ডাক্তারি থার্মোমিটার
ডাক্তারি তাপমানযন্ত্র ক্লিনিক্যাল/মেডিক্যাল থার্মোমিটার | |
---|---|
রোগনির্ণয় | |
যে যন্ত্রের সাহায্যে মানবদেহের (ক্ষেত্রবিশেষে প্রাণীদেহের) তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়, তাকে ডাক্তারি তাপমানযন্ত্র বা ডাক্তারি থার্মোমিটার বলে। যন্ত্রটি একটি দুইপাশে বদ্ধ কাচের নল বা সঙ্কীর্ণ কৈশিকনালী যার ভেতরে প্রসারণশীল সংবেদী তরল হিসেবে পারদ ব্যবহার করা হয়। ইংরেজি পরিভাষায় এ যন্ত্রটিকে "ক্লিনিক্যাল থার্মোমিটার" বা "মেডিক্যাল থার্মোমিটার" বলা হয়।
তাপমানযন্ত্রের ভেতরের নালীর এক প্রান্তে একটি স্ফীত অংশ থাকে যাকে কুণ্ড বা বালব বলে। কুন্ড ও নালীর কিছু অংশ পারদে পূর্ণ থাকে। নালীর বাকী অংশটুকু সাধারণত নাইট্রোজেন গ্যাস দিয়ে পূর্ণ থাকে। দেহের তাপমাত্রা মাপার সময় তাপমানযন্ত্রের কুণ্ড বা বালব প্রান্তটিকে দেহের একটি নির্দিষ্ট অংশের সংস্পর্শে আনা হয়। সাধারণত এটিকে মুখের ভেতরের জিহ্বার নিচে (মৌখিক তাপমাত্রা), বগলের তলে (বাহুমূলীয় তাপমাত্রা) কিংবা মলদ্বার দিয়ে পায়ুতে (মলনালীয় তাপমাত্রা) স্থাপন করা হয়। দেহের উত্তাপের সাথে সমানুপাতিক হারে তরল পারদের আয়তন বৃদ্ধি পায় ও এটি তাপমানযন্ত্রটির ভেতরের কাচের তৈরি কৈশিকনালীতে সম্প্রসারিত হতে থাকে। পারদের সবর্শেষ অবস্থানের বিপরীতে তাপমানযন্ত্রের বাইরের কাচে অঙ্কিত মাপনী বা স্কেলের উপরে তাপমাত্রার মান পাঠ করতে হয়। এটিই দেহের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
মৌখিক বা জিহ্বানিম্ন তাপমাত্রাটি পরিমাপ করা কঠিন, কেননা এক্ষেত্রে তাপমানযন্ত্রটিকে জিহ্বার নিচে বেশ কয়েক মিনিট স্থিরভাবে ধরে রাখতে হয়, যা রোগী বা শিশুদের জন্য কষ্টকর। আবার রোগী ঠান্ডা বা গরম কিছু খেলে বা পান করলে সাথে সাথে মৌখিক তাপমাত্রা গ্রহণ করা যায় না। অন্যদিকে বাহুমূলীয় তাপমাত্রা সাধারণত পুরোপুরি সঠিক মান দেয় না; এর সাথে সাধারণত এক ডিগ্রি যোগ করলে প্রকৃত দেহ তাপমাত্রা পাওয়া যায়। মলনালীয় তাপমাত্রা সবচেয়ে সঠিক মান দেখালেও এটি অনেকের কাছে অস্বস্তিকর; তবে শিশুদের ক্ষেত্রে মলনালীয় তাপমাত্রাই সাধারণত পরিমাপ করা হয়।
তাপমাত্রার একক হিসেবে সাধারণত ফারেনহাইট ব্যবহৃত হয়। ডাক্তারি তাপমানযন্ত্রটির ভেতরের কৈশিকনালী এবং বালবের মধ্যবর্তী স্থানে নালীটি একটু বাঁকানো থাকে অর্থাৎ গাঁট হয়ে থাকে বলে দেহের তাপের কারণে প্রসারিত হবার পরে তাপমানযন্ত্র সরিয়ে নিলেও পারদ তার জায়গায় থেকে যায়, সাথে সাথে আবার সংকুচিত হয়ে বালবে নেমে আসে না। এর ফলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার মান পড়তে সুবিধা হয়। পুনরায় ব্যবহার করতে হলে তাপমানযন্ত্রকে ঝাঁকি দিয়ে পারদকে আবার নিচে কুণ্ড বা বালবের দিকে নামিয়ে আনতে হয়। ইতালীয় চিকিৎসক সান্তোরিও সান্তোরিও (Santorio Santorio) সর্বপ্রথম ১৬২৬ সালে চিকিৎসাক্ষেত্রে তাপমানযন্ত্র ব্যবহার করেন বলে অনুমান করা হয়। কিন্তু সান্তোরিওর তাপমানযন্ত্রটি ছিল প্রায় এক ফুট দীর্ঘ এবং এটি দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মাপতে ২০ মিনিট প্রয়োজন হত। সান্তোরিওর তাপমানযন্ত্রটি মুখের ভেতরে রাখতে হত। ১৮৮৬ সালে ইংরেজ চিকিৎসক টমাস ক্লিফোর্ড অলবাট স্বল্পদৈর্ঘ্যের আধুনিক তাপমানযন্ত্র উদ্ভাবন করেন। ক্লিফোর্ডের ডাক্তারি তাপমানযন্ত্রটির দৈর্ঘ্য ছিল ৬ ইঞ্চি এবং ৫ মিনিটের মধ্যে তাপমাত্রা নির্ণয় করতে পারত। এটি বহু শতাব্দী যাবৎ ব্যবহৃত সান্তোরিওর একফুটি তাপমানযন্ত্রটিকে প্রতিস্থাপন করে।[১]
বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে এসে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রাকৃতির ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল ডাক্তারি তাপমানযন্ত্র উদ্ভাবিত হয়, যাতে তরল স্ফটিক পর্দায় তাপমাত্রার মান সংখ্যায় প্রদর্শন করা হয়। এর ভেতরে তাপমাত্রা সংবেদী রোধক থাকে (থার্মিস্টর), যার ভেতরে বিদ্যুৎপ্রবাহের পরিমাণ তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে।[২] ২১শ শতকে এসে এগুলির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ J.M.S. Pearce (এপ্রিল ১, ২০০২), "A brief history of the clinical thermometer", QJM: An International Journal of Medicine, 95 (4): 251–252
- ↑ "Takes Temperature in Seconds." Popular Mechanics, November 1954, p. 123.