ক্রিস্তিয়ঁ মেৎস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ক্রিস্তিয়ঁ মেৎস
Christian Metz
"ক্রিস্তিয়ঁ মেৎস" এর একটি স্কেচ
জন্ম(১৯৩১-১২-১২)১২ ডিসেম্বর ১৯৩১
মৃত্যু৭ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩(1993-09-07) (বয়স ৬১)
পেশাচলচ্চিত্র তাত্ত্বিক

ক্রিস্তিয়ঁ মেৎস (ফরাসি: Christian Metz); ১২ই ডিসেম্বর, ১৯৩১ – ৭ই সেপ্টেম্বর, ১৯৯৩) একজন ফরাসি চলচ্চিত্র তাত্ত্বিক ছিলেন। তিনি চলচ্চিত্রের সঙ্কেতবিজ্ঞান নামক চলচ্চিত্র তত্ত্বদৃশ্যসঙ্কেতবিজ্ঞান ক্ষেত্রের মধ্যবর্তী আন্তঃক্ষেত্রীয় শাস্ত্রের বিকাশে অগ্রপথিকের ভূমিকা পালন করার জন্য বিখ্যাত। তিনি চলচ্চিত্রের বিশ্লেষণে ফের্দিনঁ দ্য সোস্যুরের সঙ্কেতবিজ্ঞান বিষয়ক তত্ত্বগুলির প্রয়োগ ঘটান। একটি চলচ্চিত্রের অর্থ কী, তা নিয়ে প্রশ্ন করার বদলে মেৎস একটি চলচ্চিত্র কীভাবে অর্থ নির্মাণ করে, তা আবিষ্কারের চেষ্টা করেন। তাঁর কাজ চলচ্চিত্র রচনা ও উচ্চশিক্ষাঙ্গনে চলচ্চিত্র নিয়ে চিন্তাভাবনার প্রক্রিয়াতে বিপ্লব এনেছিল।

জীবনী[সম্পাদনা]

মেৎস দক্ষিণ ফ্রান্সের বেজিয়ে শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একোল নর্মাল সুপেরিয়রে ধ্রুপদী ভাষা ও প্রাচীন ইতিহাস অধ্যয়ন করেন। এরপর তিনি প্যারিসের সর্বন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞানে ডক্টরেট উপাধি অর্জন করেন। মেৎস সবসময়েই চলচ্চিত্রের বড় সমঝদার ছিলেন। তিনি ফের্দিনঁ দ্য সোস্যুরের ভাষা-বিষয়ক তত্ত্বগুলিকে (সেসময় প্যারিসে ক্লোদ-লেভি স্ত্রসরোলঁ বার্তেসের রচনার সুবাদে সোস্যুরীয় ধ্যানধারণার অনেক চল ছিল) কী করে চলচ্চিত্রে প্রয়োগ করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল আখ্যানধর্মী চলচ্চিত্রগুলির সার্বজনীন অন্বয়-তত্ত্ব (সিনট্যাক্স) যুক্তির মাধ্যমে নির্ধারণ করা। অর্থাৎ একটি চলচ্চিত্র কীভাবে ছবির মাধ্যমে একটি গল্পের বিবরণ দেয়, সেই ব্যাপারটি। ১৯৭০-এর দশকে মেৎস বুঝতে পারেন যে চলচ্চিত্র বিশ্লেষণে তিনি যে সংগঠনবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এগিয়েছিলেন, তাতে চলচ্চিত্রের পাণ্ডুলিপির লিখিত বিষয়বস্তুকে বেশি কদর করা হয়েছে এবং তুলনামূলকভাবে দর্শকদের কথা তেমন করে চিন্তা করা হয়নি। এর সূত্র ধরে মেৎস মনোবিশ্লেষণের তত্ত্বগুলি, বিশেষ করে লাকঁ-র তত্ত্বগুলি তাঁর তত্ত্বের মধ্যে নিয়ে আসেন। মেৎস এই অনুমান প্রদান করেন যে চলচ্চিত্র মূলত স্বপ্ন কিংবা অলীকদর্শনের সমতুল্য একটি বস্তু, তাই জিগমুন্ড ফ্রয়েডের স্বপ্ন সংক্রান্ত তত্ত্ব চলচ্চিত্রের উপরে সরাসরি প্রয়োগ করা সম্ভব। মেৎসের এই গবেষণাকর্ম ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও লাতিন আমেরিকার চলচ্চিত্র তত্ত্ব বিষয়ক গবেষণায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।[১]

মেৎসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ দুইটি হল এসে স্যুর লা সিনিফিকাসিওঁ ও সিনেমা (১৯৬৮, "আধেয় ও চলচ্চিত্রের উপর নিবন্ধ") এবং ল্য সিনিফিওঁ ইমাজিনের; প্‌সিকানালিজ এ সিনেমা (১৯৭৭, "কাল্পনিক নির্দেশক: মনোবিশ্লেষণ ও চলচ্চিত্র")। এসে স্যুর লা সিনিফিকাসিওঁ ও সিনেমা নামক গ্রন্থে মেৎস ঘটনা বর্ণনার কাঠামোর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন এবং "গ্রঁ সাঁতাগমাতিক" নামের একটি ব্যবস্থা প্রস্তাব করেন, যেখানে চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত দৃশ্য বা সাঁতাগ্‌মগুলিকে শ্রেণীকরণ করা হয়। মেৎস জিগমুন্ড ফ্রয়েডের মনোস্তত্ত্ব এবং জাক লাকঁ-র দর্পণ তত্ত্ব চলচ্চিত্রের উপরে প্রয়োগ করেন এবং প্রস্তাব করেন যে শিল্পকলা হিসেবে চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তার কারণ এই যে এটি একই সাথে বাস্তবতার ত্রুটিপূর্ণ প্রতিফলন ও অবচেতন স্বপ্নাবস্থায় প্রবেশের একটি পদ্ধতি।

মেৎস প্যারিসে ১৯৯৩ সালে ৬১ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেছিলেন।[২]

নির্বাচিত গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Ian Buchanan (২০১০), A Dictionary of Critical Theory, Oxford University Press 
  2. Flitterman-Lewis, Sandy (১৯৯৪)। "Tribute to Christian Metz"Discourse। Wayne State University Press। 16 (3): 3–5। 

গ্রন্থ ও রচনাপঞ্জি[সম্পাদনা]

  • Jean Mitry, La Sémiologie en question : Language et cinéma, Paris, Cerf, 1987.