অ্যান্ড্রু মার
অ্যান্ড্রু মার | |
---|---|
জন্ম | অ্যান্ড্রু উইলিয়াম স্টিভেনসন মার ৩১ জুলাই ১৯৫৯ গ্লাসগো, স্কটল্যান্ড |
শিক্ষা | ট্রিনিটি হল, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | সাংবাদিক, প্রচারক |
কর্মজীবন | ১৯৮১–বর্তমান |
টেলিভিশন | বিবিসি নিউজ দ্য অ্যান্ড্রু মার শো |
দাম্পত্য সঙ্গী | জ্যাকি অ্যাশলেই (বি. ১৯৮৭) |
সন্তান | ৩ |
পিতা-মাতা | ডোনাল্ড এবং ভ্যালেরি মার |
অ্যান্ড্রু উইলিয়াম স্টিভেনসন মার (জন্ম: ৩১ জুলাই ১৯৫৯) একজন ব্রিটিশ সাংবাদিক এবং সম্প্রচারক। একজন রাজনৈতিক ভাষ্যকার হিসেবে তাঁর কর্মজীবনের শুরুতে, তিনি ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার সম্পাদনা করেন এবং ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিবিসি নিউজের রাজনৈতিক সম্পাদক ছিলেন।
২০০২ সালে, মার বিবিসি রেডিও ৪-এর দীর্ঘদিনের অনুষ্ঠান 'স্টার্ট দ্য উইক'-এর সঞ্চালকের দায়িত্ব নেন। ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি বিবিসি ওয়ানে রবিবার সকালে একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠান - সানডে এএম (পরে যার নামকরণ করা হয় দ্য অ্যান্ড্রু মার শো) - এর সঞ্চালনা শুরু করেন।
২০০৭ সালে, যুদ্ধ পরবর্তী ব্রিটেনের রাজনৈতিক ইতিহাসের উপরে তিনি 'অ্যান্ড্রু মার'স হিস্ট্রি অফ মডার্ন ব্রিটেন' নামের একটি বিবিসি টু তথ্যচিত্র ধারাবাহিক উপস্থাপনা করেন। এরপর ২০০৯ এ আসে এর প্রিকুয়েল 'অ্যান্ড্রু মার'স দ্য মেকিং অফ মডার্ন ব্রিটেন' যেখানে ১৯০১ থেকে ১৯৪৫ এই সময়কালের ওপর আলোকপাত করা হয়। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে মার মানবসভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা বিষয়ক একটি ধারাবাহিক উপস্থাপনা শুরু করেন, যার নাম ছিল 'অ্যান্ড্রু মার'স হিস্ট্রি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড'।
২০১৩ সালের জানুয়ারীতে স্ট্রোকের শিকার হওয়ার পর, মার দুই মাস হাসপাতালে অবস্থান করেন। ২০১৩ এর সেপ্টেম্বরে তিনি দ্য অ্যান্ড্রু মার শো উপস্থাপনায় ফিরে আসেন। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মার বিবিসি ত্যাগ করেন।[১] ২০২২ সালের মার্চে তিনি LBC চ্যানেলে তাঁর প্রথম অনুষ্ঠান শুরু করেন যার নাম 'টুনাইট উইথ অ্যান্ড্রু মার'।
প্রাথমিক জীবন
[সম্পাদনা]অ্যান্ড্রু মার ১৯৫৯ সালের ৩১শে জুলাই স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ডোনাল্ড মার ছিলেন একজন বিনিয়োগ ব্যবস্থাপক এবং মা ভ্যালেরি। নিজের শৈশব সম্পর্কে মার বলেছেন, "আমার পরিবার ধর্মভীরূ এবং চার্চে যেত ... এবং আমিও ছেলেবেলায় চার্চে যেতাম।" তাঁর বাবা লংফোরগানের স্থানীয় চার্চ অফ স্কটল্যান্ডের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। মার সেখানেই বেড়ে ওঠেন। তাঁর পড়াশোনা স্কটল্যান্ডের ক্রেইগফ্লাওয়ার প্রিপারেটরি স্কুলে, এরপর ডান্ডির একটি স্বাধীন স্কুল- হাই স্কুল অফ ডান্ডিতে। তারপর মাশেলবার্গ, ইস্ট লথিয়ানের একটি বেসরকারি স্কুল লোরেটো স্কুলে ভর্তি হন যেখানে তিনি পিঙ্কি হাউজের সদস্য এবং প্রিফেক্ট ছিলেন। পরে তিনি ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি হলে গিয়ে ইংরেজিতে পড়াশোনা করেন এবং প্রথম শ্রেণিতে অনার্সসহ স্নাতক হন।
তার রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রসঙ্গে, মার পূর্বে একজন মাওবাদী এবং লেবার পার্টির সদস্যদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি বামপন্থী চাপ সৃষ্টিকারী গ্রুপ, সোশ্যালিস্ট ক্যাম্পেইন ফর আ লেবার ভিক্টরির সদস্য ছিলেন। এই গ্রুপটি বর্তমানে অ্যালায়েন্স ফর ওয়ার্কার্স লিবার্টি নামে পরিচিত। মাও সেতুং-এর প্রতি তাঁর আগ্রহ শুরু হয় মাত্র এগারো বছর বয়সে। সেসময় ক্রেগফ্লাওয়ার স্কুলের সহপাঠীদের চীনের দূতাবাস থেকে চেয়ে নিয়ে তিনি লিটল রেড বুকের কপি বিতরণ করতেন। ক্যামব্রিজে পড়ার সময়ও মাওবাদের প্রতি তাঁর দুর্বলতা ছিল। মার নিজেই বলেছেন তিনি তখন একজন "প্রচণ্ড বামপন্থী" ছিলেন এবং তাঁর ডাকনাম হয়ে গিয়েছিল "রেড অ্যান্ডি"।
কর্মজীবনের ধারা
[সম্পাদনা]মার ১৯৮১ সালে ট্রেইনি এবং জুনিয়র বিজনেস রিপোর্টার হিসেবে দ্য স্কটসম্যান পত্রিকায় যোগদান করেন। ১৯৮৪ সালে, তিনি লন্ডনে চলে আসেন এবং ঐ পত্রিকার পার্লামেন্টারি করেসপন্ডেন্ট হন, এবং ১৯৮৬ সালে রাজনৈতিক করেসপন্ডেন্টের দায়িত্ব নেন। রাজনৈতিক সাংবাদিক অ্যান্থনি বেভিন্সের সাথে তার পরিচয় হয় যিনি তার একজন মেন্টর এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়েছিলেন। বেভিন্সই ছিলেন ১৯৮৬ সালে ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকাটির যাত্রা শুরুর সময় মারকে নিয়োগ দেওয়ার পেছনে।
তবে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মার ঐ পত্রিকা ত্যাগ করে দ্য ইকনমিস্টে যোগ দেন। সেখানে তিনি সাপ্তাহিক রাজনৈতিক কলাম "Bagehot"-এ অবদান রাখেন এবং শেষ পর্যন্ত ১৯৮৮ সালে ম্যাগাজিনটির রাজনৈতিক সম্পাদক পদে আসীন হন। মার বলেছেন দ্য ইকনমিস্টে কাজের সময়টি "আমাকে বেশ কিছুটা বদলে দিয়েছে" এবং "আমার অনেক ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে"।
মার ১৯৯২ সালে পত্রিকাটির রাজনৈতিক সম্পাদক হিসেবে দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট এ ফিরে আসেন, এবং ১৯৯৬ সালে পত্রিকাটির সম্পাদক হন, যা ছিল একটি বিশেষ অস্থির সময়। মার্ডক-এর মালিকানাধীন দ্য টাইমস পত্রিকার মূল্যহ্রাসের মুখে ইন্ডিপেন্ডেন্টের বিক্রি কমতে শুরু করে। এই পতন রুখতে মার দুটি প্রচেষ্টা নেন। তিনি সাহসী 'পোস্টার স্টাইল' ফ্রন্ট পেজের ব্যবহার করেন এবং ১৯৯৬ সালে পুরো পত্রিকাটিকে ইউরোপীয় মডেলের আদলে পরিপূর্ণভাবে পুনর্নির্মাণ করেন। এর ফলে সংবাদের কঠিন গুরুত্বের বদলে বিষয়ভিত্তিক গোষ্ঠীকরণ করা হয় এবং Gill Sans হেডলাইন ফন্ট ব্যবহৃত হয়। কিন্তু তার এই চেষ্টাগুলো চরমভাবে ব্যর্থ বলে প্রমাণিত হয়। সীমিত বিজ্ঞাপন বাজেটের কারণে নতুনভাবে চালু করা পত্রিকা আলোচনার কেন্দ্রে আসতে পারেনি; বরং এর আসল মার্কেটিং স্লোগান 'It Is – Are You' ('এটি আছে, আপনি কি?') কে 'It's changed – have you?' ('এটি বদলে গেছে, আপনি?') এইভাবে পুনর্ব্যাখ্যা করার জন্য উপহাসের পাত্র হয়ে ওঠে।
১৯৯৮ সালের গোড়ার দিকে, এক তথ্য অনুযায়ী মারকে বরখাস্ত করা হয় কারণ তিনি সম্পাদনা টিমকে মাত্র পাঁচ জন সাব-এডিটরে কমিয়ে আনতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। নিক কোহেনের বর্ণনা অনুযায়ী, অ্যালিস্টেয়ার ক্যাম্পবেল-এর (টনি ব্লেয়ারের কমিউনিকেশন পরিচালক) হস্তক্ষেপের কারণেই মারকে বহিষ্কার করা হয়। ক্যাম্পবেল পত্রিকার প্রকাশক ডেভিড মন্টগোমেরিকে চাপ দিয়ে মারকে বরখাস্ত করান কারণ একটি নিবন্ধে মার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ব্লেয়ারের তুলনা তার পূর্বসূরি জন মেজরের সাথে করেছিলেন। ব্লেয়ার এর আগে দ্য সান পত্রিকায় প্রকাশিত একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন," যেদিন আমরা সেই কিংবদন্তিকে স্মরণ করি যেখানে সেন্ট জর্জ ইংল্যান্ডকে সুরক্ষিত করতে ড্রাগনকে হত্যা করেছিলেন, সেদিন কেউ কেউ যুক্তি দেখাতে পারেন যে ইউরোপ হল হত্যা করার জন্য আরেকটি ড্রাগন।" এর প্রতিক্রিয়ায় মারের দাবি ছিল ব্লেয়ার এই সুবিধাবাদীভাবে ইউরোপ-পন্থী শ্রোতাদের কাছে ইউরোপের প্রশংসা করেছেন যেখানে ইউরোপ-বিরোধীদের কাছে এর সমালোচনা করেন। তিনি আরো বলেন "কেউ কেউ যুক্তি দেখাতে পারেন" ফ্রেইজটি ছিল নিজেকে দূরে রেখে জেনোফোবিক আবেদনের অংশ যেটি ব্লেয়ার করছিলেন।
তিন মাস পর মার আবার দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টে ফিরে আসেন। টনি ও'রাইলি পত্রিকাটিতে তার শেয়ার বাড়ান এবং মিরর গ্রুপের মালিকদের কিনে নেন। ও'রাইলি মারকে অত্যন্ত পছন্দ করতেন এবং তাকে রোজি বয়কটের সাথে সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব নিতে বলেন। এই কার্যক্রমে মার মন্তব্যের পাতাগুলো সম্পাদনা করতেন এবং নিউজ পেজগুলোর ওপর বয়কটের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ থাকত।
অনেক পন্ডিত ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে এই ব্যবস্থা স্থায়ী হবে না এবং দুই মাস পর বয়কট পদত্যাগ করে ডেইলি এক্সপ্রেসের সম্পাদক রিচার্ড অ্যাডিসের জায়গা নিতে যান। কিন্তু মার মাত্র এক সপ্তাহ পুনরায় একক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। প্রথম যাত্রাকালে যিনি পত্রিকায় কাজ করেছিলেন এমন সিমন কেলনার সম্পাদকের পদ গ্রহণ করেন এবং মারকে রাজনৈতিক কলামিস্ট হিসেবে থেকে যাওয়ার অনুরোধ করেন। মার পরবর্তীতে উল্লেখ করেন যে কেলনার তার "পছন্দের মানুষ ছিলেন না" এবং তিনি ১৯৯৮ সালের মে মাসে সর্বশেষবারের মত দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট ত্যাগ করেন।
এরপর মার ডেইলি এক্সপ্রেস এবং দ্য অবজার্ভার পত্রিকার কলামিস্ট হিসেবে কাজ করতেন। ২০০০ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিবিসি টু তে একটি তিন পর্বের টেলিভিশন সিরিজ উপস্থাপন করেন যার পরে 'The Day Britain Died' (২০০০) নামে একটি বই প্রকাশিত হয়। মারের অন্যান্য প্রকাশনার মধ্যে My Trade: A Short History of British Journalism (২০০৪) বইটিও উল্লেখযোগ্য।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Andrew Marr to return to BBC Sunday show after stroke"। BBC। ২৮ জুলাই ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০১৩।