বিষয়বস্তুতে চলুন

চিন্তামণি ত্র্যম্বক খানোলকর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(চিন্তামনি টায়াম্বাক খানোলকর থেকে পুনর্নির্দেশিত)
সি.টি. খানোলকর
জন্ম
চিন্তামণি ত্র্যম্বক খানোলকর
चिंतामणी त्र्यंबक खानोलकर

৮ মার্চ ১৯৩০
বগলাঞ্চি রাই, বেঙ্গুর্লা, মহারাষ্ট্র
মৃত্যু২৬ এপ্রিল ১৯৭৬(1976-04-26) (বয়স ৪৬)
পেশালেখক

চিন্তামণি ত্র্যম্বক খানোলকর (সি.টি. খানোলকর) (দেবনাগরী লিপি : चिंतामणी त्र्यंबक खानोलकर) (৮ই মার্চ, ১৯৩০ – ২৬ শে এপ্রিল, ১৯৭৬) ছিলেন ভারতের মহারাষ্ট্রের একজন মারাঠা লেখক। তিনি কবিতা প্রকাশের ক্ষেত্রে আরতি প্রভু ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন এবং গদ্যের বেলায় নিজের নামটিই ব্যবহার করতেন। ১৯৭৬ সালে তিনি নাট্যসাহিত্যে সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার [] এবং ১৯৭৮ সালে তাঁর কাব্যসংকলন নক্ষত্রাঞ্চ দিন এর জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার অর্জন করেন।

প্রাথমিক জীবন

[সম্পাদনা]

খানোলকর ১৯৩০ সালের ৮ই মার্চ মহারাষ্ট্রের বেনগুরলার কাছাকাছি বগলাঞ্চি রাই নামক এক গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫০ সালে তাঁর কবিতা লেখার শুরু।শুণ‍্য শ্রুংগর্ত নামক একটি কবিতার জন্য তিনি প্রশংসিত হন, যা মারাঠি সাহিত্য পত্রিকা সত্য কথা -তে ১৯৫৪ সালে প্রকাশিত হয়। খানোলকর ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেওয়ার পর আর পড়ালেখা করেননি, তাঁর শিক্ষাজীবনের এখানেই ইতি ঘটে। এরপর তিনি তাঁর পারিবারিক ব্যবসা "খানাভাল" (ছোট হোটেল ব্যবসায়) এ জড়িত হন। কিন্তু ব্যবসা ভালো না চলার কারণে ১৯৫৯ সালে খানোলকর জীবিকার খোঁজে গ্রাম ছেড়ে মুম্বাই যাবার সিদ্ধান্ত নেন।

মুম্বাই এ প্রারম্ভিক জীবন

[সম্পাদনা]

মুম্বাই আসার আগেই খানোলকর শহরটির মারাঠি সাহিত্য চক্রে তাঁর কবিতাসমূহের জন্য পরিচিত ছিলেন। এরই সুবাদে তিনি রাষ্ট্রীয় বেতার আকাশবাণীতে আরেক কবি মঙ্গেশ পদ্গঙ্করের সহযোগিতায় নিয়োগ পান। কিন্তু ১৯৬১ সালে তাঁর খামখেয়ালী স্বভাবের কারণে তাঁকে চাকরিটি ছেড়ে দিতে হয় এবং এটি তাঁর মুম্বাই এর শুরুর দিকের জীবনে আর্থিক সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

কবিতাসমূহ

[সম্পাদনা]

তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যসংকলনের নাম হলো "যোগভা", যা ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৬২ সালে "দিবালগ্ন " নামে তাঁর আরেকটি কাব্যসংকলন বের হয়। দুটি কাব্যগ্রন্থই মূলত উৎকণ্ঠা ও দুঃখবোধের চিত্রকে সামনে তুলে ধরে। স্মৃতিকাতরতা তাঁর শুরুর দিকের কাব্যসংকলনগুলোর একটি মূল বৈশিষ্ট্য ছিলো। সেগুলো তাঁর সমসাময়িক কবিদের মতন প্রেম ও প্রেমিকের আবেগের বর্ণনায় পূর্ণ ছিলোনা।তাঁর কবিতা, প্রেমিকের বর্ণনা দিয়ে শুরু হলেও তাঁর ভেতরকার দুঃখবোধ সেই কবিতাকে এক বেদনা ও দুর্দশার গাথায় পরিণত করতো।


"সুঁচটি জুঁই ফুলের কাপড়টির মাঝ দিয়ে আলতো করে বেরিয়ে গেলো
আর হৃদয়ে থাকা স্মৃতির বন্যা আঁধারে বিরাজমান।"

এবং এভাবেই কবিতা এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তাঁর বেদনাও এগিয়ে যেতে থাকে।

তুলনামূলকভাবে তাঁর নক্ষত্রাঞ্চ দিন (১৯৭৫) অনেকটাই প্রাণপ্রাচুর্য্যে পূর্ণ ও সুখের পরিবেশনা যা প্রকাশ করে তিনি তাঁর দুঃখ অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন।সেখানকার একটি কবিতা ::


"আমি কী করে তোমায় প্রত্যাখ্যান করি, বরং গান গেয়ে শোনাবো
রীতিনীতিগুলো তাদের মত করেই আসুক
আমি কী করে তোমায় প্রত্যাখ্যান করি,আমি আসছি অপেক্ষা করো,
কিন্তু আমাকে আরো অনেকদূর যেতে হবে এই সবুজ হাওয়ার পথ ধরে।"

এই কবিতাটি স্বামী-স্ত্রীর আবেগের সম্পর্ককে বর্ণনা করে। পঙক্তিগুলোতে আবেগের গভীরতা ও কবিতাটিতে তাঁর নিয়ন্ত্রণ, লেখক হিসেবে তাঁর পরিপক্বতাকে নির্দেশ করে। "আরতি প্রভু"র কবিতাগুলো আমাদের মাঝে প্রকৃতির পেছনের গল্পগুলো সম্পর্কে এক প্রবল অনুভূতির জন্ম দেয়।সঠিক ও নিপুণ শব্দের ব্যবহার তাঁর প্রকৃতিনির্ভর কবিতাগুলোর এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। তাঁর বেশকিছু কবিতাতে বিখ্যাত সংগীত পরিচালক হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর সুর দিয়েছেন এবং সেগুলো মারাঠি সংগীতের সেরা শিল্পকর্মগুলোর মাঝে অন্যতম। যেমনঃ গেলে দেয়াছে রাহুনি,ইয়ে রে ঘানা ,তু তেনভা তাশি ইত্যাদি।

উপন্যাস

[সম্পাদনা]

খানোলকরের প্রথম উপন্যাস "রাত্র কলি ঘাঘর কলি " ১৯৬২ সালে প্রকাশিত হয়। কিন্তু "কন্দুরা " নামক একটি উপন্যস তাঁকে মারাঠি সাহিত্যের সামনের সারির ঔপন্যাসিকদের সারণিতে দাঁড় করায়। আরো দুটি সেরা শিল্পকর্ম হলো "ত্রিশঙ্কু "(১৯৬৮) ও "গনুরায়া আনি চানি" (১৯৭০)। খানোলকরের গল্প জটিলতা, বিতর্কের অবকাশবিহীন ঐশ্বরিক শক্তি, ঈশ্বর ও শয়তানের দ্বন্দ্ব, ধর্মীয় বিশ্বাস, কামনা, প্রকৃতির ভয়ানক রূপ এবং মান জাতির বিদ্বেষপূর্ণ ধারণা ব‍্যাক্ত করে। চলচ্চিত্রে খানোলকরের উপন্যাস উঠে এসেছে তেলুগু ভাষায় 'অনুগ্রহম '(কন্দুরা অবলম্বনে) এবং 'কন্দুরা 'হিন্দি ও মারাঠিতে অমরেশ পুরি, চানি, অনন্ত নাগ অভিনীত ; শ্যাম বেনেগাল, ভি সান্তারম , রঞ্জনা নিবেদিত। "গণরায় "নামক একটি টেলিফিল্মও তাঁর উপন্যাস অবলম্বনে সত্যদেব দ্যুবে নির্মাণ করেছেন; যাতে অভিনয় করেছেন চেতন দাতার।

খানোলকর মারাঠি থিয়েটারে অনেক নিরীক্ষা চালিয়েছেন। তাঁর নাটক "এক শুণ‍্য বাজিরাও" (एक शून्य बाजीराव) আধুনিক মারাঠি ক্লাসিক হিসেবে বিবেচিত হয়, যা গঠন ও বিষয়বস্তুর দিক থেকে অনন্য। এই নাটকে খানোলকর মধ্যযুগের মারাঠি নাটকের রীতি অনুসরণ করার চেষ্টা করেছিলেন। খানোলকরের "আজব ন্যায় ওয়ারতুলাচা" (अजब न्याय वर्तुळाचा) ছিল ব্রেঞ্চ এর দ্য ককেশিয়ান চক সার্কেল অবলম্বনে নির্মিত।

রূপান্তরিত কর্ম

[সম্পাদনা]

অমল পালেকর এর "আনকাহি " নামক হিন্দি চলচ্চিত্র খানোলকরের নাটক "কালায় তাস্মাই নামাহা ' অবলম্বনে নির্মিত। এটিকে অমল পালেকরদীপ্তি নাভালকে দেখা যায়। বিজয় মেহতার প্রযোজনায় তাঁর "এক শুণ‍্য বাজিরাও " সমসাময়িক ভারতীয় থিয়েটারের এক মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।

অর্জন

[সম্পাদনা]

খানোলকর ১৯৭৬ সালে সংগীত নাটক অ্যাকাডেমী পদক অর্জন করেন এবং ১৯৭৮ সালে তাঁর কাব্যগ্রন্থ 'নক্ষত্রঞ্চ দিন " এর জন্য সাহিত্য অ্যাকাডেমি পদক অর্জন করেন।

সাহিত্যকর্ম

[সম্পাদনা]
কাব্যগ্রন্থ
[সম্পাদনা]
  • যোগভা (जोगवा) (১৯৫৯)
  • দিবলগন (दिवेलागण) (১৯৬২)
  • নক্ষত্রঞ্চ দিন (नक्षत्रांचे देणे) (১৯৭৫)
গদ্যসংকলন
[সম্পাদনা]
  • সানাই (सनई) (১৯৬৪)
  • 'রাখি পাখারু (राखी पाखरू) (১৯৭১)
  • চাপা আনি দেয়াচি আই (चाफा आणि देवाची आई) (১৯৭৫)
  • রাত্র কালি ঘাঘর কালি (रात्र काळी घागर काळी) (১৯৬২)
  • অজগর (अजगर) (১৯৬৫)
  • কন্দুরা (कोंडुरा)(১৯৬৬)
  • ত্রিশঙ্কু (त्रिशंकु) (১৯৬৮)
  • গনরায় আনি চানি (गणुराय आणि चानी) (১৯৭০)
  • পিশাচ (पिशाच्च) (১৯৭০)
  • আগানচার (अगंचर)(১৯৭০)
  • পাষান পালায়ি (पाषाण पालवी) (১৯৭৬)
  • আদন্যত কবুতরে (১৯৭০)
নাটকসমূহ
[সম্পাদনা]
  • এক শুন্য বাজিরাও (एक शून्य बाजीराव) (১৯৬৬)
  • সাগেসয়ারে (सगेसोयरे) (১৯৬৭)
  • অবাধ্য (अवध्य) (১৯৭২)
  • কালায় তাসমায় নামাহা (कालाय तस्मै नमः) (১৯৭২)
  • আজব ন্যায় ওয়াতালুচা (अजब न्याय वर्तुळाचा) (১৯৭৪)

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "C. T. Khanolkar"sangeetnatak.gov.in। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০২০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  • Arvachin Kavyadarshan –Dr. Akshaykumar Kale
  • Modern Indian Literature,An Anthology, Volume-I, Edited by K.M. George, 1992, Sahitya Academy, New Delhi
  • Sankshipta Vangmay Kosh – (1920 to 2003 period) – Editor Prabha Ganorkar
  • Marathi Saraswat – Editor Anant Lakshman Joshi
  • Maharashtra Sahitya Patrika ¬ – May, June 1976