বিষয়বস্তুতে চলুন

আয়নীয় তরল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
The chemical structure of 1-butyl-3-methylimidazolium hexafluorophosphate ([BMIM]PF6), a commonly encountered ionic liquid.

আয়নীয় তরল (Ionic Liquid) হল একধরনের লবণ, যা সাধারণ অবস্থায় তরল থাকে। অন্যভাবে বললে, যে সমস্ত লবণের গলনাঙ্ক ১০০ ডিগ্রী সেল্সিয়স (আপাত নির্ধারিত মান) এর কম হয়, শুধুমাত্র তাদেরকেই এই নামে ডাকা হয়। সাধারণ তরল (যেমন জল বা তেল) যেমন শুধু অণু দিয়ে গঠিত হয়, সেরকম না হয়ে আয়নীয় তরল শুধুমাত্র অথবা বেশির ভাগটাই আয়ন দিয়ে গঠিত হয়। এই নামে ছাড়াও এদেরকে আয়নীয় লবণ, তরল লবণ, অথবা গলিত লবণ ইত্যাদি বিভিন্ন নামেও ডাকা হয়ে থাকে।[][][]

বেশ কিছু নতুন এবং আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য থাকার জন্য আয়নীয় তরল অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছে, এবং এখনো অনেক জায়গাতে এদের প্রয়োগে সুফল পাওয়া যেতে পারে। সাধারণ লবণ (NaCl) ও সম্পূর্ণ ভাবে আয়ন দিয়ে গঠিত হলেও, এর গলনাঙ্ক অনেক বেশি (801 °C)। এজন্যে সাধারণ লবণকে আয়নীয় কঠিন পদার্থ বলা যেতে পারে।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

সাধারণ অর্থে "ionic liquid" শব্দটি ১৯৪৩ সালের প্রথম দিকে ব্যবহৃত হয়েছিল। []

প্রথম আয়নীয় তরল আবিষ্কারের তারিখ এবং এর আবিষ্কারকের পরিচয় বিতর্কিত। এস গ্যাব্রিয়েল এবং জে ওয়েইনার ১৮৮৮ সালে ইথানলামোনিয়াম নাইট্রেট (গলনাঙ্ক  ৫২-৫৫ °C) আবিষ্কার করেন । [] ১৯১১ সালে প্রফুল্ল চন্দ্র রায় অন্যান্যদের সঙ্গে ইথাইলামাইন, ডাইমিথাইলমাইন এবং ট্রাইমেথাইলামাইনের নাইট্রাইট লবণের প্রস্তুতির সময় লক্ষ্য করেন যে ইথাইলামাইন হাইড্রোক্লোরাইড এবং সিলভার নাইট্রেটের মধ্যে প্রতিক্রিয়ায় অস্থির ইথাইলামোনিয়াম নাইট্রাইট{ ( C
2
H
5
) NH+
3
· NO
2
} তৈরি হয়। এটি একটি ভারী হলুদ তরল যা লবণ এবং বরফের মিশ্রণে নিমজ্জিত হলে শক্ত করা যায় না ; সম্ভবত এটি কক্ষ-তাপমাত্রার আয়নীয় তরলের প্রথম রিপোর্ট। [] [] পরবর্তীতে ১৯১৪ সালে, পল ওয়াল্ডেন স্থিতিশীল কক্ষ-তাপমাত্রার আয়নীয় তরল ইথাইলামোনিয়াম নাইট্রেট ( C
2
H
5
) NH+
3
· NO
3
(গলনাঙ্ক ১২  °সে) এর কথা জানান। [] ১৯৭০ এবং ৮০র দশকে, অ্যালকাইল-প্রতিস্থাপিত ইমিডাজোলিয়াম এবং পাইরিডিনিয়াম ক্যাশনের উপর ভিত্তি করে আয়নীয় তরল, হ্যালাইড বা টেট্রাহ্যালোজেনোঅ্যালুমিনেট অ্যানয়ন সহ, ব্যাটারিতে সম্ভাব্য ইলেক্ট্রোলাইট হিসাবে বিকশিত হয়েছিল। [] [১০]

ইমিডাজোলিয়াম হ্যালোজেনোঅ্যালুমিনেট লবণের ক্ষেত্রে ভৌত বৈশিষ্ট্যগুলি — যেমন সান্দ্রতা, গলনাঙ্ক এবং অম্লতাঅ্যালকাইল বিকল্প এবং ইমিডাজোলিয়াম/পাইরিডিনিয়াম এবং হ্যালাইড/হ্যালোজেনোঅ্যালুমিনেট অনুপাত পরিবর্তন করে সামঞ্জস্য করা সম্ভব। [১১] এর প্রয়োগের দুটি প্রধান দুর্বলতা ছিল আর্দ্রতা সংবেদনশীলতা এবং অম্লতা বা ক্ষারকতা। ১৯৯২ সালে উইলকস এবং জাওয়ারোটকো হেক্সাফ্লুরোফসফেট ( PF
6
) এবং টেট্রাফ্লুরোবোরেট ( BF
4
)এর মতো 'নিরপেক্ষ' দুর্বলভাবে সমন্বয়কারী আয়নের সাথে আয়নীয় তরল তৈরি করেন। এর ফলে এর বাস্তব ব্যবহারের অনেক বিস্তৃত পরিসরের সৃষ্টি হয়। [১২]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Thomas Welton (১৯৯৯)। "Room-Temperature Ionic Liquids"। Chem. Rev.৯৯: ২০৭১–২০৮৪। ডিওআই:10.1021/cr980032t
  2. F. Endres, S. Zein El Abedin (২০০৬)। "Air and water stable ionic liquids in physical chemistry"। Phys. Chem. Chem. Phys. (18): ২১০১–১৬। বিবকোড:2006PCCP....8.2101Eডিওআই:10.1039/b600519pপিএমআইডি 16751868
  3. Freemantle, Michael (২০০৯)। An Introduction to Ionic LiquidsRoyal Society of Chemistryআইএসবিএন ৯৭৮-১-৮৪৭৫৫-১৬১-০
  4. R. M. Barrer (১৯৪৩)। "The Viscosity of Pure Liquids. II. Polymerised Ionic Melts": ৫৯–৬৭। ডিওআই:10.1039/tf9433900059 {{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি journal এর জন্য |journal= প্রয়োজন (সাহায্য)
  5. S. Gabriel; J. Weiner (১৮৮৮)। "Ueber einige Abkömmlinge des Propylamins": ২৬৬৯–২৬৭৯। ডিওআই:10.1002/cber.18880210288। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুলাই ২০১৯ {{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি journal এর জন্য |journal= প্রয়োজন (সাহায্য)
  6. Rây, Prafulla Chandra; Rakshit, Jitendra Nath (১৯১১)। "CLXVII.—Nitrites of the alkylammonium bases: ethylammonium nitrite, dimethylammonium nitrite, and trimethylammonium nitrite" (ইংরেজি ভাষায়): ১৪৭০–১৪৭৫। ডিওআই:10.1039/CT9119901470আইএসএসএন 0368-1645 {{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি journal এর জন্য |journal= প্রয়োজন (সাহায্য)
  7. Tanner, Eden E. L. (জুলাই ২০২২)। "Ionic liquids charge ahead" (ইংরেজি ভাষায়): ৮৪২। ডিওআই:10.1038/s41557-022-00975-4আইএসএসএন 1755-4349পিএমআইডি 35778557 {{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি journal এর জন্য |journal= প্রয়োজন (সাহায্য)
  8. Paul Walden (1914), Bull. Acad. Sci. St. Petersburg, pages 405-422.
  9. H. L. Chum; V. R. Koch (১৯৭৫)। "Electrochemical scrutiny of organometallic iron complexes and hexamethylbenzene in a room-temperature molten salt": ৩২৬৪–৩২৬৫। ডিওআই:10.1021/ja00844a081 {{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি journal এর জন্য |journal= প্রয়োজন (সাহায্য)
  10. J. S. Wilkes; J. A. Levisky (১৯৮২)। "Dialkylimidazolium chloroaluminate melts: a new class of room-temperature ionic liquids for electrochemistry, spectroscopy and synthesis": ১২৬৩–১২৬৪। ডিওআই:10.1021/ic00133a078 {{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি journal এর জন্য |journal= প্রয়োজন (সাহায্য)
  11. R. J. Gale; R. A. Osteryoung (১৯৭৯)। "Potentiometric investigation of dialuminium heptachloride formation in aluminum chloride-1-butylpyridinium chloride mixtures": ১৬০৩–১৬০৫। ডিওআই:10.1021/ic50196a044 {{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি journal এর জন্য |journal= প্রয়োজন (সাহায্য)
  12. J. S. Wilkes; M. J. Zaworotko (১৯৯২)। "Air and water stable 1-ethyl-3-methylimidazolium based ionic liquids": ৯৬৫–৯৬৭। ডিওআই:10.1039/c39920000965 {{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি journal এর জন্য |journal= প্রয়োজন (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]