ট্রাইকোডিনা
ট্রাইকোডিনা | |
---|---|
একটি সামুদ্রিক মাছের (মুলেট) আক্রান্ত ফুলকাতে ট্রাইকোডিনার উপস্থিতিকে ইলেক্ট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ এবং নির্ণয় করা হচ্ছে | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
ক্ষেত্র: | প্রাণীকোষ বা ইউক্যারিওট |
শ্রেণীবিহীন: | এসএআর পর্বভুক্ত |
শ্রেণীবিহীন: | অ্যালভিওলাটা |
পর্ব: | সিলিওফোরা |
উপপর্ব: | ইন্ট্রাম্যাক্রোনিউক্লিয়াটা |
শ্রেণী: | অলিগোহাইমেনোফোরিয়া |
উপশ্রেণী: | পেরিট্রিকিয়া |
বর্গ: | মবিলিডা |
পরিবার: | ট্রাইকোডিনিডি |
গণ: | ট্রাইকোডিনা |
ট্রাইকোডিনা হল সিলিয়েট অ্যালভিওলেট প্রজাতির একটি এককোষী পরজীবী যা মূলত জলজ প্রাণী। বিশেষ করে এরা মাছের বহিঃরাংশকে আক্রান্ত করে থাকে। পরস্পরযুক্ত, খাঁজবিশিষ্ট কোষকঙ্কালের একটি বলয়ের উপস্থিতি দ্বারা এদেরকে চিহ্নিত করা হয়। এটি ট্রাইকোডিনার কোষগুললোকে সহায়তা প্রদান করে এবং মাছের বহিঃপৃষ্ঠে এই পরজীবীকে আটকে থাকতে সাহায্য করে।
শ্রেণিবিন্যাস[সম্পাদনা]
ট্রাইকোডিনিড হল অলিগোহাইমেনোফোরিয়া-র মধ্যস্থিত একটি প্যারাফাইলেটিক গোষ্ঠী এবং পেরিট্রিকাস পক্ষ্মলের সদস্য। বিশেষত, এগুলি একপ্রকারের চলমান পরজীবী কারণ তারা স্থান পরিবর্তনে সক্ষম এবং অচল পরজীবী যেমন ভোর্টিসেলা, এপিস্টাইলিস ইত্যাদির বিপরীত। এই প্রকার অচল পরজীবীগুলি একটি বৃন্ত বা লরিকার মাধ্যমে আক্রান্তের দেহে লেগে থাকে। 'ট্রাইকোডিনা' গণের মধ্যে ১৫০ টিরও বেশি প্রজাতি রয়েছে। ট্রাইকোডিনেলা, ট্রাইপার্টিয়েলা, হেমিট্রিকোডিনা, প্যারাট্রিকোডিনা এবং ভাউকোমিয়া হল এর অনুরূপ প্রজাতি।
অঙ্গসংস্থানগতবিদ্যা[সম্পাদনা]
ট্রাইকোডিনিড হল একপ্রকারের গোলাকার সিলিয়েট যার গঠন চাকতির ন্যায় বা গোলার্ধীয় হতে পারে। সাইটোস্টোম (কোষীয় মুখ) এদের পৃষ্ঠের উপর থাকে এবং বাহক থেকে এর মুখ দূরে থাকে; একে মৌখিক পৃষ্ঠ বলা হয়। অপরদিকে, পশ্চাৎপৃষ্ঠ বা অ্যাবোরাল পৃষ্ঠটি, বাহকের ত্বক এবং দেহের অন্যান্য স্তরের সাথে সংযুক্ত থাকে। কোষের পরিধিতে, সাইটোস্টোমের দিকে একটি সর্পিল সিলিয়া এবং সিলিয়ার বেশ কয়েকটি বলয় উপস্থিত, যা আঠালো পদার্থ নিঃসরণের মাধ্যমে পরজীবীকে আটকে রাখতে এবং গমনে সাহায্য করে। ট্রাইকোডিনিডের শ্রেণিবিন্যাসে, সাইটোস্কেলিটাল ডেন্টিকলের সঠিক সংখ্যা, আকৃতি এবং বিন্যাস এই শ্রেণিবিন্যাসে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। এই চরিত্রগুলি সাধারণত সিলভার নাইট্রেট রাসায়নিকে রঞ্জিত আনুবীক্ষণিক স্লাইডের মাধ্যমে প্রকাশ পায়, যা কোষের সাইটোপ্লাজমকে কালো করে এবং ডেন্টিকলগুলিকে সাদা করে।
জীবনের ইতিহাস[সম্পাদনা]
ট্রাইকোডিনাগুলির মধ্যে একটি সহজ প্রত্যক্ষ জীবন চক্র লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ, তাদের একটিমাত্র অনন্য বাহক রয়েছে এবং তাদের মধ্যে প্রজন্মের পরিবর্তন বা তাদের বাহকের দেহের বাইরে কোনো গণ অযৌন প্রতিলিপি বা জনন দেখা যায় না। তারা দ্বৈত বিভাজন দ্বারা পুনরুৎপাদন করে, আক্ষরিক অর্থে এটি একটি কোষ-বিভাজন পদ্ধতি। এটি মাতৃকোশের ডেন্টিকলের অর্ধেক সংখ্যক অপত্য কোষ তৈরি করে। সম্পূর্ণ পরিপূরকরূপে, কোষের বাইরের প্রান্ত থেকে ভিতরের দিকে কাজ করে এরূপ নতুন ডেন্টিকলের সংশ্লেষণের মাধ্যমে ডেন্টিকলগুলিকে পুনরুদ্ধার করা হয়।
ট্রাইকোডিনিড সাধারণতঃ মাছের ফুলকা, ত্বক এবং পাখনায় পাওয়া যায়, যদিও কিছু প্রজাতি পরজীবীরূপে মাছের রেচন-জননতন্ত্রে অবস্থান করে। অমেরুদণ্ডী প্রাণীর একটি বৃহৎ পরিসরও ট্রাইকোডিনিড সংক্রমণের বাহক রূপে পরিচিত, যার মধ্যে রয়েছে কপিপড এর বহিঃপৃষ্ঠ এবং মোলাস্কস এর ম্যান্টেল গহ্বর। সংক্রামিত এবং অসংক্রমিত বাহকের সরাসরি যোগের মাধ্যমে এবং ট্রাইকোডিনিডের সক্রিয় চলনের মাধ্যমে এক বাহক থেকে অন্য বাহকে এই সংক্রমণ ঘটে। ট্রাইকোডিনা কোষগুলির পশ্চাত পৃষ্ঠকে সামনের দিকে রেখে সাঁতার কাটে। বাহকের পৃষ্ঠে, তারা নিজেদের পশ্চাৎভাগের পৃষ্ঠতলের দিকে মুখ ঘুরিয়ে পাশ্ববর্তীভাবে সরে যায়।[১]
অনাক্রম্যতা[সম্পাদনা]
বেশিরভাগ ট্রাইকোডিনিডই হল একধরনের এক্টোকমেনসাল মিথোজীবী, যারা মাছের বহিঃপৃষ্ঠকে শুধুমাত্র একটি সংযুক্তির স্থানরূপে ব্যবহার করে থাকে এবং সেখান থেকে তারা নিজেদের খাদ্য হিসেবে ব্যাকটেরিয়াকে গ্রহন করে। এর কিছু প্রজাতি মাছের দেহে অবশ্যই প্রাথমিক রোগজীবাণু হিসেবে দায়ী। এইসমস্ত পরজীবীরা মাছের দেহে জীবাণুমুক্ত স্থানে (যেমন মূত্রতন্ত্র) থাকলেও বাহকের দেহে এদের উপস্থিতির প্রভাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায় (উদাঃ ফুলকার উপর ট্রিপার্টিয়েলার অবস্থান)।
যখন ট্রাইকোডিনিডগুলি জলজ চাষের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, তখন সেটি সাধারণত ইউট্রোফিকেশন অথবা খারাপ জলের গুণমানকেই নির্দেশ করে থাকে। এই সমস্ত জলে অধিক ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি ট্রাইকোডিনিডের জন্য প্রচুর খাদ্য সরবরাহ করে, যা পরবর্তীকালে বাহকের উপর প্রসারিত হয় এবং ধীরে ধীরে সংযুক্তি-সম্পর্কিত অনাক্রম্যতার মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- Lom, Jiří; Dyková, Iva (১৯৯২)। Protozoan Parasites of Fishes। Developments in aquaculture and fisheries science। 26। Elsevier। আইএসবিএন 978-0-444-89434-2।
- ↑ Kreier, Julius P. (২০১৩-১০-২২)। পরজীবী প্রোটোজোয়া (ইংরেজি ভাষায়)। Academic Press। আইএসবিএন 9781483288796।