দেঝুর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

দেঝুর হল কাশ্মীরি হিন্দু বধূদের দ্বারা পরিধান করা একটি অলঙ্কার। তারা বিবাহের পবিত্র বন্ধনের আগের দিন থেকে এটি পরিধান করে। গয়নাটি লাল সুতো দিয়ে কান থেকে ঝুলিয়ে রাখা হয় এবং পরে লাল সুতোটি একটি সোনার চেইন দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়, যাকে বলা হয় আঠ। এটি তার স্বামীর বাড়ির থেকে করা হয়। আথুর, যেটি একটি ছোট সোনার অলঙ্কার, সেটি দেঝুরের সাথে যুক্ত করা হয়। দেঝুর যন্ত্রের একটি প্রতীকী রূপ দান করে, এটি বোঝায় শিব এবং মহাশক্তিকে[১][২]

দেঝুর এখন আর প্রচলিত নেই এবং খুব অল্প সংখ্যক কিছু কারিগরই এটি পুনরায় তৈরি করতে পারে।

পরম্পরা[সম্পাদনা]

এই অলঙ্কারটি মা তাঁর মেয়েকে দেন, মেয়ের দেবেগোয়াঁর দিন। এই প্রথা বংশ পরম্পরায় চলতে থাকে। এই অনুষ্ঠানটি সাধারণত প্রকৃত বিয়ের অনুষ্ঠান অর্থাৎ লগন এবং ফেরার এক দিন আগে অনুষ্ঠিত হয় - এবং এই অনুষ্ঠান দেবতাদের জন্য একটি আমন্ত্রণ বোঝায়৷[৩]

গঠন[সম্পাদনা]

দেঝুর তৈরি হয় সোনা দিয়ে। এটি সর্বদা ষড়ভুজ (ষটকোন) আকৃতির হয়। এর কেন্দ্রে একটি বিন্দু (চুন্নে) থাকে। বিশ্বাস করা হয় এটি একটি যন্ত্র (ভারতীয় ধর্মে দেবতাদের উপাসনার জন্য যন্ত্র ব্যবহৃত হয়) এবং এটি শিব ও মহাশক্তিকে বোঝায়। এই যন্ত্র, দেঝুর, কানের উপরের ভাগের তরুণাস্থির ছিদ্র থেকে ঝুলে থাকে। সর্বদা প্রথমে বাম কানে আগে দেঝুর পরানো হয় এবং তারপর ডান কানে পরানো হয়। প্রথমে, দেবেগোয়াঁর দিনে, শুধুমাত্র একটি লাল সুতো ব্যবহার করে দেঝুর পরানো হয়, সুতোটিকে বলা হয় নৈরওয়ান।[৩][৪]

প্রথা[সম্পাদনা]

পরের দিন, লগন অনুষ্ঠানের পর, অর্থাৎ বিবাহ সম্পন্ন হবার পর, নববধূর শ্বশুর-শাশুড়ি তাকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যায়, দেঝুর পরানো লাল সুতোটি সরিয়ে তাকে আঠ দিয়ে প্রতিস্থাপন করে। এটি সোনার চেইন বা সাধারণ সোনার বা রুপোর রঙের (সুলমা/টিল্লা) সুতো। শ্বশুরবাড়ির লোকজন এর সাথে আথুর যোগ করে। সেটি হল - আঠে একটি নকশা গিঁট বাঁধা হয় বা সোনার অলঙ্কারের একটি ছোট টুকরা যোগ করা হয় – দেঝুরের নীচের প্রান্তে। এইভাবে একটি খুব প্রতীকী উপায়ে যন্ত্র সম্পূর্ণ করা হয়। তাই পরের দিন, অন্য একটি রীতির অংশ হিসেবে, যখন নববধূ তার স্বামীকে নিয়ে তার মায়ের বাড়িতে যায়, সে তখন দেঝুর, আথুর এবং আঠের একটি সম্পূর্ণ সেট পরিধান করে থাকে।[৩]

ঐতিহ্য[সম্পাদনা]

কাশ্মীরি পণ্ডিত বংশের নারীদের চিনতে পারার অন্যতম সেরা উপায় দেঝুর, আথুর এবং আঠ। এটি হয় তাদের কান থেকে ঝুলে থাকে অথবা তারা 'আঠ'কে ভাঁজ করে এবং একটি সাধারণ চুলের কাঁটা ব্যবহার করে চুলে বেঁধে রাখে। আজকের মূল সমস্যাটি হল যে কেউ এইভাবে কানে সোনা ঝুলিয়ে রাস্তায় নিরাপদে হাঁটতে পারে না।[৩]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Simran Kaur , Amita Walia, Simran Kaur , Amita Walia; TJPRC (২০১৮)। "Significant Rituals of Kashmiri Pandits, A Perspective" (পিডিএফ)International Journal of Textile and Fashion Technology (ইংরেজি ভাষায়)। 8 (4): 11–18। আইএসএসএন 2250-2378ডিওআই:10.24247/ijtftaug20183অবাধে প্রবেশযোগ্য। ১০ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০২২ 
  2. Kanyal, Jyoti (১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০)। "Fashion Friday: Breaking down the Kashmiri Pandit look from Shikara" (English ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  3. "Dejhoor, Athoor and Atah"SEARCHKASHMIR। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০২২ 
  4. "Dejhoor"। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০২২  অজানা প্যারামিটার |1= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |2= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)