বিষয়বস্তুতে চলুন

ব্যবহারকারী:EesaAhmadIshaque

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সিংহ-মানব ও মেষ-ভাস্কর্যের রাজপথ

[সম্পাদনা]

মিশরের লুক্সর শহরের একটি প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক রাস্তা (আরবিঃ طريق الكباش) (ইংরেজিঃ Avenue of Sphinxes or The King’s Festivities Road)‏ (ফরাসিঃ Allée des sphinx) যা Rams Road (طريق الكباش) নামেও পরিচিত। রাস্তাটি প্রায় ৩,৫০০ কারো কারো মতে ৪,০০০ বছরের পুরানো, 2.7 কিঃমিঃ দীর্ঘ, 250-ফুট বা প্রায় 75 মিটার প্রশস্ত যা কার্নাক উপাসনালয়কে এবং লুক্সর উপাসনালয়ের সাথে সংযুক্ত করে, প্রাচীন ধর্মীয় শহর 'মাদিনাতু তীবাহ' বা থিবেসে আবিষ্কৃত হয়েছিল। সিংহ-মানব ও মেষ-মাথার ভাস্কর্যে রাস্তার দুই পাশ সারিবদ্ধ। স্ফিংস বা সিংহ-মানব ভাস্কর্য (أبو الهول) একটি মিসরীয় পৌরাণিক প্রাণীর মূর্তি, যা গীজার পিরামিডের প্রস্থান্মুখে পাথরে খোদাই করা একটি শক্তিশালী স্মৃতিস্তম্ভ, এর দেহটি দেখতে সিংহের মতো আর মাথাটি মানুষের মতো।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

র‍্যামস রোড বা স্ফিংক্স অ্যাভিনিউয়ের নির্মাণ শুরু হয়েছিল ফিরাউনিক রাজত্বের নতুন যুগে। ৩০তম রাজবংশের শাসক নেকটেনেবো (৩৮০-৩৬২ খ্রিস্টপূর্ব) এর রাজত্বকালে সম্পন্ন হয়েছিল, কিন্তু রাস্তাটি বহু শতাব্দী ধরে বালির স্তরের নীচে চাপা পড়েছিল।

১৯৪৯ সালে মিশরীয় প্রত্নতাত্ত্বিক মোহাম্মদ জাকারিয়া ঘোনিম লুক্সর মন্দিরের কাছে আটটি মূর্তি আবিষ্কার করার সময় এভিনিউটির প্রথম চিহ্ন পান। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত আরও ১৭ টি মূর্তি পাওয়া গিয়েছিল এবং ১৯৬১ থেকে ১৯৬৪-এর মধ্যে আরও ৫৫ টি খুঁজে পাওয়া যায়। সবগুলির খনন কার্য ২৫০ মিটার পরিধির মধ্যেই ছিল।

১৯৮৪ থেকে ২০০০ পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রমের পর, পুরো পথটি অবশেষে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছিল। রাস্তাটির প্রকৃত উন্মোচনের জন্য খননকারীদের হাতে সম্পূর্ণ ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু কাজটি এতটাই কঠিন ছিল যে, পথটি নতুনভাবে তৈরি করতে অনেক অবৈধ স্থাপনা ধ্বংস করতে হয়েছিল।

মেষ-মাথার ভাস্কর্য রোড উন্নয়ন প্রকল্পটি সরকারিভাবে প্রথমে ২০০৭ সালে শুরু হয়, পরে ২০১১ সালে বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পুনরায় কাজ শুরু করে সম্পন্ন করা হয়।

বিবরণ

[সম্পাদনা]

র‍্যামস রোডটি মাঝ বরাবরে একটি পাথরের ফুটপাথ দিয়ে গঠিত। যার দু'পাশে সারিবদ্ধ প্রায় ১,৩০০ টি মূর্তি রয়েছে, যার মধ্যে কতিপয় সম্পূর্ণ রাম ছাগল বা মেষাকৃতির, আর কতগুলো সিংহের শরীরে মেষের মাথা এবং বাকিগুলো সিংহের শরীরে মানুষের মাথা সাদ্শ্য। র‍্যামস রোডটি লুক্সরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিস্তম্ভগুলিকে পরস্পরের মাঝে সংযুক্ত করেছে, এসব ভাস্কর্য গুলো বেলেপাথর দিয়ে খোদাই করা ৷ কার্নাক মন্দির থেকে লুক্সর মন্দির পর্যন্ত রাস্তাটি ২,৭০০ মিটার দৈর্ঘ্যে বিস্তৃত ৷

মেষের রাস্তাটি দেবতাদের শোভাযাত্রার পথ হিসাবে পরিচিত এবং শতাব্দীর পরে শতাব্দিতে সময়ের পরম্পরায় রাস্তাটি ভূগর্ভস্থে বিলীন হওয়ার আগে এটি প্রাচীন মিশরীয় রাজ্যের অষ্টাদশ রাজবংশের যুগ থেকে শুরু করে রানী হাটশেপসুটের রাজত্বকাল পর্যন্ত 'এবেত' উৎসব উদযাপন করার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল।

পথজুড়ে ১,০৫৭ মূল ভাস্কর্য আছে, সেগুলি তিনটি আকৃতিতে বিভক্তঃ

প্রথম ভাগে, সিংহের দেহে মেষের মাথা বিশিষ্ট। এগুলোর এরিয়া নতুন রাজ্যের শাসক তুতানখামুনের শাসনামলে কার্নাক মন্দির থেকে তৎকালীন কবরস্থানের মধ্যের প্রায় 1,000 ফুটের ভিতরে।

দ্বিতীয় ভাগে হল, পরিপূর্ণ মেষ ভাস্কর্যের। যা নির্মিত হয়েছিল অষ্টাদশ রাজবংশের ৩য় আমেনহোটেপ এর সময় একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেগুলো পরবর্তীতে কর্নাক কমপ্লেক্সে স্থানান্তরিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানেই ছিল।

তৃতীয় ভাগে লুক্সর মন্দিরের সন্নিকটে এক মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত বৃহত্তম অংশটি রয়েছে স্ফিংক্স সমূহের।

সংস্কার এবং জমকালো উদ্বোধন

[সম্পাদনা]

২৫ শে নভেম্বর, ২০২১ মিশরীয় রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির উপস্থিতিতে সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে পুনরুদ্ধারের কাজ শেষ করার পরে, মহা ধুমধামের মধ্যে র‍্যামস রোডটি পর্যটক ও সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এসময় একটি শোভাযাত্রায় ফারাওনিক ঐতিহ্যের পোশাক পরিহিত পেশাদার শিল্পীদের নৃত্য, রং বেরংয়ের আলোক বিচ্ছুরণ, সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা, নীল নদে বৈচিত্রময় নৌকা এবং ঘোড়ার টানা গাড়িতে মিসরীয় যুবক যুবতী নারী পুরুষ সকল শ্রেণী পেশার মানুষের অংশগ্রহণে পুরো অনুষ্ঠানটি অনন্য অসাধারণ হয়েছিল।

অনুষ্ঠানের শুরু থেকেই, তিনটি বিশেষ নৌকা ফ্যারাওনিক শৈলীতে ডিজাইন ও প্রস্তুত করা ছিল। নীল নদের অবারিত বুকে চকচকে আলোর পানিতে ভাসছিল। এই নৌকাগুলি থিবেসের পবিত্র ট্রিনিটির প্রতীক হিসাবে নীল নদে সাজানো হয়েছিল। প্রাচীন সূর্য দেবতা আমুন রা, চাঁদের দেবতা খোনসু এবং মাতৃদেবী মোতকে উৎসর্গ করা ফেরাওনিক-মডেলের তিনটি সোনালী নৌযানকে নিখুঁত উজ্জ্বল সোনা খচিত এবং কালো পোশাকে সজ্জিত পুরুষরা বহন করছিল। প্রাচীনকালে মিশরীয়দের এবেত উৎসব উদযাপনের প্রতীকী আদল অনুকরণ প্রচেষ্টার নামান্তর। পুরোহিতরা বছরে দুবার এই আচার অনুষ্ঠানগুলি সম্পাদন করত, প্রথমটি ফসল কাটার উৎসবে এবং দ্বিতীয়টি রাজার সিংহাসন আরোহণের উৎসবে। এইজন্যই এই রাস্তাকে রাজকীয় শোভাযাত্রার রাজপথ বলা হয়, এটি ইতিহাসের প্রাচীনতম ধর্মীয় আনুষ্ঠানিক রাস্তা।

মিশরীয় রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি শহর ব্যাপী এই প্রদর্শনীতে স্বপরিবারে অংশ নেন। প্রখ্যাত মিশরবীদ জাহী হাওয়াস লুক্সর সাইটটিকে " পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত জাদুঘর, বিশ্বের বৃহত্তম প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চল, যা একাদশ রাজবংশ নামে পরিচিত ২,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে - রোমান সময়কাল পর্যন্ত মিশরের ইতিহাসের বাস্তব নিদর্শন" বলে অভিহিত করেছেন৷