বিষয়বস্তুতে চলুন

কুর্দি-তুর্কি সংঘর্ষ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

কুর্দি জাতীয়তাবাদী বিদ্রোহ তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শুরু হয় এবং একাধিক পর্যায়ে সংঘটিত হয়। এই সংঘাত অটোমান সাম্রাজ্য থেকে বর্তমান দিন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।

উসমানীয় সামরিক রেকর্ড অনুসারে, কুর্দি বিদ্রোহ আনাতোলিয়ায় দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে। [] এই বিরোধের আধুনিক পর্যায়টি কুর্দি জাতীয়তাবাদের উত্থানের সাথে সাথেই ১৯২২ সালে শুরু হয়েছিল বলে মনে করা হয়।[] ১৯২৫ সালে শেখ সাইদ পিরানের নেতৃত্বে স্বাধীন কুর্দিস্তানের জন্য একটি বিদ্রোহ দ্রুততার সাথে দমন করা হয় এবং সাইদ এবং তার ৩৬ জন অনুসারীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৩০ এবং ১৯৩৭ সালে আরারাত এবং ডারসিমে অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কুর্দি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল [][] ট্রেবিজন্ডের ব্রিটিশ কনসাল, এই ঘটনায় নৃশংস এবং নির্বিচার সহিংসতার উল্লেখ করেছেন এবং ১৯১৫ সালের আর্মেনীয় গণহত্যার সাথে তুলনা করেছেন। "Thousands of Kurds," তিনি লিখেছেন "including women and children, were slain; others, mostly children, were thrown into the Euphrates; while thousands of others in less hostile areas, who had first been deprived of their cattle and other belongings, were deported to vilayets (provinces) in Central Anatolia. It is now stated that the Kurdish question no longer exists in Turkey." []

কুর্দিরা একাধিকবার তুর্কি সরকারের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে কুর্দি ভাষা নিষিদ্ধ করার মতো উপায়ের মাধ্যমে তাদের ভাষাগত পরিচয় দমন করার অভিযোগ করেছে। আতাতুর্ক বিশ্বাস করতেন যে একটি দেশের ঐক্য এবং স্থিতিশীলতা উভয়ই একটি একক রাজনৈতিক পরিচয়ের অস্তিত্বের মধ্যে থাকে। তাই সাংস্কৃতিক ও জাতিগত পার্থক্যগুলিকে ব্যক্তিগত পরিসরে সীমাবদ্ধ করা উচিত। কিন্তু অধিকাংশ কুর্দি তাদের জাতিগত পরিচয় এবং মাতৃভাষা ত্যাগ করেনি। [] তুর্কি সশস্ত্র বাহিনী এবং কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) এর মধ্যে ১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর দশক জুড়ে বৃহত্তর সশস্ত্র সংঘাত সংঘটিত হয়েছিল, যার ফলে ৩৫,০০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। []

পটভূমি

[সম্পাদনা]

কুর্দি বিদ্রোহের ইতিহাস দুই শতাব্দী আগে থেকে শুরু হলেও আধুনিক সংঘাতের সূত্রপাত খিলাফতের বিলুপ্তির সঙ্গে যুক্ত। আব্দুল হামিদ দ্বিতীয়ের শাসনামলে, যিনি খলিফা ও সুলতান উভয় পদেই অধিষ্ঠিত ছিলেন, কুর্দিরা খলিফার প্রতি অনুগত ছিল। তবে ১৯২৪ সালে খিলাফত বিলুপ্তির পর ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়।[] তুর্কি জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র এবং তুর্কি নাগরিকত্বের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শতাব্দী-প্রাচীন মিল্লেত ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়, যা অটোমান সাম্রাজ্যের মুসলিম জাতিগোষ্ঠীগুলিকে একটি অভিন্ন মুসলিম পরিচয়ের আওতায় ঐক্যবদ্ধ করেছিল। নবগঠিত ধর্মনিরপেক্ষ তুর্কি রাষ্ট্র এই বৈচিত্র্যময় মুসলিম জাতিগোষ্ঠীগুলিকে তুর্কি হিসেবে বিবেচনা করেছিল এবং স্বতন্ত্র কুর্দি পরিচয়কে স্বীকৃতি দেয়নি। এই পরিবর্তনের একটি পরিণতি ছিল তুরস্কের কুর্দি-অধ্যুষিত পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে একাধিক বিদ্রোহ।[]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

বিটলিস বিদ্রোহ

[সম্পাদনা]

বিটলিস অঞ্চলে প্রথম বিদ্রোহ ঘটে ১৯০৭ সালে।বিদ্রোহের কারণ নিহিত ছিল মার্চ মাসে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পের পর স্থানীয় কুর্দি জনগণ এবং বিটলিসের গভর্নরের মধ্যে উত্তেজনার মধ্যে। ২২ জুন ১৯০৭ সালে শুরু হওয়া এই বিদ্রোহ ৩৮ দিন স্থায়ী হয়। এরপর ৩০ জুলাই অটোমান বাহিনী এই বিদ্রোহ দমন করে।[১০] ১৯১৪ সালে ঐ অঞ্চলে আর একটি বিদ্রোহ শুরু হয় । এই বিদ্রোহে তৎকালীন রুশ সাম্রাজ্যের সমর্থন ছিল । একই সময়ে মসুল ভিলায়তের বারজানেও একটি রুশ সমর্থিত কুর্দি বিদ্রোহ ঘটে। বিদ্রোহটি মার্চের শুরুর দিকে শুরু হয়েছিল, যখন কুর্দি যোদ্ধাদের সাথে অটোমানদের সংঘর্ষ ঘটে, যেখানে অটোমানরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এরপর কুর্দিরা বিটলিস শহর অবরোধ করে এবং ২ এপ্রিল শহরটি দখল করে। এরপরে অন্য অটোমান বাহিনী পাঠানো হয় এবং বিদ্রোহটি দমন করা হয়। ৪ এপ্রিল বিদ্রোহ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হওয়ার পর, বিদ্রোহী নেতাদের একজন, মোল্লা সেলিম[১১], রাশিয়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেন।[১২]

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সংঘটিত বিদ্রোহ সমূহ

[সম্পাদনা]

১৯১৪ সালের বিদ্রোহ

[সম্পাদনা]

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রথম কুর্দি বিদ্রোহ অটোমান সাম্রাজ্যের যুদ্ধে প্রবেশের আগেই ঘটে। ১৯১৪ সালের আগস্টে, ডারসিম শহরের নগরপালের জনৈক আত্মীয় ফেরহাতউষাঘি(Ferhatuşağı) গোষ্ঠীর একজন সদস্যের হাতে নিহত হন, এবং এর প্রতিক্রিয়ায় অটোমানদের প্রতিশোধের বিরুদ্ধে ফেরহাতউষাঘি গোষ্ঠী বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এই বিদ্রোহে ফেরহাতউষাঘির সাথে কারাবাল্লি, লোয়ার আব্বাস, আব্বাসউষাঘি এবং কোচউষাঘি গোষ্ঠিগুলি যোগ দেয়। ফেরহাতউষাঘিদের প্রধানের মৃত্যুর পর বিদ্রোহটি বন্ধ হয়।[১৩]

বোটান অভ্যুত্থান

[সম্পাদনা]

১৯১৫ সালের বসন্তে, বোটানে একটি কুর্দি বিদ্রোহ শুরু হয়। এই বিদ্রোহ অটোমান বাহিনীকে পুরোপুরি বিতাড়িত করে এবং এর ফলে স্থানীয়রা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অঞ্চলটি শাসন করে।[১৪]

১৯১৬ সালের ডারসিম অভ্যুত্থান

[সম্পাদনা]

১৯১৬ সালের ডারসিম বিদ্রোহ ছিল একটি আলেভি কুর্দি বিদ্রোহ, যা আলি আগার নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছিল।[১৫][১৬] বিদ্রোহটি ১৯১৬ সালের মার্চের প্রথম দিকে শুরু হয়।[১৬] কুর্দি বিদ্রোহীরা নাজিমিয়ে, মাজঘত, পারটেক এবং চারসানজাক[১৭] শহরগুলি দখল করে ধ্বংস করে, এরপর প্রদেশের গভর্নরের বাসভবন মামুরেতুলআজিজের (বর্তমান এলাজিগ) দিকে অগ্রসর হয়।[১৭][১৮] কুর্দিরা এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তুর্কি সৈন্যদের কাছ থেকে অনেক অস্ত্র দখল করে।[১৯] সেই সময়ে রুশ সাম্রাজ্য এরজুরুম এবং এরজিনকান এলাকার নিয়ন্ত্রক ছিল, যা ডারসিমের উত্তরে অবস্থিত, ফলে মেজেরে এবং হারপুতের তুর্কি কর্মকর্তারা কুর্দি বিদ্রোহ দ্বারা অত্যন্ত আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।[২০] কুর্দি-রুশ যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার জন্য অটোমান সেনাবাহিনী সক্ষম কিনা তাই নিয়ে তারা সন্দিগ্ধ ছিল, যার ফলে হারপুতের মুসলিম জনগোষ্ঠী পালানোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।[২০]

কুর্দি বিদ্রোহের প্রতিক্রিয়ায়, অটোমান কর্তৃপক্ষ ১ এপ্রিল ডারসিম থেকে কুর্দি বিদ্রোহীদের নির্মূল করার জন্য একটি অভিযান শুরু করে।[১৬] এই অভিযানে নেতৃত্ব দেয় গালাতালি শেভকেত বেগের নেতৃত্বে অটোমান ১৩তম ডিভিশন।[২০] এই ডিভিশনে হাসান খায়রি বেগের নেতৃত্বে একটি সৈন্যবাহিনী এবং শাফি'ই কুর্দিরা অন্তর্ভুক্ত ছিল।[১৭][২১] অভিযানের শুরুর পরদিন কুর্দি বিদ্রোহীরা পারটেকে একটি ব্যর্থ পাল্টা আক্রমণ চালায়। কুর্দি বিদ্রোহীরা কায়াজি, মাজগির্ট (১৩ এপ্রিল) এবং শিমালিগারবি (১৬ এপ্রিল) যুদ্ধে পরাজিত হয়।[১৬] ১৬ এপ্রিলের মধ্যে, বিদ্রোহীরা নাজিমিয়ে এবং ওহি স্রোতের মধ্যবর্তী এলাকায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। ১৮ এপ্রিল, ঐ এলাকায় ৫০০ বিদ্রোহীকে পরাজিত করার পর, অটোমান সেনারা কাভাকটেপ এবং এর আশেপাশের গ্রামগুলি লুট করে। পরদিন তারা লেমিট গ্রামটি জ্বালিয়ে দেয়। অটোমান সৈন্যরা অগ্রসর হওয়ার সময়, তারা ২২ এপ্রিল শেইহিন, কোপিক, গোকেরিক পাহাড়, সিনেভারতাসি (২৩ এপ্রিল) এবং জিলবাবা পাহাড় (২৮ এপ্রিল) এলাকায় কুর্দিদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।[১৬]

২ মে, কুর্দি বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণ করে।[১৬] এই অভিযান বিদ্রোহীদের পরাজয়ের মাধ্যমে শেষ হয়, যারা প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। পরিস্থিতি অটোমান নিয়ন্ত্রণে আসায়, হারপুতের তুর্কি জনসাধারণের পালানোর প্রস্তুতি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে।[২০] বিদ্রোহ পরাজয়ের পর, অটোমান কর্তৃপক্ষ দায়ী গোষ্ঠীর সম্পূর্ণ জনগোষ্ঠীকে ডারসিম থেকে বহিষ্কার করে।[১৮] ১৯১৬ সালের শেষের দিকে, অটোমানরা রুশদের হাতে গুরুতর পরাজয়ের সম্মুখীন হয়, বিশেষত বিংগোল-এ একটি বড় পরাজয় ঘটে। এর পরে কুর্দিরা আবারও অটোমান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। ডারসিমে একাধিক অটোমান কনভয় আক্রমণের শিকার হয় । ১৯১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত, কুর্দি বিদ্রোহীদের প্রচেষ্টা অটোমান বাহিনীকে "অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলার" মধ্যে ফেলে দেয়।[২২]

অক্টোবরে অটোমান জেনারেল আহমেদ ইজ্জেত পাশা ফ্রন্ট থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেন, এবং এই সৈন্যদের নিয়ে বিদ্রোহ দমন করেন।[২৩]

১৯১৭ সালে সংঘর্ষ

[সম্পাদনা]

১৯১৭ সালের গ্রীষ্মকালে কুর্দিরা খারপুট, ডারসিম এবং বোটানে পুনরায় বিদ্রোহ করে।[২৪] আগস্টের শুরুর দিকে, মারদিন এবং দিয়ারবাকিরে কুর্দি বিদ্রোহ ঘটে, যা পরে বিটলিসেও ছড়িয়ে পড়ে। এই বিদ্রোহে সীমিত রুশ সহায়তা ছিল।[২৪]

অটোমান সাম্রাজ্যের পতন পরবর্তী ঘটনা

[সম্পাদনা]

অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর, ১৯১৮ সালের অক্টোবর মাসে মাহমুদ বারজানজি অটোমানদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ব্রিটিশ তত্ত্বাবধানে একটি স্বায়ত্তশাসিত দক্ষিণ কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। তিনি সুলাইমানিয়া অঞ্চলের অভিজাত কুর্দি ব্যক্তিদের একটি পরিষদের দ্বারা সরকারপ্রধান নির্বাচিত হন, এবং ব্রিটিশরা কিরকুক দখল[২৫] করার (২৫ অক্টোবর ১৯১৮) সাথে সাথেই তিনি তার অঞ্চলে উপস্থিত অটোমান সৈন্যদের বন্দী করে অটোমান শাসনের অবসান ঘোষণা করেন এবং ব্রিটেনের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন।[২৬] অন্যান্য কুর্দি সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল যেমন রানিয়া এবং কেঐসেনজাক-এ একইরকম ঘটনা ঘটে। এর ফলে একটি আংশিক স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। ১৯১৯ সালের জুনে এই রাষ্ট্র ব্রিটেন দ্বারা বিলুপ্ত হয়।[২৭]

কোচগিরি বিদ্রোহ

[সম্পাদনা]

কোচগিরি বিদ্রোহ (কুর্দি: Serhildana Qoçgiriyê; তুর্কি: Koçgiri İsyanı) হলো ১৯২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান পূর্ব সিভাস প্রদেশের কোচগিরি অঞ্চলে শুরু হওয়া বিদ্রোহ, যেখানে প্রাথমিকভাবে আলেভিবাদীরা বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেয়। তবে, বিদ্রোহটি পার্শ্ববর্তী সুন্নি গোষ্ঠীগুলির সমর্থন অর্জন করতেও সক্ষম হয়।[২৮][২৯] বিদ্রোহের নেতাদের সঙ্গে Cemîyeta Tealîya Kurdistanê এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।[৩০][৩১] ১৯২১ সালের জুন মাসে এই বিদ্রোহটি পরাজিত হয়। কোচগিরি বিদ্রোহের পর, নতুন তুর্কি প্রজাতন্ত্রের গ্র্যান্ড ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে কুর্দি সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে সীমিত আকারে "কুর্দি স্বায়ত্তশাসিত প্রশাসন" নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। তবে, ১৯২৩ সালের লোজান চুক্তির মাধ্যমে এই আলোচনা বিলুপ্ত হয়। এতে হতাশ হয়ে কুর্দিরা আবারও ১৯২৫ সালে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে, যার নেতৃত্বে ছিলেন শেখ সাইদ

শেখ সাইদ বিদ্রোহ

[সম্পাদনা]

আরারাত বিদ্রোহ

[সম্পাদনা]

আরারাত বিদ্রোহ, যা আরি বিদ্রোহ (তুর্কি: Ağrı ayaklanmaları বা Ağrı isyanı) নামেও পরিচিত, হলো ১৯৩০ সালে তুরস্কের আরি প্রদেশের কুর্দিদের তুর্কি সরকারের বিরুদ্ধে সংঘটিত একটি বিদ্রোহ । বিদ্রোহ চলাকালে গেরিলা বাহিনীর নেতা ছিলেন ইহসান নুরি।[৩২] বিদ্রোহীরা স্বাধীন আরারাত প্রজাতন্ত্রের ঘোষণা করে।১৯৩০ সাল পর্যন্ত এই রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ছিল।[৩৩] তারপর তুরস্ক অঞ্চলটি পুনরায় দখল করে।[৩৪]

১৯৩৭ পরবর্তী ঘটনাবলী

[সম্পাদনা]

১৯৩৭ সালের বিদ্রোহ দমন করার পর, দক্ষিণ-পূর্ব আনাতোলিয়াকে সামরিক আইনের অধীনে রাখা হয়। গ্রাম ধ্বংস এবং ব্যাপক দেশান্তরের পাশাপাশি, তুর্কি সরকার কসোভোর আলবেনিয়ান এবং আসিরীয়দের কুর্দি অঞ্চলে বসতি স্থাপনের জন্য উৎসাহিত করে, যাতে ঐসব অঞ্চলে কুর্দিরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে।[৩৫] বিদ্রোহের পরপরই তুর্কি সেনাবাহিনী কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ আরও দমনমূলক হয়ে ওঠে। কখনও কখনও কুর্দি জনসংখ্যাকে দমন করার জন্য গ্রাম বা ভবনগুলোতে আগুন লাগানো হতো। এই ঘটনাগুলো যেন তুরস্কের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ও খ্যাতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে না পারে, সেজন্য ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত ইউফ্রেটিসের পূর্ব দিকে পুরো এলাকায় বিদেশিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল এবং ১৯৫০ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলটি স্থায়ী সামরিক অবরোধের অধীনে ছিল। তুরস্কে কুর্দি ভাষা নিষিদ্ধ করা হয় এবং "কুর্দি" ও "কুর্দিস্তান" শব্দগুলো অভিধান ও ইতিহাসের বই থেকে মুছে ফেলা হয়। কুর্দিদের "পাহাড়ী তুর্কি" হিসাবে উল্লেখ করা শুরু হয়।[৩৬]

১৯৭৮ পরবর্তী ঘটনাবলী

[সম্পাদনা]

১৯৯০ পরবর্তী ঘটনাবলী

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Birand, Mehmet Ali (২০০৮-০১-০৩)। "How many Kurdish uprisings till today?"Hürriyet Daily News। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-৩০ 
  2. "16. Turkey/Kurds (1922–present)"uca.edu। সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০১৮ 
  3. (Olson 2000)
  4. (Olson 1989)
  5. Martin van Bruinessen (জানুয়ারি ১৯৯৪)। "Genocide in Kurdistan? The Suppression of the Dersim Rebellion in Turkey (1937–38) and the Chemical War Against the Iraqi Kurds (1988)" 
  6. "Kurds"A Country Study: TurkeyU.S. Library of Congress। জানুয়ারি ১৯৯৫। 
  7. "Turks Charge Kurd With Inciting Hatred"Washington Post। Associated Press। ২০০৭-০২-২৩। পৃষ্ঠা A12। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৮-০১ 
  8. Hassan, Mona। Longing fir the Lost Caliphate: A Transregional History। Princeton University Press। পৃষ্ঠা ১৬৯। 
  9. Şentürk, Burcu (২০১০)। Invisibility of a Common Sorrow: Families of the Deceased in Turkey's Kurdish Conflict.। Cambridge Scholars Publishing। পৃষ্ঠা ৯৯। আইএসবিএন 9781443839549 
  10. Tekdal, Danyal (২০১৭)। "1907 BİTLİS DEPREMİ VE İSYANINDA BİR VALİ:FERİD PAŞA"। ২০১৯-১১-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  11. Demirtaş, Mehmet (২০১৮)। "1914 Tarihli Bitlis İsyanının Osmanlı Arşiv Belgelerindeki Yansımaları-Cezalar, Mükâfatlar"dergipark.org.tr। পৃষ্ঠা 433। The leaders of the insurrection were Mullah Selim, Sayyid Ali and Sheikh Şahabeddin who were the religious scholars of Hizan Province. 
  12. Henning, Barbara (২০১৮-০৪-০৩)। Narratives of the History of the Ottoman-Kurdish Bedirhani Family in Imperial and Post-Imperial Contexts: Continuities and Changes (ইংরেজি ভাষায়)। University of Bamberg Press। পৃষ্ঠা 322–327। আইএসবিএন 9783863095512 
  13. Yılmazçelik, İbrahim। "Dersim Sancağının Kurulmasından Sonra Karşılaşılan Güçlükler ve Dersim Sancağı ile İlgili Bu Dönemde Yazılan Raporlar (1875-1918)" (পিডিএফ)dergiler.ankara.edu.tr (তুর্কি ভাষায়)। পৃষ্ঠা 186। 
  14. Eskander, Saad। "Britain's Policy Towards The Kurdish Question, 1915-1923" (পিডিএফ)etheses.lse.ac.uk। পৃষ্ঠা 45। 
  15. Bloxham, Donald (২০০৫)। The Great Game of Genocide: Imperialism, Nationalism, and the Destruction of the Ottoman Armeniansবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজন (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 108আইএসবিএন 978-0-19-927356-0 
  16. Ozkok, Burhan (১৯৩৭)। Osmanlilar Devrinde Dersim Isyanlari (তুর্কি ভাষায়)। Askeri Matbaa। 
  17. Kieser, Hans-Lukas (২০০৭)। "The Alevis' ambivalent encounter with modernity. Islam, reform and ethnopolitics in late Ottoman and early Republican Turkey"। Monsutti, Alessandro; Naef, Silvia; Sabahi, Farian। The Other Shiites: From the Mediterranean to Central Asia। Peter Lang। পৃষ্ঠা 41–57। আইএসবিএন 978-3-03911-289-0 
  18. Kieser, Hans-Lukas (১ জানুয়ারি ২০০১)। "Muslim Heterodoxy and Protestant Utopia. The Interactions between Alevis and Missionaries in Ottoman Anatolia"। Die Welt des Islams41 (1): 89–111। জেস্টোর 1571378ডিওআই:10.1163/157006001323146849 
  19. Kaya, Yakup (২০১৬)। "Osmanlı Devleti'nden Türkiye Cumhuriyeti'ne Geçiş Sürecinde Dersim Sorunu"itobiad.com (তুর্কি ভাষায়)। ২০১৯-১১-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৪ 
  20. White, Paul Joseph; Jongerden, Joost (২০০৩)। Turkey's Alevi Enigma: A Comprehensive Overview (ইংরেজি ভাষায়)। BRILL। পৃষ্ঠা 183। আইএসবিএন 9789004125384 
  21. Küçük, Hülya (২০০২)। The Role of the Bektās̲h̲īs in Turkey's National Struggle (ইংরেজি ভাষায়)। BRILL। পৃষ্ঠা 216। আইএসবিএন 9789004124431 
  22. Allen, William Edward David; Muratoff, Paul (২০১১-০২-১৭)। Caucasian Battlefields: A History of the Wars on the Turco-Caucasian Border 1828-1921 (ইংরেজি ভাষায়)। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 438। আইএসবিএন 978-1-108-01335-2 
  23. Erickson, Edward J. (২০০১)। Ordered to Die: A History of the Ottoman Army in the First World War (ইংরেজি ভাষায়)। Greenwood Publishing Group। পৃষ্ঠা 137। আইএসবিএন 978-0-313-31516-9 
  24. Eskander, Saad। "Britain's Policy Towards The Kurdish Question, 1915-1923" (পিডিএফ)etheses.lse.ac.uk। পৃষ্ঠা 45। 
  25. Moberly, James (১৯২৭)। HISTORY OF THE GREAT WAR BASED ON OFFICIAL DOCUMENTS. THE CAMPAIGN IN MESOPOTAMIA 1914-1918.4। His Majesty's Stationery Office। পৃষ্ঠা 276। 
  26. Eskander, Saad। "Britain's Policy Towards The Kurdish Question, 1915-1923" (পিডিএফ)etheses.lse.ac.uk। পৃষ্ঠা 49–57। 
  27. McDowall, David (১৯৯৭)। A Modern History of the Kurds (ইংরেজি ভাষায়)। Bloomsbury Academic। পৃষ্ঠা 155–160। আইএসবিএন 978-1-86064-185-5 
  28. Güneş, Ergin (২০১৪)। Boztuğ, Onursal, সম্পাদক। Koçgiri İsyanı Ekseninde Dersim Direnişi। Sempozyumu’nda Sunulan Bildiriler , 20-22 Eylül 2013 (তুর্কি ভাষায়)। Tunceli University। পৃষ্ঠা 244। 
  29. Olson, Robert W. (১৯৮৯)। The emergence of Kurdish nationalism and the Sheikh Said Rebellion, 1880-1925। University of Texas Press। পৃষ্ঠা 35আইএসবিএন 978-0-292-77619-7 
  30. Olson, Robert W. (১৯৮৯)। The emergence of Kurdish nationalism and the Sheikh Said Rebellion, 1880-1925। University of Texas Press। পৃষ্ঠা 28আইএসবিএন 978-0-292-77619-7 
  31. Olson, Robert; Rumbold, Horace (১৯৮৯)। "The Koçgiri Kurdish rebellion in 1921 and the draft law for a proposed autonomy of Kurdistan"Oriente Moderno। 8 (69) (1/6): 41। আইএসএসএন 0030-5472জেস্টোর 25817079ডিওআই:10.1163/22138617-0690106006JSTOR-এর মাধ্যমে। 
  32. Rohat Alakom, Hoybûn örgütü ve Ağrı ayaklanması, Avesta, 1998, আইএসবিএন ৯৭৫-৭১১২-৪৫-৩, p. 180. (তুর্কি ভাষায়)
  33. (Olson 2000, পৃ. 88)
  34. Abdulla, Mufid (২০০৭-১০-২৬)। "The Kurdish issue in Turkey need political solution"Kurdish Media। ২০০৭-১২-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৮-০১ 
  35. Dahlman, Carl (২০০২)। "The Political Geography of Kurdistan" (পিডিএফ)Eurasian Geography and Economics43 (4): 271–299। এসটুসিআইডি 146638619ডিওআই:10.2747/1538-7216.43.4.271। ২০০৮-১০-০৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৬-৩০ 
  36. Gérard Chaliand, A.R. Ghassemlou, M. Pallis, A People Without A Country, 256 pp., Zed Books, 1992, আইএসবিএন ১-৮৫৬৪৯-১৯৪-৩, p.58