দ্বিতীয় ভেঙ্কটা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দ্বিতীয় ভেঙ্কটা
রাজত্বআনু. ১৫৮৫ – আনু. ১৬১৪ খ্রিষ্টাব্দ
পিতাতিরুমালা দেব রায়

ভেঙ্কটপতি রায় (বা দ্বিতীয় ভেঙ্কটা, জন্ম-১৫৮৫, মৃত্যু- ১৬১৪) ছিলেন শ্রীরঙ্গদেব রায়ের ছোট ভাই (তিরুমালা দেব রায়ের কনিষ্ঠ পুত্র) এবং পেনুকোন্ডা, চন্দ্রগিরি ও ভেলোরের ঘাঁটিসহ বিজয়নগর সাম্রাজ্যের শাসক। তার তিন দশকের রাজত্বে, সাম্রাজ্যের শক্তি ও সমৃদ্ধির পুনরুজ্জীবন দেখা যায়। তিনি বিজাপুর এবং গোলকোন্ডার ডেকান সুলতানদের সফলভাবে মোকাবেলা করেন। তিনি অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা মোকাবেলা, দেশের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি তামিলনাড়ুর বিদ্রোহী নায়েকদের এবং বর্তমান অন্ধ্রপ্রদেশের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণে আনেন।

যুদ্ধসমূহ[সম্পাদনা]

সুলতানদের যুদ্ধ[সম্পাদনা]

১৫৮৮ সালে তিনি গোলকোন্ডা এবং বিজাপুর সালতানাতের সঙ্গে একটি যুদ্ধ অবতীর্ণ হন এবং তার পূর্বসূরিদের দ্বারা পূর্বে হারানো কিছু অঞ্চল দখল করেন।[১] সুলতানদের সম্মিলিত সৈন্যবাহিনী পরীক্ষা করার জন্য রেচারলা ভেলামা রাজবংশের বংশধর কস্তুরীরাঙ্গা নায়েকাকে পাঠানো হয়েছিল। কস্তুরিরাঙ্গা ও তার পুত্র ইয়াচামানেডুর নেতৃত্বে হিন্দু সেনাবাহিনী ধারাবাহিক যুদ্ধ পরিচালনা করে এবং সাফল্য অর্জন করে[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]। বিজয়নগর সেনাবাহিনী থেকে এই যুদ্ধে পালিয়ে যাওয়া মুসলিম সৈন্যরা পেনার নদীর উপরের তীরে তাদের প্রধান সৈন্যদের সাথে যোগ দেয়। ঐতিহাসিকরা বলেন যে, সালতানাতের সেনাবাহিনীর শক্তি ছিল ১,২০,০০০ এরও বেশি এবং তুর্কো-আফগান বন্দুকধারীরা তাদের সাথে ছিল। কস্তুরিরাঙ্গা উত্তর দিকে সাম্রাজ্যবাদী সৈন্যদের নেতৃত্ব দেন এবং পেনার নদীর উপরের তীরে সরাসরি শত্রুর সাথে মোকাবেলা করেন।

৮ ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলতে থাকে। সুলতানি সেনাবাহিনীর আর্টিলারি ইউনিট বিজয়নগর এলাকায় বিপর্যয় সৃষ্টি করে, কিন্তু ইয়াচামা তার বাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখে এবং কঠোরভাবে আক্রমণের চাপ প্রতিহত করে। দিনের শেষে বিজয়নগরের সাহসী ও জ্ঞানী সেনাপতি পেনার যুদ্ধে জয়লাভ করেন এবং সুলতানদের সবচেয়ে সক্ষম সেনাপতি রুস্তম খান ও খসিম খানসহ গোলকোন্ডা ও বিজাপুরের ৫০,০০০ এরও বেশি সৈন্যকে হত্যা করা হয়। সাম্রাজ্যবাদী বাহিনী তাদের শত্রুদের গোলকোন্ডা অঞ্চলে নিয়ে যায়। কিন্তু রাজার অভিজাতদের মধ্যে ঝগড়ার ফলে গোলকোন্ডার উপর আর আক্রমণ সংঘটিত হয়নি। এরপর তার উত্তরে আলিয়া রাম রায়ের কিছু বংশধর সহ তার বেশ কয়েকজন প্রধান তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, কিন্তু তিনি সফলভাবে তাদের দমন করেন।

নায়েক বিদ্রোহ[সম্পাদনা]

গিঞ্জির নায়েক[সম্পাদনা]

১৫৮৬ সালে গিঞ্জির নায়েক ভেঙ্কটপতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন, যিনি তাকে বন্দী করেন এবং তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন। এবং তখনই শুধুমাত্র মুক্তি পান যখন তানজোরের রঘুনাথ নায়েক তার পেনুকোন্ডা অভিযানে ভেঙ্কটাপতিকে সাহায্য করেন।

কারাগারে থাকাকালীন সময়ে, গিঞ্জি আরেকজন ভেঙ্কটা দ্বারা শাসিত হয়, যাকে ভেঙ্কটপতি রায় দ্বারা তার বিরুদ্ধে পাঠানো হয়।

ভেলোরের নায়েক[সম্পাদনা]

১৬০১ সালে আর্কট ও চেঙ্গেলপেটের ভাইসরয়ের নেতৃত্বে আরেকটি অভিযানে, ইয়াচামানেদু, ভেলোরের নায়েক লিঙ্গামা নায়কের নেতৃত্বাধীন একটি বিদ্রোহ দমন করেন। পরবর্তীতে ভেলোরের লিঙ্গামা নায়েক পরাজিত হন এবং ভেলোর দুর্গ ভেঙ্কটপতি রায়ের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আসে। ইয়াচামানেডুর নেতৃত্বে আরেকটি অভিযান মাদুরাই নায়েকের রাজ্যে পরিচালিত হয়, যা বিদ্রোহী নায়কদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করে।

রাজধানী স্থানান্তর[সম্পাদনা]

১৫৯২ সাল নাগাদ, ভেঙ্কটাপতি তার রাজধানী পেনুকোন্ডা থেকে চন্দ্রগিরিতে স্থানান্তরিত করেন, যা তিরুপতি পাহাড়ের কাছে আরও দক্ষিণে ছিল। ১৬০৪ সালের পর তিনি চন্দ্রগিরি থেকে ভেলোর দুর্গে রাজধানী স্থানান্তর করেন। এই দুর্গটি একটি প্রধান ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

রেনেসাঁ[সম্পাদনা]

তার সাম্রাজ্যের উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলিতে সহজ শর্তের করের ধার্য করেন এবং কৃষিকে পুনরুজ্জীবিত করেম্লন। এ অঞ্চল প্রায়ই আক্রমণকারী সুলতান দ্বারা পরিচালিত হতো। গ্রাম প্রশাসনের পদক্রম ঠিক করা হয় এবং বিচার ব্যবস্থা কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয়।

ওলন্দাজদের আগমন[সম্পাদনা]

১৬০৮ সালে ওলন্দাজরা (যাদের ইতোমধ্যে গোলকোন্ডা এবং জিঞ্জি অঞ্চলে ব্যবসা ছিল) পুলিকাটে একটি কারখানা স্থাপনের অনুমতি চায়। ইংরেজরাও পুলিকাট থেকে ওলন্দাজদের মাধ্যমে বাণিজ্য করা শুরু করে। ১৫৮৬ সাল থেকে ভেঙ্কটপতি রায়ের প্রিয় রাণী গব্বরী ওবাইয়ামাকে, চন্দ্রগিরির নতুন রাজধানী থেকে পুলিকাট শাসন করতে দেওয়া হয়।[২] তিনি পর্তুগীজ জেসুইটদের জন্য পুলিকাটে একটি বাসভবন নির্মাণে সাহায্য করেন।

উত্তরাধিকারী[সম্পাদনা]

বেশ কয়েকজন রাণী থাকা সত্ত্বেও ভেঙ্কটপতির কোনো পুত্র ছিল না, তাই তার বড় ভাই রামের পুত্র দ্বিতীয় শ্রীরঙ্গকে তার উত্তরসূরি হিসেবে নিযুক্ত করেন। এটা করা হয়েছিল তার অন্যতম প্রিয় রাণী বায়াম্মাকে প্রতিরোধ করার জন্য, যিনি তার ব্রাহ্মণ দাসীর এক শিশুকে ধার করে রাজার বিরুদ্ধে জালিয়াতি রচনা করেছিলেন এবং একে তার নিজের পুত্র বলে অভিহিত করেছিলেন। যদিও রবার্ট সুয়েল তার বইতে উল্লেখ করেন যে, প্রথম ভেনকাটার (অচিউতা দেব রায়ের পুত্র) ভাগ্নীর বিয়ে থেকে জন্ম নেয়া শিশুকে প্রাসাদে গোপনে আনা হয়। শিশুটি ব্রাহ্মণ ছিল, যাকে রাজা ভেঙ্কটের পুত্র মনে করে প্রসাদে রাখা হয় এবং শিক্ষিত করা হয়।

ভেঙ্কটপতি রায়, তথাকথিত উত্তরাধিকারীর বিতর্কিত মর্যাদা জেনে, তার ভাই রামের পুত্র দ্বিতীয় শ্রীরঙ্গকে তার উত্তরসূরি হিসেবে নিযুক্ত করেন।

ভেঙ্কটপতি রায় ১৬১৪ সালের অক্টোবর মাসে মারা যান, এবং দ্বিতীয় শ্রীরঙ্গ তার স্থলাভিষিক্ত হন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Nayaks of Tanjore by V. Vriddhagirisan p.47
  2. "The Madras Tercentenary Commemoration Volume"Googlebooks.com। Asian Educational Services। ১৯৯৪। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ৪, ২০১৭