আবান ইবনে সাঈদ ইবনুল আস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আবান ইবনে সাঈদ ইবনুল আস
মুহাম্মাদের সাহাবা
জন্মমক্কা, সৌদি আরব
মৃত্যু৬২৭ খ্রিষ্টাব্দ
যার দ্বারা প্রভাবিতমুহাম্মাদ
শাসনকর্তা, বাহরাইন
পূর্বসূরীআলা ইবনুল হাদরামি
ব্যক্তিগত তথ্য
পিতামাতা
  • আবু উহায়হা সাঈদ ইবনুল আস (পিতা)
  • হিন্দা বিনতে মুগিরা (মাতা)
উল্লেখযোগ্য কাজখাইবারের অভিযান,তায়িফের অভিযান
যে জন্য পরিচিতওহি লেখক
আত্মীয়পাঁচ ভাই: (১) উবাইদা (২) আস (৩) আবান (৪) খালিদ ও (৫) আমর
আবান ইবনে সাঈদ ইবনুল আস

আবান ইবনে সাঈদ ইবনুল আস নবী মুহাম্মাদের বিশিষ্ট ২৩ জন কাতেবী সাহাবাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন।[১][২] তার বংশের উপরের দিকের পঞ্চম পুরুষ আবদ মান্নাফে গিয়ে মুহাম্মাদের বংশের সাথে মিলিত হয়েছে। [৩]

জন্ম ও বংশ পরিচয়[সম্পাদনা]

আবান এর পিতার নাম ছিলো আবু উহায়হা সাঈদ ইবনুল আস এবং মাতার নাম ছিলো হিন্দা বিনতে মুগীরা। তার পিতা সাঈদ ছিল কুরাইশদের এক মর্যাদাবান ব্যক্তি ছিলেন। তিনি হিজরী ২য় অথবা ৩য় সনে কাফির অবস্থায় তায়িফে মৃত্যু বরণ করেন। [৪] আবান ৫ ভাই ছিলেন । তারা হলঃ (১)উবাইদা (২)আস (৩)আবান (৪)খালিদ ও (৫) আমর ।

ইসলাম গ্রহণের পূর্বে[সম্পাদনা]

মক্কায় ইসলামের সূচনা পূর্বেই তাদের মধ্যে খালিদ ও আমর ইসলাম গ্রহণ করে হাবশায় হিজরাত করেন।[৫] কিন্তু আবান তার অন্য দুই ভাই উবাইদা ও আল আসের সাথে পৌত্তলিকই থেকে গেলেন। তার দুই ভাই খালিদ ও আমরের ইসলাম গ্রহণে দারুণ ব্যথা পান। আবান তার অন্য দুই ভাইয়ের সাথে মিলে মুহাম্মাদ ও মুসলমানদের বিরোধিতা করতে থাকেন। বদর যুদ্ধে মুসলমানদের সাথে লড়বার জন্য উবাইদা ও আল আসের সাথে মক্কা থেকে বের হলেন। কিন্তু তার দুই ভাই উবাইদা ও আল আস বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের হাতে শোচনীয় ভাবে নিহত হলো। আবান কোন রকমে প্রাণ নিয়ে মক্কায় ফিরে এলো ।

ইসলাম গ্রহণ[সম্পাদনা]

হুদাইবিয়ার সন্ধির প্রাক্কালে রাসূলে মুহাম্মাদ তার বার্তাসহ উসমানকে মক্কার কুরাইশদের নিকট পাঠালেন। উসমান "বালদাহ" উপত্যাকা দিয়ে মক্কার দিকে যাচ্ছেন। এমন সময় আবান ইবন সাঈদ কুরাইশদের মধ্য থেকে এগিয়ে এসে উসমানকে স্বাগত জানালেন। উসমানের সাথে তার আগে থেকেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। আবান নিজের ঘোড়াটিকে প্রস্তুত করে তার পিঠে উসমানকে উঠালেন এবং তার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিলেন। অত:পর আবান উসমানকে মক্কায় নিয়ে আসেন। [৬]

উসমান আবানের বাড়ীতে আসার পর আবান তাকে বলেন: আপনার পোশাকের এ অবস্থা কেন? উসমানের জামা ছিল হাঁটু ও গোঁড়ালির মাঝামাঝি পর্যন্ত। আবান আরও বলেন: আপনার কাওমের লোকদের মত জামা লম্বা করেন না কেন? উসমান বললেন: আমাদের নবী এভাবে জামা পরেন। আবান বলেন: আপনি কাবা ‍তাওয়াফ করুন। উসমান বললেন: আমাদের নবী কোন কাজ না করা পর্যন্ত আমরা তা করতে পারি না। আমরা শুধু তার অনুসরণ করে থাকি। (হায়াতুস সাহাবা-২/৩৫৮-৫৯)[৬],[৭]

আবান যদিও দীর্ঘকাল যাবত ইসলাম ও ইসলামের নবীর প্রতি বিদ্বেষী ছিলেন, তবুও এ সময় সত্যের সন্ধান থেকে মোটেও বিরত থাকেননি। এ সময় তিনি বিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিকট রাসূল সা: এর নবুওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতেন। তখনকার দিনে শাম বা সিরিয়া ছিল জ্ঞানী-গুণী ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কেন্দ্র। ব্যবসার কাজে আবানের সেখানে যাতায়াত ছিল। একবার তিনি সেখানকার এক খ্রিস্টান ‘রাহিব’কে কথা প্রসঙ্গে বললেন, আমি হিজাযের কুরাইশ গোত্রের সন্তান। এই গোত্রের এক ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহর মনোনীত ব্যক্তি বলে দাবী করেন। তিনি বলেন, আল্লাহ আমাকেও ঈসা ও মূসার মত নবী করে পাঠিয়েছেন। রাহিব লোকটির নাম জিজ্ঞেস করলেন। আবান বললেন: লোকটির নাম মুহাম্মাদ। রাহিব আসমানী কিতাবের বর্ণনা অনুযায়ী একজন নবীর আত্মপ্রকাশের বয়স, বংশ ইত্যাদি ব্যাখ্যা করলেন। তার বক্তব্য শুনে আবান বললেন: এগুলির সবই তো সেই লোকটির মধ্যে বিদ্যমান। রাহিব তখন বললেন: আল্লাহর কসম, তাহলে সেই ব্যক্তি সমগ্র আরবের ওপর আধিপত্য বিস্তারের পর সারা বিশ্বে বিস্তার লাভ করবেন। তুমি যখন ফিরে যাবে, আল্লাহর এই নেক বান্দার নিকট আমার সালাম পৌঁছে দেবে। শামের এই রাহিব বা পাদ্রীর নাম ‘ইয়াক্কা’। (উসুদুল গাবা-১/৩৫,[৮] আল ইসাবা-১/১৩)।[৮]

পিতৃ পুরুষের ধর্মের কথা চিন্তা করে এবং সমবয়সীদের নিন্দা ও বিদ্রুপের কথা ভেবে আবান কিছুদিন সম্পূর্ণ চুপ থাকলেন। তিনি তার ভাই আমর ও খালিদ হাবশা থেকে ফিরে আবানের সাথে যোগাযোগ করতে থাকেন। অতঃপর তিনি খাইবার যুদ্ধের পূর্বেই ইসলাম গ্রহণ করে মদীনায় হিজরাত করেন।

দায়িত্ব পালন[সম্পাদনা]

আবান তার দুই ভাই সাথে নিয়ে খাইবার অভিযানে অংশ গ্রহণ করেছেন । আবান নবী মুহাম্মাদের সাথে তায়িফ অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। নবী মুহাম্মাদ আবানকে আলা ইবনুল হাদরামীর স্থলে বাহরাইনের শাসক নিয়োগ করেন। মুহাম্মাদের মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। মুহাম্মাদের ওফাতের খবর শুনে তিনি মদীনায় ফিরে আসেন। আবান নবীর অহী লেখকের দায়িত্বও পালন করেছেন। (আনসাবুল আশরাফ-১/৫৩২)।[৮]

আবু বকর যুগে[সম্পাদনা]

মুহাম্মাদের মৃত্যুর পর আবু বকর খলিফা নির্বাচিত হলেন। তার হাতে গণ বাইয়াত শেষ হওয়ার পরও যে কজন কুরাইশ ব্যক্তি কিছুদিন যাবত বাইয়াত থেকে বিরত থাকেন । আবান তাদের একজন। বনী হাশেমের লোকেরা বাইয়াত গ্রহণ করলে তার আপত্তি দূর হয় এবং তিনি বাইয়াত করেন।

খলিফা আবু বকর মুহাম্মাদের নিয়োগকৃত কোন শাসক বা কর্মচারীকে অপসারণ করেননি। আবানও ছিলেন মুহাম্মাদ কর্তৃক নিযুক্ত একজন শাসক। আবানকে তার দায়িত্বে ফিরে যাওয়ার জন্য আবু বকর রা: অনুরোধ করেন। কিন্তু আবান খলিফার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। তবে বর্ণনায় জানা যায়,খলিফার বার বার অনুরোধে শেষ পর্যন্ত ইয়ামানের শাসনকর্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

মূসা ইবন উকবা ও অধিকাংশ বংশবিদ্যা বিশারদদের মতে আবু বকরের খিলাফতকালের শেষ দিকে হিজরী ১৩ সনে আজনাদাইনের যুদ্ধ ক্ষেত্রে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তবে ইবনে ইসহাকের মতে তিনি ইয়ারমুক যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেন ।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Tajul, Islam। "মজলুম সাহাবি হযরত মুআবিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহু"Komashisha (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১২ 
  2. poygam.com (২০১৭-০৩-২৫T২২:১০:৩৪+০০:০০)। "কুরআন সংরক্ষণ: রাসূলের জীবনকালে"Poygam। ২০১৯-০৯-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 2019-09-12  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  3. উসুদুল গাবা-। পৃষ্ঠা ১। 
  4. আনসাবুল আশরাফ-। পৃষ্ঠা (১/১৪২.৩৬৮)। 
  5. (আল ইসাবা-১/১৩) 
  6. (হায়াতুস সাহাবা-১/১৫৬) 
  7. সীরাতু ইবন হিশাম-২/৩১৫) 
  8. সীরাতু ইবন হিশাম-(২/৩১৫)