জৈনাবাদী মহল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

জৈনাবাদী মহল (ফার্সিঃ زين آبادی محل; জন্ম্নামঃ হীরা বাই;[১] মৃত্যু ১৬৫৪ খ্রি.)[২]) ছিলেন মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব -এর একজন উপপত্নী।[৩]

জীবনী[সম্পাদনা]

আওরঙ্গজেবের যৌবনের প্রিয়তমা হিসাবে বর্ণিত,[৪] জৈনাবাদী মহল ছিলেন একজন কাশ্মীরি হিন্দু, যাকে তার বাবা-মা ত্যাগ করেছিলেন এবং ক্রিতদাস বেচাকেনার বাজারে বিক্রি করেছিলেন।[৫] তিনি ছিলেন মীর খলিলের একজন দাসী,[৬] এবং এক গায়িকা[৭] ও নর্তকী।[৬] মীর খলিল ছিলেন আসফ খানের জামাতা, এবং তিনি মুফতাখার খান, খান-ই-জামান ইত্যাদি উপাধি পান। শাহজাহানের শাসনকালের ২৩ তম বছরে, ১৬৪৯-৫০ সালে তাকে তোপ বাহিনীর প্রধান হিসাবে দাক্ষিণাত্যে পাঠানো হয়েছিল। ১৬৫৩ সালে তিনি ধারুর সেনানায়ক নিয়োজিত হন। আওরঙ্গজেবের শাসনকালে তিনি খান্দেসের সুবাদার পদে নিযুক্ত হন।[৮]

১৬৫২ [১] বা ১৬৫৩ সালে,[৭] তিনি যখন দাক্ষিণাত্যের রাজপ্রতিনিধি হিসাবে বহাল ছিলেন তখন শাহজাদা আলমগীর তার হারেমের মহিলাদের সাথে জৈনাবাদের বাগানে ভ্রমনে গেছিলেন। সেখানেই তিনি জৈনাবাদী মহলকে প্রথম দেখেছিলেন। তিনি খান-ই-জামানের স্ত্রীর অন্যান্য ক্রীতদাসীদের সাথে সেখানে এসেছিলেন।[৮][৯] তার সঙ্গীত দক্ষতা এবং মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য আওরঙ্গজেবকে বিমোহিত করেছিল।[৩] তিনি মীর খলিলের কাছে জৈনাবাদী মহলকে পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। মীর খলিল তখন আওরঙ্গজেবের একজন দাসী ছত্তর বাই-এর মধ্যে বিনিময়ের জৈনাবাদী মহলকে দিতে রাজি হন।.[৫][১০]

সম্রাট আকবরের শাসনকাল থেকে এই আদেশ দেওয়া হয়েছিল যে রাজকীয় হারেমের মহিলাদের নাম জনসমক্ষে উল্লেখ করা উচিত নয়, তাদের কিছু উপাধি দ্বারা মনোনীত করা উচিত যা তাদের জন্মস্থান বা শহরের নামের সংগে সাদৃশ্যপূর্ণ।[১১] সেই নিয়ম অনুযায়ী নতুন ক্রীতদাসীর নাম জৈনাবাদী মহল রাখা হয়।[১২]

একদিন জৈনাবাদী আওরঙ্গজেবের প্রেম পরীক্ষা করার জন্য তাকে এক পিয়ালা মদ পান করার প্রস্তাব দিয়ে তাকে কটূক্তি করেন।[৮][৯] এই প্রেম-সম্পর্ক গভীর হতে থাকে এবং তৎকালীন মুঘল সম্রাট শাহজাহানের কাছেও সেই খবর আসে। তার বড় ভাই দারা শিকোহ আওরঙ্গজেবকে অপবাদ দেওয়ার জন্য এই ঘটনাটি তাদের বাবাকে জানিয়েছিলেন।[৮]

জৈনাবাদী সম্ভবত ১৬৫৩ সালের নভেম্বর মাসে আওরঙ্গজেবের সাথে দৌলতাবাদে যান ও সেখানে এক মাস দীর্ঘ ভ্রমণ করেন,[১৩] এবং সেখানেই ১৬৫৪ সালের দিকে তিনি শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন।[৭] তাকে ঔরঙ্গাবাদে কবরস্থ করা হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Satish Chandra (২০০৫)। Medieval India: From Sultanat to the Mughals Part - II। Har-Anand Publications। পৃষ্ঠা 274। আইএসবিএন 9788124110669 
  2. Ramananda Chatterjee, সম্পাদক (১৯১১)। The Modern Review, Volume 10। Modern Review Office। পৃষ্ঠা 524। 
  3. Soma Mukherjee (২০০১)। Royal Mughal Ladies and Their Contributions। Gyan Books। পৃষ্ঠা 25। আইএসবিএন 9788121207607 
  4. Gajendra Narayan Singh (২০১৮)। Muslim Shasakon Ka Raagrang Aur Fankaar Shahanshaah Aurangzeb Aalamgir। Vani Prakashan। পৃষ্ঠা 102। আইএসবিএন 9789387648944 
  5. Annie Krieger-Krynicki (২০০৫)। Captive Princess: Zebunissa, Daughter of Emperor Aurangzeb। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 74। আইএসবিএন 978-0-19-579837-1 
  6. Sudha Sharma (২১ মার্চ ২০১৬)। The Status of Muslim Women in Medieval India। SAGE Publications India। পৃষ্ঠা 73, 78। আইএসবিএন 9789351505679 
  7. Sir Jadunath Sarkar (১৯১২)। History of Aurangzib: Reign of Shah Jehan। M.C. Sarkar & sons। পৃষ্ঠা 170 
  8. Ramananda Chatterjee, সম্পাদক (১৯০৯)। The Modern Review, Volume 6। Modern Review Office। পৃষ্ঠা 205। 
  9. Waldemar Hansen (১৯৮৬)। The Peacock Throne: The Drama of Mogul India। Motilal Banarsidass Publ.। পৃষ্ঠা 162। আইএসবিএন 9788120802254 
  10. National Archives of India (২০০১)। Indian Archives। National Archives of India.। পৃষ্ঠা 146। 
  11. Eraly, Abraham (জানুয়ারি ১, ২০০৭)। The Mughal World: Life in India's Last Golden Age। Penguin Book India। পৃষ্ঠা 126। আইএসবিএন 978-0-143-10262-5 
  12. Sir Jadunath Sarkar (১৯৭৯)। A Short History of Aurangzib, 1618-1707। Orient Longman। পৃষ্ঠা 13। আইএসবিএন 978-0-86131-083-8 
  13. Gandhi, S. (২০২০)। The Emperor Who Never Was: Dara Shukoh in Mughal India। Harvard University Press। পৃষ্ঠা 173। আইএসবিএন 978-0-674-98729-6