শিবকালী ভট্টাচার্য
শিবকালী ভট্টাচার্য | |
---|---|
![]() শিবকালী ভট্টাচার্য | |
জন্ম | ২৮ আগস্ট ১৯০৮ খুলনা , অবিভক্ত বাংলা, বর্তমানে বাংলাদেশ |
মৃত্যু | ২৮ আগস্ট ১৯৯২ (বয়স ৮৪) কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ ভারত |
পেশা | বিশিষ্ট আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ |
পিতা-মাতা | চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য (পিতা) |
শিবকালী ভট্টাচার্য (ইংরাজী : Shibkali Bhattacharyya) (জন্ম- ২৮ আগস্ট, ১৯০৮ - মৃত্যু- ২৮ আগস্ট, ১৯৯২) আয়ুর্বেদাচার্য উপাধিতে ভূষিত রবীন্দ্র পুরস্কার প্রাপ্ত বিশিষ্ট আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ ।[১]
সংক্ষিপ্ত জীবনী
[সম্পাদনা]শিবকালী ভট্টাচার্য জন্মেছেন অবিভক্ত বাংলার (বর্তমানে বাংলাদেশ) খুলনা জেলায় । পিতার নাম চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য । স্কুলে পড়াশোনার সময় থেকেই গাছপালা নিয়ে চর্চা শুরু করেন। কিন্তু ছাত্রজীবনে অসহযোগ আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন এবং ঘটনাপ্রবাহে প্রথমে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাট অঞ্চলে দন্ডিহাটে কিছুদিন অতিবাহিত করেন । ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে স্থায়ীভাবে কলকাতায় আসেন। অগ্রজ কবিরাজ বিজয়কালী ভট্টাচার্যের উৎসাহে আয়ুর্বেদের প্রতি আকৃষ্ট হন। প্রখ্যাত আয়ুর্বেদবিশেষজ্ঞ শচীন্দ্র বিদ্যাভূষণ, জ্যোতিষ সরস্বতী, হারাণ চক্রবর্তী, গণনাথ সেন, নলিনীরঞ্জন সেন প্রমুখের সান্নিধ্য লাভ করেন । পরবর্তীকালে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ডঃ পি কে বসু, ডঃ অসীমা চট্টোপাধ্যায়, ডঃ বিষ্ণুপদ মুখার্জি, ডঃ এ কে বড়ুয়া, ডঃ বি সি কুন্ডু, ডঃ আর এন চক্রবর্তী প্রমুখ মনীষীবৃন্দের সৌহার্দ্য লাভ করেন তিনি । [২] এঁদের সহযোগিতায় আধুনিক যুগে আয়ুর্বেদশাস্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। শ্যামাদাস বৈদ্যশাস্ত্রপীঠ এবং কলকাতার জে বি রায় স্টেট আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কলেজে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রসায়নবিদ্যার অধ্যাপনা এবং ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ হতে পাঁচ বৎসর ভেষজ বিজ্ঞানে অধ্যাপনা করেন । ওই সময়ে তিনি নিজেও উদ্ভিদবিজ্ঞানের জ্ঞানপিপাসু ছাত্র হয়ে প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিকদের সান্নিধ্যে আসেন । ভেষজ নিয়ে বহু গবেষণা করেছেন আর সেগুলি সুবিশাল গবেষণা-গ্রন্থমালা এগারোটি খণ্ডে 'চিরঞ্জীব বনৌষধি'তে প্রকাশিত হয়েছে । অধ্যাপনার পাশাপাশি আয়ুর্বেদকে জনপ্রিয় করার জন্য কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেছেন, যুগ্মসম্পাদনায় নিজে প্রধান অংশ গ্রহণ করছেন। 'আয়ুর্বেদীয় পরিভাষা পরিক্রমা' নামক এক বিশিষ্ট গ্রন্থের সম্পাদনা করেছেন এবং সেটি পাঠ্যপুস্তক হিসাবে গৃহীত হয়েছে । [২]
'চিরঞ্জীব বনৌষধি' সম্পর্কে
[সম্পাদনা]দেশজসম্পদ ও সংস্কৃতির প্রতি শিবকালীর ছিল অসীম মমত্ববোধ। তার ফলেই প্রবল অনুসন্ধিৎসা নিয়ে আয়ুর্বেদশাস্ত্রকে সমৃদ্ধ করতে দীর্ঘকাল ঘুরে বেড়িয়েছেন এদেশের বনে ও প্রান্তরে। চেনা-অচেনা মূল্যবান বনৌষধি সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছেন তাদের গুণাগুণ। বিভিন্ন চিকিৎসায় তাদের বিজ্ঞানসম্মত প্রয়োগ সম্ভব কিনা - সে বিষয়ে নিজে নিশ্চিত হয়েছেন । তারই সেই নিরলস অন্বেষার ফলশ্রুতি -চিরঞ্জীব বনৌষধি ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সমস্ত জনসাধারণের মঙ্গলার্থে। গ্রন্থমালার ভাষা সাহিত্যরসসম্পৃক্ত, সুললিত ও সহজবোধ্য। বিজ্ঞানের সাথে সাহিত্যরসের সার্থক যোজনা বাংলাসাহিত্যে যেন এক সম্পদ। আর ঠিক সে কারণেই চিরঞ্জীব বনৌষধি বইটির জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার তথা পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি কর্তৃক তিনি ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে সম্মানিত হলেন রবীন্দ্র পুরস্কারে।
অন্যান্য পুরস্কার ও সম্মাননা
[সম্পাদনা]১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ আয়ুর্বেদ পরিষদ অর্থাৎ স্টেট আয়ুর্বেদ ফ্যাকাল্টি বোর্ড তাঁকে 'আয়ুর্বেদাচার্য' এবং দিল্লির শ্রীবিদ্বৎ বৈদ্য পরিষদ 'প্রাণাচার্য' উপাধিতে ভূষিত করে । তিনি এশিয়াটিক সোসাইটির বার্কলে মেডেল এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নরসিংহ দাস আগরওয়ালা পুরস্কার লাভ করেন ।[১]
মৃত্যু
[সম্পাদনা]আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য ৮৪ বৎসর বয়সে ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের ২৮ শে আগস্ট কলকাতায় প্রয়াত হন ।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯, পৃষ্ঠা ৩৮৬, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
- ↑ ক খ আনন্দ পাবলিশার্স কলকাতা প্রকাশিত চিরঞ্জীব বনৌষধি (১ম-১১শ খন্ড) আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭০৬৬-৬১১-০