আমর ইবনে আবাসা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আমর ইবন আবাসা(মৃত্যু-আনুমানিক ৬৫০ খ্রিষ্টাব্দ) রাসুল এর একজন সাহচর্য সাহাবা ছিলেন । যিনি একজন হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবা ছিলেন । তিনি প্রখ্যাত সাহাবা আবু যার আল গিফারি বৈপিত্রীয় ভাই ছিলেন । তিনি অত্যন্ত উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন । তিনি ইসলাম পূর্ব জীবনে মদ,মূর্তিপূজা এসব পাপাচার করেননি ।

নাম ও বংশ পরিচয়[সম্পাদনা]

তার সংক্ষিপ্ত নাম আমর, ডাকনাম আবু নাজীহ । আমর ইবনে আবাসা এর পিতার ‍আবাসা ইবন আমের এবং মাতার রামলা বিনতুল ওয়াকীয়া ।আমর প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু যার আল-গিফারীর বৈপিত্রীয় ভাই ।[১]

ইসলাম গ্রহণ[সম্পাদনা]

আমর ইবনে আবাসা ইসলামের প্রাথমিক লগ্নেই ইসলাম গ্রহণ করেন । ইসলাম পূর্ব যুগে তিনি আহলে কিতাবের জ্ঞানী এক ব্যক্তির নিকট শুনেছিলেন,মক্কায় এক লোকের আবির্ভাব হবে যে,একক স্রষ্টার দাওয়াত দিবে এবং তার জাতি তার বিরোধিতা করবে আর সেটাই সর্বোত্তম দ্বীন । এটা শোনার পরে তিনি মনে মনে ঐ ব্যক্তির খোঁজে থাকেন এবং মক্কায় এসে ইসলাম গ্রহণ করেন ।

অন্য একটি বর্ণনা মতে রাসূলুল্লাহর সাথে আমরের এ সাক্ষাত হয় উকাজ মেলায় । এখানে রাসুলের সাথে প্রাথমিক আলোচনায় তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন ।তবে রাসুল তখন তাকে তার জাতির নিকট ফিরে যেতে বলেন কেননা তখনো ইসলামের সূচনা লগ্ন ছিল ।[২][৩]

মদিনায় হিজরত[সম্পাদনা]

রাসূল নির্দেশমত আমর ইসলাম গ্রহণ করে স্বগোত্রে ফিরে যান। তবে মক্কায় যাতায়াতকারীদের মাধ্যমে মুহাম্মদ খোঁজ খবর রাখতেন। রাসূলুল্লাহ মদীনায় হিজরতের পর ইয়াসরিব বা মদীনার কিছু লোক তার গোত্রে আসে ।তাদের নিকট রাসুল মদিনায় হিজরতের খবর শুনে তিনি মদীনার দিকে রওয়ানা হলেন । তখন থেকে আমর মদীনার স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যান।

প্রসিদ্ধ মতে তিনি খাইবার যুদ্ধের পরে এবং মক্কা বিজয়ের পূর্বে মদীনায় আসেন ।[১] তবে কেও বলেছেন তিনি বদর যুদ্ধের পূর্বে মদীনায় আসেন এবং বদরে অংশগ্রহণ করেন।

যুদ্ধে অংশগ্রহণ[সম্পাদনা]

বদর, উহুদ, হুদাইবিয়া, খাইবার সহ বিভিন্ন যুদ্ধ তার স্বদেশ থাকাকালেই শেষ হয়ে যায় । মক্কা বিজয় অভিযানে তিনি সর্বপ্রথম অংশগ্রহণ করেন । তায়িফ অভিযানেও যে তিনি শরিক ছিলেন, এমন বর্ণনা পাওয়া যায়। তার নিজের বর্ণনাতেই রয়েছে, তায়িফ অবরোধকালে শত্রু পক্ষের দিকে আমি ১৬টি তীর নিক্ষেপ করি । তায়িফ অভিযানের পর আর কোন যুদ্ধে তার যোগদানের কথা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। তবে এতটুকু জানা যায় যে, তিনি আরও কিছু যুদ্ধে যোগদান করেন।

হাদিস বর্ণনা[সম্পাদনা]

আমর ইবনে আবাসা একজন হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবা ছিলেন । তিনি মোট ৪৮ টি হাদিস বর্ণনা করেছেন । তার থেকে অনেক সাহাবা ও তাবেয়ী হাদিস বর্ণনা করেছেন ।

সাহাবাদের মধ্যে

ইবন মাসউদ

আবু উমামা আল বাহিলী

সাহল ইবন সাদ অন্যতম ।

তাবেঈদের মধ্যে

শুরাহবীল ইবন সামাত

সাদান ইবন আবী তালহা

সুলাইম ইবন আমের

আবদুর রহমান ইবন আমের,

জুবাইর ইবন নাফীর,

আবু সালাম সহ আরো অনেকে ।[১]

একটি হাদিস[সম্পাদনা]

হযরত আমর ইবনে আবাসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা আমাকে প্রেরণ করেছেন আত্মীয়তার সর্ম্পক বজায় রাখার, মূর্তিসমূহ ভেঙ্গে ফেলার এবং এক আল্লাহর ইবাদত করার ও তাঁর সঙ্গে অন্য কোনো কিছুকে শরীক না করার বিধান দিয়ে।[৪]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

হযরত আমর ইবন আবাসার মৃত্যুর সময়কাল সঠিকভাবে জানা যায় না। ইতিহাস বিশেষজ্ঞরা অনুমানের ওপর ভিত্তি করে বলেছেন, তিনি খলীফা হযরত উসমানের খিলাফতের শেষ দিকে মৃত্যুবরণ করেছেন ।[২]

আহমাদ ইবন হাম্বলের একটি বর্ণনায়,তিনি আমীর মুয়াবিয়ার খিলাফতকাল পর্যন্ত জীবিত ছিলেন ।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. [আল ইসাবা-৩/৫] 
  2. [আল ইসাবা-৩/৬] 
  3. হায়াতুস সাহাবা - [১/৭১-৭২] 
  4. [সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৮৩২]