আফিম-সদৃশ মাদকসেবন মহামারী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আফিমসদৃশ মাদকসেবন মহামারী বা আফিমসদৃশ মাদকসেবন সঙ্কট কথাগুলি দিয়ে সম্পূর্ণভাবে বা আংশিকভাবে আফিমজাত ঔষধ কিংবা আফিম-সদৃশ ঔষধ তথা মাদকদ্রব্যের অতিব্যবহার, ভুল ব্যবহার, অপব্যবহার এবং মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে যেসব মৃত্যু সংঘটিত হয় এবং এই মাদক-জাতীয় ঔষধগুলির চিকিৎস্য বা চিকিৎসা-বহির্ভূত কিংবা বিনোদনমূলক ব্যবহারের কারণে যে তাৎপর্যপূর্ণ স্বাস্থ্যগত, সামাজিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক পরিণাম ঘটে, সেই ব্যাপারটিকে বোঝায়।

আফিমসদৃশ ঔষধ বলতে মধ্যম থেকে উচ্চশক্তির বেদনানাশক (যেমন অক্সিকোডোন, হাইড্রোকোডোন, ইত্যাদি), অতি-উচ্চশক্তির বেদনানাশক (ফেন্টানিল, যেটিকে আফিমজাত মরফিনহেরোইনের সাথে সাদৃশ্য রেখে কৃত্রিমভাবে সংশ্লেষ করা হয়) ঔষধের একটি বিচিত্র শ্রেণীকে বোঝায়।[১]

এই পদার্থগুলি অত্যন্ত শক্তিশালী ও সুলভ, তাই মাদকাসক্তিমাত্রাতিরিক্ত সেবনের ঝুঁকি থাকলেও এগুলি চিকিৎসা এবং বিনোদনমূলন মাদক হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। মানুষের মস্তিষ্কের যে অংশটি শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে (মেডুলা অবলংগাটা-র শ্বসন কেন্দ্র), এই ঔষধগুলি সেই অংশটির উপর উত্তেজনা-প্রশমনমূলক প্রভাব বিস্তার করে। তাই এইসব আফিম-সদৃশ ঔষধ উচ্চ মাত্রায় সেবন করলে শ্বসন অবদমন ঘটার সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং এভাবে শ্বাসবৈকল্য এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে।[২]

আফিম-সদৃশ ঔষধগুলি তীব্র স্বল্পমেয়াদি ব্যথার চিকিৎসায় খুবই কার্যকর,[৩] কিন্তু এগুলি দীর্ঘমেয়াদি কিংবা উচ্চঘাতসম্পন্ন দুরারোগ্য ব্যথার চিকিৎসায় কার্যকর কিনা এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক বিদ্যমান,[৪] কেননা শেষোক্ত ক্ষেত্রগুলিতে উপকারের চেয়ে ঝুঁকির সম্ভাবনাই বেশি হতে পারে।[৪]

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র[সম্পাদনা]

সব ধরনের আফিম-সদৃশ ঔষধ অতিমাত্রায় সেবনজনিত কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাৎসরিক মৃত্যুর সংখ্যা

১৯৯৯ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত আনুমানিক সাড়ে চার লক্ষেরও বেশি (৪,৫৩,৩০০) মার্কিন নাগরিক আফিম-সদৃশ ঔষধ বা মাদক সেবনের কারণে মৃত্যুবরণ করে।[৫]

মিয়ানমার[সম্পাদনা]

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক কার্যালয় জানায় যে মিয়ানমারে হেরোইন নামক মাদকের কাঁচামাল হিসেবে আফিমের উৎপাদন কমে ৪০৫ মেট্রিকটনে নেমে এসেছে (২০১৩ সালের উৎপাদনের অর্ধেক)। কিন্তু এর বিপরীতে দেশটিতে এবং এর প্রতিবেশী লাওস, থাইল্যান্ড ও চীনে কৃত্রিম আফিম-সদৃশ মাদক মেথাঅ্যাম্ফিটামিনের উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। মেথাঅ্যাম্ফিটামিনের সাথে ক্যাফিন মিশ্রিত করে "ইয়াবা" (থাই ভাষার শব্দ যার অর্থ "পাগল করা ঔষধ") নামক বড়ি আকারের মাদকদ্রব্য এবং এর অত্যন্ত আসক্তিজনক কেলাসিত সংস্করণ "আইস" উৎপাদন করা হয়।[৬] এর আগে ২০২০ সালের শুরুতে মিয়ানমারের শান রাজ্যের আইনকানুনহীন কুতকাই অঞ্চল থেকে ২০ কোটি ইয়াবা বড়ি আটক করা হয় এবং উদ্ঘাটিত হয় যে মিয়ানমারে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে করোনা মহামারীকালে অভূতপূর্ব পরিমাণে কৃত্রিম আফিম-সদৃশ মাদকের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। মিয়ানমার বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম আফিম-সদৃশ মাদক উৎপাদনকারী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এইসব মাদক তৈরির কাঁচামাল চীন থেকে সরবরাহ করা হয়। ইয়াবা অপেক্ষাকৃত সস্তা এবং দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে এর চল বেশি। অন্যদিকে আইস নামক সংস্করণটি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াতে বেশি চলে।[৭]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Opioids"Drugs of Abuse (ইংরেজি ভাষায়)। National Institute on Drug Abuse। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২৯, ২০১৯ 
  2. "Information sheet on opioid overdose"Management of Substance AbuseWorld Health Organization। নভেম্বর ২০১৪। ডিসেম্বর ১, ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।  The URL remains live, but the live version as of this writing is from August 2018. Recommend updating content and updating this citation.
  3. Alexander GC, Kruszewski SP, Webster DW (২০১২)। "Rethinking Opioid Prescribing to Protect Patient Safety and Public Health"। JAMA308 (18): 1865–1866। ডিওআই:10.1001/jama.2012.14282পিএমআইডি 23150006 
  4. Franklin, G. M. (২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪)। "Opioids for chronic noncancer pain: A position paper of the American Academy of Neurology"। Neurology83 (14): 1277–1284। ডিওআই:10.1212/WNL.0000000000000839অবাধে প্রবেশযোগ্যপিএমআইডি 25267983 
  5. "The Opioid Epidemic Might Be Much Worse Than We Thought"The Atlantic। ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২০। 
  6. Vijitra Duangdee (১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১)। "Myanmar Opium Production Drops as Meth Surges, UN Says"। ভয়েস অফ আমেরিকা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০২১ 
  7. আজঁস ফ্রঁস প্রেস (১৯ মে ২০২০)। "South-east Asia's biggest synthetic drugs raid: 200m meth tablets found in Myanmar"। দ্য গার্ডিয়ান। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০২১