মারিয়া ক্লারা আইমার্ট

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মারিয়া ক্লারা আইমার্ট (জার্মান: Maria Clara Eimmart, ২৭শে মে, ১৬৭৬ – ২৯শে অক্টোবর, ১৭০৭) একজন জার্মান জ্যোতির্বিদ, খোদাইকার ও নকশাবিদ ছিলেন। তিনি জার্মান শিল্পী গেয়র্গ ক্রিস্টফ আইমার্ট (কনিষ্ঠ)-এর কন্যা ও সহকারী ছিলেন।[১]

জীবন[সম্পাদনা]

মারিয়া ক্লারা আইমার্ট জার্মানভাষী অঞ্চলের নুরেমবের্গ নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন।[১] তাঁর বাবা গেয়র্গ ক্রিস্টফ আইমার্ট (কনিষ্ঠ) একাধারে চিত্রকর, খোদাইকার ও শৌখিন জ্যোতির্বিদ ছিলেন। গেয়র্গ আইমার্ট ১৬৯৯ থেকে ১৭০৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নুরেমবের্গ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির পরিচালক ছিলেন, যার নাম ছিল "মালার আকাডেমিয়ে" (Malerakademie)।.[২][৩][৪] মারিয়ার পিতামহ গেয়র্গ ক্রিস্টফ আইমার্ট (জ্যেষ্ঠ)-ও একজন খোদাইকার ও চিত্রকর ছিলেন। এছাড়া তিনি প্রতিকৃতি, ফুলফল (নিশ্চল জীবন), ভূপ্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি ও ঐতিহাসিক বিষয়বস্তুর উপরে চিত্র অঙ্কন করতেন৷[৫]

মারিয়া ক্লারা আইমার্টের বাবার পেশা লাভজনক হলেও তিনি তাঁর আয়কৃত অর্থের সিংহভাগই জ্যোতর্বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম কিনতে এবং ১৬৭৮ সালে নুরেমবের্গে নগর প্রাচীরের উপরে একটি ব্যক্তিগত মানমন্দির নির্মাণ করতে ব্যয় করেন।[১][৪] তিনি একজন কর্মঠ মহাকাশ পর্যবেক্ষক ছিলেন। তিনি তার পর্যবেক্ষণ ও ফলাফলগুলি বিভিন্ন স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ও বৈজ্ঞানিক পত্রপত্রিকায় প্রকাশ করেন।

সেসময় জার্মানিতে কারিগরি শিল্পকলার ঐতিহ্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তাই মারিয়া ক্লারা আইমার্ট এ সুযোগে তাঁর বাবার অধীনে শিক্ষানবিশ হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন।[৪] বাবার কাছ থেকে ফরাসি ভাষা, লাতিন ভাষা, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, রেখাঙ্কন ও খোদাইকরণের উপরে ব্যাপক শিক্ষা লাভ করেন। খোদাই করার দক্ষতা অর্জন করার পর তিন তাঁর বাবার কাজে সাহায্য করা শুরু করেন। এসময় তিনি চন্দ্রকলা বা চাঁদের বিভিন্ন দশার চিত্র অঙ্কনের জন্য পরিচিতি লাভ করেন।[২] অধিকন্তু তিনি ফুল, পাখি ও অন্যান্য চিরায়ত বিষয়বস্তুও আঁকেন, কিন্তু ঐসব চিত্রের সিংহভাগই হারিয়ে গেছে।[১]

১৭০৬ সালে আইমার্ট ইয়োহান হাইনরিখ ম্যুলারকে বিয়ে করেন। ম্যুলার তাঁর বাবার একজন শিষ্য ছিলেন ও পরবর্তীকালে ১৭০৫ সালে আইমার্ট মানমন্দিরের পরিচালকে পরিণত হন।[৩] এছাড়া ম্যুলার নুরেমবের্গ উচ্চবিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার শিক্ষক ছিলেন, আর মারিয়া একাজে তার সহকারী ছিলেন। ম্যুলার আইমার্ট পরিবারের প্রভাবে নিজেও একজন শৌখিন জ্যোতির্বিদ হিসেবে চর্চা শুরু করেন। তিনি ধূমকেতু, সৌরকলঙ্ক ও চান্দ্র পর্বত আঁকেন, যে কাজে মারিয়া তাঁকে সাহায্য করেন।

বিয়ের মাত্র এক বছর পরে মারিয়া সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন।[১]

জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক চিত্রাবলি[সম্পাদনা]

মারিয়া আইমার্ট নীল কার্ডবোর্ডের পটভূমির উপরে হালকা প্যাস্টেল রঙে বিভিন্ন জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক চিত্র অঙ্কনের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। ১৬৯৩ থেকে ১৬৯৮ সালের মধ্যে তিনি চন্দ্রকলার ৩৫০টিরও বেশি চিত্র অঙ্কন করেন।[১] কেবলমাত্র একটি দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে হাতে আঁকা এই চিত্রগুলির সঙ্কলনটির নাম মিক্রোগ্রাফিয়া স্তেলাররুম ফাসেস লুনায়ে উলত্রা ৩০০। এদের মধ্যে এক ডজন চিত্র তাঁর বাবার বৈজ্ঞানিক সহকর্মী লুইজি ফের্দিনান্দো মার্সিলিকে দেওয়া হয়, যাদের মধ্যে দশটি আজও ইতালির বোলোনিয়া নগরীতে রক্ষিত আছে।[৩] আইমার্টের ধারাবাহিক চিত্রগুলি পরবর্তীতে চাঁদের নতুন একটি মানচিত্রের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।[১]

১৭০৬ সালে আইমার্ট পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের দুইটি চিত্র আঁকেন। এছাড়া তিনি কিছু গ্রহ ও ধূমকেতুর ছবিও এঁকেছিলেন।

চিত্র প্রদর্শনী[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Schiebinger, Londa (১৯৯১)। The mind has no sex? : women in the origins of modern science (1st Harvard pbk. সংস্করণ)। Cambridge, Mass.: Harvard University Pressআইএসবিএন 9780674576254 
  2. Jeffares, Neil। "Maria Clara Eimmart"Dictionary of pastellists before 1800। সংগ্রহের তারিখ ২ জুন ২০১৩ 
  3. eds, Marilyn Ogilvie; Joy Harvey (২০০০)। The biographical dictionary of women in scienceবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজন। New York [u.a.]: Routledgeআইএসবিএন 978-0-415-92038-4 
  4. Bryan, Michael (১৮৮৬)। Dictionary of Painters and Engravers: biographical and critical। London: George Bell and Sons 

গ্রন্থ ও রচনাপঞ্জি[সম্পাদনা]

  • Hans Gaab: Zum 300. Todestag von Maria Clara Eimmart (1676–1707). In: Regiomontanusbote. 20, 4/2007, S. 7–19.
  • Hans Gaab: Maria Clara Eimmart. Eine Nürnberger Astronomin. In: Nadja Bennewitz, Gaby Franger: Geschichte der Frauen in Mittelfranken. Alltag, Personen und Orte. Ars vivendi, Cadolzburg 2003, S. 145–152.
  • Ronald Stoyan: Die Nürnberger Mondkarten. Teil 1: Die Mondkarte von Georg Christoph Eimmart (1638–1705) und Maria Clara Eimmart (1676–1707). In: Regiomontanusbote. 14, 1/2001, S. 29–39.
  • Karl Christian Bruhns (1877) (জার্মানে))। "Eimmart, Georg Christoph"। সাধারণ জার্মান জীবনী (এডিবি)। 5। লাইপ্‌ৎসিশ: ডাঙ্কার ও হামব্লোট। p. 758{{ #if:758 |–758}।
  • Siegmund Günther (1885) (জার্মানে))। "Müller, Johann Heinrich"। সাধারণ জার্মান জীবনী (এডিবি)। 22। লাইপ্‌ৎসিশ: ডাঙ্কার ও হামব্লোট। pp. 583{{ #if:585 |–585}।
  • Adolf Wißner (1959), "Georg Christoph Eimmart", Neue Deutsche Biographie (NDB) (in German) (Berlin: Duncker & Humblot) 4: 394–394, (full text online)

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]