ওড়িশার সংস্কৃতি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ওড়িশার একটি অনুষ্ঠানে

ওড়িশার সংস্কৃতি দ্বারা ভারতের ওড়িশা অঞ্চলের প্রচলিত রীতিনীতি, প্রথা, আচার-ব্যবহার, খাদ্য, পোশাক পরিচ্ছদ, ভাষা ইত্যাদিকে বোঝানো হয়ে থাকে।

নৃত্য[সম্পাদনা]

ওড়িশি নাচ এবং গান শাস্ত্রীয় রূপ অনুসরন করে থাকে । ওড়িশি নৃত্যের ২,০০০ বছরেরও পুরোনো ঐতিহ্য বিদ্যমান, এবং নাট্য শাস্ত্র ও ভরত মুনিতে এর উল্লেখ রয়েছে, যা সম্ভবত ২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে লিখিত হয়েছিল । তবে, নাচটি ব্রিটিশ আমলে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায় । এর পরবর্তিতে ভারতের স্বাধীনতার পর মাত্র কয়েকজন প্রবক্তার দ্বারা নাচের রূপটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়, প্রবক্তাদের মধ্যে ছিলেন গুর দেবা প্রসাদ দাস, গুরু পঙ্কজ চন্দ্র দাস, গুরু রঘুনাথ দত্ত এবং কেলুচরণ মহাপাত্র । ওড়িশি ক্লাসিক্যাল নৃত্য কৃষ্ণ ও তার পত্নী রাধার ঐশ্বরিক প্রেম সম্পর্কিত, যার অধিকাংশ ১২শ শতাব্দীর প্রখ্যাত ওড়িয়া কবি জয়াদেবার রচনাবলী হতে নেয়া হয়েছে । [১]

সাহিত্য[সম্পাদনা]

ওড়িয়া সাহিত্যের ইতিহাস ঐতিহাসিকদের দ্বারা নিম্নলিখিত পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে, প্রাচীন ওড়িয়া (৯০০-১৩০০ খ্রিষ্টাব্দ), প্রারম্ভিক মধ্য ওড়িয়া (১৩০০-১৫০০ খ্রিষ্টাব্দ), মধ্য ওড়িয়া (১৫০০-১৭০০ খ্রিষ্টাব্দ), পরবর্তী মধ্য ওড়িয়া (১৭০০-১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দ) এবং আধুনিক ওড়িয়া (১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দ হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত) ।

ওড়িয়া কবিতার সূত্রপাত ও উৎকর্ষ চর্যাপদ সাহিত্যের পাশাপাশি ব্যুৎপত্তি লাভ করে, যে সাহিত্য রচনা মহাযান বৌদ্ধ কবিদের দ্বারা শুরু হয়েছিলো । সাহিত্যটি একটি রূপক ভাষায় রচিত হয় এবং লুইপা, কানুপা এদের মত কবি যারা ওড়িশা রাজ্যের কবি, তাদের রচনা চর্যাপদে স্থান পেয়েছে । চর্যাপদ মূলত প্রাকৃত ভাষায় রচিত হয়েছিলো ।

সঙ্গীত[সম্পাদনা]

ওড়িয়া সঙ্গীত সাহিত্যের ক্ষেত্রে ষোড়শ শতক সঙ্গীতবিষয়ক সাহিত্যের সংকলনের স্বাক্ষী । ঐ সময়ে রচিত চারটি উল্লেখযোগ্য রচনাবলী হচ্ছে সঙ্গীতামভা চন্দ্রিকা, নাট্য মনোরমা, সঙ্গীতা কলালতা এবং গীতা প্রকাশা । [২]

ধর্ম[সম্পাদনা]

ওড়িশার দীর্ঘ ইতিহাসে, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধর্ম বিশেষত হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈনধর্মের প্রবর্তন হয়েছে । সম্রাট অশোকের কলিঙ্গ (ভারত) বিজয়ের পর বৌদ্ধ ধর্ম রাজ্যটিতে একটি প্রধান ধর্ম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয় যার ফলসরূপ অঞ্চলটিতে অনেক স্তূপা এবং বৌদ্ধ শিক্ষা কেন্দ্র নির্মিত হয় ।

ওড়িয়া চলচ্চিত্র[সম্পাদনা]

প্রাথমিক বছরগুলোতে ওড়িয়া ফিল্ম প্রোডাকশন খুব ধীর গতির ছিল । প্রথম ওড়িয়া চলচ্চিত্র ছিল সীতা বিবাহ, ১৯৫১ সাল পর্যন্ত ওড়িয়া চলচ্চিত্রে মাত্র দুটি ছবি নির্মিত হয়েছিল । প্রফুল্ল সেনগুপ্ত পরিচালিত একাদশতম ওড়িয়া চলচ্চিত্র শ্রী লোকনাথ প্রথম ওড়িয়া চলচ্চিত্র যা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে, চলচ্চিত্রটি ১৯৬০ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে ।

ওড়িয়া রন্ধনপ্রণালী[সম্পাদনা]

পুরীর বিখ্যাত জগন্নাথ মন্দিরের রান্নাঘর পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তম রান্নাঘর হিসাবে পরিচিত, এখানে সহস্র বাবুর্চি দ্বারা রন্ধনকর্ম সম্পাদিত হয়, যেখানে প্রায় ৭৫২ টি চুলা ব্যবহৃত হয়, প্রতিদিন ১০,০০০ লোকের ভোজনের জন্য । [৩]

এ অঞ্চলের মানুষ সাধারণত সকালের নাস্তায় রুটি খেয়ে থাকে । দুপুর ও রাতের খাবার হিসাবে সাধারণত ভাত ও ডাল গ্রহণ করা হয়ে থাকে । এছাড়া প্রায় প্রতিবেলার খাবারের সাথে যে কোনো ধরনের মিষ্টান্ন রাখা হয়, কেননা এখানকার লোকজন মিষ্টান্ন খুব পছন্দ করে । অপরদিকে উপমহাদেশে প্রচলিত বেশ কিছু জনপ্রিয় খাবার যেমন- রসগোল্লা, ক্ষীর, পাখালা ইত্যাদি মূলত ওড়িশা অঞ্চল হতেই এসেছে ।

ভাষা[সম্পাদনা]

ওড়িশা রাজ্যের সরকারি ভাষা যা সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকেদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়, তা হচ্ছে ওড়িয়া ভাষা । ওড়িয়া ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের ইন্দো-আর্য শাখার অন্তর্গত, এবং ঘনিষ্ঠভাবে বাংলা এবং অসমীয়া ভাষার সাথে সম্পর্কযুক্ত । রাজ্যের আদিবাসীদের দ্বারা দ্রাবিড় ও মুন্ডা ভাষা পরিবারের অন্তর্গত কিছু উপজাতীয় ভাষা এখনও ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।

পোশাক পরিচ্ছদ[সম্পাদনা]

যদিও পাশ্চাত্য ধারার পোশাক পরিচ্ছদ, শহর অথবা শহর অঞ্চলে পুরুষদের মধ্যে বৃহত্তর স্বীকৃতি অর্জন করেছে, তবে মানুষজন উৎসব বা অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলাকালে ধুতি, কোর্তা এবং গামছার মত প্রথাগত পোশাক পরিধান করে থাকে । মহিলারা সাধারণত শাড়ি (সাম্বালপুড়ি শাড়ি, বোমকাই শাড়ি, কাটাকি শাড়ি) বা সালোয়ার কামিজ পরতে পছন্দ করে; শহর ও নগরের নারীদের মধ্যে পশ্চিমা পোশাক ইদানীং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Odissi Classical Dance"। culturalindia.net। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুন ২০১৬ 
  2. "ODISSI - A DISTINCT STYLE OF INDIAN CLASSICAL MUSIC"। chandrakantha.com। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুন ২০১৬ 
  3. "Odisha (Orissa) Cuisine"। orissatourism.org। ১৩ জুন ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুন ২০১৬