বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন
বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এ.সি.আর) হচ্ছে কোনো সরকারি কর্মচারীর কর্মদক্ষতা মূল্যায়ন করে তার অব্যবহিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার প্রদত্ত প্রতিবেদন। শুধু কর্মদক্ষতা মূল্যায়নই নয়, এতে তার আচরণ, চরিত্র এবং সততা সম্পর্কেও সুনির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করা হয়।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনের রয়েছে দীর্ঘ ও বিচিত্র ইতিহাস রয়েছে। ১৮৩৪ সালের আগে চাকুরিতে জ্যেষ্ঠতা হিসাব করে পদোন্নতি প্রদান করা হতাে, চাকুরিতে যোগদানের তারিখ থেকে বিবেচনা করা হতো। ১৮৩৪ সালের জানুয়ারি মাসের ২৮ তারিখে ইস্যুকৃত গভর্নর জেনারেলের কাউন্সিলের এক আদেশে এর মাধ্যমে এ বিষয়টি পরিবর্তন করা হয়, যাতে বলা হয় যে, শুধুমাত্র জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতেই শূণ্য পদ পূরণ করা হবে না, দক্ষতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচনায় একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে অতিক্রম করে একজন কনিষ্ঠ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদান করা হতে পারে। বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন এ আদেশের ভিত্তিতেই শুরু হয়। সে সময়ে একে বলা হতো ‘ক্যারেক্টর রোলস’। প্রথমে এটি একটি উন্মুক্ত দাপ্তরিক নথি হিসেবে প্রচলিত ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে তা গোপনে সংরক্ষণ করা শুরু হলে সেটি একান্ত গোপনীয় রেকর্ডে পরিণত হয়। পাকিস্তান আমলেও এ প্রথা চালু ছিল।
১৯৭৪ সালে এই ফরম বাংলা ভাষায় প্রকাশিত এবং প্রচলন করা হয়। ১৯৮১ সাল পর্যন্ত এর প্রচলিত ছিল। ১৯৮২ সালে নতুন ধরনের ফরম-১ ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয় এবং তাতে বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন যুক্ত করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ফরমে 'লেখচিত্র' শিরোনামে একটি অংশ সংযোজন করা হয়। এ অংশেটিকে প্রতিবেদনাধীন কর্মকর্তার স্বাক্ষর নেওয়ার বিধান রাখা হয়, যা, এর পরবর্তী ১৯৮৬ সালের ফর্মটি প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে রহিত হয়নি। এই ফর্মটি ১৯৮৩ সালে বাংলায় প্রকাশিত হয় এবং ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত কার্যকর ছিল।
১৯৮৬ সালের ফর্মটিতে এতে ‘সামগ্রিক মূল্যায়ন’ শিরোনামে নতুন একটি অংশ যোগ করা হয়। এই ফর্মটিতে প্রতিবেদনাধীন কর্মকর্তার স্বাক্ষরের বিষয়টি প্রথম রহিত হয়। ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত এই ফর্মটি কার্যকর ছিল।
১৯৯০ সালে এই ফরম পরিবর্তন করা হয়। পরিবর্তিত ফরমটি বর্তমানে কার্যকর রয়েছে।
শ্রেণিবিন্যাসের মানক্রম
[সম্পাদনা]বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন ফরমে কর্মকর্তাদের শ্রেণিবিন্যাসের বিষয়টি নানা সময়ে পরিবর্তিত হয়। ১৯৮২ সালের ফরমে শ্রেণিবিন্যাসের এর মানক্রম ছিল:
- ৯১-১০০:অসাধারণ
- ৮১-৯০: উত্তম
- ৬৫-৮০: উচ্চমান
- ৪৫-৬৪: চলতি মান
- ৩১-৪৪: চলতি মানের নিচে
- ২০-৩০: অসন্তোষজনক
১৯৯০ সাল থেকে বতর্মানে কার্যকর ফরমে এ শ্রেণিবিন্যাস বা গ্রেডিং- এর মানক্রমে পরিবর্তন আনা হয়। পরিবর্তিত হয়ে শ্রেণিবিন্যাসের মানক্রম:
- ৯৫-১০০: অসাধারণ
- ৮৫-৯৪: উত্তম
- ৬১-৮৪: ভাল
- ৪১-৬০: চলতি মান
- ৪০ ও তারনিচে: চলতি মানের নিচে
গুরুত্ব
[সম্পাদনা]বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন অনুযায়ী পদোন্নতি প্রদান করা হয়। এই বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে কারো ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য থাকলে সে অনেক ক্ষতির এবং অনিশ্চয়তায় সম্মূখীন হতে পারে। যেমন:
- চাকুরি স্থায়ীত্ব না হওয়ার সম্ভাবণা দেখা দেওয়া
- সিলেকশন গ্রেড প্রদান বন্ধ হয়ে যাওয়া
- পদোন্নতি স্থগিত হয়ে যাওয়া
- পদায়ন বন্ধ যাওয়া
- বৈদেশিক নিয়োগে বাধাপ্রাপ্ত হওয়া[১]
প্রযোজ্যতা এবং প্রতিবেদনাধীন কর্মকর্তার অধিকার
[সম্পাদনা]নন-গেজেটেড কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন পদ্ধতি প্রযোজ্য, যদিও সেই প্রতিবেদন ফরম গেজেটেড কর্মকর্তাদের থেকে আলাদা। কিন্তু নিম্ন পর্যায়ের অধীনস্থ কর্মচারীদের এটির আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।
গোপনীয় প্রতিবেদনে প্রতিবেদনে বিরূপ কোন মন্তব্য লেখা হলে সেটির কারণে যে কর্মকর্তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন তাকে সে সম্পর্কে জানাতে হয়। অনেক সময় বিরূপ মন্তব্য লেখার পূর্বে তাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়।[১] সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে সেই মন্তব্য সম্পর্কে জবাব দেওয়ার অধিকার প্রদান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে, প্রতিবেদনকারী কর্মকর্তা ঐ জবাব সম্পর্কে মন্তব্য করবেন এবং দপ্তর প্রধান (সাধারণত প্রতিস্বাক্ষরকারী কর্মকর্তা) এই মন্তব্যকে ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত বিরূপ মন্তব্যটি প্রত্যাহার করা হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত। প্রতিবেদনাধীন কর্মকর্তাকে বিরূপ মন্তব্য সম্পর্কে জানানো না হলে তা কার্যকর করা হবে না।[২] বর্তমান ফর্মটিতে প্রতিবেদনাধীন কর্মকর্তার স্বাক্ষরের অধিকারও আছে।