রাজিমতি
রাজীমতী ছিলেন কৃষ্ণের ভ্রাতুষ্পুত্র দ্বাবিংশ তীর্থঙ্কর নেমিনাথের স্ত্রী এবং উগ্রসেন নামক রাজার কন্যা। জৈনধর্মে অন্যতম সতী নারী হিসেবে খ্যাত রাজীমতী।[১]
রাজীমতী ও নেমিনাথের সম্পর্ক
[সম্পাদনা]নেমিনাথ তখনও তীর্থঙ্কর হননি। তখন তাঁর নাম অরিষ্টনেমি। তিনি অত্যন্ত বলশালী ও সুবিন্যস্ত শরীরযুক্ত ছিলেন। তিনি রাজীমতীকে বিয়ে করতে চাইলে রাজীমতীর পিতা উগ্রসেন জানান, অরিষ্টনেমি পূর্বে উগ্রসেনের বাড়িতে আসুক, তাহলে তিনি তাঁর কন্যা প্রদান করবেন। সেই কারণেই তিনি রাজীমতীকে বিয়ে করতে তাঁর বাড়ির দিকে অগ্রসর হন। বলা যেতে পারে, রাজীমতীকে বিয়ে করতে গিয়েই নেমিনাথের সংসারের প্রতি বিরাগ জন্মায়। যখন তিনি বিয়ের মণ্ডপের দিকে যাচ্ছিলেন, রাস্তার পাশে দেখেন বেশ কিছুকে প্রাণীকে আবদ্ধ করে রাখা আছে। খবর নিয়ে তিনি জানলেন, ঐ সব প্রাণীকে হত্যা করে সেদিনের বিয়ের অনুষ্ঠানে মাংস রান্না করা হবে ও সকল অতিথিকে খেতে দেওয়া হবে। নেমিনাথের মাথায় চিন্তা জন্মায়, তিনি বিয়ে করছেন বলেই এতগুলো পশুকে হত্যা করা হবে। এই চিন্তায় বিহ্বল হয়ে তিনি বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রাণীহত্যার পাপ থেকে নিজেকে বাঁচাতে তিনি বিয়ের মণ্ডপ ত্যাগ করেন, এমনকি সংসার ত্যাগ করে তখনই ভিক্ষু জীবন অবলম্বন করেন। রাজীমতীও স্বামী নেমিনাথকে অনুসরণ করে সংসার ত্যাগ করেন ও ভিক্ষুণী সংঘে যোগ দেন। রাজীমতী এই চিন্তা করেছিলেন যে, যেহেতু তিনি নেমিনাথের দ্বারা পরিত্যক্তা, তাই তাঁর প্রবজ্যা গ্রহণ করাই শ্রেয়।
সতীত্ব রক্ষা
[সম্পাদনা]এক সময় নেমিনাথ, তাঁর ভাই রথনেমি ও রাজীমতী--তিনজনে গীর্ণার পর্বতে তপস্যায় রত ছিলেন। সেই সময় নেমিনাথের ভাই রথনেমি ভ্রাতৃবধূর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন। রাজীমতী তখন তপস্যায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। রথনেমির কামলোলুপতা থেকে নিজেকে বাঁচাতে রাজীমতী সাহসিকতার পরিচয় দেন। দশ বৈকালিক সূত্রে (২.৭-১১) আছে, রাজীমতী সাহসের সঙ্গে রথনেমিকে বলেন যে, রথনেমি অপরের উদ্গীর্ণ বমন লেহন করার জন্য উদ্যত হয়েছেন। উত্তরাধ্যয়ন সূত্রে এই অংশটি এইরূপ, একদিন নেমিনাথকে বন্দনা করার জন্য রাজীমতী রৈবতক পর্বতে যেতে যেতে বৃষ্টিতে ভিজে যান ও একটি পর্বতগুহায় আশ্রয় নেন। ভেজা যাওয়া পোশাক শুষ্ক করার জন্য বস্ত্রটিকে শরীর থেকে কিছুটা উন্মুক্ত করেন। সেই গুহাতেই ছিলেন রথনেমি। রথনেমি রাজীমতীকে এইভাবে নির্বস্ত্র অবস্থায় দেখে কামোত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং তাঁকে পতি হিসেবে গ্রহণ করার কথা জানান। সেই কথাতে এতটুকু বিচলিত না হয়ে রাজীমতী উক্ত মন্তব্য করেছিলেন। সেইসঙ্গে সংযত জীবন পালন করার নির্দেশ দেন। বলেন, রাখাল বা ভাণ্ডারী যেমন তাঁদের অধীনে রক্ষিত গোমহিষাদি বা ধন রত্নাদির অধিকারী হয় না, কেবল রক্ষক হিসেবেই থাকে, তেমনি রথনেমিও সাধুধর্মের বেশধারক হয়েই থাকবে, মোক্ষরূপ ফলের অধিকারী হবে না।[২]
জৈন ধর্মশাস্ত্রে সুপ্রাচীন উত্তরাধ্যয়ন-সূত্রে একটি লোকগীতিতে রথনেমি ও রাজীমতীর কাহিনি আছে। ভারতবর্ষের সতীত্বের একটি উজ্জ্বল আদর্শ চরিত্র এই রাজীমতী।