অস্পৃশ্যতা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কেরালার মালাবারে (উত্তর কেরালা) অস্পৃশ্য জনগণ (১৯০৬)

অস্পৃশ্যতা নিম্নবর্ণের মানুষের একটি সামাজিক মর্যাদা যারা ভৃত্য বা নিচু পেশায় নিয়োজিত। অস্পৃশ্যতা সাধারনত হিন্দু ধর্মের বর্ণভেদ পদ্ধতিতে লক্ষ্য করা যায়। বিংশ শতকের শুরুতে ভারতীয় উপমাহাদেশে অস্পৃশ্যতা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১৬০ মিলিয়নের বেশি ছিল।[১][২][৩][৪] বর্ণ হচ্ছে প্রাচীন হিন্দু সমাজে প্রচলিত একটি সামাজিক বিভাজন ব্যবস্থা, যার উৎপত্তি বেদ। সবচেয়ে প্রাচীন সাহিত্যসূত্র হিসাবে বেদই হচ্ছে সমাজের বর্ণ ব্যবস্থার উৎস। মূলত ব্রাহ্মণীয় দৃষ্টিভঙ্গির উপর প্রতিষ্ঠিত বর্ণ মতবাদ কোন একটি বিশেষ উপলক্ষে সৃষ্টি করা হয়েছিল যা কার্যত অপরিবর্তিত রয়ে যায়। জাতিগত বিশুদ্ধতা বজায় রাখাই হল বর্ণভেদ ধারণা মূল বিষয়। কর্ম অনুযায়ী মানব সমাজের সকল জাতিকে চারটি ভিন্ন ভিন্ন শ্রেনীতে ভাগ করা হয়েছে যথা- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র। ঋগবেদের সূক্তের ভাষ্য অনুযায়ী স্বয়ং ব্রহ্মাই চারটি বর্ণের সৃষ্টিকারী। ব্রহ্মার মুখ থেকে ব্রাহ্মণগণ সৃষ্ট হয়েছেন যাদের কাজ পূজা অর্চনা ও ধর্মীয় শিক্ষাদান। বাহু থেকে সৃষ্ট হয়েছেন ক্ষত্রিয়গণ যাদের কাজ দেশরক্ষা ও রাজ্য পরিচালনা করা। ব্রহ্মার উরু থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে বৈশ্যদের যাদের কাজ ব্যবসা-বাণিজ্য, গো-রক্ষা ও কৃষিকাজ। ব্রহ্মার পা থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে শূদ্রদের যাদের কাজ বাকি তিন বর্ণের মানুষদের সেবা এবং কর্মে সহযোগিতা করা।[৫] এই চার বর্ণের বাইরে আরো একটি বর্ণ আছে। এই পঞ্চম ভাগটি হল অস্পৃশ্য।[৬] যদিও বৈদিক যুগে এই বর্ণ ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে মানুষের কর্ম-গুণের উপর ভিত্তি করতো। ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকার পরিচ্ছেদের ১৭ নং ধারায় অস্পৃশ্যতা কে নিষিদ্ধ ও অপরাধজনক ধরা হলেও বর্তমান ভারতের বহু অঞ্চলে তথাকথিত উচ্চবর্ণের মানুষের দ্বারা অবহেলা অব্যাহত রয়েছে।[৭]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Rita Jalali (২০০০), "CASTE AND INHERITED STATUS", Edgar F. Borgatta; Rhonda J. V. Montgomery, Encyclopedia of Sociology, 1 (2nd সংস্করণ), Macmillan, পৃষ্ঠা 249–255, আইএসবিএন 0-02-864849-8 
  2. Eleanor Zelliot (২০০৫), "UNTOUCHABILITY", Maryanne Cline Horowitz, New Dictionary of the History of Ideas, 6, Thomson Gale, পৃষ্ঠা 2394–2397, আইএসবিএন 0-684-31383-9 
  3. Saurabh Dube (২০০৫), "UNTOUCHABLES, RELIGIONS OF", Lindsay Jones, Encyclopedia of Religion, 14 (2nd সংস্করণ), Thomson Gale, পৃষ্ঠা 9474–9478, আইএসবিএন 0-02-865983-X 
  4. Alf Hiltebeitel (২০০৫), "HINDUISM", Lindsay Jones, Encyclopedia of Religion, 6 (2nd সংস্করণ), Thomson Gale, পৃষ্ঠা 3988–4009, আইএসবিএন 0-02-865739-X 
  5. [১][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]/দৈনিক আমার দেশ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩
  6. Thapar, Romila (২০০৪)। Early India: From the Origins to AD 1300। University of California Press। পৃষ্ঠা 63। আইএসবিএন 978-0-52024-225-8 
  7. Art 17। "Central Government Act"indiankanoon.org। সংগ্রহের তারিখ 7.01.17  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)