কুন্দাবাই পিরাত্তিয়ার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কুন্দাবাই
তাঞ্জাভুর(তাঞ্জোর) রাজকুমারী
সাহিত্যিক কল্কির রচিত সুবিখ্যাত উপন্যাস পোন্নিয়ান সেলভান -এর পাতা থেকে কুন্দাবাই -এর অঙ্কিত চিত্র
জন্মআলভার শ্রী পরান্তকন শ্রী কুন্দবাই নাচিয়ার
৯৪৫ খ্রীঃ
তিরুকোইলুর, চোল সাম্রাজ্য (আধুনিক ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্য)
মৃত্যুপাঝাইয়ারই, চোল সাম্রাজ্য (আধুনিক ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্য)
দাম্পত্য সঙ্গীবল্লভরায়ন বন্দিয়দেবন্
রাজবংশচোল (জন্মস্থান অনুসারে)
বান্ রাজ্য(বিবাহের পর)
পিতাপরান্তক ২
মাতাবনভান মহাদেবী
ধর্মহিন্দু(শিব উপাসক)

কুন্দাবাই পিরাত্তিয়ার যিনি কুন্দাবাই নামেই সুপরিচিত, তিনি দশম শতকে দক্ষিণ ভারতে শাসনকারী চোল সাম্রাজ্যের এক প্রভাবশালী রাজকন্যা ছিলেন।[১] তিনি ছিলেন চোল রাজা দ্বিতীয় পরন্তক এবং রানী বনভান মহাদেবীর একমাত্র কন্যা। [২][৩][৪] রাজা পরান্তক -এর প্রথম পুত্র আদিত্য চোল (দ্বিতীয়) ছিলেন তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা এবং রাজা পরান্তক এর দ্বিতীয় পুত্র প্রথম রাজারাজান্‌ চোল ছিলেন তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা। তিনি তৎকালীন চোল সাম্রাজ্যের তিরুকোইলুরে জন্মগ্রহণ করেন যা বর্তমান ভারতের তামিলনাডু রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। তাকে ইলাইয়াপিরাত্তি কুন্দাভাই নাচিয়ার উপাধিতে সম্মানিত করা হয়েছিল।

যখন তার স্বামী বল্লভরায়ন বন্দিয়দেবন বান রাজ্যের রাজা হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন তখন কুন্দাবাই পারাম্পরিক প্রথার বিরুদ্ধে বান রাজ্যের রানী হওয়ার প্রস্তাব অস্বীকার করেন এবং তার নিজ ইচ্ছা অনুসারে চিরকালের জন্য চোল সাম্রাজ্যের রাজকুমারীর পরিচয়ে তার পিত্রালয় তাঞ্জোরেই থেকে যান।[৫]

জন্ম ও বংশপরিচয়[সম্পাদনা]

কুন্দাবাই (ভিন্নমতে তাকে কুন্ধাবাই অথবা কুন্তাবাই নামেও অভিহিত করা হত) ৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন চোল সাম্রাজ্যের তিরুকোইলুরে জন্মগ্রহণ করেন। রাজা পরান্তকের প্রথম সন্তান ছিলেন আদিত্য চোল (দ্বিতীয়)। কুন্দাবাই ছিলেন রাজা পরান্তকের স্ত্রী মহারানী বনভান মহাদেবীর গর্ভজাত দ্বিতীয় সন্তান। কুন্দাবাইয়ের পর মহারাজ পরান্তকের এক পুত্রসন্তান প্রাপ্ত হয় যিনি পরবর্তীকালে চোল সাম্রাজ্যের মহান সম্রাট প্রথম রাজারাজান্‌ চোল হিসাবে সুবিখ্যাত হয়েছিলেন।

সেযুগের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী রাজনৈতিক সম্পর্ক ও কুটুম্বিতা স্থাপনে প্রায়শই রাজবংশীয় নারীদের বিবাহসম্বন্ধ করা হত। কিন্তু বিবাহের পরেও কুন্দাবাইয়ের পিতা তাকে তার স্বাধীন ইচ্ছা প্রয়োগ করার অনুমতি দিয়েছিলেন, যার ফলে রাজকুমারী তার সারাজীবন চোল রাজ্যে থাকার সংকল্প করেছিলেন।

বান রাজবংশের সদস্য বল্লভরায়ন বন্দিয়দেবন -এর সংগে তার বিবাহ হয়। তাঞ্জোর শিলালিপিতে বল্লভরায়ান বন্দিয়দেবনের উল্লেখ আছে চোলদের এক সামন্ত হিসাবে।[৫] এছারাও রাজেন্দ্র চোলের সময়কালে তিনি সিংহল (বর্তমান শ্রীলঙ্কা) অভিযানে তিনি সেনাবাহিনীর অধিনায়ক হিসাবে বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর কর্তৃত্বাধীন অঞ্চলটি বল্লাভারাইনাডু নামে পরিচিত ছিল এবং মাঝে মাঝে 'ব্রহ্মদেশম' নামেও অভিহিত হত।

কুন্দাবাইয়ের কাকিমা ছিলেন চোল সাম্রাজ্যের প্রাক্তন রাণী সেম্বিয়ান মহাদেবী। কুন্দাবাইয়ের ভ্রাতা রাজারাজান্‌ চোল ও কোড়ম্বালুর রাজকন্যা থিরিপুভানা মাদেভিয়ার -এর পুত্র ছিলেন রাজেন্দ্র চোল প্রথম। সেম্বিয়ান মহাদেবীর সঙ্গে একত্রে কুন্দাবাই তার ভ্রাতুস্পুত্র রাজেন্দ্রর পরিপালন করেছিলেন। রাজেন্দ্র (প্রথম) তার শৈশবের বেশিরভাগ সময় কুন্দাবাই এবং সেম্বিয়ান মহাদেবীর সাথে পাঝাইয়ারাইতে কাটিয়েছিলেন।

অবদান ও কীর্তি[সম্পাদনা]

কুন্দাবাই ছিলেন তার ভ্রাতা রাজারাজ চোলের প্রধান পরামর্শদাতাদের মধ্যে একজন। এছাড়াও যেহেতু তিনি রাজারাজার পুত্র রাজেন্দ্র চোলের লালনপালনে সাহায্য করেছিলেন তাই রাজারাজার পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও তিনি সম্মনীয় ছিলেন এবং চোল রাজনীতিতে তার প্রভাব অব্যাহত থাকে। তার জ্ঞান এবং রুচির জন্য তিনি চোল রাজ্য জুড়ে সম্মানিত ছিলেন। তৎকালীন অন্যন্য অনেক রাজবংশ থেকে কুন্দাবাইয়ের কাছে অনুরোধ করা হয় যেন তিনি তাদের বংশের কন্যাদের দেখাশোনার ভার নেন ও তাদের শিল্প, সঙ্গীত এবং সাহিত্যে শিক্ষাদান করেন।

রাজারাজাপুরম (ধাধপুরম) -এ মহান রাজারাজা প্রথমের স্মরণে কুন্দাবাই এই মন্দির তৈরি করেছিলেন

চোল রাজ্যের অনেক বিষ্ণু, শিব ও জৈন মন্দির গঠনের কাজ তিনি সুচারুভাবে পরিচালনা করেছিলেন।[৫][৬] চোল শিলালিপিতে সসম্মানে তাঁর উল্লেখ করা হয়।[৭][৮]

তিরুভান্নামালাই -এর তিরুমালাই (জৈন কমপ্লেক্স) -এ কুন্দাবাই কর্তৃক প্রবর্তিত একটি জৈন মন্দির।

তিনি কমপক্ষে দুটি জৈন মন্দির তৈরি করেছিলেন, একটি রাজরাজেশ্বরমে যা পরে দারাসুরম নামে পরিচিত এবং অন্যটি তিরুমালাইতে।[৮] তাঞ্জাভুরে তিনি তার পিতাকে উৎসর্গ করে ভিননগর আতুরা সালাই নামক এক চিকিৎসালয় তৈরি করেছিলেন এবং তার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিস্তৃত জমি দান করেছিলেন।[১০][১১] তিনি তার ছোট ভাই রাজারাজা চোল প্রথম এবং তার ভাগ্নে রাজেন্দ্র চোল প্রথমের রাজত্বকালে তাঞ্জাভুরের বৃহদেশ্বর মন্দিরে প্রচুর ধনসম্পদ ও দানসামগ্রী প্রদান করেছিলেন।

চোল শিলালিপিগুলির একটিতে লেখা রয়েছে:

[১৩]রাজকন্যা কুন্দাবাই মন্দিরে কিছু ছবি ও মূর্তি স্থাপন করেছিলেন যার উল্লেখ করা আছে।[১৪]

কুন্দাবাই তার ভাগ্নে রাজেন্দ্র প্রথমের সাথে পাঝাইয়ারই -এর প্রাসাদে তার জীবনের শেষ দিনগুলি কাটিয়েছিলেন।[১১][১৫][১৬]

সাহিত্য ও মনোরঞ্জন মাধ্যমে কুন্দাবাই[সম্পাদনা]

তামিলনাডুর প্রখ্যাত সাহিত্যকার কল্কি কৃষ্ণমূর্তি দ্বারা ১৯৫৫ সালে রচিত একটি ঐতিহাসিক কল্পকাহিনী উপন্যাস পোন্নিয়ন সেল্ভান যা চোল সাম্রাজ্যের ইতিহাস; বিশেষত রাজারাজা চোলের যুবক বয়সের সময়কালের উপর ভিত্তি করে রচিত। এই উপন্যাসে কুন্দাবাই এক প্রাধান নারী চরিত্র হিসাবে বিদ্যমান। পরিচালক মণি রত্নমের ২০২২ সালের সিনেমা পনিয়িন সেলভান: ১ যা কল্কির উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে চিত্রিত হয়েছে তাতে জনপ্রিয় দক্ষিন ভারতীয় অভিনেত্রী তৃষা কৃষ্ণণ কুন্দাবাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Lalit kalā, Issue 15, page 34
  2. Early Chola art, page 183
  3. A Topographical List of Inscriptions in the Tamil Nadu and Kerala States: Thanjavur District, page 180
  4. Worshiping Śiva in medieval India: ritual in an oscillating universe, page 5
  5. South Indian Inscriptions – Vol II-Part 1 (Tanjore temple Inscriptions)
  6. Women in Indian life and society, page 49
  7. Śrīnidhiḥ: perspectives in Indian archaeology, art, and culture, page 364
  8. Encyclopaedia of Jainism, page 1000
  9. A topographical list of inscriptions in the Tamil Nadu and Kerala states, Volume 2, page 206
  10. Ancient system of oriental medicine, page 96
  11. Great women of India, page 306
  12. A topographical list of inscriptions in the Tamil Nadu and Kerala states, Volume 2, page 207
  13. Portrait sculpture in south India, page 34
  14. Middle Chola temples:Rajaraja I to Kulottunga I (A.D. 985–1070), page 42
  15. Encyclopaedia of Status and Empowerment of Women in India: Status and position of women in ancient, medieval and modern India, page 176
  16. Middle Chola temples: Rajaraja I to Kulottunga I (A.D. 985–1070), page 381