বিষয়বস্তুতে চলুন

খর পানি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
স্নানাধারের কলের গায়ে খর পানির কারণে সৃষ্ট চুনা-আস্তরণ

খর পানি বা খর জল (ইংরেজি: Hard water) বলতে এমন পানিকে বোঝায়, যাতে কিছু বিশেষ খনিজের অধিক পরিমাণে দ্রবীভূত আয়ন থাকে, বিশেষ করে ক্যালসিয়াম আয়ন (Ca2+) ও ম্যাগনেসিয়াম আয়ন (Mg2+) থাকে, যার কারণে পানিতে সাবান (C17H35COONa) মিশ্রিত করলে এতে ফেনা হতে চায় না, বরং গাদ উৎপন্ন হয়।

পানির খরতাকে দুইটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায় - স্থায়ী ও অস্থায়ী। পানির অস্থায়ী খরতাকে ফুটিয়ে দূর করা সম্ভব। অস্থায়ী খর পানি ফোটালে ক্যালসিয়াম বাইকার্বোনেট (Ca(HCO3)2) লবণগুলি বিয়োজিত হয়ে ক্যালসিয়াম কার্বনেট (CaCO3(s)) অবক্ষিপ্ত হয় ও পাত্রের গায়ে চুনা-আস্তর সৃষ্টি করে।

Ca(HCO3)2 (তাপ) CaCO3(s) + CO2(g) + H2O(l)

অন্যদিকে স্থায়ী খরতাকে পানি ফুটিয়ে দূর করা সম্ভব নয়। এর পরিবর্তে একটি আয়ন-হস্তান্তর রজন ব্যবহার করতে হয়। স্থায়ী খর পানির মধ্যে সোডিয়াম কার্বনেট (Na2CO3) যোগ করলে সোডিয়াম কার্বনেট ক্যালসিয়াম আয়ন ও ম্যাগনেসিয়াম আয়নের সাথে বিক্রিয়া করে ক্যালসিয়াম কার্বনেট(CaCO3↓) এবং ম্যাগনেসিয়াম কার্বনেট(MgCO3↓) এর অধঃক্ষেপ উৎপন্ন করে। ফলে পানি থেকে ক্যালসিয়াম আয়ন এবং ম্যাগনেসিয়াম আয়রন অপসারিত হয় অর্থাৎ স্থায়ী খরতা দূর হয়। রজনটি অস্থায়ী খরতাও দূর করতে পারে।

CaCl2 + Na2CO3 ⟶ CaCO3↓ + 2NaCl

যখন পানি চুনাপাথর, চক বা জিপসামের মজুদের মধ্য দিয়ে অনুস্রাবিত হয় বা চুঁইয়ে বের হয়, তখন খর পানির সৃষ্টি হয়।[] ঐসব মজুদ মূলত ক্যালসিয়াম(Ca2+) ও ম্যাগনেসিয়াম(Mg2+) এর কার্বোনেট(CO32-) , বাইকার্বোনেট(HCO3-) ও সালফেট(SO42-) নিয়ে গঠিত।

সুপেয় খর পানি স্বাস্থ্যের জন্য সামান্য উপকারী হতে পারে। তবে শিল্পখাতে এটি সংকটজনক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, যেখানে পানির খরতার কারণে জলস্ফোটক যন্ত্র বা বয়লার, শীতলীকারক বুরূজ (কুলিং টাওয়ার) ও অন্যান্য পানি ব্যবহারকারী যন্ত্রপাতি ভেঙে যেতে পারে; তাই সেগুলিতে পানির খরতা সর্বক্ষণ কড়া নজরদারিতে রাখা হয়। গৃহস্থালি পরিবেশে সাবান পানিতে ঝাঁকালে যদি ফেনা না ওঠে, পানির কেটলিতে ও পানির উত্তাপকে (হিটার) যদি চুনা-আস্তর জমে, তাহলে সেই পানি যে খর, সে ব্যাপারটি নির্দেশ করে।[] যেসব স্থানে পানির খরতা একটি সমস্যা, সেখানে সাধারণত পানির মৃদুকরণের মাধ্যমে খর পানির বিরূপ প্রভাব হ্রাস করা হয়।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Hard water"। National Groundwater Association। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুন ২০১৯ 
  2. World Health Organization Hardness in Drinking-Water ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ নভেম্বর ২০২১ তারিখে, 2003

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]