জিরাফ ম্যানর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
Giraffe Manor
জিরাফ ম্যানর, নাইরোবি, কেনিয়া

জিরাফ ম্যানর কেনিয়ার নাইরোবি শহরের লাং'আটা উপশহরে অবস্থিত একটি ছোট হোটেল যার সাথে একটি জিরাফ সেন্টার ও যুক্ত আছে। ফলে এই হোটেলটি একই সাথে বিপন্ন প্রজাতি রোথসচাইল্ড জিরাফের অভয়াশ্রম। এখানে একটি প্রজনন ব্যবস্থা আছে যা এই উপ প্রজাতিকে বন্য জীবনে ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টার মাধ্যমে এদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার চেষ্টা করছে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৯৩২ সালে ম্যাকিন্টোশ টফি তৈরির জন্য বিখ্যাত ম্যাকিনটোশ পরিবারের স্যার ডেভিড ডানকান নাইরোবি শহরের দক্ষিণ প্রান্তে আম্বাগাথি নদীর তীরে ১৫০ একর জমির মধ্যে একটি স্কটিশ শিকার শালা হিসেবে এটি নির্মাণ করেন। ১৯৬০ সালে একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী এটি কিনে একের পর এক মানুষের কাছে লিজ দিতে থাকেন, যাদের মধ্যে ডেন্নিশ লাকিন (মৃত্যুবরণ করেছেন) ও ছিলেন। এরপর এটি অব্যবহৃত, পরিত্যাক্ত অবস্থায় পরে থাকে।

১৯৭৪ সালে বেট্টি লেজলি-মেলভিল্লি এবং তার স্বামী জক ম্যানরটি কিনে নেন। এসময় তারা মূল ১৫০ একর (৬১ হেক্টর) এর মধ্যে ১৫ একর (০.০৬১ কিমি) ও কিনে ফেলেন। এরপর ওই জমির আরও ৬০ একর (২৪ হেক্টর) কিনে ফেলা হয়। এরপর পিটার বিয়ারড তার হগ র‍্যাঞ্চ এর ৪০ একর (১৬ হেক্টর) উপহার হিসেবে দিয়ে দেন। ফলে এখন ম্যানর এর সর্বমোট আয়তন ১১৫ একর (৪৭ হেক্টর)।

জিরাফ অভয়াশ্রম হিসেবে যাত্রা[সম্পাদনা]

ম্যানরটি কেনার পর লেজলি মেলভিল্লি জানতে পারেন যে কেনিয়ায় যে অল্প কিছু রোথসচাইল্ড জিরাফ তখন ছিল, তারা বিপদে পরতে যাচ্ছে। কারণ এল্ডোরেটের এর কাছে সয় এলাকায় ১৮,০০০-একর (৭৩ কিমি) এর একটি ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল কেনিয়ায় তাদের একমাত্র আবাসস্থল যা কেনিয়ার সরকার কিনে ফেলতে যাচ্ছিল। ফলে এলাকাটি ছোট ছোট অঞ্চলে ভাগ হয়ে যাবে এবং জিরাফদের মেরে ফেলা হবে।[১]

ম্যানরটি ওই সময়ই তিনটি বন্য বুল জিরাফের (ডাকনাম টম, ডিক এবং হ্যারী) বাসস্থান ছিল, লেজলি মেলভিল্লিরা ৮-ফুট (২.৪ মি) লম্বা ৪৫০ পাউন্ডের বাচ্চা জিরাফকে এখানে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন এবং তারা এর নাম দেন ডেইজি। এর পরেই বেট্টি একটি বই লিখেন "রেইজিং ডেইজি রোথসচাইল্ড" (ডেইজি রোথসচাইল্ডকে বড় করে তোলা)। এই বইয়ের ভিত্তিতেই পরবর্তীতে একটি ছবি বানানো হয় যার নাম "দা লাস্ট জিরাফ"।[২]

এরপর ডেইজির সঙ্গী হিসেবে আরেকটি বাচ্চা জিরাফ আনা হয়, মার্লোন (মার্লোন ব্রান্ডো এর নামানুসারে) এবং এরপরইম্যানর এবং বিভিন্ন স্থান যেমন ইংল্যান্ডের বেডফোর্ডশায়ারের ওবার্ন সাফারী পার্ক যৌথভাবে একটি প্রজনন প্রকল্প পরিচালনা করে রোথসচাইল্ড জিরাফদের বন্য পরিবেশে ফিরিয়ে দিয়ে এদের জিন রক্ষার কাজ করছে। একসময় ম্যানরে এক ডজনের মত জিরাফ ছিল যদিও এখন মাত্র আটটি জিরাফ আছে।[৩] ম্যানরের কিছু জমি জিরাফ সেন্টারকে দিয়ে দেয়া হয়েছে। এটি পরিচালনা করে আফ্রিকান ফান্ড ফর এন্ডেঞ্জারড ওয়াইল্ডলাইফ (এএফইডব্লিউ) নামক একটি দাতব্য সংস্থা যেটি লেজলি মেলভিল্লিরা এবং বেট্টির মেয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৭২ সালে।[৪] ঐতিহ্য অনুযায়ী জিরাফদের নাম দেয়া হয় সেসব মানুষদের নামে যারা এএফইডব্লিউ এর কাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন (অর্থনৈতিক বা অন্য কোন মাধ্যমে)। যেমন একটি জিরাফের নাম দেয়া হয়েছিল লিন, লেখক ও সাংবাদিক লিন শেররের নামানুসারে, একজন জিরাফ ভক্ত যিনি এই জীব নিয়ে একটি বইই রচনা করে ফেলেছেন।[৫]

হোটেল হিসেবে যাত্রা[সম্পাদনা]

A Rothschild giraffe at the front door of Giraffe Manor.
জিরাফ ম্যানরের সদর দরজায় একটি জিরাফ উঁকি দিচ্ছে।

১৯৮৩ সালে রিক এন্ডারসন (বেট্টির ছেলে) এবং তার স্ত্রী "জিরাফ ম্যানর হোটেলের" দায়িত্ব নেন। তারা জিরাফ ম্যানরকে একটি ছোট ব্যক্তিগত হোটেল হিসেবে চালানোর দায়িত্ব নেন যেখানে অতিথিরা তাদের সকালের নাস্তার টেবিলে বসে, সদর দরজা থেকে এবং দোতলায় শয়ন কক্ষের জানালা থেকে জিরাফদের খাবার দিতে পারবেন। ম্যানরে ছয়টি শয়নকক্ষ আছে যার মধ্যে একটি কক্ষ বিখ্যাত লেখক ক্যারেন ব্লিকজেনের (ইসাক ডিনেসেন নামেও পরিচিত) জিনিস দিয়ে সাজানো।[৬]

বিভিন্ন সময়ে ম্যানর বিভিন্ন বিখ্যাত মানুষদের অতিথি হিসেবে পেয়েছে। যেমন মাইক জ্যাগার, ওয়ালটার ক্রনকাইট (যার নামে ম্যানরের একটি পোষা শূকর জাতীয় অয়ারথগস এর নামকরণ কএয়া হয়েছিল ),[৪] জনী কারসন, ব্রুক শিল্ডস এবং রিচার্ড চেম্বারলেইন, এছাড়াও ২০০৭ সালে ভার্জিন আটলান্টিক বিমান সংস্থার লন্ডন-নাইরোবি রুটের উদ্ভোদনের জন্য রিচার্ড ব্রানসন, ইউয়ান মাকগ্রেগার এবং চার্লি ব্রুম্যান ও এখানে এসেছিলেন।[৭]

২০০৯ সালের মার্চে মাইকি এবং তানইয়া কার-হার্টলেই জিরাফ ম্যানর কিনে নেন [৮] এবং এখন এটি দা সাফারী কালেকশন গ্রুপের বাড়ি এবং হোটেলগুলোর মধ্যে একটি হোটেল হিসেবে পরিচিত।[৯]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Leslie-Melville, B and J: Raising Daisy Rothschild, page 2. Penguin Books, 1977.
  2. "The Last Giraffe"। ৭ জুন ১৯৭৯ – www.imdb.com-এর মাধ্যমে। 
  3. Mail Foreign Service (২২ জুলাই ২০০৯)। "This isn't Giraffe Cafe! Massive animal sticks his neck out to join family for breakfast at manor house"। Dailymail.co.uk। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০০৯ 
  4. "Betty Leslie-Melville"। Telegraph.co.uk। ৩ অক্টোবর ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০০৯ 
  5. Lynn Sherr: Tall Blondes. Andrews McMeel Publishing, 1997
  6. "To the Manor Born"। Vanity Fair। অক্টোবর ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০০৯ 
  7. "Something Strange Going on Here! Who Is Truthful? from Bikes in the Fast Lane"। News.motorbiker.org। ২৭ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০০৯ 
  8. "Family shares breakfast table in Africa with giraffes"। Telegraph। ২১ জুলাই ২০০৯। ২৪ জুলাই ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০০৯ 
  9. Sawasawa.com। "Giraffe Manor"। Tamimi East Africa। ১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০০৯