ইউহাপ্লোর্সিস ক্যালিফোর্নিয়েন্সিস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

Euhaplorchis californiensis
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: এনিম্যালিয়া
পর্ব: প্লাটিহেলমিনথেস
শ্রেণী: ট্রেমাটোডা
উপশ্রেণী: ডিজেনেরা
বর্গ: অপিসথোরসিহিডা
পরিবার: হেটারোফাইডে
গণ: ইউহাপ্লোরসিস
প্রজাতি: E. californiensis
দ্বিপদী নাম
Euhaplorchis californiensis

ইউহাপ্লোর্সিস ক্যালিফোর্নিয়েন্সিস নামক ফ্লুক কৃমি হচ্ছে একধরনের সংক্রামক প্যারাসাইট যা উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার জলাভূমিতে বাস করে। এটি ৩টি পোষক যথাঃ সমুদ্রতটের পাখি, শৃঙ্গ শামুক, এবং কিলফিসে বসবাস করে। বেশিরভাগ প্যারাসাইটের মতই ই. ক্যালিফোর্নিয়েন্সিস পোষকের আচরণকে এমনভাবে প্রভাবিত করে যাতে পোষক সেই প্যারাসাইটকে পরবর্তী পোষকে স্থানান্তরে বাধ্য হয়।

জীবনচক্র[সম্পাদনা]

প্যারাসাইটের ডিম সমুদ্রতটের পাখির বিষ্ঠায় মুক্ত হয়। শৃঙ্গ শামুক (হর্ন স্নেইল) এই বিষ্ঠাকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। খাদ্য হিসেবে এই প্যারাসাইটকে গ্রহণ করার পর এই শৃঙ্গ শামুক অনুর্বর (অর্থাৎ প্রজননক্ষমহীন হয়ে পরা) হয়ে যায়। সদ্যো ডিম থেকে বের হওয়া লার্ভা শামুকের পরিপাক গ্রন্থিতে অবস্থান নেয়। সেখানে কয়েক প্রজন্ম ধরে নিজেরা অযৌন প্রজননের মাধ্যমে নিজেদের ক্লোন করে, তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। ক্লোনের মাধ্যমে উৎপন্ন হওয়া এই সদ্যোজাত প্যারাসাইটগুলোকে রেডিয়ে বলা হয়। যা শামুককে আক্রমণ করতে থাকে। এরপর রেডিয়ে তার পরবর্তী ধাপ শুরু করে। তখন তাদেরকে সারক্যারিয়ে (cercariae) (ট্রেমাটোডা শ্রেণির লার্ভা, যাদের লেজের মত উপাঙ্গ থাকে) বলা হয়, এরা পানিতে সাতার কাটতে সক্ষম। প্রতিদিন হাজার হাজার সারক্যারিয়ে একটি মাত্র শামুক থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে এবং বের হয়ে পরবর্তী পোষক কিল্লিফিশ যে স্থানে আছে, সেদিকে ছুটতে থাকে। এক্ষেত্রে পরিবেশকে তারা ক্লু বা সুত্র হিসেবে ব্যবহার করে।

তারা পরবর্তী পোষক কিল্লিফিশের চামড়ায় ছিদ্র করে তার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। প্রবেশ করার সময়, এই প্যারাসাইটগুলো তাদের লেজ হারায়।[১] চোষক ব্যবহার করে অনেকটা হামাগুড়ি দিয়ে শরীর থেকে তারা মাছের মস্তিষ্কে পৌছে যায়। এই প্যারাসাইট মস্তিষ্কে কার্পেটে মত একটি স্তর তৈরী করে। কেভিন ডি. ল্যাফার্টির মতে যেসব কিলফিস এই প্যারাসাইট দ্বারা আক্রান্ত হয়, তারা অনাক্রান্ত কিলফিসের তুলনায় চারগুণ বেশি পানির উপরিভাগে অবস্থান করে। মাঝে মাঝে এমনভাবে পল্টি খায় যেন তাদের রুপালী পেট আলোতে ঝিলিক মারে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে নিজের শরীরকে একপাশ থেকে অন্যপাশে নিয়ে ছুটতে থাকে। এই সমস্ত কারণে শিকারী পাখির চোখে প্যারাসাইটে আক্রান্ত কিল ফিস চোখে বেশি পরে, এবং এজাতীয় কিল্লিফিস প্যারাসাইট অনাক্রান্ত কিল্লিফিসের তুলনায় ৩০ গুণ বেশি শিকারী পাখির খাদ্যে পরিণত হয়। একবার সেই মাছ খাওয়ার পরে মাছে অবস্থিত প্যারাসাইট পাখির অন্ত্রে বসবাস করতে শুরু করে এবং পাখির বিষ্ঠাতে ডিম উৎপন্ন করে। পাখি জলাশয়ে সেই মলত্যাগ করে এবং এভাবেই প্যারাসাইটটির জীবনচক্র চলতে থাকে।

বাস্তুসংস্থায় প্রভাব[সম্পাদনা]

আর্মান্ড কুরিসের মতে এইসব প্যারাসাইট পাখি বহন করলেও পাখির পক্ষে খাদ্য পাওয়া সহজ হয়ে যায়। যার ফলে বুঝা যায়, এই জাতীয় প্যারাসাইট উপকূল এলাকার পাখিদের জন্য আশীর্বাদস্বরুপ। অর্থাৎ, এই জাতীয় প্যারাসাইট বাস্তুসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ল্যাফার্টি শামুকের উপর একটি গবেষণা করেন। তার গবেষণার মুল বিষয়বস্তু ছিল। একটি পরিবেশে যদি এই প্যারাসাইট দ্বারা অনাক্রান্ত শামুক থাকে, তাহলে সেই পরিবেশের শামুকের সংখ্যায় কী ধরনের প্রভাব পরে। তিনি দেখেন শামুক প্রচুর সংখ্যক ডিম পারে এবং তাদের জনসংখ্যা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। Euhaplorchis californiensis প্যারাসাইট না থাকলে শামুকের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Euhaplorchis californiensis"Animal Diversity Web (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৩ অক্টোবর ২০১৮ 

টেমপ্লেট:Nofootnotes