ড্রিগলাম নামঝা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জাতীয় পোশাকে ভুটানি জনগণ

ড্রিগলাম নামঝা (তিব্বতি: སྒྲིག་ལམ་རྣམ་གཞག་ওয়াইলি: sgrig lam rnam gzhag) হল ভুটানের সরকারী আচরণের এবং পোশাক পরিধানের রীতিনীতি। নাগরিকদের কীভাবে প্রকাশ্যে পোশাক পরা উচিত এবং আনুষ্ঠানিক পরিবেশে তাদের কীভাবে বা কি ধরনের আচরণ করা উচিত তাই মূলত ড্রিগলাম নামঝা। এছাড়াও এই রীতিনীতির মাধ্যমে শিল্প ও স্থাপত্যের মতো অনেকগুলো সাংস্কৃতিক সম্পদও নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ইংরেজিতে ড্রিগলাম শব্দের অর্থ "আদেশ, শৃঙ্খলা, রীতি, নিয়ম, শাসন"[১] এবং নামঝা এর অর্থ "ব্যবস্থা"[১]। যদিও এই শব্দটিকে আবার "শৃঙ্খলাবদ্ধ আচরণের জন্য বিধি" ও বলা হয়ে থাকে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

ড্রিগলাম নামঝা ১৭ শতাব্দীর নাগাওয়াং নামগিয়াল, প্রথম যাবদ্রুং রিপোচে, তিব্বতীয় লামা এবং সামরিক নেতা যারা ভুটানকে কেবল রাজনৈতিকভাবেই নয়, সংস্কৃতিগতভাবেও একীকরণের চেষ্টা করেছিলেন, তাদের বক্তব্যে সরাসরি এর শিকড় সম্পর্কে পরিষ্কার ভাবে জানা যায়। তিনি ভুটানের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মঠ-দুর্গের জং স্থাপত্যের জন্যও নির্দেশিকা বা এক ধরনের ব্যবস্থা স্থাপন করেছিলেন। তিনি চাম নৃত্যের মতো শিচু "জেলা উৎসব"-এর মত আরও অনেকগুলো ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠা করে রেখে গিয়েছিলেন। একটি স্বতন্ত্র-ভুটানীয় পরিচয়ের উত্থানের জন্য দিকনির্দেশ গুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে উৎসাহিত করা হয়েছিল।

১৯৮৯ সালে, সরকারের প্রস্তাব থেকে বাধ্যতামূলকভাবে পোশাক পরিধানের রীতিনীতির অবস্থাকে উন্নত করা হয়। সমস্ত নাগরিককে তখন কর্মঘণ্টার সময়ে জনসমক্ষে পোশাক পরিধানের রীতিনীতি পর্যবেক্ষণ করতে হতো। এই আদেশ দক্ষিণের নিম্নভূমিতে লোহটশাম্পাস অমান্য করেছিলেন এবং এই নীতির বিরোধিতা করেছিলেন। এবং তারা গ্যালোপ সম্প্রদায়ের লোকদেরকে পোশাক পরিধান করতে বাধ্য করেছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।[২][৩]

পরিধেয় বস্ত্র[সম্পাদনা]

ড্রিগলাম নামজার অধীনে পুরুষেরা ঘো নামে একটি বেল্টের সাথে বাঁধা একটি ভারী হাঁটুর দৈর্ঘ্যের পোশাক পরে থাকেন। যা পেটের সামনে পকেট গঠনের জন্য এইরকম অনন্যভাবে ভাঁজ করা হয়। মহিলারা উইনজু নামক রঙিন ব্লাউজ পরিধান করেন। যার উপরে তারা ভাঁজ করে কিরা নামে একটি বৃহৎ আয়তক্ষেত্রাকার কাপড় দৃঢ় ভাবে আটকে দেওয়া হয়, যার ফলে গোড়ালি দৈর্ঘ্যের পোশাক তৈরি হয়। একটি ছোট সিল্ক জ্যাকেট বা টোয়েগো কিরার উপরে পরা যেতে পারে। প্রতিদিনের পরিধেয় এই ঘো এবং কীরা হল ঋতু অনুসারে সুতি বা পশমের হয়ে থাকে। আর এই সুতি বা পশমের কপড়ের ওপরে সাধারণ এবং প্যাটার্ন আকৃতির টান দ্বারা পোশাকগুলো নকশা করা হয়। বিশেষ অনুষ্ঠান এবং উৎসবের জন্য, রঙিন-প্যাটার্নযুক্ত সিল্ক কীরা এবং খুব কম পরিসরে ঘো, পরা যেতে পারে।

কোন জং বা মন্দির পরিদর্শন করার সময় এবং উচ্চ-স্তরের আধিকারিকের সামনে উপস্থিত হওয়ার সময় অতিরিক্ত নিয়ম প্রযোজ্য। কাঁচা সিল্কের সাদা কাপড়গুলো কাবনি নামে পরিচিত। যা সাধারণ পুরুষেরা বাম কাঁধ থেকে বিপরীত নিতম্ব পর্যন্ত পরিধান করেন। এবং সাদা ছাড়া অন্যান্য রঙের কাবনি আধিকারিক এবং ভিক্ষুদের জন্য সংরক্ষিত থাকে। মহিলারা রাচু নামে এক ধরনের পোশাক পরিধান করে থাকেন। যা একটি সরু নকশাযুক্ত কাপড়। এবং এই কাপড়গুলো বাম কাঁধের উপরে সুতোযুক্ত।


স্থাপত্য[সম্পাদনা]

আরও দেখুনঃ জং স্থাপত্য

ড্রিগলাম নামঝা জং নামে পরিচিত পবিত্র দুর্গগুলোর নির্মাণের জন্য প্রচলিত নিয়মকে মেনে চলে। কোনও পরিকল্পনা বা কোন ধরনের পূর্বজ্ঞান ছাড়াই এই স্থাপত্য গুলো তৈরী হয়েছিল। একজন অনুপ্রাণিত লামার নির্দেশে নাগরিকরা তাদের রাজ্যের প্রতি দায়বদ্ধতার অংশ হিসাবে তাদেরই প্রদান করা কর থেকে জং তৈরি করে। ১৯৯৯ সালের হিসাবে, ডিক্রি অনুসারে, সমস্ত বিল্ডিং বহু রঙের কাঠের সম্মুখভাগ, ছোট ছোট খিলানযুক্ত জানালা এবং ঢালু ছাদ দিয়ে নির্মান করতে হবে।[২]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Dharma Dictionary"। Diamond Way Buddhism। ১৯৯৬। মার্চ ২৮, ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১০-০১ 
  2. "Country profile – Bhutan: a land frozen in time"। BBC News online। ১৯৯৮-০২-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১০-০১ 
  3. "Bhutan country profile"। BBC News online। ২০১০-০৫-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১০-০১