ভাষিক রূপতত্ত্ব

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ভাষিক রূপতত্ত্ব (Linguistic Phenomenology) হলো জন ল্যাংশি অস্তিনের (John Langshaw Austin) আবিষ্কৃত ও অনুসৃত একটি পদ্ধতি। এ-পদ্ধতিকে জি. ই. ম্যুরের (G. E. Moore) পদ্ধতির এক সুক্ষ ও পরিশোধিত রূপ হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি বিশেষ করে ম্যুর, ভিতগেনস্তাইন, রাইল ও স্ত্রসনের ভাষাসংক্রান্ত বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে এ-পদ্ধতির জানান দেন।

ভাষিক রূপতত্ত্ব সম্পর্কে অস্তিন তার ‘শব্দের অর্থ’ শিরোনামীয় এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেন। এ-প্রবন্ধে তিনি গিলবার্ত রাইলের (Gilbert Ryle) সাথে একমত পোষণ করে বলেন, একটি শব্দের অর্থ বলতে কোনো বস্তুকে বুঝায় না। এ-কারণেই বিশ্লেষক ও সংশ্লেষক উক্তির মধ্যে কোনো সাধারণ পার্থক্য নির্দেশ করা সম্ভব নয়। যেহেতু অর্থ বলতে একাধিক অংশের সমবায়ে গঠিত কোনো বস্তুকে বুঝায় না, সেহেতু ‘এ-উক্তির বিধেয় কি তার উদ্দেশ্যের অংশের অর্থ’- এ-প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর সবসময় পাওয়া যায় না। বিশেষ বিশেষ শব্দের অর্থসংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে বিভিন্ন ধরনের জটিল বিশেষ উত্তর থাকতে পারে। রাইলের ন্যায় তিনি সার্বিক মতবাদসমূহকে ‘যদি কোনো শব্দের অর্থ থাকে, তবে এমন একটি বস্তু থাকা চাই, যা ঐ-শব্দের অর্থ’- এ-ধারণার উপর আরোপ করেন। ‘কোনো উক্তিকে সত্য বলার অর্থ একে শুধু অনুমোদন করা এবং বাষা-বহির্ভূত জগতের সাথে এর সম্বন্ধ সম্পর্কে কিছু বলা নয়’- স্ত্রসনের (Peter Fredrick Strawson) এ-মতের বিরুদ্ধে তিনি বলেন যে, উক্তির সত্যতা নিহিত থাকে তথ্যের সাথে তার মিলের মধ্যে।[১]

ল্যাংশি অস্তিনের হাতে পড়ে প্রচলিত ভাষাদর্শন একটি সুনির্দিষ্ট রূপ ও স্বকীয়তা লাভ করে। তিনি দেখলেন, অতীতের অধিকাংশ দর্শনেই ভাষার নিয়মাবলি কতিপয় মুষ্টিমেয় পছন্দমাফিক দৃষ্টান্তে সীমাবদ্ধ। তার চেষ্টা ছিল শব্দাবলির প্রকৃত ব্যবহারে সতর্ক এবং বিস্তারিত অনুসন্ধানের মাধ্যমে ব্যাপক ও বিচিত্র দৃষ্টান্তের সাহায্যে ভাষার নিয়মাবলি প্রতিষ্ঠা করা। এ-লক্ষ্য-অর্জনে তিনি ভিতগেনস্তাইন ও রাইলকে অতিক্রম করে যান।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. মো. আবদুল হালিম, দার্শনিক প্রবন্ধাবলি: তত্ত্ব ও বিশ্লেষণ, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ২০০৩