অতিমা শ্রীবাস্তব

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

অতিমা শ্রীবাস্তব (জন্ম ১৯৬১, ভারতের মুম্বাই) হলেন একজন লেখক এবং পরিচালক, যিনি লন্ডনে থাকেন। তিনি ছোট গল্প লিখেছেন, দুটি বই লিখেছেন এবং একাধিক চলচ্চিত্র পরিচালনা ও সম্পাদনা প্রকল্পে কাজ করেছেন। অতিমা শ্রীবাস্তব চলচ্চিত্র এবং সাহিত্যে তাঁর কাজের জন্য বেশ কয়েকটি পুরস্কার জিতেছেন। তিনি ইউরোপ জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে সৃজনশীল লেখার কার্যক্রম শেখান এবং তৈরি করেন।[১]

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা[সম্পাদনা]

অতিমা শ্রীবাস্তব ১৯৬১ সালে ভারতের মুম্বাইতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আট বছর বয়সে, তিনি নিজের পরিবারের সাথে লন্ডনে চলে আসেন, যেখানে তিনি আজও থাকেন।

অতিমা শ্রীবাস্তব ১৯৭০-এর দশকে মোট মাউন্ট স্কুলে পড়াশোনা করেছেন, যেটি বর্তমানে মিল হিল কাউন্টি হাই স্কুল নামে পরিচিত। ১৯৮০ সালে তিনি এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন যেখানে তিনি ১৯৮৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।[২]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

লেখা[সম্পাদনা]

অতিমা শ্রীবাস্তব ১৯৯২ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস ট্রান্সমিশন লেখেন। আধা-আত্মজীবনীমূলক গল্পটি অ্যাঞ্জি নামে একজন তরুণ অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান মহিলাকে অনুসরণ করে লেখা, যিনি অনেকটা অতিমা শ্রীবাস্তবের মতোই, একজন চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসাবে কাজ করেন। বইটি অ্যাঞ্জির সাথে তার পুরানো ধাঁচের এবং কর্তৃত্ববাদী ভারতীয় দম্পতি বাবা-মায়ের সাথে সম্পর্কের উপর আলোকপাত করে। এচড়াও আছে লোল এবং কাথি যে দুজন হলো এইচআইভি পজিটিভ দম্পতি এবং যাদের সম্পর্কে তিনি একটি তথ্যচিত্র তৈরি করতে চান এবং যাদের সাথে তাঁর একটি আবেগপ্রবণ সম্পর্ক রয়েছে। আধুনিক লন্ডনে ভারতীয় সংস্কৃতি ও জীবনধারার হস্তান্তরণ এবং যৌনবাহিত রোগের সংক্রমণ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের হস্তান্তরণ নিয়ে বইটির পরীক্ষা থেকে বইয়ের শিরোনাম এসেছে।

২০০০ সালে অতিমা শ্রীবাস্তব তাঁর দ্বিতীয় বই লুকিং ফর মায়া প্রকাশ করেন। গল্পটি আরেক তরুণ অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ান মহিলা মীরার কথা বলে, যে লন্ডনে লেখক হিসেবে কাজ করে। আত্মপরিচয়, প্রেম, ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার সমস্যাগুলি কাটিয়ে উঠতে বাধ্য হয় মীরা কারণ সে একটি রোমান্টিক জট থেকে অন্য একটিতে যাবার সময় অর্থ খোঁজার চেষ্টা করে।[২] উভয় উপন্যাসেই প্রধান চরিত্র রয়েছে, যারা জাতীয়তা এবং সংস্কৃতির উপর অস্তিত্বের সঙ্কটে না গিয়ে চরিত্রদের জীবনের ছোটখাটো ঘটনা এবং তাদের সম্পর্কের ওপর মনোযোগ দেয় আরো বৃহত্তর প্রেম, সাফল্য এবং সুখের খোঁজে।[৩]

অতিমা শ্রীবাস্তব বেশ কিছু ছোটগল্পও লিখেছিলেন যেগুলি নিউ রাইটিং ২০০১, ওয়েল-সর্টেড এবং ট্রান-লিট- এর মতো সংকলনে প্রকাশিত হয়েছে।

তাঁর তৃতীয় উপন্যাস ইট টেকস আ গার্ল প্রকাশিত হয়েছে ২০২৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি। এটি পেপারব্যাক এবং কিণ্ডলে সংস্করণে অ্যামাজনে উপলব্ধ।

"যখন একজন গ্যাংস্টারকে (গুণ্ডাদলের লোক) উত্তর লন্ডনের একটি শান্তিপূর্ণ এশিয়ান পাড়ায় ছোটো নদীর মধ্যে ভাসতে দেখা যায়, তখন একটি পরিবারের কলঙ্কজনক গোপনীয়তা বিস্ফোরিত হবার অবস্থায় আসে। ১৯ বছর বয়সী শানি মুখোমুখি হয় এমন একটি পরিস্থিতির, যা সবকিছু ধ্বংস করার হুমকি দেয়: তার ভাইয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যত, তার মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য এবং পরিবারের দাগহীন খ্যাতি। ভুল শুধরে নেওয়ার প্রয়াসে সে তার জীবনের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি নেয়। এতে কি ঋণ মিটবে?" অতিমা শ্রীবাস্তবের লেখার শৈলীতে স্পর্শের লঘুতা গল্পের উত্তেজনাপূর্ণ ও ভয়ঙ্কর চড়াই উৎরাইয়ের সম্পূর্ণ বিপরীত –এটি ইট টেকস এ গার্ল উপন্যাসকে একটি আড়ম্বরপূর্ণ মনস্তাত্ত্বিক নোয়ার থ্রিলার (অপরাধমূলক চলচ্চিত্র বা কথাসাহিত্যের একটি ধারা যা নিন্দাবাদ, নিয়তিবাদ এবং নৈতিক অস্পষ্টতা দ্বারা চিহ্নিত।) বানিয়েছে।

তাঁর চতুর্থ এবং সর্বশেষ উপন্যাস ডার্ক ওয়াটারস এখন অ্যামাজনে লাইভ রয়েছে, পেপারব্যাক এবং কিণ্ডলে, ২০২৩ সালের ৮ই জুন প্রকাশিত হয়েছে।

"কাব্য শর্মার সবই আছে। অপ্রাপ্ত সুবিধা এবং সুদীর্ঘ পা, একটি ভাল পরিবার, একটি সমুদ্র সৈকত বাড়ি এবং একটি প্রেমময় স্বামী কিন্তু তারও একটি দীর্ঘস্থায়ী মদ্যপান সমস্যা রয়েছে এবং এটি সম্পর্কে বলা হলে সে অসন্তুষ্ট হয়। নিজের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে সে একটি আকারহীন পৃথিবীতে সর্পিল হয়ে যায়, যে পৃথিবীতে তারাই বসবাস করে যাদের সে মনে মনে খুন করতে চায়।"

চলচ্চিত্র এবং থিয়েটার[সম্পাদনা]

১৯৮৫ সাল থেকে, অতিমা শ্রীবাস্তব একজন চলচ্চিত্র সম্পাদক এবং পরিচালক হিসাবে কাজ করেছেন। ১৯৯৩ সালে তিনি মুভিং পিকচার্স নামে একটি টিভি তথ্যচিত্র তৈরি করতে সাহায্য করেন, যে তথ্যচিত্রটি বৈশ্বিক সিনেমার রিপোর্টিং সাংবাদিকতার একটি সিরিজ।[৪] এছাড়াও তিনি তিনটি টিভি-চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখেছেন, চ্যানেল ৪ এর জন্য ডান্সিং ইন দ্য ডার্কদ্য লিজেণ্ডারি ভিন্দালু এবং বিবিসির জন্য ক্যামডেন স্টোরি। এছাড়াও, ন্যাশনাল থিয়েটার কোম্পানি তাঁকে হোয়াই নট লাভ? শিরোনামের একটি নাটক লেখার জন্য নিযুক্ত করে। এটি ২০০১ সালে প্রিমিয়ার হয়েছিল।[১]

শিক্ষাদান[সম্পাদনা]

অতিমা শ্রীবাস্তব ব্রিটিশ এবং ইউরোপীয় উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রভাষক এবং পাঠ্যক্রম ডিজাইনার হিসাবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কাজ করেছেন। ২০০০ সালে তিনি নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি-লন্ডন প্রোগ্রামে প্রভাষক হিসেবে কাজ করেন যেখানে তিনি সৃজনশীল লেখা শেখান। সিএপিএ ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনে তিনি সৃজনশীল লেখার পাশাপাশি রাইটিং দ্য সিটি নামে একটি কোর্স শেখান। তিনি আইইএস অ্যাব্রড-এ ২০০২ এবং ২০০৭ সালের মধ্যে বিভিন্ন লেখা ও চলচ্চিত্র কৌশল এবং উন্নয়ন কোর্স শেখান। ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি গ্রিনিচ বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃজনশীল লেখা শিখিয়েছেন।[২] তাঁর বইগুলি পোল্যান্ড, স্পেন এবং রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়ানো হয়েছে।

এছাড়াও তিনি সিঙ্গাপুর বিশ্ববিদ্যালয়, বুলগেরিয়ার সোফিয়া, মুম্বাই, বার্ন, কোলন, মেইনজ, সিউলের ইওয়া, কানেকটিকাট কলেজ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) এবং ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্রিটিশ নিবাস-লেখক ছিলেন।[৫]

পুরস্কার[সম্পাদনা]

অতিমা শ্রীবাস্তব চলচ্চিত্র ও সাহিত্যের জন্য বেশ কিছু পুরস্কার জিতেছেন। তিনি ১৯৯৪ সালে তাঁর ড্রাগনস ইন ই৮ ছোট গল্পের জন্য ব্রিজপোর্ট শর্ট স্টোরি প্রাইজ জিতেছিলেন। তিনি দুটি আর্ট কাউন্সিল রাইটার্স অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন, একটি ১৯৯৮ সালে তাঁর লুকিং ফর মায়া বইয়ের জন্য এবং অন্যটি ২০০০ সালে তাঁর অপ্রকাশিত তৃতীয় বইয়ের জন্য। এছাড়াও ২০০০ সালে তিনি হাথর্নডেন ফেলোশিপ পেয়েছিলেন এবং লন্ডন লেখক প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত পর্বে উঠেছিলেন।[২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Atima Srivastava"। Paddyfield.com.hk। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৬-০৩ 
  2. British Council (২০১৪-০৫-১৯)। "Atima Srivastava | British Council Literature"। Literature.britishcouncil.org। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৬-০৩ 
  3. "Atima Srivastava Author of Transmission (90s),Books,Bio,Short Stories, Novels, Read Books of Atima"। Atimasrivastava.bookchums.com। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৬-০৩ 
  4. "Atima Srivastava"IMDb 
  5. "London Faculty | FIE: Foundation for International Education"। FIE। ২০১৪-০২-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৬-০৩ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]