নিকটদৃষ্টি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নিকটদৃষ্টি
বিশেষত্বoptometry উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

নিকটদৃষ্টি বা হ্রস্বদৃষ্টি বা মায়োপিয়া (ইংরেজি: Myopia) চোখের ৪টি প্রধান রোগের মধ্যে ১টি। এটি আসলে চোখের সেই অবস্থা যখন চোখের তারারন্ধ্র/তারারন্ধ্রের ভেতর দিয়ে আগত আলো অক্ষিগোলকের রেটিনায় আপতিত না হয়ে তার সামনে কোন স্থানেই একটি বিন্দুতে মিলিত হয়ে প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করে ফেলে। ফলে চোখের নিকট দুরত্ব ২৫ সেন্টিমিটার এর বেশি দূরের কোন বস্তুর বিম্ব রেটিনার সামনে গঠিত হয়। ফলে বস্তুর স্পষ্ট প্রতিবিম্বও গঠিত হয় না আর ভালো দেখাও সম্ভব হয় না। এ জন্য মায়োপিয়াকে "ক্ষীণদৃষ্টি"ও বলা হয়। এর অন্যান্য নামের মধ্যে রয়েছে "অদূরবদ্ধ দৃষ্টি","হ্রস্ব দৃষ্টি" এবং "স্বল্প দৃষ্টি" ।

লক্ষণসমূহ[সম্পাদনা]

ক্ষীণদৃষ্টি (বামে), সাধারণ দর্শন (ডানে)

মাইওপিয়া বা ক্ষীণদৃষ্টি আক্রান্ত চোখ খুব কাছের বস্তু বেশ ভালো দেখলেও দূরের বস্তু ঝাপসা দেখে। অর্থাৎ এই চোখের নিকটবিন্দু ২৫ সেন্টিমিটারেরও কম হতে পারে। অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য -

১। মাথা ব্যথা: আমাদের চোখে লেন্স আলো এবং লক্ষ্যবস্তুর দূরত্বের ভিত্তিতে সমন্বয় করতে পারে। একে বলে একোমোডেশন। এই কাজটা করে থাকে লেন্সের সাথে লাগানো অকুলার পেশি। যদি লেন্সের ফোকাসিং এ সমস্যা থাকে, তাহলে এই পেশিকে খাটতে হয় আরো বেশি। ফলাফল, চোখ ব্যাথা এবং মাথাব্যথা।

২।চোখের ক্লান্তি: যে কারণে মাথাব্যথা হয় ওই একই কারণে চোখের ক্লান্তি হতে পারে। এক্ষেত্রে হঠাৎ হঠাৎ দৃষ্টি ঘোলা হয়ে যাওয়া, শুষ্ক চোখ, লাল চোখ এবং চোখ দিয়ে পানি পড়ার মত লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। অনেকে বলে কাছ থেকে টিভি দেখলে বা বই পড়লে এই রোগ হয়, আসলে ব্যাপারটা পুরো উল্টো। বাচ্চারা কাছ থেকে টিভি দেখছে বা বই পড়ছে দেখলে বুঝতে হবে তাদের মায়োপিয়া থাকতে পারে। কারণ তারা ওই কাছ থেকে দেখেই অভ্যস্ত এবং অনেক সময় বুঝতেই পারে না যে সমস্যা আছে। আবার এই কাছ থেকে পড়ার চেষ্টা কারণ হল, ছোটদের চোখের লেন্স প্রকৃতিগতভাবেই বেশি সংকোচনশীল হয়, একারণে তারা চোখের অনেক কাছেও স্পষ্ট বিম্ব গঠন করতে পারে। বড় হওয়ার সাথে সাথে লেন্স ক্রমশ শক্ত হলে এই ক্ষমতা আপনা থেকেই চলে যায়।

কারণ[সম্পাদনা]

অক্ষিগোলকের ব্যাসার্ধ বেড়ে গেলে বা চোখের লেন্সের ফোকাস দূরত্ব কমে গেলে তথা অভিসারী ক্ষমতা বেড়ে গেলে এই ত্রুটি দেখা যায়।[১]

১। ৯০% ক্ষেত্রেই এটি একটি জন্মগত সমস্যা। অর্থাৎ এক্ষেত্রে স্বাভাবিকের চেয়ে বড় চোখ নিয়েই শিশু জন্মগ্রহণ করে। তবে এটা এমন না যে দেখেই বোঝা যাবে। বড় চোখ বলতে এখানে চোখের ভেতরের গভীরতার কথা বুঝানো হয়েছে।

২। গ্রেভস ডিজিজের কারণে যেকোনো সময়ই চোখের আকৃতি পরিবর্তন হতে পারে। এটা একটা মেডিকেল ইমার্জেন্সি। যদি মনে হয় হঠাৎ চোখ বড় হয়ে যাচ্ছে দেরি না করে তাড়াতড়ি ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

৩। অনেকে বলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস খাটো দৃষ্টির সাথে জড়িত। কিন্তু অনেক ঘেঁটে ও শক্তিশালী কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে যা পাওয়া গেছে, সেই অনুপাতে বলা যেতেই পারে এটা ঝুঁকির একটা নিয়ামক।

ত্রুটির ফল[সম্পাদনা]

সহায়ক লেন্স ব্যবহার করে মাইওপিয়া ত্রুটি দূরীকরণ

এক্ষেত্রে অনেক দূরবর্তী বস্তু থেকে আগত আলোক রশ্মীগুচ্ছ চোখের লেন্সে প্রতিসৃত হয়ে রেটিনার সামনে মকোন বিন্দুতে মিলিত হয়। ফলে লক্ষ্যবস্তু স্পষ্ট দেখা যায় না। এই চোখের দূরবিন্দু অসীমে না হয়ে ২৫ সেন্টিমিটারের বেশি দুরত্বে কোন বিন্দুতে হয় যা অনেক সময় মাত্র ১মিটার বা তার চেয়েও কম দূরত্বে অবস্থিত হয়। তাই এই চোখ এর বেশি দূরত্বে কোন বস্তু স্পষ্ট দেখতে পায় না।[২]

প্রতিকার[সম্পাদনা]

মাইওপিয়া দূর করার জন্য ব্যবহৃত চশমা

চোখের লেন্সের অভিসারী ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় এই ত্রুটির উদ্ভব হয় বলে এই ত্রুটি দূর করার জন্য অভিসারী ক্ষমতা কমাবার মতন সহায়ক লেন্স বা চশমা অর্থাৎ অবতল লেন্সের চশমা ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে চোখের লেন্সের সামনে সহায়ক লেন্স বা চশমা হিসেবে এমন ফোকাস দূরত্বের অবতল লেন্স ব্যবহৃত হয় যার অসীম দূরত্বের লক্ষ্যবস্তুর বিম্ব ত্রুটিপূর্ণ চোখের দূরবিন্দুতে গঠন করে।[৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "মাইওপিয়া সৃষ্টির কারণ"। ৭ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৩ 
  2. "মাইওপিয়ার প্রভাব"। ২৬ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৩ 
  3. Morgan, Ian; Rose, Kathryn (২০০৫-০১-০১)। "How genetic is school myopia?"Progress in Retinal and Eye Research (ইংরেজি ভাষায়)। 24 (1): 1–38। আইএসএসএন 1350-9462ডিওআই:10.1016/j.preteyeres.2004.06.004 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]