খসড়া:ধ্বনির পরিবর্তন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ধ্বনির পরিবর্তন (Phonological Change)[সম্পাদনা]

ধ্বনির পরিবর্তন ১৬ ভাবে করা যায়।

স্বরাগম[সম্পাদনা]

আদি স্বরাগম / Prosthesis[সম্পাদনা]

উচ্চারণের সুবিধার জন্য বা অন্য কোনো কারণে শব্দের আদিতে স্বরধ্বনি এলে তাকে বলে আদি স্বরাগম। যেমন: স্কুল > ইস্কুল, স্টেশন > ইস্টিশন।

মধ্য স্বরাগম, বিপ্রকর্ষ বা স্বরভক্তি / Anaptyxis[সম্পাদনা]

সময় সময় উচ্চারণের সুবিধার জন্য সংযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির মাঝখানে স্বরধ্বনি আসে। একে বলা হয় মধ্য স্বরাগম বা বিপ্রকর্ষ বা স্বরভক্তি। যেমন:

  • অ: রত্ন > রতন, ধর্ম > ধরম, স্বপ্ন > স্বপন, হর্ষ > হরষ।
  • ই: প্রীতি > পিরীতি, ক্লিপ > কিলিপ, ফিল্ম > ফিলিম।

অন্ত্যস্বরাগম / Apotheosis[সম্পাদনা]

কোনো কোনো সময় শব্দের শেষে অতিরিক্ত স্বরধ্বনি আসে। এরূপ স্বরাগমকে বলা হয় অন্ত্যস্বরাগম। যেমন: দিশ > দিশা, পোখত্ > পোক্ত, বেঞ্চ > বেঞ্চি, সত্য > সত্যি।

অপিনিহিতি[সম্পাদনা]

পরের ই-কার আগে উচ্চারিত হলে কিংবা যুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির আগে ই-কার বা উ-কার উচ্চারিত হলে, তাকে অপিনিহিতি বলে। যেমন: আজি > আইজ, সাধু > সাউধ, রাখিয়া > রাইখ্যা, বাক্য > বাইক্য।

অসমীকরণ[সম্পাদনা]

একই স্বরের পুনরাবৃত্তি দূর করার জন্য মাঝখানে যখন স্বরধ্বনি যুক্ত হয়, তখন তাকে বলে অসমীকরণ। যেমন: ধপ + ধপ > ধপাধপ, টপ + টপ > টপাটপ।

স্বরসঙ্গতি[সম্পাদনা]

একটি স্বরধ্বনির প্রভাবে শব্দে অপর স্বরের পরিবর্তন ঘটলে তাকে স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন: দেশি > দিশি, বিলাতি > বিলিতি, মুলা > মুলো।

প্রগত স্বরসঙ্গতি[সম্পাদনা]

আদিস্বর অনুযায়ী অন্ত্যস্বর পরিবর্তিত হলে তাকে প্রগত স্বরসঙ্গতি বলা হয়। যেমন: মূলা > মূলো, শিকা > শিকে, তুলা > তুলো।

স্বরসঙ্গতি[সম্পাদনা]

অন্ত্যস্বরের কারণে আদ্যস্বর পরিবর্তিত হলে পরাগত স্বরসঙ্গতি হয়। যেমন: আখো > আখুয়া > এখো।

মধ্যগত স্বরসঙ্গতি[সম্পাদনা]

আদ্যস্তর ও অন্ত্যস্বর অনুযায়ী মধ্যস্বর পরিবর্তিত হলে মধ্যগত স্বরসঙ্গতি হয়। যেমন: বিলাতি > বিলিতি।

ধ্বনির পরিবর্তন[সম্পাদনা]

  • আদ্য ও অন্ত্য – দুই স্বরই পরস্পর প্রভাবিত হলে অন্যোন্য স্বরসঙ্গতি হয়। যেমন: মোজা > মুজো।
  • পূর্বস্বর উ-কার হলে পরবর্তী স্বর ও-কার হয়। যেমন: মুড়া > মুড়ো, চুলা > চুলো।
  • বিশেষ নিয়মে উড়–নি>উড়নি, এখনি> এখুনি হয়।

সম্প্রকর্ষ[সম্পাদনা]

দ্রুত উচ্চারণের জন্য শব্দের আদি, অন্ত্য বা মধ্যবর্তী কোনো স্বরধ্বনির লোপকে বলা হয় সম্প্রকর্ষ । যেমন: বসতি > বসইত, জানালা > জান্লা।

আদি স্বরলোপ / Aphesis :[সম্পাদনা]

যেমন: অলাবু > লাবু > লাউ, উদ্ধার > উধার > ধার।

মধ্য স্বরলোপ / Syncope:[সম্পাদনা]

অগুরু > অগ্রু, সুবর্ণ > স্বর্ণ।

অন্ত্য স্বরলোপ / Apocope :[সম্পাদনা]

আশা > আশ, আজি > আজ, চারি > চার (বাংলা), সন্ধ্যা > সঞঝা > সাঁঝ।

ধ্বনি বিপর্যয়[সম্পাদনা]

শব্দের মধ্যে দুটি ব্যঞ্জনের পরস্পর পরিবর্তন ঘটলে তাকে ধ্বনি বিপর্যয় বলে। যেমন: ইংরেজি বাক্স > বাংলা বাস্ক, জাপানি রিক্সা > বাংলা রিস্কা।

সমীভবন[সম্পাদনা]

শব্দমধ্যস্থ দুটি ভিন্ন ধ্বনি একে অপরের প্রভাবে অল্প-বিস্তর সমতা লাভ করে। এ ব্যাপারকে বলা হয় সমীভবন । যেমন: জন্ম > জম্ম, কাঁদনা > কান্না।

প্রগত সমীভবন[সম্পাদনা]

পূর্ব ধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ধ্বনির পরিবর্তন ঘটে। পরবর্তী ধ্বনি পূর্ববর্তী ধ্বনির মতো হয়, একে বলে প্রগত সমীভবন। যেমন: চক্র > চক্ক, পকৃ > পক্ক, পদ্ম > পদ্দ, লগ্ন > লগ্গ।

পরাগত সমীভবন[সম্পাদনা]

পরবর্তী ধ্বনির প্রভাবে পূর্ববর্তী ধ্বনির পরিবর্তন হয়, একে বলে পরাগত সমীভবন । যেমন: তৎ + জন্য > তজ্জন্য, তৎ + হিত > তদ্ধিত, উৎ + মুখ > উন্মুখ।

অন্যোন্য সমীভবন[সম্পাদনা]

যখন পরস্পরের প্রভাবে দুটো ধ্বনিই পরিবর্তিত হয়, তখন তাকে বলে অন্যোন্য সমীভবন। যেমন: সংস্কৃত-সত্য > প্রাকৃত-সচ্চ, সংস্কৃত-বিদ্যা > প্রাকৃত-বিজ্জা।

দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বা ব্যঞ্জন-দ্বিত্ব[সম্পাদনা]

  • দুটো সমবর্ণের একটির পরিবর্তনকে বিষমীভবন বলে। যেমন: শরীর > শরীল, লাল > নাল।
  • কখনো কখনো জোর দেওয়ার জন্য শব্দের অন্তর্গত ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়, একে বলে দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বা ব্যঞ্জনদ্বিত্ব। যেমন: পাকা > পাক্কা, সকাল > সক্কাল।

ব্যঞ্জন বিকৃতি[সম্পাদনা]

শব্দের মধ্যে কোনো কোনো সময় কোনো ব্যঞ্জন পরিবর্তিত হয়ে নতুন ব্যঞ্জনধ্বনি ব্যবহৃত হয়। একে বলে ব্যঞ্জন বিকৃতি। যেমন: কবাট > কপাট, ধোবা > ধোপা, ধাইমা > লাইমা।

ধ্বনিচ্যুতি বা ব্যঞ্জনচ্যুতি[সম্পাদনা]

পাশাপাশি সমউচ্চারণের দুটি ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে তার একটি লোপ পায়। এরূপ লোপকে বলা হয়, ধ্বনিচ্যুতি বা ব্যঞ্জনচ্যুতি। যেমন: বউদিদি > বউদি, বড় দাদা > বড়দা।

অন্তর্হতি[সম্পাদনা]

পদের মধ্যে কোনো ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে তাকে বলে অন্তর্হতি। যেমন: ফাল্গুন > ফাগুন, ফলাহার > ফলার, আলাহিদা > আলাদা।

অভিশ্রুতি[সম্পাদনা]

বিপর্যস্ত স্বরধ্বনি পূর্ববর্তী স্বরধ্বনির সাথে মিলে গেলে এবং তদনুসারে পরবর্তী স্বরধ্বনির পরিবর্তন ঘটলে, তাকে বলে অভিশ্রুতি। যেমন: ‘করিয়া’ থেকে অপিনিহিতির ফলে ‘কইরিয়া’ কিংবা বিপর্যয়ের ফলে ‘কইরা’ থেকে অভিশ্রুতিজাত ‘করে’।