আলাপ:গড়গড়িয়া বা গড়গড়ে পিঠে

পাতাটির বিষয়বস্তু অন্যান্য ভাষায় নেই।
আলোচনা যোগ করুন
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

উৎকল পুজো পার্বণে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পিঠে গড়গড়িয়া বা গড়গড়ে। এই পিঠের চলন ওড়িশা ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও মেদিনীপুর জেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত বাঁকুড়ার সিমলাপালে। সেখানে তো ঘরে ঘরে পিঠের পরব মাঝে মাঝে লেগে থাকে। এই গড়গড়িয়া বা গড়গড়ে পিঠে তৈরি করার প্রধান উপাদান দুটি। একটি 'খইল' এবং অপরটি হচ্ছে 'পুর'। খইল প্রস্তুত হয় আতপ চালের গুড়োকে সেদ্ধ করে যা দেখতে হবে পেস্ট বা লেই-এর মতো। পুর বিভিন্ন রকমের হয়, যেমন নারকেল পুর, কড়াই পুর, ছানা পুর, ক্ষীর বা চাছি পুর ইত্যাদি। এগুলি যথাক্রমে নারকেল কুচি, কড়াই শুটি, ছানা,চাছি ইত্যাদির সঙ্গে চিনি বা গুড় মিশিয়ে প্রস্তুত করা হয়। এই পিঠে তৈরির পদ্ধতিটা অভিনব যা গৃহিনীরা সহজেই আয়ত্ত করে নিয়েছেন। আঙ্গুলের কেরামতিতে প্রথমে একটি ছোট্ট বাটির মতো তৈরি করা হবে খইল দিয়ে। তারপর তার মাঝে নির্দিষ্ট পুর পরিমাণ মতো দিয়ে মুড়ে দেওয়া হবে। হাতের চাপে একটু চ্যাপ্টা বা পিরামিডের মতো আকার দেওয়া হবে। পিঠের আয়তন কী রকম হবে তা নিজের ইচ্ছে ওপরই নির্ভর করে। অবশ্য বড় পিঠে করতে গেলে পুরও বেশি লাগবে। গড়গড়িয়াকে সেদ্ধ করা হবে জলীয় বাষ্প বা স্টিমের সাহায্যে। চমক লাগার কিছুই নেই। এজন্য কোন মেশিন-টেশিন দরকার হয় না। পদ্ধতিটা গ্রামের মানুষরাই আবিষ্কার করে নিয়েছেন। ব্যাপারটা কিছুই নয়। চাই হাঁড়ি, কিছু ছোট কাঠি আর কিছু শাল পাতা।

হাঁড়ির ভেতর কিছুটা জল রেখে তার ওপর কাঠিগুলো সাজানো হবে। ব্যাস হয়ে গেল। শালপাতার ওপর পিঠে গুলো রেখে জল ফোটালেই হল। পিঠের গা বেয়ে বাষ্প ওপরে উঠবে। ওপরে থাকবে একটা ঢাকনা। কিছুক্ষণ বাদে সেদ্ধ হলেই গড়গড়িয়াদের নামানো হবে। তারপর যাবে খাবার থালায়। পাশের বাড়িতে সে সময় পিঠে না হয়ে থাকলে ডাক পড়ে তাঁদেরও। অতিথি গেলে তো কথাই নেই। আপনিও সময় করে একদিন আসুন না? পিঠে খাওয়াতে, বিশেষত সিমলাপালের মানুষরা সিদ্ধহস্ত- কারণটা আর কিছুই নয়-পৃথিবীতে এরকম পিঠে সম্ভবত আর কোথাও পাওয়া যাবে না। সিমলাপালের প্রাকৃতিক পরিবেশ, আবহাওয়া ভৌগোলিক অবস্থান, মাটির গুণাগুণ, ধানের প্রকৃতি ইত্যাদির উপর এই পুষ্টিকর পিঠের গঠন শৈলী ও স্বাদ নির্ভর করে। তাই সিমলাপালের গড়গড়িয়া পিঠে বা গড়গড়ে পিঠে সত্যিই অদ্বিতীয়। সূত্র: ভূমিলক্ষী, আনন্দবাজার পত্রিকা, মেয়েদের কথা,২৪ ডিসেম্বর ১৯৭৬