মানদণ্ড এবং নির্দেশিকাগুলি পণ্যগুলিকে কেবলমাত্র কার্বন নিরপেক্ষ হিসাবে সার্টিফিকেট করার অনুমতি দেয়। এটি নিশ্চিত করে যে পণ্যগুলি তাদের নির্গমনের জন্য ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে, এমনকি যদি তারা এখনও নেট জিরো না হয়। এই নীতিটি গ্রাহকদের বিভ্রান্ত হতে বাধা দেয় এবং গ্রিনওয়াশিং রোধে সহায়তা করে।

বিশ্বাসযোগ্যতা[সম্পাদনা]

অক্টোবর ২০২৩ পর্যন্ত নেট-জিরো কার্বন নির্গমন লক্ষ্যমাত্রার অবস্থা। বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে নেট-জিরো অঙ্গীকারের অন্তর্ভুক্তির মানদণ্ড আলাদা আলাদা হতে পারে।

আজকাল সরকারি-বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠান ও দেশ নিজেদেরকে নেট জিরো অর্জনের প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ করছে। কিন্তু, এই প্রতিশ্রুতিগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। নেট জিরো বা শূন্য-নিঃসরণে পরিবর্তনের জন্য কোনো বাধ্যতামূলক আইন বা বিধি-বিধান নেই। ফলে, নেট জিরো অর্জনের অধিকাংশ প্রতিশ্রুতিই হয়ে থাকে স্বেচ্ছাসেবী ভিত্তিতে। এই প্রতিশ্রুতিগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেরই এসবের উপর সন্দেহ রয়েছে। ইস্পাত, সিমেন্ট ও রাসায়নিক শিল্পের মতো কয়েকটি সেক্টরে নেট জিরো অর্জনের প্রযুক্তিগত পথ এখনও অস্পষ্ট। নেট জিরো দাবিগুলিকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ বা আইন প্রণয়নের প্রয়োজন হবে।

ফসিল ফুয়েল নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি ইনিশিয়েটিভের চেয়ার ৎজেপোরাহ বারম্যান জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলির নেট জিরো দাবির সমালোचना করেছেন। তিনি সেসব দাবি বর্ণনা করেছেন 'মায়াবী এবং ভুল বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে' করা হিসেবে।

জলবায়ু বিজ্ঞানীদের একটি দল নেট জিরো প্রতিশ্রুতিগুলি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে যে আইনে বা নীতি-নির্ধারণী দলিলে লিপিবদ্ধ নেট জিরো শপথ ২০২০ সালে বিশ্বের মাত্র ৭% দেশে থাকলেও, ২০২৩ সালে এসে তা বেড়ে ৭৫% হয়েছে। তবে খুব কম দেশই একটি 'ভালো শপথের' ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পেরেছে। জাতিসংঘের রেস টু জিরো ক্যাম্পেইন এগুলোকে 'শুরুর রেখার মাপকাঠি’ বলে আখ্যা দিয়েছে। এই মাপকাঠি অনুযায়ী, একটি শুধু ঘোষিত অঙ্গীকারের পাশাপাশি লক্ষ্য পূরণের জন্য 'কর্মপরিকল্পনা এবং গৃহীত পদক্ষেপের প্রকাশিত প্রমাণ' থাকতে হবে।

কার্বন ক্রেডিটের ভূমিকা[সম্পাদনা]

অনেক নেট জিরো দাবির বিশ্বাসযোগ্যতা কম হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো কার্বন ক্রেডিটের উপর এসবের অত্যধিক নির্ভরতা। কার্বন ক্রেডিট প্রায়ই অফসেটিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। এগুলি কার্বন ডাই অক্সাইড বা অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির নিঃসরণ কমায় বা অপসারণ করে, যাতে অন্য কোথাও হওয়া নিঃসরণকে ক্ষতিপূরণ করা যায়। অনেক জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানি ২০৫০ সালের মধ্যে নেট জিরো হওয়ার অঙ্গীকার করেছে। একইসাথে জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলন ও উৎপাদনের মাধ্যমে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ বাড়িয়ে চলেছে। তাদের দাবি, জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলন ও পোড়ানো অব্যাহত রাখার জন্য তারা কার্বন ক্রেডিট এবং কার্বন ক্যাপচার প্রযুক্তি ব্যবহার করবে। জাতিসংঘ এ জাতীয় অঙ্গীকারকে গ্রিনওয়াশিংয়ের বিপজ্জনক উদাহরণ হিসাবে নিন্দা করেছে।

আর্থিক প্রভাব[সম্পাদনা]

  নীট জিডিপি প্রবৃদ্ধি
  দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি এড়ানো
  তীব্র ক্ষতি এড়ানো
  প্রশমনের খরচ
শূন্য-নির্গমনের ক্ষেত্রে বিশ্বের জিডিপির শতকরা পরিবর্তন। নিরেট নির্গমনকে শূন্যে নামিয়ে আনতে যেসব প্রচেষ্টা নেয়া হবে, তার ফলে যে জিডিপি বৃদ্ধি ঘটবে, তা রেখাচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অনুমান অনুযায়ী, বর্তমান সরকারি নীতির তুলনায় ২০৫০ সালের মধ্যে নির্গমনকে নিট শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য নীতি পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। তাদের অনুমান অনুযায়ী, ২০৫০ সালে নির্গমন হ্রাসের খরচ বিশ্ব জিডিপির চেয়ে কম ২%, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমিয়ে আনার ফলে খরচ সাশ্রয় হবে বিশ্ব জিডিপির প্রায় ৯%।

অর্থাৎ, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া শুধুমাত্র পরিবেশের জন্যই ভালো নয়, এটি অর্থনীতির জন্যও ভালো। নির্গমন হ্রাস করে, আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমাতে পারি, যা আমাদের অর্থনীতিকে আরও স্থিতিশীল এবং টেকসই করে তুলতে পারে। এছাড়াও, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হ্রাস করে আমরা বন্যা, খরা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পারি।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নিলে আমাদের অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। আমাদের কৃষি, পর্যটন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুতরাং, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই আমাদের সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সরকার, ব্যবসা এবং ব্যক্তি পর্যায়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা নির্গমন হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হ্রাসের জন্য কাজ করতে পারি।

সমালোচনা[সম্পাদনা]

জলবায়ু বিজ্ঞানী জেমস ডাইক, বব ওয়াটসন এবং উলফগ্যাং নর মনে করেন "নেট জিরো" ধারণাটি নিঃসরণ হ্রাসের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে। কারণ এটি বর্তমানে নিঃসরণ কমানোর প্রয়োজনীয়তা এড়িয়ে গিয়ে ভবিষ্যতের অপ্রমাণিত প্রযুক্তিগত সমাধানের উপর নির্ভর করে চলার সুযোগ তৈরি করে দেয়। কার্বন অফসেটিং, কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণ এবং জিওইঞ্জিনিয়ারিং এর উদাহরণ। তারা বলেন, "সমস্যা দেখা দেয় যখন এটি ধরে নেওয়া হয় যে এই [প্রযুক্তিগত সমাধানগুলি] ব্যাপকভাবে স্থাপন করা যেতে পারে। এটি কার্যকরভাবে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো অব্যাহত রাখার এবং আবাসস্থল ধ্বংসের ত্বরণের জন্য একটি ফাঁকা চেক হিসাবে কাজ করে"। ১৯৮৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত জলবায়ু নীতিতে নিঃসরণ হ্রাসে আগের ব্যর্থতার ইতিহাস অনুসন্ধান করে, তারা বলেন যে তারা "[এই] বেদনাদায়ক উপলব্ধিতে পৌঁছেছেন যে নেট জিরোর ধারণাটি একটি অবিমৃষ্যকারী 'এখন পোড়াও, পরে দাম দাও' পদ্ধতির লাইসেন্স দিয়েছে যা কার্বন নিঃসরণকে বাড়তে দেখেছে"। তারা উপসংহারে বলেন: "বর্তমান নেট জিরো নীতিগুলি তাপমাত্রার উষ্ণায়নকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখবে না কারণ সেই উদ্দেশ্যেই এগুলো কখনো তৈরি করা হয়নি। সেগুলো ছিল এবং এখনও চালিত হয় ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষার তাগিদে, জলবায়ু রক্ষার জন্য নয়। আমরা যদি মানুষকে নিরাপদ রাখতে চাই তবে কার্বন নির্গমনে বড় এবং টেকসই হ্রাস এখনই ঘটতে হবে। [...] শুভ কামনার সময় শেষ হয়ে গেছে।"

অর্থনীতিবিদ মার্ক লি তাঁর ২০২১ সালের "ডেঞ্জারাস ডিস্ট্রাকশনস" প্রতিবেদনে বলেছেন যে নেট জিরো একটি বিপজ্জনক বিক্ষেপ হওয়ার সম্ভাবনা রাখে যা নিঃসরণ কমানোর রাজনৈতিক চাপকে কমিয়ে দেয় । "একটি নেট জিরো লক্ষ্যমাত্রার অর্থ হল জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে 'বাস্তব জিরো' নিঃসরণে পৌঁছানোর জন্য কম উৎসাহ রাখা। একটা পলায়নের রাস্তা তৈরি করা যা স্বাভাবিক কার্যকলাপকে স্থায়ী করে এবং আরও অর্থবহ জলবায়ু পদক্ষেপকে বিলম্বিত করে," তিনি বলেন। "ভবিষ্যতের কার্বন অপসারণ প্রযুক্তির উপর জুয়া খেলার পরিবর্তে, কানাডার জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনের একটি পরিচালিত বাতিলের পরিকল্পনা করা উচিত এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি এবং জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ন্যায্য রূপান্তরের মতো প্রকৃত সমাধানগুলিতে সরকারী সম্পদ বিনিয়োগ করা উচিত," তিনি বলেন।

২০২২ সালের জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে (COP27), একটি বিশেষজ্ঞ দল রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এই বিশেষজ্ঞ দলটি জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতারেস গত মার্চ মাসে গঠন করেন। কানাডার প্রাক্তন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী ক্যাথরিন ম্যাককেনা এই দলের সভাপতিত্ব করেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, বিশ্বের অনেক কর্পোরেশন, স্থানীয় সরকার, আঞ্চলিক সরকার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্বন নিরপেক্ষতার অঙ্গীকারগুলি প্রায়শই 'গ্রিনওয়াশিং' ছাড়া আর কিছুই নয়। অধিক বিশ্বাসযোগ্যতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিবেদনে ১০টি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এই সুপারিশগুলোর একটি হলো- রাষ্ট্রের বাইরে থেকে যারা এই অঙ্গীকার করেছেন তারা যেন প্রকাশ্যে যাচাইযোগ্য তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য থাকেন (যেমন আর্থিক প্রতিভূতির প্রসপেক্টাসে গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ এবং কার্বন ফুটপ্রিন্টের হিসাব)।

প্রতিবেদন প্রকাশের পর, একটি গবেষণা কনসোর্টিয়াম নেট জিরো ট্র্যাকার নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা হলো নিউক্লাইমেট ইনস্টিটিউট, এনার্জি অ্যান্ড ক্লাইমেট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, দ্য ডেটা-ড্রাইভেন এনভায়রোল্যাব (ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলাইনা, চ্যাপেল হিল) এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নেট জিরো ইনিশিয়েটিভ। এই দলটি ২৫টি দেশের ১১৬টি আঞ্চলিক সরকার, ৫০০,০০০ এর বেশি জনসংখ্যা বিশিষ্ট ২৪১টি শহর, এবং ২,০০০টি তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে ১১৫৬ টির জলবায়ু নিরপেক্ষতার অঙ্গীকার পর্যালোচনা করে। এই ২৫টি দেশ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোর অন্তর্ভুক্ত (যারা বিশ্বের মোট উৎপাদনের ৯০% এর বেশি নিয়ন্ত্রণ করে)। জাতিসংঘের রিপোর্টের সুপারিশের আলোকে এই মূল্যায়ন করে গবেষণা দলটি দেখেছে যে বেশিরভাগ অঙ্গীকারের যথাযথ তথ্যপ্রমাণ নেই, এবং অর্ধেকেরও বেশি শহরের কাছে অঙ্গীকারগুলি বাস্তবায়নের জন্য ট্র্যাকিং এবং রিপোর্টিং-এর কোন পরিকল্পনা নেই।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Key findings – World Energy Outlook 2022 – Analysis"IEA (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৯-০১ 
  2. "Untangling our climate goals"Energy & Climate Intelligence Unit (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-১১