বিষয়বস্তুতে চলুন

নববাবুবিলাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

নববাবুবিলাস ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত একটি ব্যঙ্গকৌতুক নকশা। প্রকাশকাল ১৮২৫। প্রমথনাথ শর্মণ ছদ্মনামে প্রকাশিত। শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়আশুতোষ ভট্টাচার্য এটিকে ‘প্রথম বাংলা উপন্যাস’-এর মর্যাদা দিলেও, অধিকাংশ সমালোচক এটির উল্লেখ করেছেন একটি কৌতুক নকশা হিসাবেই। [] পরে নববিবিবিলাস নামে ভবানীচরণ এই গ্রন্থের একটি দ্বিতীয় পর্বও রচনা করেন।

নববাবুবিলাস-এর মূল উপজীব্য উনিশ শতকের প্রথমার্ধে কলকাতার উচ্চবিত্তসমাজের বহুসমালোচিত বাবু সংস্কৃতির অন্ধকার দিকটি। এটিই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রচিত প্রথম বাংলা কথাসাহিত্য। গ্রন্থটি চারটি ‘খণ্ড’-এ বিভক্ত – ‘অঙ্কুর খণ্ড’, ‘পল্লবখণ্ড’, ‘কুসুমখণ্ড’ ও ‘ফল খণ্ড’। গ্রন্থের সূত্রপাত মঙ্গলকাব্যের ধাঁচে রচিত ‘বন্দনা’, ‘গণপতি বন্দনা’ ও ‘সরস্বতী বন্দনা’ দিয়ে। এরপর ‘অঙ্কুর খণ্ড অর্থাৎ বাবুরূপ বৃক্ষের অঙ্কুর’ অধ্যায়ে সেকালের উচ্ছৃঙ্খল যুবসমাজের ও ঔপনিবেশিক শিক্ষাপ্রণালীর প্রতি কৌতুক কটাক্ষ নিক্ষেপ করা হয়েছে। ‘পল্লবখণ্ড অর্থাৎ বাবুরূপ বৃক্ষের পল্লব’ অধ্যায়ে নব্যবাবুদের কুসঙ্গে পড়ার চিত্র, ‘কুসুমখণ্ড’-এ বাবুর নব্যবাবু নামধারণ, বেশ্যাগমন ও বিলাসব্যসন এবং ‘ফল খণ্ড অর্থাৎ বাবুরূপ বৃক্ষের ফল’ অধ্যায়ে বাবুপত্নীর বিরহ, খেদোক্তি ও অন্তিমে করুণ পরিণতির বর্ণনা বিধৃত হয়েছে।

ডক্টর অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে,“‘বাবুর উপাখ্যান’ বা ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যঙ্গ আখ্যানগুলি অর্ধশিক্ষিত ধনী সন্তানদের কুৎসিত আমোদ-প্রমোদের কথা সাধুভাষায় বলা হলেও উদ্দেশ্যটি তত সাধু ছিল না। বাইরের দিক থেকে এসব নকশায় রঙ্গকৌতুক, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ ও গল্পের আমেজ থাকলেও ভিতরে ছিল ‘পর্নো’ (porno)-কেচ্ছা-কেলেংকারি। সমাজের কুরীতি দেখিয়ে সভ্যভব্য মানসিকতা সৃষ্টি, এই জন্যই ভবানীচরণ ও অন্যান্য নকশাকারেরা কলম ধরেছিলেন; কিন্তু রোগের চেয়ে ঔষধই হয়েছিল প্রাণঘাতী।” [] যাই হোক, উনিশ শতকের কলকাতার বাবু কালচারের একটি উলঙ্গ রূপ চিত্রিত করে বাংলা সাহিত্য ও সামাজিক ইতিহাসে এই গ্রন্থটি এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  • রসরচনাসমগ্র, ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সনৎকুমার গুপ্ত সম্পাদিত, নবপত্র প্রকাশন, কলকাতা, ১৯৮৭
  • বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, অষ্টম খণ্ড, অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, মডার্ণ বুক এজেন্সী প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ২০০৭
  • দিশা সাহিত্য, জুলাই-সেপ্টেম্বর সংখ্যা, ২০০৮

পাদটীকা

[সম্পাদনা]
  1. দিশা সাহিত্য, জুলাই-সেপ্টেম্বর সংখ্যা, ২০০৮, পৃ.১১
  2. বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, অষ্টম খণ্ড, অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, মডার্ণ বুক এজেন্সী প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ২০০৭, পৃ.১৩১