কৈবল্যধাম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

শ্রীশ্রী কৈবল্যধাম আশ্রম

চট্টগ্রাম শহরের কাছেই পাহাড়তলীতে (বর্তমানে আকবরশাহ থানা), শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্রদেব প্রতিষ্ঠিত এই ধাম/আশ্রমটি হইল এমন একটি আধ্যাত্মিক কেন্দ্র যেখানে যে কোনো ধর্মবিশ্বাসী বা একেবারেই বিশ্বাস নাই এমন মানুষও প্রতিফলিত হইতে, প্রশ্ন করিতে, আলোচনা শুনিতে, প্রার্থনা করিতে, হরিনাম করিতে / শুনিতে, ধ্যান, জ্ঞান এবং নিজেকে পরের সেবায় উৎসর্গ করিতে আসেন।

শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্রদেব হইলেন এই আশ্রমের অভিভাবক। মরভূমের বিষম বিপাক হইতে স্বগণকে উদ্ধার করিয়া লইবার জন্যই লোকালয়ে প্রকট হইয়াছিলেন ভগবানের অবতার পরম দয়াল শ্রীশ্রী রামঠাকুর। নরদেহে আবির্ভূত হইয়া জীবের পরম হিতৈষীর মূর্ত্তিতে স্বগণের গৃহে গৃহে, নিকটে নিকটে ঘুরিয়া সকলকে একান্ত আপন জন হিসাবে আকর্ষণ করিয়া প্রাণের ডোরে নিত্য সত্য ভগবৎপদে গাঁথিয়া নিয়াছেন; অনিত্য সংসারের ভ্রান্ত আসক্তি হইতে উদ্ধারের পথে টানিয়া লইয়াছেন।

কৈবল্যধাম এর অর্থ হলো – মোক্ষধাম অর্থাৎ স্বর্গ।

অবস্থান[সম্পাদনা]

চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কের কর্নেলহাটের কাছে, ফিরোজ শাহ কলোনির সঙ্গেই কৈবল্যধাম।।

নামকরণ[সম্পাদনা]

শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর তার নরলীলা শেষ করার পূর্বে একটা আশ্রম প্রতিষ্ঠা করার কথা ভাবতে থাকেন। আর তখন তিনি তার ইচ্ছার কথা ভক্তদের জানালে তারা ঠাকুর এর আশ্রম করার জন্য বিভিন্ন জায়গা খুজতে থাকলে সেটা ঠাকুরের পছন্দ হয় নাই। তার কিছু দিন পরে অনেকগুলি জায়গা ঘুরে দেখার পর ঠাকুর যখন বিশ্রাম নিচ্ছিলেন একটা বট গাছের নিচে, তখন নিজেই পাহাড়তলির একটা পাহাড়ের মাথায় একটা জায়গা চিহ্নিত করে দেন তার আশ্রমের জন্য। পরবর্তীকালে সেই আশ্রমের নামকরণ হয় "শ্রীশ্রীকৈবল্যধাম" আর বটগাছটির নাম হয় "কৈবল্য শক্তি"। তখন থেকে এর নাম হয় কৈবল্যধাম। একান্ত জনবিরল সেই জায়গাটির মালিক ছিলেন শ্রী মহেন্দ্রলাল ঘোষাল। তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী চঁপলা দেবী ও পুত্র হাঁরাধান ঘোষাল তাদের শ্রদ্ধার দান হিসেবে শ্রীশ্রীঠাকুরকে জায়গাটি দিয়েছিলেন। পাহাড়টা ঢাকা ছিল ঘন জঙ্গলে আর সেখানে ছিল কিছু হিংস্র জন্তুজানোয়ার। জায়গাটা দ্রুত পরিষ্কার করার পর একটা ছোট মন্দির গড়া হলে অধিকাংশ ভক্ত চাইলেন ১৯৩০ সালের এপ্রিল বা মে মাসে একটা শুভ দিন দেখে শ্রীশ্রীকৈবল্যধাম উদ্বোধন করা হোক। ঠাকুর কিন্তু ঘোষণা করলেন যে, ঊদ্বোধন হবে ১৯৩০-এর ২৬শে জুলাই এবং সেই দিনই আশ্রমের উদ্বোধন হয়েছিল যদিও সেই অনুষ্ঠানে ঠাকুর উপস্থিত থাকতে পারেননি।

বাৎসরিক উৎসব[সম্পাদনা]

পাহাড়তলির শ্রীশ্রীকৈবল্যধামের বার্ষিক উৎসবও বটে এবং এটি চলে পাঁচ দিন ধরে। ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লক্ষ লক্ষ ভক্ত সমবেত হন এবং উৎসব চলার দিনগুলিতে উপস্থিত ভক্তবৃন্দ সমস্ত দিনই প্রসাদ গ্রহণ করেন। তা ছাড়া প্রতি সপ্তাহান্তে হাজার হাজার ভক্ত মহাপ্রসাদ গ্রহণ করে থাকেন।

স্থাপনা সমূহ[সম্পাদনা]

কৈবল্যধামের পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের দিগন্ত ছোঁয়া মনোমুগ্ধকর দৃশ্য; তেমনি আকর্ষণীয় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য। ঐ পাশেই রয়েছে "কৈবল্য শক্তি" নামের বটগাছটি এবং "কৈবল্য কুন্ড" নামে বড় একটা পুকুর; ভক্তরা সেখানে পুণ্যস্নান করে থাকেন। পুকুরের উত্তর দিকে "গয়াঘর" নামে একটা জায়গায় শ্রাদ্ধাদি অনুষ্ঠান করা হয়। ঠাকুর বলেছিলেন যে, এখানে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করা হলে ভারতবর্ষের গয়ায় কাজ করলে যে সুফল লাভ হয় তেমনটাই হবে। পরবর্তীকালে আশ্রম প্রাঙ্গণে নির্মিত করা হয় হর-গৌরী মন্দির এবং অথিতি-ভক্তদের থাকা ও অন্যান্য ক্রিয়াকর্মের জন্য নতুন একটি ভবন।

রাস্তা পরিচিতি[সম্পাদনা]

ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড নামে সুপরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কের পাশে কৈবল্যধাম রেল স্টেশনের খুব কাছেই শ্রীশ্রীকৈবল্যধাম।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

  • শ্রীশ্রী কৈবল্যধাম আশ্রমের ওয়েবসাইট [১]
  • শ্রীশ্রী কৈবল্যধাম আশ্রম যাদবপুর, ভারতবর্ষ [২]
  • শ্রীশ্রী কৈবল্যধাম আশ্রমের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজ [৩]