স্লাভয় জিজেক

স্লাভয় ঝিঝেক
২০০৮ সালে ইংল্যান্ডের লিভারপুলে ঝিঝেক
জন্ম	(1949-03-21) ২১ মার্চ ১৯৪৯ লুবলিয়ানা, স্লোভেনিয়া, যুগোস্লাভিয়া
শিক্ষা	লুবলিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় (B.A., M.A., D.A.) University of Paris VIII (Ph.D.)
যুগ	বিংশ-একবিংশ শতাব্দী দর্শন
অঞ্চল	পশ্চিমা দর্শন
ধারা	মহাদেশীয় দর্শন Ljubljana school of psychoanalysis লাকনীয় মনঃসমীক্ষণ উত্তর-হেগেলীয়বাদ ফ্রয়েডো-মার্ক্সবাদ
প্রতিষ্ঠান	University of Ljubljana New York University Birkbeck, University of London
প্রধান আগ্রহ	মতাদর্শ মার্ক্সবাদ তত্ত্ববিদ্যা রাজনৈতিক তত্ত্ব মনঃসমীক্ষণ সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন ফিল্ম তত্ত্ব ধর্মতত্ত্ব জর্মন ভাববাদ দ্বান্দ্বিকতা
উল্লেখযোগ্য অবদান	Interpassivity Over-identification Ideology as an unconscious fantasy that structures reality Revival of dialectical materialism
ভাবগুরু আলত্যুসের Adorno বাদিউ বেনিয়ামিন Balibar Chesterton Debenjak ফ্রয়েড হেগেল হেইডেগার Jameson লাকঁ Laclau মার্ক্স কান্ট Rancière Schelling Schmitt Zupančič
ভাবশিষ্য Jodi Dean Mark Fisher Eric Santner Alenka Zupančič

স্লাভয় ঝিঝেক (স্লোভেনীয়: Slavoj Žižek; জন্ম: ২১ মার্চ ১৯৪৯) হলেন একজন স্লোভেনীয় দার্শনিক ও সমাজবিজ্ঞানী, ল্যুবলিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট ফর সোসিওলজি অ্যান্ড ফিলসফির অধ্যাপক এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্কবেক ইন্সটিটিউট ফর দ্য হিউম্যানিটিজের আন্তর্জাতিক পরিচালক। তিনি মহাদেশীয় দর্শন, রাজনৈতিক তত্ত্ব, সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন, মনঃসমীক্ষণ, চলচ্চিত্র সমালোচনা, মার্ক্সবাদ, হেগেলবাদ, ধর্মতত্ত্ব প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কাজ করেন।

১৯৮৯ সালে ঝিঝেক তার প্রথম ইংরেজি লেখা The Sublime Object of Ideology প্রকাশ করেন,যেটাতে তিনি চিরায়ত মার্ক্সবাদী তত্ত্ব থেকে সরে গিয়ে মতাদর্শের একটি জড়বাদী ধারণা গড়ে তোলেন যা লাকনীয় মনঃসমীক্ষণ ও হেগেলীয় ভাববাদের সঙ্গে প্রবলভাবে সংশ্লিষ্ট ছিল। নব্বইয়ের দশকে তার তাত্ত্বিক কাজ ক্রমশ সারগ্রাহী ও রাজনৈতিক হয়ে ওঠে যা বিসদৃশ ধরনের লোকসংস্কৃতির পর্যালোচনায় নিয়োজিত ছিল এবং তিনি আকামেদিক বামপন্থার একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। পুঁজিবাদ, নব্য-উদারতাবাদ ও রাজনৈতিক শুদ্ধতার সমালোচক ঝিঝেক নিজেকে একজন পলিটিকাল র‍্যাডিকেল বলে অবিহিত করেন।

দর্শন ও তত্ত্ব

তিনি একাধারে জ্যাক লাকাঁ (Jacques Lacan), কার্ল মার্কস (Karl Marx), এবং হেগেলের (Hegel) দর্শন থেকে প্রভাবিত। জিজেকের কাজ আধুনিক সমাজের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, এবং আদর্শগত কাঠামোকে বিশ্লেষণ করার দিকে নিবদ্ধ।

জিজেকের আলোচিত দর্শন ও তত্ত্বগুলির মধ্যে রয়েছে:

১. লাকাঁর মনোবিশ্লেষণ

জিজেক জ্যাক লাকাঁর তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে মানুষের অবচেতন মন এবং তার সঙ্গে সংস্কৃতি ও রাজনীতির সম্পর্ক বিশ্লেষণ করেন। তিনি লাকাঁর তিনটি ক্রম: কল্পিত (Imaginary), প্রতীকী (Symbolic), এবং বাস্তব (Real) ব্যবহার করে আধুনিক সমাজের মানসিক কাঠামো বিশ্লেষণ করেন।

• বাস্তব (The Real): এটি সেই জায়গা যা ভাষা বা চেতনার মাধ্যমে উপলব্ধি করা যায় না, এবং এটি জিজেকের চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু।
• আধুনিক সমাজ কীভাবে এই "বাস্তব" থেকে দূরে থাকে এবং প্রতীকী কাঠামোর মাধ্যমে বাস্তবকে ঢেকে রাখে, তা তার বিশ্লেষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

২. মার্কসবাদ এবং আদর্শবাদ সমালোচনা

জিজেক মার্কসের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দর্শনকে আধুনিক সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক বাস্তবতার সাথে সংযুক্ত করেন। তিনি বলেন, আধুনিক সমাজে আদর্শবাদ (Ideology) শুধু একটি ভুল চেতনা নয়, বরং আমাদের বাস্তবতাকে তৈরি ও ধরে রাখে।

• তিনি "Commodity Fetishism" ধারণাকে আধুনিক ভোগবাদ এবং পুঁজিবাদের সঙ্গে যুক্ত করে ব্যাখ্যা করেন।
• পুঁজিবাদ কীভাবে মানুষের জীবনে মনস্তাত্ত্বিক কাঠামো তৈরি করে, সেটি তার অন্যতম আলোচনা।

৩. রাজনীতি এবং আদর্শের সমালোচনা

জিজেক আধুনিক উদারপন্থা (Liberalism) এবং বহুজাতিক পুঁজিবাদের (Global Capitalism) কঠোর সমালোচক। তার মতে, আধুনিক সমাজে গণতন্ত্র এবং উদারনৈতিক শাসনব্যবস্থা সামাজিক বৈষম্য ও নিপীড়নকে লুকিয়ে রাখে।

• তিনি বিপ্লবী রাজনৈতিক চিন্তার পক্ষে এবং সমাজতন্ত্র বা সাম্যবাদকে নতুন করে ভাবার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

৪. সংস্কৃতি এবং সিনেমার বিশ্লেষণ

জিজেকের কাজের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো জনপ্রিয় সংস্কৃতি, বিশেষত সিনেমার বিশ্লেষণ। তিনি চলচ্চিত্র, সাহিত্য এবং মিডিয়ার মাধ্যমে আধুনিক সমাজের আদর্শগত কাঠামো এবং রাজনৈতিক বাস্তবতাকে বোঝার চেষ্টা করেন।

• উদাহরণস্বরূপ, তিনি "The Matrix" বা "Fight Club" এর মতো চলচ্চিত্র ব্যবহার করে লাকাঁর দর্শনের ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

৫. হেগেলীয় ডায়ালেকটিকস

জিজেক হেগেলের দর্শনকে আধুনিকভাবে পুনর্ব্যাখ্যা করেন। তিনি হেগেলের ডায়ালেকটিক পদ্ধতি ব্যবহার করে আধুনিক সমাজের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংকট বিশ্লেষণ করেন।

৬. বিপ্লবী চিন্তা এবং রাজনৈতিক পরিবর্তন

জিজেক বিশ্বাস করেন যে প্রকৃত রাজনৈতিক পরিবর্তন একটি "সত্যিকারের কার্যকর বিপ্লব" ছাড়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আধুনিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা সংস্কারের মাধ্যমে নয়, বরং তার ভিত্তি ধ্বংস করেই নতুন কিছু তৈরি করতে হবে।