কাঠি নাচ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

কাঠি নাচ হল ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরঝাড়গ্রাম জেলায় শারদীয় দুর্গাপুজার সময় অনুষ্ঠিত একটি দলবদ্ধ পুরুষনৃত্য। এই বীররসাত্মক নৃত্যকে শরীর গঠনের পক্ষে সহায়ক বিধায় ব্রতচারী আন্দোলনের স্রষ্টা গুরুসদয় দত্ত একে দেশাত্মবোধক সঙ্গীতের সঙ্গে পুনর্গ্রহণ করেছিলেন; তিনি এই নাচকে 'ক্রীড়া অভিপ্রায়'-এর অন্তর্ভুক্তও করেন। গুজরাটের 'ডাণ্ডিয়া রাসে'র সংগে এই নৃত্যের সাদৃশ্য লক্ষণীয়।[১]

বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

বিষ্ণুপুর-ঝাড়গ্রাম অঞ্চলে শারদীয় দুর্গাপূজার অষ্টমী-নবমী থেকে শুরু হয়ে সপ্তাহব্যাপী 'কাঠি নৃত্য' অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় পুরুষরা শাড়িকে ঘাঘরার মতো ও ব্লাউজ পরে হাতে দুটি ছোট লালরং করা কাঠি নিয়ে দলবদ্ধভাবে গানের সংগে নাচে। অন্য একজন মাদল বা মৃদঙ্গ নিয়ে নেচে নেচে এবং ঘুরে ঘুরে গান করে, আর এই গায়ককে ঘিরে বাকীরা একটি বৃত্ত রচনা করে কাঠির আঘাতের দ্বারা তাল তুলে নাচ শুরু করে। সঙ্গে কাঁসি, আড়বাঁশি বা করতাল বাজতে থাকে। ঝাড়গ্রাম অঞ্চলের নৃত্যশিল্পীরা নাচার সময় অনেকক্ষেত্রে মুখে রং করে। এই কাঠি নাচের উপজাত আরেক ধরনের (তরল জীবনাশ্রয়ী) নাচকে 'পাতা নাচ' বলা হয়।

গানগুলি রচিত হয় পৌরাণিক শিব-পার্বতী বা উমা-মেনকা কিংবা কৃষ্ণের গোষ্ঠলীলাকে বিষয় করে। এরকম কাঠি নাচের গান নিম্নরূপ—

"সম্মুখে দাঁড়ায়ে গৌরী
কহে অতি বিনয় করি,
শুন হর করি নিবেদন। হো-হো-হোই।
এসেছেন পিতা লয়িতে
যাব জননী দেখিতে
তাই বিদায় মাগি ত্রিলোচন। হো-হো-হোই।"

[১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. বাংলার লোকসংস্কৃতির বিশ্বকোষ, দুলাল চৌধুরী, আকাদেমি অব ফোকলোর, কলকাতা: ৭০০০৯৪, প্রথম প্রকাশ:২০০৪, পৃষ্ঠা: ১৯৪