আন-নাকুরা
আন-নাকুরা الناقورة | |
---|---|
লেবাননের মধ্যে অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ৩৩°০৭′৬″ উত্তর ৩৫°০৮′২৪″ পূর্ব / ৩৩.১১৮৩৩° উত্তর ৩৫.১৪০০০° পূর্ব | |
গ্রিড অবস্থান | 163/281 PAL |
দেশ | ![]() |
গভর্নরেট | দক্ষিণ গভর্নরেট |
জেলা | টায়ার জেলা |
সর্বোচ্চ উচ্চতা | ৬০ মিটার (২০০ ফুট) |
জনসংখ্যা | |
• মোট | ৪,১৫০[১] |
সময় অঞ্চল | +২ |
• গ্রীষ্মকালীন (দিসস) | +৩ (ইউটিসি) |
আন-নাকুরা (আরবি: الناقورة, এন নাকুরা, নাকুরা, আন নাকুরাহ) দক্ষিণ লেবাননের একটি পৌরসভা। ১৯৭৮ সালের ২৩ মার্চ থেকে লেবাননে জাতিসংঘের অস্থায়ী বাহিনী (UNIFIL)-এর প্রধান কার্যালয় আন-নাকুরায় অবস্থিত।
শব্দের উৎপত্তি
[সম্পাদনা]১৮৮১ সালে ই. এইচ. পামার-এর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, "নাকুরা" নামটির অর্থ "শৃঙ্গ" বা "বাঁশি"। এই নামটি আরবিভাষী অধিবাসীদের একটি ভ্রান্ত ধারণা থেকে উদ্ভূত হয়েছে। আরবিতে "সুর" শব্দের অর্থও শৃঙ্গ বা বাঁশি হওয়ায়, তারা রাস সুর (সুরের প্রস্তরপ্রাচীর বা টায়ারের সিঁড়ি)-কে ব্যাখ্যা করেছেন নাকুরা নামে, যা সুর-এর একটি সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এই শব্দটির সঙ্গে "ঠোকরানো" বা "ছিদ্র করা" অর্থেও একটি সম্পর্ক রয়েছে।[২]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]
১৮৭৫ সালে, উসমানীয় শাসনামলের শেষ দিকে, ভিক্টর গ্যরাঁ আন-নাকুরা সম্পর্কে লিখেছেন: "গ্রামটি একটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত। এর দক্ষিণ পাশে একটি গভীর পথ দিয়ে 'আইন নাকুরাহ' নামের একটি ঝরনা প্রবাহিত হয়, যা ডুমুর ও জলপাই গাছের বাগান সেচ দেয়; এর সঙ্গে কিছু খেজুর গাছও মিশ্রিত রয়েছে। গ্রামটিতে ৪০০ মেতাওয়িলি বাস করে। বাড়িগুলি আধুনিক হলেও কিছু নির্মাণ উপাদান প্রাচীন মনে হয় তাদের বিন্যাস ও আকারের জন্য। ফলে ধারণা করা হয়, এখানে আগে একটি প্রাচীন গ্রাম ছিল, যার নাম বর্তমান নামের সঙ্গে মিল থাকতে পারে বা হুবহু একই হতে পারে।"[৩] গ্যরাঁর মতে, এ স্থানটির সঙ্গে ঐতিহাসিক টাইরীয়দের সিঁড়ি (Scala Tyriorum)-র সম্পর্ক রয়েছে।[৪]
১৮৮১ সালে পিইএফ-এর সার্ভে অব ওয়েস্টার্ন প্যালেস্টাইন আন-নাকুরাকে এইভাবে বর্ণনা করে: "সমুদ্রতীরবর্তী নিচু পাহাড়ে গড়ে ওঠা একটি পাথরের গ্রাম, যেখানে প্রায় ২৫০ মুসলমান বাস করে। এখানে জলপাই, খেজুর, ডালিম, ডুমুর বাগান এবং আবাদযোগ্য জমি রয়েছে; পূর্ব দিকে জঙ্গলের ঝোপঝাড় দেখা যায়। দুটি প্রস্রবণ রয়েছে, যেগুলো প্রচুর জল সরবরাহ করে।"[৫]
১৯৭৮ সালে জাতিসংঘের অস্থায়ী বাহিনী (UNIFIL) আন-নাকুরার পাশে একটি প্রাক্তন টোল স্টেশনের আশপাশে তাদের সদর দপ্তর স্থাপন করে। এখানে অবস্থিত কয়েকটি ভবন ছিল বেইরুট-হাইফা রেলপথের লেবাননী অংশের শেষ প্রান্ত, যা ১৯৪৮ সালে ইহুদি বাহিনী প্যালেস্টাইনের দিকে একটি সুড়ঙ্গ উড়িয়ে দিলে বন্ধ হয়ে যায়।[৬]
১৯৮২ সালের আগ্রাসনের পর আন-নাকুরা ইসরায়েলি নিরাপত্তা অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৮৩ সালের নভেম্বর মাসে ইসরায়েল ও লেবাননের কর্মকর্তারা আন-নাকুরায় অবস্থিত জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ইসরায়েলি প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠক শুরু করেন।[৭]
১৯৮৬ সালের শরৎকালে লাহাদ-এর দক্ষিণ লেবানন বাহিনী আন-নাকুরায় একটি ছোট বন্দর নির্মাণ করে, যেখান থেকে ফেরি চলাচল শুরু হয় বেইরুট-এর উত্তরের জুনিয়েহর সঙ্গে।[৮]
১৯৯১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আন-নাকুরায় প্যালেস্টিনীয় ও এসএলএ বন্দুকধারীদের গোলাগুলির মাঝে পড়ে সুইডিশ জাতিসংঘ সৈন্য বাহিনীর এক সদস্য নিহত হন।[৯]
বারো দিন পর, ১৫ সেপ্টেম্বর, আরও এক সুইডিশ সৈন্য নিহত হন এবং পাঁচজন সুইডিশ ও ফরাসি সৈন্য আহত হন, যখন প্যালেস্টিনীয় বন্দুকধারীরা ইসরায়েলের নাহারিয়া শহরে আক্রমণের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ভুলবশত আন-নাকুরায় নেমে জাতিসংঘ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এক হামলাকারী নিহত এবং আরেকজন আহত হয়।[১০]
২০২৪ সালের ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘর্ষ চলাকালে, লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায় যে, আন-নাকুরায় একটি গাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় দুইজন নিহত হন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লেবাননে তাদের অবস্থানের ওপর "ইচ্ছাকৃত ও সরাসরি" হামলার অভিযোগ করে, যার মধ্যে ছিল রাস আন-নাকুরায় একটি বেড়া ও কংক্রিট কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত করার ঘটনা।[১১] আইডিএফ (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) স্বীকার করে যে হিজবুল্লাহর রকেট জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আঘাত হেনেছে, যাতে আটজন অস্ট্রিয়ান সেনা হালকা আহত হন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ কর্মীদের সুরক্ষা এবং UNIFIL-এর শান্তিরক্ষা মিশনের অব্যাহত থাকার আহ্বান জানায়।[১২][১৩]
২০২৪ সালের যুদ্ধবিরতির সময় আইডিএফ আন-নাকুরা গ্রামে স্থল অভিযান চালায় এবং দাবি করে যে, হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা গ্রাম এবং তার আশপাশে বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ লুকিয়ে রেখেছিল। জাতিসংঘ ঘাঁটির ১০০ মিটার দূরত্বের মধ্যেও কিছু রকেট ও মর্টার পাওয়া যায়।[১৪] ডিসেম্বর ২০২৪-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয় যে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আন-নাকুরা গ্রামে কয়েকটি বাড়ি ধ্বংস করে এবং বিস্ফোরণ ঘটায়।[১৫]
জনমিতি
[সম্পাদনা]২০১৪ সালে আন-নাকুরায় নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে ৯৮.৯৮% ছিল মুসলমান। এদের মধ্যে ৮৮.৫৪% ছিল শিয়া মুসলমান এবং ১০.৪৩% ছিল সুন্নি মুসলমান।[১৬]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "NAQOURA VILLAGE PROFILE" (পিডিএফ)। civilsociety-centre.org।
- ↑ Palmer, 1881, পৃ. ৫৩
- ↑ Guérin, 1880, পৃ. ১৬৯-১৭০; অনুবাদ: Conder ও Kitchener, 1881, SWP I, পৃ. ১৫১
- ↑ Guérin (1880), পৃ. ১৬৭–১৬৮
- ↑ Conder এবং Kitchener, 1881, SWP I, পৃ. ১৫১
- ↑ Tveit, Odd Karsten (2010) Goodbye Lebanon. Israel's First Defeat. রিমাল পাবলিকেশন। অনুবাদক: পিটার স্কট-হ্যানসেন। আইএসবিএন ৯৭৮-৯৯৬৩-৭১৫-০৩-৯ পৃ. ৯৩
- ↑ Tveit (2010), পৃ.১০৪
- ↑ মিডল ইস্ট ইন্টারন্যাশনাল সংখ্যা ২৯১, ৯ জানুয়ারি ১৯৮৭; প্রকাশক ক্রিস্টোফার মেহিউ, ডেনিস ওয়াল্টারস এমপি; জিম মুইর পৃ. ৩–৪
- ↑ "Björn Eggeblad fick benet avskjutet i gisslandramat i Libanon" [লেবাননে জিম্মি ঘটনার সময় বিয়র্ন এগেবলাডের পা গুলি করে উড়িয়ে দেয়া হয়]। Aftonbladet (সুইডিশ ভাষায়)। ৮ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১৭। "বিদেশে নিহত সদস্য" (পিডিএফ) (সুইডিশ ভাষায়)। সুইডিশ সশস্ত্র বাহিনী। পৃষ্ঠা ২। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১৭।
- ↑ "Two Unifil Soldiers Killed in Two Encounters in Lebanon"। ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯১।
- ↑ Two people killed in Israeli airstrike on car in An-Naqoura, southern Lebanon (News)। Associated Press। ২০২৪-০৯-০২।
- ↑ "UN peacekeepers accuse Israel of 'deliberate and direct' attack in Lebanon"। ২০২৪-১১-০৮।
- ↑ "Israeli forces fire on UN peacekeepers in Lebanon"। ২০২৪-১০-১০।
- ↑ "אלון בן דוד, חדשות 13 המהדורה המרכזית*, עם לוחמי צק״ח 226 בדרום לבנון"। Channel 13 News (Israeli Media)। ২০২৪-১২-১৯।
- ↑ "Israeli army destroys homes and advances in Naqoura, South Lebanon: NNA"। ২০২৪-১২-১৬।
- ↑ "التوزيع حسب المذاهب للناخبين/ناخبات في بلدة الناقورة، قضاء صور محافظة الجنوب في لبنان"। إعْرَفْ لبنان। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-৩০।
গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- Conder, C.R.; Kitchener, H.H. (১৮৮১)। The Survey of Western Palestine: Memoirs of the Topography, Orography, Hydrography, and Archaeology। 1। London: Committee of the Palestine Exploration Fund।
- Guérin, V. (১৮৮০)। Description Géographique Historique et Archéologique de la Palestine (French ভাষায়)। 3: Galilee, pt. 2। Paris: L'Imprimerie Nationale।
- Palmer, E.H. (১৮৮১)। The Survey of Western Palestine: Arabic and English Name Lists Collected During the Survey by Lieutenants Conder and Kitchener, R. E. Transliterated and Explained by E.H. Palmer। Committee of the Palestine Exploration Fund।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- নাকুরা, Localiban
- পশ্চিম প্যালেস্টাইনের জরিপ, মানচিত্র ৩: IAA, উইকিমিডিয়া কমন্স