ফনোগ্রাফ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(গ্রামোফোন থেকে পুনর্নির্দেশিত)
টমাস আলভা এডিসন তার দ্বিতীয় ফনোগ্রাফির সাথে, ছবি তুলেছেন লেভিন কর্বিন হ্যান্ডি ওয়াশিংটনে, এপ্রিল ১৮৭৮ সালে
এডিসন মোম সিলিন্ডার ফনোগ্রাফ, প্রায় ১৮৯৯ সাল

ফনোগ্রাফ (ইংরেজি: phonograph) কে পরবর্তীতে গ্রামোফোনও বলা হত (১৮৮৭ সাল থেকে ট্রেডমার্ক হিসাবে, ১৯১০ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের জাতিগত নাম হিসাবে) অথবা ১৯৪০ এর দশকে এটি রেকর্ড প্লেয়ার নামে পরিচিত ছিল, যা যান্ত্রিক রেকর্ডিং এবং শব্দ উৎপাদনের জন্য একটি যন্ত্র। যাকে বাংলা ভাষায় কলের গানও বলা হয়। শব্দ কম্পন তরঙ্গাকৃতি রেকর্ড করা হয় একটি সর্পিল আকৃতির খাঁজ, খোদাই করে অঙ্কিত একটি ঘূর্ণমান সিলিন্ডার বা ডিস্কের পৃষ্ঠ, যাকে রেকর্ড বলা হয়। এটি মূলত একটি রেকর্ডকৃত গান শোনার যন্ত্র। যন্ত্রের দ্বারা ধারণকৃত শব্দকে বাজানোর জন্য ব্যবহৃত এক প্রকার যন্ত্র। শব্দকে বিশেষভাবে নির্মিত কঠিন মাধ্যমে ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে কোনো নির্বাচিত চলমান মাধ্যমের উপর দাগ কেটে বা খোদিত করে শব্দের কম্পাঙ্ককে কোনো রেখা অনুসরণ করে ধারণ করা হয়। পরে ওই চলমান গতি অনুসারে, ওই শব্দধারণকৃত মাধ্যমটিকে ফনোগ্রাফে বাজানো হয়। শব্দ ধারণের  মাধ্যমটি চোঙ্গাকৃত বা চাকতির মতো হয়ে থাকে। এই মাধ্যমটি ফনোগ্রাফের নিজস্ব যন্ত্রের সাহায্যে ঘুরানো হয় এবং এর উপরে শব্দরেখার উপর সূঁচালো একটি শলাকার অগ্রভাগ ছুঁয়ে যাওয়ার সময়, শব্দরেখার কম্পাঙ্ককে শনাক্ত করে, শব্দ উৎপন্ন হয়। পরে শব্দ বর্ধক যন্ত্রের সাহায্যে তা জোরালো হয়ে উঠে।

পরিভাষা[সম্পাদনা]

পরিভাষা ব্যবহার ইংরেজি-ভাষী বিশ্ব জুড়ে অভিন্ন নয় (নীচে দেখুন)। আরো আধুনিক ব্যবহারে, প্লেব্যাক ডিভাইসটি প্রায়শই একটি "টার্নটেবল", "রেকর্ড প্লেয়ার" বলা হয়, বা "রেকর্ড চেঞ্জার", যদিও এই শর্তাবলী প্রতিটি স্পষ্টভাবে স্বতন্ত্র আইটেম নির্দেশ করে। একটি ডিজে সেটআপের অংশের সাথে একটি মিক্সারাস মিলিত হয়ে ব্যবহৃত হয় টার্নটেবিলকে প্রায়ই কথ্যভাষায় বলা হয় "ডেক"। [১]

ফনোগ্রাফের ইতিহাস[সম্পাদনা]

পূর্বসূরিদের ফনোগ্রাফ[সম্পাদনা]

অনেক আবিষ্কারক থমাস এডিসনের ফোনোগ্রাফির আগে শব্দটি রেকর্ড করার মেশিন তৈরি করেছিলেন। এডিসনই প্রথমটি এমন একটি ডিভাইস আবিষ্কার করেছিলেন যা শব্দ রেকর্ড এবং পুনরুৎপাদন উভয়ই করতে পারে। পূর্বসূরিদের ফোনোগ্রাফির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ফরাসি বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড-লিওন স্কট ডি মার্টিনভিল এর ফোনোটোগ্রাফ এবং ফরাসি কবি চার্লস ক্রোস এর পেলিওফোন।

১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত এই ফোনোটোগ্রাফের পিপার মতো অংশটি তৈরি হয়ে প্যারিস অফ প্লাস্টার দ্বারা।

একটি ফনোগ্রাফের অভিধানিক চিত্রনাট্য। এই সংস্করণ প্যারিসের প্লাস্টার দিয়ে একটি ব্যারেল ব্যবহার করে তৈরি।

ফোনোটোগ্রাফ[সম্পাদনা]

শব্দকে যথাযথভাবে যন্ত্রের সাহায্যে বারবার বাজানোর উপযোগী প্রথম যন্ত্র হলো টিউনিং ফর্ক। ১৮০৭ খ্রিষ্টাব্দে এই যন্ত্রটি প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন ইংরেজ বিজ্ঞানী থমাস ইয়ং। কিন্তু যন্ত্রের কাঁটাকে এমনভাবে তৈরি করা হতো। যাতে আঘাত করলে সুনির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের শব্দ তৈরি হয়। এতে কোনো শব্দকে গ্রহণ করে ধারণ করা যায় না। এখনো পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণাগারে এই যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বক্তৃতা, সঙ্গীত এবং অন্যান্য শব্দগুলির জন্য বায়ুবাহিত রেকর্ডিংয়ের জন্য প্রথম পরিচিত ডিভাইস ফোনোটোগ্রাফ, তৈরি করেন ফরাসি উদ্ভাবক এডওয়ার্ড-লিওন স্কট ডি মার্টিনভিল। এই যন্ত্রটির স্বত্বাধিকার গ্রহণ করা হয়েছিল ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মার্চ। এই যন্ত্রটিও তৈরি করা হয়েছিল শব্দ-গবেষণাগারের জন্য।

বাতাসের ভিতর দিয়ে ভেসে আসা শব্দ এই  যন্ত্রের পার্চমেন্ট কাগজের পর্দায় আঘাত হানতো। এর ফলে যে শব্দের কম্পাঙ্ক সৃষ্টি হতো তা এই পর্দার সাথে যুক্ত একটি বিশেষ ধরনের লেখনীকে কম্পিত করতো। এই লেখনী একটি ঘূর্ণায়মান চোখের উপর রাখা এক ধরনের কালচে কাগজের উপর শব্দ কম্পাঙ্কের ছবি আঁকতো। মূলত শব্দের প্রকৃতি চাক্ষুষভাবে পরীক্ষা করার জন্য এই যন্ত্র ব্যবহৃত হতো। কাগজে আঁকা এই শব্দ-কম্পাঙ্ক বাজানোর কোনো ব্যবস্থা সে সময়ে ছিল না।  

পেলিওফোন[সম্পাদনা]

ফরাসি কবি এবং শৌখিন কবি চার্লস ক্রোস, প্রথম একটি শব্দ ধারণ এবং ধারণকৃত শব্দ বাজানোর যন্ত্রের তৈরির কথা ভাবেন। এই বিষয়ে তিনি ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ এপ্রিলে ফরাসি বিজ্ঞান একাডেমিতে একটি প্রতিবেদন পাঠান। এই বৎসরে এই যন্ত্র সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন ৩০ অক্টোবরে। এই প্রতিবেদনের নাম ছিল ফোনোগ্রাফি। কিন্তু লেখকের পছন্দের নাম ছিল পেলিওফোন। চার্লস ক্রোস এই যন্ত্রে শব্দ ধারণের জন্য দুই স্তরের এক ধরনের পাতলা পাতের কথা ভেবেছিলেন। এই পাতের নিচের পাতটি হবে এ্যাসিডে ক্ষয় হয় না এমন পাত। উপরের পাতটি হবে এ্যাসিড দ্বারা ক্ষয় হতে পারে এমন। কোনো ঘূর্ণায়মান চোঙের উপর পাতটি আবদ্ধ করা হবে। শব্দ গ্রহণের সময় এ্যাসিড -বাহিত কলমের দ্বারা ওই পাতের উপর লেখা হবে। ফলে এই পাতে শব্দের ছবি অঙ্কিত হবে। পরে এই এ্যাসিডে পোড়া পাতটি অন্য একটি যন্ত্রের উপর সেঁটে, রেকর্ডকালিন গতিতে ঘুরিয়ে এবং এর উপরে স্থাপিত শব্দগ্রাহক কলমের দিয়ে শব্দ বাজানো হবে। যদিও এরপর এই পদ্ধতিতে এ্যাসিডে পোড়া শব্দ-ধারণোপযোগী পাতের ব্যবহৃত হওয়া শুরু হয়েছিল। কবি চার্লস ক্রোস এই বিষয়ে কোনো দাবি বা কৃতিত্ব দাবি করেন নি। ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে এই কবি মৃত্যুবরণ করেন। এরপর শুরু হয় থমাস আলভা এডিসনের ফনোগ্রাফের যুগ।

প্রাথমিক ফোনগ্রাফ[সম্পাদনা]

এডিসনের ফোনোগ্রাফোগ্রাফির একটি পেটেন্ট অঙ্কন, ১৮ মে, ১৮৮০

  টমাস আলভা এডিসন শব্দ ধারণ এবং তা পুনরায় বাজানোর পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সমন্বয় করা কৌশল আবিষ্কার করেছিলেন ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দের মে এবং জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে। কিন্তু চূড়ান্তভাবে এই আবিষ্কারের বিষয়টি প্রকাশ করেন ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে নভেম্বরে। ডিসেম্বর মাসে সায়েন্টিফিক আমেরিকান তিনি আর এই যন্ত্রটিকে সর্ব সমক্ষে হাজির করেন ২৯ নভেম্বরে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ ফেব্রুয়ারিতে তিনি এই আবিষ্কারের স্বত্ত্বাধিকার লাভ করেন। অফিসে গিয়ে যন্ত্রের মাধ্যমে সবাইকে যে কয়টি কথা, এই 'কথা বলার যন্ত্র' দিয়ে শুনিয়েছিলেন, তা হলো― "Good morning. How do you do? How do you like the phonograph?"। এই যন্ত্রটিই ছিল প্রথম ফনোগ্রাফ।  

১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সে এই গ্রাফোফোন বিক্রয় করা হয়েছিল। এডিসনের আদি ফনোগ্রাফে শব্দ ধারণ করা হতো পাতল টিনের পাতের উপর। এই পাতটি বসানো হতো একটি চোঙার উপরে। এই চোঙাটকে একটি হাতলের দ্বারা সুসম গতিতে ঘুরানো হতো। শব্দে ধারণ হতো এই টিনের পাতের উপর আঁচর কেটে। এই পদ্ধতিতে শব্দ ধারণ করা হয়েছিল ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। এরপর এডিসন তাঁর যন্ত্রটিকে ক্রমে ক্রমে আরও উন্নত করেন।  ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে এমিল বারলিনার  সিলিণ্ডারের পরিবর্তে সমতল ও গোলাকার ডিস্ক ব্যবহার করেন। ইনি ডিস্কে স্পাইরাল ট্রাকের প্রবর্তন করেন। এবং একটি মাস্টার ডিস্ক থেকে একাধিক কপি করার পদ্ধতিও তিনি প্রবর্তন করেন। এই যন্ত্রটি গ্রামোফোন নামে পরিচিতি লাভ করে।

গ্রামোফোন এবং এইচএমভি[সম্পাদনা]

এই যন্ত্রটি ছিল মূলত এডিসনের ফনোগ্রাফ যন্ত্রের উন্নত সংস্করণ। পরে এই যন্ত্রের বিপণনের জন্য স্থাপন করা হয়েছিল ভোল্টা গ্রামোফোন কোম্পানি। যতদূর জানা যায় ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে এই যন্ত্রটি সর্ব-সাধারণের সামনে হাজির করা হয়েছিল। ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে এমাইল বার্লিনার নতুন ধরনের একটি যন্ত্র হাজির করলেন। ইনি এই যন্ত্রটির নাম দেন গ্রামোফোন। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল, মোম এবং বেনজিনের প্রলেপ দেওয়া এক ধরনের দস্তার চাকতির উপরের  সর্পিলাকারে শব্দরেখা অঙ্কিত হতো।   ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে  রেকর্ড বাজারজাত করা শুরু হয়। তখন এই রেকর্ডের ব্যাস ছিল ৫ ইঞ্চি (১৩ সেন্টিমিটার)। এই রেকর্ড একটি থালার উপরে রেখে হাতল ঘুরিয়ে চালাতে হতো। মূলত এই রেকর্ডগুলো শব্দ তৈরির খেলনা সামগ্রীর মতো। পরে এই যন্ত্রটির শব্দধারণ প্রক্রিয়াটিকে আরও কম ব্যয়বহুল করে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। কারণ ছাপ দেওয়া প্রক্রিয়ায়, একই রেকর্ডের অনেকগুলো কপি তৈরি করা যেতো। কিন্তু সিলিন্ডার পদ্ধতির রেকর্ডে তা সম্ভব ছিল না। কিন্তু শব্দের মানের বিচারে এডিসনের সিলিন্ডার পদ্ধতিতে ধারণকৃত শব্দের মান অনেক ভালো ছিল।   ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দের একটি গ্রামোফোন ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে  বার্লিনার রেকর্ড কোম্পানি তাদের ট্রেডমার্ক-সহ রেকর্ড বাজারজাত করা শুরু করে। ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে এই যন্ত্রটি একটি চমৎকার অবয়ব লাভ করেছিল। এর ভিতরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভোল্টা গবেষণাগারে Charles Sumner Tainter এবং Chichester Bell- এর তত্ত্বাবধানে আরও একটি যন্ত্র হয়েছিল। এই বিজ্ঞানীদ্বয় এর নাম দিয়েছিল গ্রাফোফোন।   ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে এই কোম্পানি ভেঙে যায়। পরে এই কোম্পানি নতুন নামে আত্মপ্রকাশ করে। এই কোম্পানির নাম ছিল Victor Talking Machine Company।

গ্রামোফোন রেকর্ড[সম্পাদনা]

  এই সময় এই কোম্পানি প্রকাশ করে ১০ ইঞ্চি ব্যাসের রেকর্ড বাজারজাত করে। ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে বাজারজাত করা হয় ১২ ইঞ্চি ব্যাসের রেকর্ড। এই সকল রেকর্ডের বাদনকাল ছিল ২ মিনিট।

১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে এডিসন সাড়ে চার মিনিট বাদন উপযোগী এ্যাম্বর সিলিন্ডার বাজারজাত করেন। এই সূত্রে শব্দ বাদনে প্লাস্টিক জাতীয় উপকরণের ব্যবহার শুরু হয়। ১৮৮৯-১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে রেকর্ড তৈরিউ হতো শক্ত রাবার জাতীয় পদার্থ দিয়ে। পরবর্তী সময়ে স্লেট এবং চুনাপাথরের মিশ্রণ দিয়ে রেকর্ড তৈরি হয়। একে সাধারণভাবে মাটির রেকর্ড বলা হয়ে থাকে। এই রেকর্ডগুলো বেশ ভারি হতো। কলাম্বিয়া রেকর্ড কোম্পানি ফাইবার দিয়ে রেকর্ড তৈরি করা শুরু করে ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে। এতে বাজানোর জন্য ব্যবহার করা হতো স্বর্ণাবৃত পিন। কিন্তু শব্দের গুণগত মানের বিচারে এই রেকর্ড জনপ্রিয়তা লাভ করে নি।   শব্দের ধারণের ডিস্কের ঘূর্ণনগতি একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। প্রতি মিনিটে ঘূর্ণন (আরপিএম) সংখ্যা দ্বারা এই মান নির্ধারিত হয়। এই সময়ে ৬০ আরপিএম থেকে ১৩০ আরপিএম ঘূর্ণনগতির রেকর্ড প্রকাশিত হতো। ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দের দিকে  বার্লিনার রেকর্ড কোম্পানি ৭ ইঞ্চি ব্যাসের রেকর্ড প্রকাশ করে। এর ঘূর্ণগতি ছিল ৭০আরপিএম। রেকর্ডের ঘূর্ণন মানের বিচারে তিন ধরনের রেকর্ড বাজারজাত হয়েছিল।   রেকর্ড তৈরির শুরু দিকে এই ঘূর্ণনমান ঠিক রাখা হতো না। ফলে এক যন্ত্রের রেকর্ড করা শব্দ বা রেকর্ড অন্য যন্ত্রে যথাযথভাবে বাদিত হতো না। এই অসুবিধা দূর করার জন্য, ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে এই ঘূর্ণন গতি  নির্দিষ্ট করা হয়। প্রথম এই নির্দিষ্ট গতি ছিল ৭৮-আরপিএম। তখন রেকর্ডের প্রতি পিঠে প্রায় ৪১ মিনিটের শব্দ ধারণ করা হতো। এই সময় সিলিণ্ডার বা চোঙের মধ্যে রেকর্ডের শব্দকে প্রেরণ করে শব্দের উচ্চতা বৃদ্ধি করা হতো।   ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ইলেকট্রিক লাউড স্পীকার গ্রামোফোনে ব্যবহার শুরু হয়। রেকর্ডের ঘূর্ণন মানের বিচারে তিন ধরনের রেকর্ড বাজারজাত হয়েছিল।   ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে সকল ধরনের রেকর্ডের ঘূর্ণনগতির একটি আদর্শমান দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই সময় রেকর্ডের সাধারণ ঘূর্ণন মান ৭৮ আরপিএম ঠিক রেখে অন্যান্য রেকর্ডের ঘূর্ণনগতি নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হব। এই সূতরে দুটি ঘূর্ণন গতিকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করা হয়। এই মান দুটি হলো— 45 এবং 33⅓  আরপিএম।  

১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে সহজবহনযোগ্য ৭৮আরপিএম-এর রেকর্ড-সহ গ্রামোফোন যন্ত্রের নমুনা ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বেশ নমনীয় প্লাস্টিকের রেকর্ড বাজারজাত করেছিল কিছু কোম্পানি। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো ছিল জার্মানির ফোনিকর্ড এবং ব্রিটিশ ফিল্মোফোন ও গুডসন। কিন্তু এদের কোনো রেকর্ডই শেষ পর্যন্ত বাজারে টিকে থাকতে পারে নি। ১৯৫৬-১৯৮৫ ফরাসি French Pathé Cellodiscs  পাতলা ভাইনাল প্লাস্টিক দিয়ে রেকর্ড তৈরি করেছিল। এগুলো খুব বেশিদিন ব্যবহার করা যেতো না।   ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের বেতার সম্প্রচারের জন্য ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের ভাইনাল রেকর্ড প্রকাশ করা হয়েছিল। এগুলোর ঘূর্ণগতি ছিল ৩৩ আরপিএম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভাইনাল রেকর্ড একটি দীর্ঘবাদন রেকর্ডের আদর্শ মান হিসেবে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।

১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে কলাম্বিয়া রেকর্ড কোম্পানি প্রথম দীর্ঘবাদন রেকর্ড প্রকাশ করে। এই সময়ে ঘূর্ণন গতি ছিল  33⅓  আরপিএমি। 

আর ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে RCA Victor  প্রকাশ করে ৪৫ আরপিএম রেকর্ড।    ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের পূর্ব পর্যন্ত শব্দ একটি চ্যানেলে ধারণ করা হতো। এরপর থেকে একটি একক ট্রাকে দুই চ্যানেলের শব্দ ধারণের চেষ্টা করা হয়। সেই সূত্রে ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে বাণিজ্যিকভাবে স্টেরিও রেকর্ড সিসটেম প্রচলিত হয়।   একটি আধুনিক গ্রামোফোন রেকর্ড ও রেকর্ড প্লেয়ারের নমুনা ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম তৈরি হয় ট্রান্‌জিস্টর ফনোগ্রাফ। এর মডেল ছিল TPA-1 এবং TPA-2। এতে শুধু ৪৫ আরপিএম রেকর্ড বাজানো যেতো। এতে ব্যবহৃত হতো ১.৫ ভোল্টের 'ডি' ব্যাটারি। এরপর থেকে হ্যান্ডেল দিয়ে রেকর্ড ঘুরানোর যুগ শেষ হয়ে যায়। মূলত এর পরে এর যান্ত্রিক কৌশল পরিবর্তন ঘটেছে ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র হিসেবে। রেকর্ড, রেকর্ড প্লেয়ারের রেকর্ড ঘুরানোর অংশ, শব্দ উৎপাদনের মান ইত্যাদি ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নয়ন ঘটেছিল। কম্পিউটার সিডি আবিষ্কারের পর থেকে গ্রামোফোনের চাহিদায় মারাত্মক বিপর্যয় ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম তৈরি হয় ট্রান্‌জিস্টর ফনোগ্রাফ। এর মডেল ছিল TPA-1 এবং TPA-2। এতে শুধু ৪৫ আরপিএম রেকর্ড বাজানো যেতো। এতে ব্যবহৃত হতো ১.৫ ভোল্টের 'ডি' ব্যাটারি। এরপর থেকে হ্যান্ডেল দিয়ে রেকর্ড ঘুরানোর যুগ শেষ হয়ে যায়। মূলত এর পরে এর যান্ত্রিক কৌশল পরিবর্তন ঘটেছে ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র হিসেবে। রেকর্ড, রেকর্ড প্লেয়ারের রেকর্ড ঘুরানোর অংশ, শব্দ উৎপাদনের মান ইত্যাদি ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নয়ন ঘটেছিল। কম্পিউটার সিডি আবিষ্কারের পর থেকে গ্রামোফোনের চাহিদায় মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে। বর্তমানে রেকর্ড এবং গ্রামোফোন যন্ত্র একটি শো-পিসে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিটি ফনোগ্রাফে কয়েকটি অত্যবশ্যকীয় অংশ থাকে। অংশগুলি হলো―

  • ডিস্ক ঘূর্ণন উপযোগী যন্ত্র থাকে। এই অংশটির গতি নিয়ন্ত্রক চাবি থাকে। এই চাবির সাহায্যে টার্নটেবলের আরপিএম  নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
  • রেকর্ডের ট্র্যাকের উপর দিয়ে পিন সঞ্চালনের উপযোগী পিন সংবলিত হ্যাণ্ডেল থাকে।
  • রেকর্ডের ম্যাকানিক্যাল শব্দকে বৈদ্যুতিক সঙ্কেতে পরিণত করার উপযোগী যন্ত্র থাকে।
  • বৈদ্যুতিক শব্দের তীব্রতা বৃদ্ধির জন্য এ্যামপ্লিফায়ার থাকে।
  • শব্দের চূড়ান্ত মান পাওয়ার জন্য স্পীকার থাকে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "DJ Jargon, DJ Dictionary, DJ Terms, DJ Terminology, DJ Glossary of terms – DJ School UK" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-১২-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-০৪ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]