বিষয়বস্তুতে চলুন

জাতীয় বিদ্বান পরিষদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

জাতীয় বিদ্বান পরিষদ বলতে সাধারণত রাষ্ট্রীয় আর্থিক সমর্থন ও অনুমোদনপ্রাপ্ত জাতীয় পর্যায়ের একটি সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানকে বোঝায়, যেটির কাজ হল বিভিন্ন উচ্চশিক্ষায়তনিক ক্ষেত্রে জ্ঞানচর্চা, গবেষণা ও শিক্ষার উন্নতি ও প্রচার-প্রসার সাধন। জাতীয় বিদ্বান পরিষদগুলি প্রায়শই মর্যাদাবাহী ও প্রভাবশালী সংগঠন হয়ে থাকে এবং বিশেষজ্ঞ, পণ্ডিত ও পেশাদার ব্যক্তিদেরকে জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলির বিহিত করতে একত্রিত করে থাকে। এগুলিকে জাতীয় অ্যাকাডেমি (বানানভেদে একাডেমি, একাডেমী,ইত্যাদি) নামেও ডাকা হতে পারে।

জাতীয় বিদ্বান পরিষদগুলি বিভিন্ন রূপে বিরাজ করতে পারে। কিছু কিছু পরিষদ মোটামুটি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। এগুলি সাধারণত স্বেচ্ছাসেবী ও অলাভজনক সংগঠন হয়ে থাকে, তবে এগুলি সরকার থেকে আর্থিক সমর্থন লাভ করতে পারে। অন্যদিকে কিছু কিছু জাতীয় বিদ্বান পরিষদ সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা ও অনুমোদনের উপর নির্ভর করতে পারে, এমনকি সরকারের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসেবেই কাজ করতে পারে। কিছু কিছু দেশে একটিমাত্র জাতীয় বিদ্বান পরিষদ সমস্ত উচ্চশিক্ষায়তনিক বিষয় সম্পর্কিত কর্মকাণ্ড ধারণ করতে পারে। আবার অন্য অনেক দেশে একাধিক জাতীয় বিদ্বান পরিষদ থাকতে পারে, যেখানে প্রতিটি পরিষদ নির্দিষ্ট কিছু উচ্চশিক্ষায়তনিক ক্ষেত্রের উপরে মনোযোগ নিবদ্ধ করতে পারে, যেমন বিজ্ঞান, প্রকৌশল, চিকিৎসাবিজ্ঞান, শিল্পকলা বা মানববিদ্যা বিষয়ক জাতীয় বিদ্বান পরিষদ। এগুলি একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে কাজ করতে পারে। যেমন ফ্রান্সের আঁস্তিত্যু দ্য ফ্রঁস নামক জাতীয় বিদ্বান পরিষদটি আরও ৫টি স্বশাসিত বিদ্বান পরিষদের ছত্রধর সংগঠন হিসেবে কাজ করে।

জাতীয় বিদ্বান পরিষদগুলির কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন এগুলি প্রায়শই গবেষণাকর্ম সম্পাদন করে, প্রতিবেদন প্রকাশ করে ও তাদের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলির সাথে সম্পর্কিত বহু ও বিভিন্ন বিষয়ের উপরে বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতে পারে। তারা বিশেষ কোনও সমস্যার জন্য সংশ্লিষ্ট উচ্চশিক্ষায়তনিক ক্ষেত্রগুলির অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্বদেরকে নিয়ে সভাসমিতি গঠন করে সুপারিশ প্রদান করতে পারে। তারা সম্মেলন, কর্মশালা, গোলটেবিল বৈঠক, আলোচনাচক্র (ফোরাম) ও আনুষ্ঠানিক উচ্চশিক্ষায়তনিক আলোচনাসভার (সেমিনার) আয়োজন করার মতো শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহের ব্যাপারে জনসাধারণের জ্ঞান বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে। অনেক জাতীয় বিদ্বান পরিষদ সরকারি সংস্থা, নীতিনির্ধারক ও সাধারণ জনগণের জন্য বিভিন্ন জটিল জাতীয় পর্যায়ের সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে স্বাধীন, বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ ও সাক্ষ্য-প্রমাণভিত্তিক পরামর্শ-উপদেশ প্রদান করতে পারে।[] তারা পুরস্কার, গবেষণা বৃত্তি ও অন্যান্য ধরনের স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষায়তনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানগুলিকে স্বীকৃতি দিতে পারে ও সম্মান অর্পণ করতে পারে। তারা ভিন্ন ভিন্ন গবেষণাক্ষেত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট বিদ্বৎসমাজগুলির মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে পারে। তারা বিদেশের সাথে বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উচ্চশিক্ষায়তনিক বিনিময় ও সহযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক ভূমিকা রাখতে পারে।

জাতীয় বিদ্বান পরিষদগুলির বিশিষ্ট সভ্যরা সাধারণত বিদ্যমান বিশিষ্ট সভ্যদের দ্বারা উৎকর্ষের ভিত্তিতে নির্বাচিত হন। বিশিষ্ট সভ্যের মোট সংখ্যা হয় ধ্রুব থাকে বা একটি নির্দিষ্ট হারে বৃদ্ধি পায়। পরিষদের শাসনপ্রণালী গণতান্ত্রিক এবং নিম্ন-থেকে-ঊর্ধ্বমুখী হয়ে থাকে, অর্থাৎ বিশিষ্ট সভ্যরাই পরিষদের কর্তৃত্বের অন্তিম উৎস। আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করলেও এগুলি সাধারণত সরকার, শিল্পখাত ও পেশাদার সংস্থাগুলি থেকে স্বাধীন মতাবলম্বী হয়ে থাকে।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Our Program Divisions and Units"Nationalacademies.org। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩