ক্রিস্টোফার মার্লো
ক্রিস্টোফার মার্লো Christopher Marlowe | |
---|---|
জন্ম | ২৬ জানুয়ারি, ১৫৬৪ (ব্যাপ্টিজম্-এর তারিখ) ক্যান্টারবেরি, ইংল্যান্ড |
মৃত্যু | ৩০ মে, ১৫৯৩ (২৯ বছর) ডেপ্টফোর্ড, ইংল্যান্ড |
পেশা | নাট্যকার, কবি |
জাতীয়তা | ইংরেজ |
সময়কাল | আনুমানিক ১৫৮৬-৯৩ |
সাহিত্য আন্দোলন | ইংরেজি রেনেসাঁ থিয়েটার |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | হিরো অ্যান্ড লিয়েন্ডার, এডওয়ার্ড দ্য সেকেন্ড, ডক্টর ফস্টাস |
স্বাক্ষর |
ক্রিস্টোফার মার্লো (ইংরেজি: Christopher Marlowe[১]; ব্যাপ্টিজম ২৬ জানুয়ারি, ১৫৬৪ – ৩০ মে, ১৫৯৩) ছিলেন এলিজাবেথীয় যুগের একজন ইংরেজ নাট্যকার, কবি ও অনুবাদক। মার্লো ছিলেন তার সময়কার প্রধান এলিজাবেথীয় ট্রাজেডিয়ান।[২] মার্লোর সমবয়সী উইলিয়াম শেকসপিয়র মার্লোর লেখালিখি থেকে বিশেষভাবে প্রভাবিত হন। মার্লোর রহস্যময় অকালমৃত্যুর পর শেকসপিয়র এলিজাবেথীয় থিয়েটারে তার আসনটি গ্রহণ করেন। মার্লোর নাটকের বৈশিষ্ট্য হল অমিত্রাক্ষর ছন্দের ব্যবহার ও অতি-আত্মবিশ্বাসী নায়কে চরিত্রায়ন।
১৫৯৩ সালের ১৮ মে মার্লোর নামে একটি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এটি জারি করার কোনো কারণ দর্শানো হয়নি। তবে মনে করা হয় যে, মার্লো একটি পাণ্ডুলিপিতে কিছু "অনৈতিক ধর্মদ্রোহী ধারণা"র কথা লিখেছিলেন। সেই সূত্রে তার বিরুদ্ধে ঈশ্বরদ্রোহিতার যে অভিযোগ আনা হয়েছিল, তার সঙ্গে এই গ্রেফতারি পরোয়ানার যোগসূত্র ছিল। ২০ মে প্রিভি কাউন্সিলের সামনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আদালতে আনা হয়। তাদের সেই দিনকার জিজ্ঞাসাবাদের কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি। যদিও জানা যায় যে, তাকে যতদিন না প্রিভি কাউন্সিল অন্যরকম কোনো আদেশ দিচ্ছেন, ততদিন পর্যন্ত রোজ কাউন্সিলের সামনে উপস্থিত থাকতে আদেশ দেওয়া হয়েছিল। দশ দিন পরে ইনগ্রাম ফ্রিজারের ছুরির আঘাতে তার মৃত্যু ঘটে। তার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে গ্রেফতারির কোনো যোগ ছিল কিনা, তাও জানা যায় না।[৩]
প্রথম জীবন
[সম্পাদনা]মার্লোর জন্ম ক্যান্টারবেরিতে।[৪] তার বাবা জন মার্লো ছিলেন মুচি। মায়ের নাম ছিল ক্যাথেরিন। মার্লোর জন্মের সঠিক তারিখটি জানা যায় না। তার ব্যাপ্টিজম হয়েছিল ১৫৬৪ সালের ২৬ জানুয়ারি। অর্থাৎ, তার জন্ম এর কিছুদিন আগেই হয়েছিল। উইলিয়াম শেকসপিয়রের ব্যাপ্টিজমও ওই বছরই ২৬ এপ্রিল স্ট্র্যাটফোর্ড-অন-অ্যাভনে হয়েছিল। অর্থাৎ মার্লো শেকসপিয়রের চেয়ে মাত্র কয়েক মাসের বড়ো।
মার্লো ক্যান্টারবেরির দ্য কিংস স্কুলে পড়াশোনা করেন (বর্তমানে এই স্কুলের একটি হাউস তার নামে চিহ্নিত)। এরপর তিনি একটি বৃত্তি নিয়ে কেমব্রিজের করপাস ক্রিস্টি কলেজে ভর্তি হন এবং ১৫৮৪ সালে সেই কলেজ থেকে ব্যাচেলর অফ আর্টস ডিগ্রি লাভ করেন।[৫] ১৫৮৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় তাকে মাস্টার অফ আর্টস ডিগ্রি দিতে দ্বিধা করতে থাকেন। কারণ, গুজব সৃষ্টি হয়েছিল যে তিনি রোমান ক্যাথলিক মতবাদ গ্রহণ করে রেইমের ইংলিশ কলেজে পৌরোহিত্য শেখার জন্য যেতে চাইছেন। প্রিভি কাউন্সিল এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেন এবং মার্লোকে রানি প্রথম এলিজাবেথের বিশ্বস্ত ও সাহায্যকারী বলে উল্লেখ করেন। এর পরই বিশ্ববিদ্যালয় যথাসময়ে মার্লোকে মাস্টার্স অফ আর্টস ডিগ্রি প্রদান করেন।[৬] মার্লো ঠিক কীভাবে রানিকে সাহায্য করেছিলেন, প্রিভি কাউন্সিল সেটা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না করলেও, কেমব্রিজ কর্তৃপক্ষকে লেখা কাউন্সিলের চিঠি থেকে অনুমান করা হয় যে, মার্লো স্যার ফ্রান্সিস ওয়ালসিংহ্যামের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করতেন।[৭] তবে এই ধারণার কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই। যদিও কাউন্সিলের চিঠি থেকে স্পষ্ট যে মার্লো সরকারকে গোপনে সাহায্য করতেন।
সাহিত্য জীবন
[সম্পাদনা]যে নাটকটিকে মার্লোর প্রথম রচনা বলে মনে করা হয়, সেটি হল ডিডো, কুইন অফ কার্থেজ । এটি ১৫৮৭ থেকে ১৫৯৩ সালের মাঝামাঝি কোনো এক সময় চিল্ড্রেন অফ দ্য চ্যাপেল নামে শিশু অভিনেতাদের এক গোষ্ঠীর দ্বারা মঞ্চস্থ হয়। ১৫৯৪ সালে নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। প্রচ্ছদ পৃষ্ঠায় নাট্যকার হিসেবে মার্লো ও টমাস ন্যাশের নাম ছিল।[৮]
মার্লোর যে প্রথম নাটকটি ১৫৮৭ সালে লন্ডনের সাধারণ মঞ্চে মঞ্চস্থ হয়, সেটি হল ট্যাম্বারলেইন দ্য গ্রেট। এটি সম্রাট তৈমুরের জীবন অবলম্বনে লেখা। তৈমুর কীভাবে রাখাল থেকে যোদ্ধা হয়ে উঠেছিলেন, সেটিই এই নাটকে দেখানো হয়েছে। ইংরেজি ভাষায় প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখা নাটকগুলির মধ্যে এটি অন্যতম।[৮] এটি ও টমাস কিডের দ্য স্প্যানিশ ট্র্যাজেডি লেখার পর থেকে এলিজাবেথীয় থিয়েটারে পরিণতির যুগ শুরু হয়ে যায়। ট্যাম্বারলেইন নাটকের সাফল্যের পর ট্যাম্বারলেইন দ্য গ্রেট, পার্ট টু লেখা হয়।
ট্যাম্বারলেইন নাটকের দুটি পর্বই ১৫৯০ সালে প্রকাশিত হয়। মার্লোর অন্যান্য রচনাগুলি তার মৃত্যুর পর প্রকাশ পায়। পরের চারটি নাটকের কালপর্যায় জানা যায় না। এগুলি সবই বিতর্কিত বিষয় নিয়ে লেখা হয়েছিল।
নগর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এক মাল্টা-নিবাসী ইহুদির বর্বরোচিত প্রতিশোধ গ্রহণের কাহিনি নিয়ে মার্লো রচনা করেন দ্য জিউ অফ মাল্টা নাটকটি। এই নাটকটির ভূমিকাটি এমন এক চরিত্রের মাধ্যমে বলানো হয়, যাকে অনেকটা নিকোলো মেকিয়াভেলি বলে মনে হয়। এটি ১৫৮৯ বা ১৫৯০ সালে রচিত। প্রথম মঞ্চস্থ হয় ১৫৯২ সালে। নাটকটি সাফল্য অর্জন করে এবং পরবর্তী পঞ্চাশ বছর এর জনপ্রিয়তা অক্ষুণ্ণ থাকে। ১৫৯৪ সালের ১৭ মে এটি স্টেশনার্স রেজিস্টারে নথিভুক্ত হয়। কিন্তু এর প্রাচীনতম মুদ্রিত সংস্করণ যেটি পাওয়া যায়, সেটি ১৬৩৩ সালে ছাপা।
এডওয়ার্ড দ্য সেকেন্ড নাটকটি একটি ইংরেজি ঐতিহাসিক নাটক। এই নাটকে রানি ও ব্যারনদের ষড়যন্ত্রে রাজা দ্বিতীয় এডওয়ার্ডের হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা রয়েছে। ১৫৯৩ সালের ৬ জুলাই মার্লোর মৃত্যুর পাঁচ সপ্তাহ পর নাটকটি স্টেশনার্স রেজিস্টারের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৫৯৪ সালের সংস্করণটাই এই নাটকের সবচেয়ে পুরনো সংস্করণ। এটির পূর্ণাঙ্গ শিরোনামটি হল দ্য ট্রাবেলসাম রেইন অ্যান্ড ল্যামেন্টেবেল ডেথ অফ এডওয়ার্ড দ্য সেকেন্ড, কিং অফ ইংল্যান্ড, উইথ দ্য ট্রাজিক ফল অফ প্রাউড মর্টিমার।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]ক্রিস্টোফার মার্লো মাত্র ২৯ বছর বেঁচেছিলেন।১৫৯৩ সালের ১৮ মে মার্লোকে গ্রেফতার করার জন্য ওয়ারেন্ট জারি করা হয়। ধারণা করা হয়, নাস্তিকতার জন্যই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।[৯] এর অল্প ক’দিন পরে ১৫৯৩ সালের ৩০ মে তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। তার মৃত্যুর কারণ এখনও রহস্য। যে বাড়িটিতে তাকে হত্যা করা হয় সে বাড়িতে ৩ জন ব্যক্তি উপস্থিত ছিল। মার্লো ছাড়াও যে দুই ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন তারা জানায়, মার্লো মদ্যপ অবস্থায় তাদের আক্রমণ করে।আত্মরক্ষার জন্য তারা মার্লোকে আঘাত করে। যে দুজন ব্যক্তির আঘাতে মার্লো মারা যান, তাদের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রিভি কাউন্সিলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল এবং মার্লো নিজের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রিভি কাউন্সিলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। কেউ কেউ মনে করেন মার্লোকে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে।[১০]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Christopher Marlowe was baptised as 'Marlow,' but he spelled his name 'Marley' in his one known surviving signature." David Kathman. "The Spelling and Pronunciation of Shakespeare's Name: Pronunciation."
- ↑ Robert A. Logan, Shakespeare's Marlowe (2007) p.4. "During Marlowe's lifetime, the popularity of his plays, Robert Greene's...remarks...including the designation "famous", and the many imitations of Tamburlaine suggest that he was for a brief time considered England's foremost dramatist."
- ↑ Nicholl, Charles (2006). "By my onely meanes sett downe: The Texts of Marlow's Atheism", in Kozuka, Takashi and Mulryne, J.R. Shakespeare, Marlowe, Jonson: new directions in biography. Ashgate Publishing, p. 153.
- ↑ This is commemorated by the name of the town's main theatre, the Marlowe Theatre, and by the town museums. However, St. George's was gutted by fire in the Baedeker raids and was demolished in the post-war period – only the tower is left, at the south end of Canterbury's High Street http://www.digiserve.com/peter/cant-sgm1.htm ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৯ অক্টোবর ২০০৬ তারিখে
- ↑ Marlowe, Christopher in Venn, J. & J. A., Alumni Cantabrigienses, Cambridge University Press, 10 vols, 1922–1958.
- ↑ For a full transcript, see Peter Farey's Marlowe page ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ অক্টোবর ২০০৪ তারিখে (Retrieved 31 March 2012).
- ↑ He died in a deadly brawl.Hutchinson, Robert (২০০৬)। Elizabeth's Spy Master: Francis Walsingham and the secret war that saved England। London: Weidenfeld & Nicolson। পৃষ্ঠা 111। আইএসবিএন 0-297-84613-2।
- ↑ ক খ "See especially the middle section in which the author shows how another Cambridge graduate, Thomas Preston makes his title character express his love in a popular play written around 1560 and compares that "clumsy" line with ''Doctor Faustus'' addressing Helen of Troy"। Wwnorton.com। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১১।
- ↑ For a full transcript, see Peter Farey's Marlowe page ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ সেপ্টেম্বর ২০০১ তারিখে (Retrieved 31 March 2012).
- ↑ National Archives, Acts of the Privy Council. Meetings of the Privy Council, including details of those attending, are recorded and minuted for 16, 23, 25, 29 and the morning of 31 May, all of them taking place in the Star Chamber at Westminster. There is no record of any meeting on either 18 or 20 May, however, just a note of the warrant being issued on 18 May and the fact that Marlowe "entered his appearance for his indemnity therein" on the 20th.