দুর্গাচরণ রক্ষিত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দুর্গাচরণ রক্ষিত
জন্ম(১৮৪১-০৯-২৯)২৯ সেপ্টেম্বর ১৮৪১
মৃত্যু২৭ আগস্ট ১৮৯৮(1898-08-27) (বয়স ৫৬)
পেশাউদ্যোগপতি ও সমাজকর্মী
পিতা-মাতাগোবিন্দচন্দ্র রক্ষিত (পিতা)
পুরস্কারলেজিয়ঁ দনার

দুর্গাচরণ রক্ষিত (ইংরেজি: Durgacharan Rakshit / Dourga Chorone Roquitte; ২৯ সেপ্টেম্বর ১৮৪১ – ২৭ আগস্ট ১৮৯৮) সর্বোচ্চ ফরাসি পুরস্কার — 'লেজিয়ঁ দনার' এ ভূষিত প্রথম ভারতীয় উদ্যোগপতি।[১]

সংক্ষিপ্ত জীবনী[সম্পাদনা]

দুর্গাচরণ রক্ষিতের জন্ম চন্দননগরের লালবাগানে এক তন্তুবায়কুলে। পিতা নাম গোবিন্দচন্দ্র রক্ষিত। ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে ১০ বৎসর বয়সেই পিতৃহীন হন। মায়ের তত্ত্বাবধানে বেশি পড়াশোনা করতে পারেন নি। সুতরাং মাত্র ১৪ বৎসর বয়সে পিতার কর্মস্থল 'ক্যামা ল্যামারু অ্যান্ড কোম্পানি'( Cama Lamuro and Co.) নামক এক ফরাসি বাণিজ্য-প্রতিষ্ঠানে সহকারী কোষাধ্যক্ষ হিসাবে কাজ করতে থাকেন। এখানে তিনি রপ্তানি-আমদানি ব্যবসা শেখেন এবং পরবর্তীকালে চাকুরি ছেড়ে স্বাধীনভাবে ব্যবসা শুরু করেন। অল্পদিনের মধ্যেই প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। অবশ্য এর পিছনে ছিল তার উত্তমরূপে ইংরাজী, ফরাসি ভাষা ও গণিত শিক্ষা আর কঠোর পরিশ্রম। এজন্য তিনি প্রতিদিন কলকাতা হতে চন্দননগর লক্ষ্মীগঞ্জের ঘাট হয়ে নৌকা যোগে যাতায়াত করতেন। চন্দননগর ও কলকাতা থেকে বিদেশে রপ্তানি হত চাল, ডাল, চা, তিল, সরষে, পোস্তদানা, তিসি ও আফিম, তসরের থান ও কাটা কাপড়৷ আর আমদানি করতেন হোয়াইট লেড্, জিঙ্ক হোয়াইট, কুইনাইন, ফরাসি মদ৷ সারা ভারত জুড়ে পাইকারি ক্রেতা ছিল দুর্গাচরণের ব্যবসার৷ কানপুর থেকে মুসৌরি৷ চট্টগ্রাম থেকে আগ্রা৷ কলকাতায় তার কেনা ২৯ কাঠা (চৌরঙ্গীর) জমি, কলুটোলার পাঁচতলা বাড়ি ও আরও অনেক সম্পত্তি তার অসীম কৃতিত্বের সাক্ষ্য বহন করছে৷ চন্দননগর স্ট্র্যান্ডের উপর জোড়া-ঘাট,গঙ্গার উপর জেটি তারই টাকায় তৈরি হয়৷[২] সেবাপরায়ণতায় দুর্গাচরণ ছিলেন সকলের অনুসরণীয়৷ চন্দননগরের সবরকমের জনহিতকর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। তিনি প্রথম দাতব্য আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসালয় স্থাপন করেন। দারিদ্র্যের জন্য নিজে উচ্চশিক্ষা লাভে বঞ্চিত হলেও তার শিক্ষক গোপালচন্দ্র দাসের সাহায্যে 'একল দুর্গা'(Ecole Durga) নামে ছেলেদের জন্য বিদ্যালয়ের সূচনা করেন। যেটি বর্তমানে দুর্গাচরণ রক্ষিত বিদ্যালয় নামে পরিচিত। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে চন্দননগর 'লোকাল কাউন্সিলে'র সভ্য হন এবং ১৮৭৯–৯৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি তার সভাপতি পদে থেকে ফরাসি শাসকগোষ্ঠীকে পরামর্শ দান করেন।[৩]

সম্মাননা[সম্পাদনা]

১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে অবৈতনিক জজ ও ম্যাজিসেট্রট হন। তার বিদ্যানুরাগের জন্য প্যারিসের ফরাসি সাহিত্য পরিষদ তাঁকে সম্মানিত সভ্যপদ (Officer de Academie) অর্পণ করে পদক পাঠান। তার জনহিতকর মহান কাজ ও ফরাসি সরকারের প্রতি সুসম্পর্কের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনিই প্রথম চন্দননগরবাসী ভারতীয় যিনি ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে কম্বোজ ফরাসি সমাজ কর্তৃক Chevalier de ordere Royale du Cambodge উপাধিতে ভূষিত হন এবং ফরাসি সরকার ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দের ৬ ই জুন বহুসম্মানাস্পদ লেজিয়ঁ দনার (Chevalier-la-legion d'houneur) দ্বারা সম্মানিত হন।[৩]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

দুর্গাচরণ রক্ষিত মাত্র ৫৬ বৎসর বয়সে ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দের ২৭ শে আগস্ট বসন্তরোগের কারণে পরলোক গমন করেন। ফরাসি সরকার তার পারলৌকিক ক্রিয়াতেও রাজকীয় সম্মান প্রদর্শন করে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ২৯২, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. "দুর্গাচরণ রক্ষিত, হরিহর শেঠ, সত্যেন্দ্রনাথ ঘোষ"এই সময়। ১৪ অক্টোবর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০২০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. "দুর্গাচরণ রক্ষিত এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব - Pralipta"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-১৭